বছরের শুরুটা ভালোই ছিল। আশা করা হচ্ছিল, গত বছরের চেয়ে অর্থনীতির সব সূচকেই ভালো করবে বাংলাদেশ। ঠিক এমন সময় আসে করোনার আঘাত। এর প্রভাবে আমদানি-রপ্তানি কমেছে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে, কর্মসংস্থান কমেছে। তারপরও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সাহায্য করেছে প্রণোদনা প্যাকেজ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। কারণ বাংলাদেশ অন্য দেশের চেয়ে ভালো করেছে। নতুন বছর ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো নিয়ে সঠিক পরিকল্পনায় এগোলে প্রতিটি খাতই ভালো করবে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ থেকে ৫ শতাংশেরও বেশি।
স্বস্তিদায়ক জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা
অর্থনীতিতে করোনার আঘাতের পরও সরকার মনে করছে, চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। সরকার, বিশ্বব্যাংক ও এডিবি যারই পূর্বাভাস ঠিক হোক না হোক, করোনাভাইরাস দেশের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তারপরও করোনার প্রভাব কেটে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এমন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০২০-২৫)।
করোনার মধ্যেও বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সরকারি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, করোনার কারণে চলতি (গত) বছর চ্যালেঞ্জিং ছিল। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ প্রকিউরমেন্ট করেছে, সারাবিশ্বের অর্থনীতি গত বছরের তুলনায় চার ভাগ কমে গেছে। তবে অন্য দেশের তুলনায় আমরা ভালো আছি। আশা করছি, আমাদের আগামী (নতুন) বছর ভালো যাবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘করোনায় দেশের অর্থনীতিতে বড় অবনতি ঘটেছে। প্রথমত, জাতীয় উৎপাদন ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে। দ্বিতীয়ত, দারিদ্র্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে অনেক মানুষ। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলার জন্য সরকার সঠিক সময়ে উদ্যোগ নিচ্ছে।’ জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে ভালো করেছে। তাই নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ থেকে ৫ শতাংশের মতো হবে।’
ভবিষ্যতে কিছু উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে ব্যাংকিং খাতকে সচল করতে হবে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে। নতুন বাজার খুঁজতে হবে। বিদেশে শ্রমিক পাঠানো বাড়াতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বৃদ্ধি করতে হবে এবং যারা প্রকৃত ভুক্তভোগী তারা যেন এর আওতায় আসে তা নিশ্চিত করতে হবে।’
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির ওপর করোনার নেতিবাচক প্রভাব যেভাবে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা হয়নি। রেমিট্যান্সই অর্থনীতির অন্য সূচককে সবল রাখতে সাহায্য করেছে। তবে করোনায় কয়েক লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। অনেক মানুষ গ্রামে ফিরে গেছে। এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে সেটা পড়বে নতুন বছরের প্রবৃদ্ধিতে। এখন সেকেন্ড ওয়েভ চলছে। এতে যদি ক্রয়াদেশ কমে যায়, তাহলে অর্থনীতিতে ফের বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে।’ বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যদি বড় ধরনের আঘাত না হানে তাহলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের উপরে হবে।’
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর সংবাদকে বলেন, ‘করোনায় অন্য দেশগুলোর জিডিপি যেহেতু নেগেটিভে চলে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সে হিসাবে আমাদের অর্থনীতি ভালো করেছে। তবে গত (২০১৯) বছরের চেয়ে কোনভাবে অর্থনীতি ভালো নেই। এক কথায়, মন্দের মধ্যে আমরা ভালো আছি। যেমন রপ্তানি মাইনাসে রয়েছে, বিনিয়োগ মাইনাসে রয়েছে, কর্মসংস্থানের অবস্থাও খারাপ। আর সুখবর আছে যেসব খাতে বলা হচ্ছে, সেটা হলোÑ রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। মূলত রেমিট্যান্সের কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। তারপরও সুখবর তো কিছু আছেই। যেমন, সরকার সময় মতো প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেটা অর্থনীতির জন্য ভালো হয়েছে।’ চলতি অর্থবছরের জিডিপির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এডিবি জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে যা বলছে তা হবে না। তবে বাংলাদেশের জিডিপি পজেটিভেই থাকবে। আর করোনার মধ্যে পজেটিভে থাকাটাই স্বস্তিদায়ক।’
করোনার প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সরকারকে কোন ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘প্রথমে প্রতিটি জনগণের জন্য টিকা নিশ্চিত করতে হবে। টিকা বিতরণে যেন স্বচ্ছতা থাকে সেই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। পোশাক খাতে পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা কেমন, করোনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। সেই স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। এক বছর বন্ধ থেকে শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থাও খারাপ হয়েছে। এখান থেকেও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে উঠে দাঁড়াতে হবে।’
তৈরি পোশাক খাতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে সাদমা ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ’র পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য মোটেও ভালো হচ্ছে না। তারপরও আমরা কারখানাগুলো চালু রেখেছি। ব্যবসা বন্ধ করলে তো আগামী (নতুন) বছর চালু করতে পারব না।’ আগামী (নতুন) বছর কেমন যাবে বলে মনে করেন? এবং সরকারের পক্ষ থেকে কি ধরনের দাবি দাওয়া রয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আশা করছি, জানুয়ারির শেষের দিকে ভ্যাকসিন চলে আসবে। আমরা ফের নতুনভাবে শুরু করতে পারব। এই সংকটের সময় সরকার আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আগামী ছয় মাসও যেন সরকার আমাদের সঙ্গে থাকে সেটিই আমাদের প্রত্যাশা। বিশেষ করে সহজে ও কম সুদে যদি আমরা ঋণ পাই, তাহলে ব্যবসা দাঁড় করানো সহজ হবে।’
পোশাক শিল্পে বেকারত্বের রেকর্ড
পোশাক খাত দেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ খাত। পোশাক রপ্তানি না করতে পারায় বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো চলতে পারছে না। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি এক গবেষণায় দাবি করেছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের পোশাক কারখানাগুলো থেকে ৬০-৬৫ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, করোনাকালে কমপক্ষে এক থেকে দেড় লাখের বেশি শ্রমিক স্থায়ীভাবে ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। তবে অষ্টম (২০২১-২০২৫) পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকার প্রত্যাশা করছে, নতুন বছরে ২১ লাখ ৬০ হাজার কর্মসংস্থান হবে।
আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব
করোনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমদানি খাতে। গত এপ্রিলে আমদানি হয়েছিল মাত্র ২৮৫ কোটি ডলারের পণ্য, যা এক মাসের হিসাবে এক দশকের মধ্যে সর্বনি¤œ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মে মাসে ৩১ শতাংশ, এপ্রিলে ৪৪ শতাংশ, মার্চে ১৩ শতাংশ ও জানুয়ারিতে প্রায় ১৩ শতাংশ কম আমদানি হয়েছে। এছাড়া গত অর্থবছরে বিভিন্ন দেশ থেকে ৫ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম।
করোনায় রপ্তানি আয়েও বড় ধাক্কা লেগেছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। অক্টোবরে আবার হোঁচট লাগে রপ্তানি আয়ে। নভেম্বরে এসে আবার প্রবৃদ্ধির মুখ দেখে। তবে নভেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।
বিনিয়োগ শূন্যের কোটায়
করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কায় বিদেশি বিনিয়োগ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৭২ কোটি ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩১ শতাংশ কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১০৪ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ।
আলো জ্বালিয়ে রেখেছে প্রণোদনা
করোনা মহামারী গত মার্চ থেকে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে। এ সময় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রণোদনার খবরেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে অর্থনীতি।
দ্বিতীয় ধাক্কায় ফের প্রণোদনা
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) চূড়ান্তকরণ সভায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) সামনে রেখে আর্থিক প্রণোদনার একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম প্রণোদনার বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও এই প্রণোদনার কারণে ব্যবসায়ীরা মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়েছেন।
বিধ্বস্ত অর্থনীতির প্রভাব ব্যাংক খাতে
চলতি (গত) বছরটা ব্যাংক খাতের জন্য ভালোই ছিল। তবে করোনার কারণে ব্যাংক খাতেও নেমে আসে স্থবিরতা। করোনার বছরে ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কমেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসায় গ্রাহকরা সঞ্চয়ের টাকা তুলে খরচ করা শুরু করে। এতে আমানতও কমে যায়। তবে আমানত কমে যাওয়ার পরও ব্যাংকে অলস অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। কারণ ব্যাংকগুলো তাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে পারেনি।
এমন সময় কিছুটা স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি তৈরি করে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ। বড় শিল্পের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা ও ছোট শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা রিফাইন্যান্স লোন ঘোষণা করার কারণে ঋণ বিতরণ কিছুটা বৃদ্ধি পায়। দুই খাতের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে বড় শিল্পের জন্য ঘোষিত ঋণের প্রায় পুরোটাই বিতরণ হলেও কম বিতরণ হয় ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ। তারপরও করোনা সংকটের সময় এই ঋণ বিরতণের কারণে ব্যাংক খাত কিছুটা চাঙ্গা থাকে।
এছাড়া করোনাকালীন বছরে ব্যাংক খাতে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে খেলাপি ঋণ। কাগজে কলমে খেলাপি ঋণ ততটা না বাড়লেও অলিখিত খেলাপি ঋণ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ করোনার সময় দফায় দফায় প্রজ্ঞাপন দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এই সময় ঋণের কিস্তি না দিলেও সেই ঋণকে খেলাপি দেখানো যাবে না। এতে অনেক ঋণ না পরিশোধ হলেও কাগজে কলমে খেলাপির খাতায় নেই। কিন্তু ব্যাংকাররা আশঙ্কা করছেন, এরমধ্যে অনেক ঋণখেলাপি হতে পারে যেটা পরে বোঝা যাবে। তাই করোনাকালে অপরিশোধিত কিস্তিগুলো যদি খেলাপি হয় তাহলে ব্যাংক খাতের জন্য অশনিসংকেত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুন মাস শেষে দেশের ৫৯ ব্যাংক মোট ১০ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এরমধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। খেলাপির পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই খেলাপি ঋণ দেশের অর্থনীতির জন্য বড় বোঝা।
শুক্রবার, ০১ জানুয়ারী ২০২১ , ১৭ পৌষ ১৪২৭, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
রেজাউল করিম
বছরের শুরুটা ভালোই ছিল। আশা করা হচ্ছিল, গত বছরের চেয়ে অর্থনীতির সব সূচকেই ভালো করবে বাংলাদেশ। ঠিক এমন সময় আসে করোনার আঘাত। এর প্রভাবে আমদানি-রপ্তানি কমেছে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে, কর্মসংস্থান কমেছে। তারপরও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সাহায্য করেছে প্রণোদনা প্যাকেজ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। কারণ বাংলাদেশ অন্য দেশের চেয়ে ভালো করেছে। নতুন বছর ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো নিয়ে সঠিক পরিকল্পনায় এগোলে প্রতিটি খাতই ভালো করবে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ থেকে ৫ শতাংশেরও বেশি।
স্বস্তিদায়ক জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা
অর্থনীতিতে করোনার আঘাতের পরও সরকার মনে করছে, চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। সরকার, বিশ্বব্যাংক ও এডিবি যারই পূর্বাভাস ঠিক হোক না হোক, করোনাভাইরাস দেশের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তারপরও করোনার প্রভাব কেটে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এমন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০২০-২৫)।
করোনার মধ্যেও বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সরকারি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, করোনার কারণে চলতি (গত) বছর চ্যালেঞ্জিং ছিল। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ প্রকিউরমেন্ট করেছে, সারাবিশ্বের অর্থনীতি গত বছরের তুলনায় চার ভাগ কমে গেছে। তবে অন্য দেশের তুলনায় আমরা ভালো আছি। আশা করছি, আমাদের আগামী (নতুন) বছর ভালো যাবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘করোনায় দেশের অর্থনীতিতে বড় অবনতি ঘটেছে। প্রথমত, জাতীয় উৎপাদন ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে। দ্বিতীয়ত, দারিদ্র্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে অনেক মানুষ। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলার জন্য সরকার সঠিক সময়ে উদ্যোগ নিচ্ছে।’ জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে ভালো করেছে। তাই নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ থেকে ৫ শতাংশের মতো হবে।’
ভবিষ্যতে কিছু উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে ব্যাংকিং খাতকে সচল করতে হবে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে। নতুন বাজার খুঁজতে হবে। বিদেশে শ্রমিক পাঠানো বাড়াতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বৃদ্ধি করতে হবে এবং যারা প্রকৃত ভুক্তভোগী তারা যেন এর আওতায় আসে তা নিশ্চিত করতে হবে।’
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির ওপর করোনার নেতিবাচক প্রভাব যেভাবে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা হয়নি। রেমিট্যান্সই অর্থনীতির অন্য সূচককে সবল রাখতে সাহায্য করেছে। তবে করোনায় কয়েক লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। অনেক মানুষ গ্রামে ফিরে গেছে। এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে সেটা পড়বে নতুন বছরের প্রবৃদ্ধিতে। এখন সেকেন্ড ওয়েভ চলছে। এতে যদি ক্রয়াদেশ কমে যায়, তাহলে অর্থনীতিতে ফের বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে।’ বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যদি বড় ধরনের আঘাত না হানে তাহলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের উপরে হবে।’
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর সংবাদকে বলেন, ‘করোনায় অন্য দেশগুলোর জিডিপি যেহেতু নেগেটিভে চলে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সে হিসাবে আমাদের অর্থনীতি ভালো করেছে। তবে গত (২০১৯) বছরের চেয়ে কোনভাবে অর্থনীতি ভালো নেই। এক কথায়, মন্দের মধ্যে আমরা ভালো আছি। যেমন রপ্তানি মাইনাসে রয়েছে, বিনিয়োগ মাইনাসে রয়েছে, কর্মসংস্থানের অবস্থাও খারাপ। আর সুখবর আছে যেসব খাতে বলা হচ্ছে, সেটা হলোÑ রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। মূলত রেমিট্যান্সের কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। তারপরও সুখবর তো কিছু আছেই। যেমন, সরকার সময় মতো প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেটা অর্থনীতির জন্য ভালো হয়েছে।’ চলতি অর্থবছরের জিডিপির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এডিবি জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে যা বলছে তা হবে না। তবে বাংলাদেশের জিডিপি পজেটিভেই থাকবে। আর করোনার মধ্যে পজেটিভে থাকাটাই স্বস্তিদায়ক।’
করোনার প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সরকারকে কোন ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘প্রথমে প্রতিটি জনগণের জন্য টিকা নিশ্চিত করতে হবে। টিকা বিতরণে যেন স্বচ্ছতা থাকে সেই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। পোশাক খাতে পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা কেমন, করোনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। সেই স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। এক বছর বন্ধ থেকে শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থাও খারাপ হয়েছে। এখান থেকেও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে উঠে দাঁড়াতে হবে।’
তৈরি পোশাক খাতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে সাদমা ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ’র পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য মোটেও ভালো হচ্ছে না। তারপরও আমরা কারখানাগুলো চালু রেখেছি। ব্যবসা বন্ধ করলে তো আগামী (নতুন) বছর চালু করতে পারব না।’ আগামী (নতুন) বছর কেমন যাবে বলে মনে করেন? এবং সরকারের পক্ষ থেকে কি ধরনের দাবি দাওয়া রয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আশা করছি, জানুয়ারির শেষের দিকে ভ্যাকসিন চলে আসবে। আমরা ফের নতুনভাবে শুরু করতে পারব। এই সংকটের সময় সরকার আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আগামী ছয় মাসও যেন সরকার আমাদের সঙ্গে থাকে সেটিই আমাদের প্রত্যাশা। বিশেষ করে সহজে ও কম সুদে যদি আমরা ঋণ পাই, তাহলে ব্যবসা দাঁড় করানো সহজ হবে।’
পোশাক শিল্পে বেকারত্বের রেকর্ড
পোশাক খাত দেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ খাত। পোশাক রপ্তানি না করতে পারায় বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো চলতে পারছে না। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি এক গবেষণায় দাবি করেছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের পোশাক কারখানাগুলো থেকে ৬০-৬৫ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, করোনাকালে কমপক্ষে এক থেকে দেড় লাখের বেশি শ্রমিক স্থায়ীভাবে ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। তবে অষ্টম (২০২১-২০২৫) পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকার প্রত্যাশা করছে, নতুন বছরে ২১ লাখ ৬০ হাজার কর্মসংস্থান হবে।
আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব
করোনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমদানি খাতে। গত এপ্রিলে আমদানি হয়েছিল মাত্র ২৮৫ কোটি ডলারের পণ্য, যা এক মাসের হিসাবে এক দশকের মধ্যে সর্বনি¤œ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মে মাসে ৩১ শতাংশ, এপ্রিলে ৪৪ শতাংশ, মার্চে ১৩ শতাংশ ও জানুয়ারিতে প্রায় ১৩ শতাংশ কম আমদানি হয়েছে। এছাড়া গত অর্থবছরে বিভিন্ন দেশ থেকে ৫ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম।
করোনায় রপ্তানি আয়েও বড় ধাক্কা লেগেছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। অক্টোবরে আবার হোঁচট লাগে রপ্তানি আয়ে। নভেম্বরে এসে আবার প্রবৃদ্ধির মুখ দেখে। তবে নভেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।
বিনিয়োগ শূন্যের কোটায়
করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কায় বিদেশি বিনিয়োগ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৭২ কোটি ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩১ শতাংশ কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১০৪ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ।
আলো জ্বালিয়ে রেখেছে প্রণোদনা
করোনা মহামারী গত মার্চ থেকে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে। এ সময় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রণোদনার খবরেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে অর্থনীতি।
দ্বিতীয় ধাক্কায় ফের প্রণোদনা
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) চূড়ান্তকরণ সভায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) সামনে রেখে আর্থিক প্রণোদনার একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম প্রণোদনার বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও এই প্রণোদনার কারণে ব্যবসায়ীরা মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়েছেন।
বিধ্বস্ত অর্থনীতির প্রভাব ব্যাংক খাতে
চলতি (গত) বছরটা ব্যাংক খাতের জন্য ভালোই ছিল। তবে করোনার কারণে ব্যাংক খাতেও নেমে আসে স্থবিরতা। করোনার বছরে ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কমেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসায় গ্রাহকরা সঞ্চয়ের টাকা তুলে খরচ করা শুরু করে। এতে আমানতও কমে যায়। তবে আমানত কমে যাওয়ার পরও ব্যাংকে অলস অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। কারণ ব্যাংকগুলো তাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে পারেনি।
এমন সময় কিছুটা স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি তৈরি করে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ। বড় শিল্পের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা ও ছোট শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা রিফাইন্যান্স লোন ঘোষণা করার কারণে ঋণ বিতরণ কিছুটা বৃদ্ধি পায়। দুই খাতের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে বড় শিল্পের জন্য ঘোষিত ঋণের প্রায় পুরোটাই বিতরণ হলেও কম বিতরণ হয় ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ। তারপরও করোনা সংকটের সময় এই ঋণ বিরতণের কারণে ব্যাংক খাত কিছুটা চাঙ্গা থাকে।
এছাড়া করোনাকালীন বছরে ব্যাংক খাতে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে খেলাপি ঋণ। কাগজে কলমে খেলাপি ঋণ ততটা না বাড়লেও অলিখিত খেলাপি ঋণ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ করোনার সময় দফায় দফায় প্রজ্ঞাপন দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এই সময় ঋণের কিস্তি না দিলেও সেই ঋণকে খেলাপি দেখানো যাবে না। এতে অনেক ঋণ না পরিশোধ হলেও কাগজে কলমে খেলাপির খাতায় নেই। কিন্তু ব্যাংকাররা আশঙ্কা করছেন, এরমধ্যে অনেক ঋণখেলাপি হতে পারে যেটা পরে বোঝা যাবে। তাই করোনাকালে অপরিশোধিত কিস্তিগুলো যদি খেলাপি হয় তাহলে ব্যাংক খাতের জন্য অশনিসংকেত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুন মাস শেষে দেশের ৫৯ ব্যাংক মোট ১০ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এরমধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। খেলাপির পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই খেলাপি ঋণ দেশের অর্থনীতির জন্য বড় বোঝা।