১৫ বছরে ফকির মজনু শাহ্ সেতু : টোলমুক্ত হবে কবে?

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বানার নদীর ওপর নির্মিত ফকির মজনু শাহ্ সেতু ১৫ বছর পরও টোলমুক্ত হয়নি। নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা হলেও ইতোমধ্যে সেতুর ইজারা বাবদ সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা। গত ২৩ ডিসেম্বর সেতু কর্তৃপক্ষ গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন হতে টোল আদায়ের নিমিত্তে আগামী তিন বছরের জন্য ইজারা বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেতুটি ইজারা দেয়ার জন্য দরপত্র আহ্বানের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ভুক্তভোগীরা।

গাজীপুর সড়ক বিভাগ ও স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৩ সালে কাপাসিয়ার বানার নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ৩৯০ দশমিক ৯১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণ করতে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ২০০৫ সালের ৫ আগস্ট সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। সেতুটি নির্মাণের ফলে নদীর দুই পাড়ের লোকজনের চলাচল ও মালামাল পরিবহন যেমন সহজ হয়ে উঠেছে, তেমনি ঢাকা থেকে কাপাসিয়া হয়ে কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীর মনোহরদী, ময়মনসিংহের গফরগাঁও এবং বৃহত্তর সিলেটের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে সেতুটি প্রতিবার পার হতে গেলে বড় লরির টোল দিতে হয় ২৮০ টাক, ট্রাক ১৪০ টাকা, বড় বাস ৯০ টাকা, মিনিবাস ও পিকআপ ৫০ টাকা, মাইক্রোবাস ৪০ টাকা, প্রাইভেটকার ২০ টাকা, সিএনজি অটোরিক্সা ১০ টাকা ও মোটরসাইকেল ৫ টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় পরিবহন মালিক সমিতি, ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক এবং বিভিন্ন যানবাহন চালকদের সঙ্গে। আগামী তিন বছরের জন্য ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বানের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তারা। জলসিঁড়ি এক্সপ্রেস পরিবহনের পরিচালক চিত্তরঞ্জন সাহা জানান, তাদের পরিবহনের বাস চলাচল করতে এ সেতুতে প্রতিদিন প্রায় দশ হাজার টাকা টোল দিতে হয়। এ সেতু টোলমুক্ত ঘোষণা করতে সংশ্লিষ্ট সকল মহলে অতি সত্বর যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান তিনি। অন্যান্য ক্লাসিক পরিবহনের এম ডি বাবুল খান জানান, বর্তমানে ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহা সড়ক ও ঢাকা-কাপাসিয়া-মনোহরদী সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সাতটি পরিবহন কোম্পানির প্রায় সাড়ে তিনশত যাত্রীবাহী বাস দিন রাত চলাচল করে। এ সেতু টোলমুক্ত হলে তারা করোনা জনিত সঙ্কটকালে পরিবহন ব্যবসার আর্থিক ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে সক্ষম হবেন। আন্তঃজেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন কাপাসিয়া শাখার সভাপতি মো. আকরাম হোসেন খান জানান, যেহেতু সরকারের নির্মাণ ব্যয়ের দ্বিগুণেরও বেশি টাকা উঠে গেছে তাই এ সেতুকে টোলমুক্ত ঘোষণা করা হোক।

গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সাইফউদ্দিন এ প্রতিবেদককে জানান,এ মুহূর্ত পর্যন্ত সেতুটি সরকারের ইজারার তালিকাভুক্ত হিসেবেই রয়েছে। তিনি যে দরপত্র আহ্বান করেছেন তা বাস্তবায়ন হবে আগামী জুন মাসের পর থেকে। যেহেতু বিষয়টি জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, তাই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে পরবর্তী সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে তিনি আশ^াস দেন।

শুক্রবার, ০১ জানুয়ারী ২০২১ , ১৭ পৌষ ১৪২৭, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

১৫ বছরে ফকির মজনু শাহ্ সেতু : টোলমুক্ত হবে কবে?

সমির বনিক, কাপাসিয়া (গাজীপুর)

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বানার নদীর ওপর নির্মিত ফকির মজনু শাহ্ সেতু ১৫ বছর পরও টোলমুক্ত হয়নি। নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা হলেও ইতোমধ্যে সেতুর ইজারা বাবদ সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা। গত ২৩ ডিসেম্বর সেতু কর্তৃপক্ষ গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন হতে টোল আদায়ের নিমিত্তে আগামী তিন বছরের জন্য ইজারা বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেতুটি ইজারা দেয়ার জন্য দরপত্র আহ্বানের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ভুক্তভোগীরা।

গাজীপুর সড়ক বিভাগ ও স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৩ সালে কাপাসিয়ার বানার নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ৩৯০ দশমিক ৯১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণ করতে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ২০০৫ সালের ৫ আগস্ট সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। সেতুটি নির্মাণের ফলে নদীর দুই পাড়ের লোকজনের চলাচল ও মালামাল পরিবহন যেমন সহজ হয়ে উঠেছে, তেমনি ঢাকা থেকে কাপাসিয়া হয়ে কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীর মনোহরদী, ময়মনসিংহের গফরগাঁও এবং বৃহত্তর সিলেটের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে সেতুটি প্রতিবার পার হতে গেলে বড় লরির টোল দিতে হয় ২৮০ টাক, ট্রাক ১৪০ টাকা, বড় বাস ৯০ টাকা, মিনিবাস ও পিকআপ ৫০ টাকা, মাইক্রোবাস ৪০ টাকা, প্রাইভেটকার ২০ টাকা, সিএনজি অটোরিক্সা ১০ টাকা ও মোটরসাইকেল ৫ টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় পরিবহন মালিক সমিতি, ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক এবং বিভিন্ন যানবাহন চালকদের সঙ্গে। আগামী তিন বছরের জন্য ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বানের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তারা। জলসিঁড়ি এক্সপ্রেস পরিবহনের পরিচালক চিত্তরঞ্জন সাহা জানান, তাদের পরিবহনের বাস চলাচল করতে এ সেতুতে প্রতিদিন প্রায় দশ হাজার টাকা টোল দিতে হয়। এ সেতু টোলমুক্ত ঘোষণা করতে সংশ্লিষ্ট সকল মহলে অতি সত্বর যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান তিনি। অন্যান্য ক্লাসিক পরিবহনের এম ডি বাবুল খান জানান, বর্তমানে ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহা সড়ক ও ঢাকা-কাপাসিয়া-মনোহরদী সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সাতটি পরিবহন কোম্পানির প্রায় সাড়ে তিনশত যাত্রীবাহী বাস দিন রাত চলাচল করে। এ সেতু টোলমুক্ত হলে তারা করোনা জনিত সঙ্কটকালে পরিবহন ব্যবসার আর্থিক ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে সক্ষম হবেন। আন্তঃজেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন কাপাসিয়া শাখার সভাপতি মো. আকরাম হোসেন খান জানান, যেহেতু সরকারের নির্মাণ ব্যয়ের দ্বিগুণেরও বেশি টাকা উঠে গেছে তাই এ সেতুকে টোলমুক্ত ঘোষণা করা হোক।

গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সাইফউদ্দিন এ প্রতিবেদককে জানান,এ মুহূর্ত পর্যন্ত সেতুটি সরকারের ইজারার তালিকাভুক্ত হিসেবেই রয়েছে। তিনি যে দরপত্র আহ্বান করেছেন তা বাস্তবায়ন হবে আগামী জুন মাসের পর থেকে। যেহেতু বিষয়টি জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, তাই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে পরবর্তী সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে তিনি আশ^াস দেন।