কমতে শুরু করেছে চালের দাম

শুল্ক হ্রাস ও আমদানির খবরে সারাদেশে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। তবে গত কয়েক সপ্তাহে যে পরিমাণ দাম বেড়েছিল, সেই তুলনায় কমেছে খুবই কম। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছিল ৭ থেকে ৮ টাকা। কিন্তু গত তিন দিনে কমেছে মাত্র ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ও সারাদেশে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

গতকাল সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে দেখা যায়, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা, নাজিরশাল ৬৫ টাকা, আটাশ চাল ৫২ টাকা, পাইজাম ও হাসকি ৫০ থেকে ৫২ টাকা। অর্থাৎ দাম বাড়লে বাড়ে বড় আকারে কিন্তু কমলে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা কমে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা মো. তৌহিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আড়ত থেকে পাইকারি চাল কিনি ৬০ টাকা থেকে ৬২ টাকা। তাহলে বিক্রি করব কত টাকায়? দোকান ভাড়া কিভাবে দিব, আর কর্মচারীদের বেতন কিভাবে দিব?

একই বাজারের নিউ শিমুল রাইস এজেন্সির মালিক আরমান খান আড়ত থেকে কেনা চালের রশিদ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এই নেন রশিদ। এখন আপনি বলেন, কয় টাকা লাভ করে চাল বিক্রি করব?’ চালের দাম বৃদ্ধিতে তিনিও মিল মালিকদের কারসাজিকে দায়ী করেন।

এ প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান সংবাদকে বলেন, ‘সরকারকে দুই দিকেই দেখতে হবে। কৃষক যেন উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পায় সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনিন আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘চালের দাম এতোটা বেড়ে গেছে যে আমদানি শুল্ক না কমিয়ে উপায় ছিল না সরকারের। তবে আমদানির বিষয়ে নজর রাখতে হবে।’

যশোর থেকে নিজস্ব বার্তা পরিবেশক জানান, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপে ধরা খেয়েছে চাল মজুতদাররা। অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে মজুত করা চাল বিক্রি করতে হবে কম দামে। সরকার চালের আমদানি শুল্ক কমানোর কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত চারদিনে প্রতি কেজি চালের দাম এক থেকে দেড় টাকা কমেছে। সামনে আরও কমবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

যশোর বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুশীল কুমার মন্ডল বলেন, আমদানি করার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমতে শুরু করেছে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, আমদানি শুল্ক কমানোর ঘোষণায় ইতোমধ্যে মোকামে কেনাবেচা কমে গেছে। নতুন করে অর্ডার দিচ্ছেন না পাইকাররা। মিলগেটে নতুন চাল বস্তা প্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

গৃহিণী সাবিহা রাসনা নিয়মিত বাজার করে থাকেন। তিনি জানান, নিত্যপণ্যের মূল্য একবার বাড়লে তা সহজে কমে না। তিনি আরও বলেন, পণ্যের দাম বাড়লে হাতে গোনা কয়েকজন সুবিধাভোগী মানুষ লাভবান হন, কিন্তু ক্ষতির মুখে পড়েন দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী।

সচেতন নাগরিক কমিটি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিকুল আলম টুটু বলেন, দেশে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থায় ঢিলেঢালা ভাব থাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাল নিয়ে মিল মালিক, ব্যবসায়ী ও মজুতদারিরা সুযোগ নিচ্ছে।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে দেয়ার খবরে স্থানীয় বাজার থেকে চালকলের মালিক ধান কেনা কমিয়ে দেয়ায় নওগাঁর বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম কমেছে ১০০ টাকা। হঠাৎ করে দাম কমাতে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকেরা। এদিকে ধানের দাম কমলেও স্থানীয় খুচরা এবং পাইকারি বাজারে চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। দেলুয়াবাড়ি বাজারের ধানের আড়তদার আবদুস সোবহান বলেন, ‘চাল আমদানির খবর শোনার পরপরই অনেক মিলার আড়তদারদের জানিয়ে দিয়েছেন, তারা আগে যেখানে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ থেকে সাত ট্রাক ধান কিনতেন, এখন সেখানে দুই থেকে তিন গাড়ি ধান কিনবেন। নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে দেয়ার খবরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা চাল কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে মোকামে চাল বিক্রি একেবারেই কমে গেছে।

শুক্রবার, ০১ জানুয়ারী ২০২১ , ১৭ পৌষ ১৪২৭, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

আমদানির খবরে সারাদেশে

কমতে শুরু করেছে চালের দাম

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

শুল্ক হ্রাস ও আমদানির খবরে সারাদেশে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। তবে গত কয়েক সপ্তাহে যে পরিমাণ দাম বেড়েছিল, সেই তুলনায় কমেছে খুবই কম। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছিল ৭ থেকে ৮ টাকা। কিন্তু গত তিন দিনে কমেছে মাত্র ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ও সারাদেশে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

গতকাল সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে দেখা যায়, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা, নাজিরশাল ৬৫ টাকা, আটাশ চাল ৫২ টাকা, পাইজাম ও হাসকি ৫০ থেকে ৫২ টাকা। অর্থাৎ দাম বাড়লে বাড়ে বড় আকারে কিন্তু কমলে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা কমে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা মো. তৌহিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আড়ত থেকে পাইকারি চাল কিনি ৬০ টাকা থেকে ৬২ টাকা। তাহলে বিক্রি করব কত টাকায়? দোকান ভাড়া কিভাবে দিব, আর কর্মচারীদের বেতন কিভাবে দিব?

একই বাজারের নিউ শিমুল রাইস এজেন্সির মালিক আরমান খান আড়ত থেকে কেনা চালের রশিদ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এই নেন রশিদ। এখন আপনি বলেন, কয় টাকা লাভ করে চাল বিক্রি করব?’ চালের দাম বৃদ্ধিতে তিনিও মিল মালিকদের কারসাজিকে দায়ী করেন।

এ প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান সংবাদকে বলেন, ‘সরকারকে দুই দিকেই দেখতে হবে। কৃষক যেন উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পায় সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনিন আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘চালের দাম এতোটা বেড়ে গেছে যে আমদানি শুল্ক না কমিয়ে উপায় ছিল না সরকারের। তবে আমদানির বিষয়ে নজর রাখতে হবে।’

যশোর থেকে নিজস্ব বার্তা পরিবেশক জানান, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপে ধরা খেয়েছে চাল মজুতদাররা। অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে মজুত করা চাল বিক্রি করতে হবে কম দামে। সরকার চালের আমদানি শুল্ক কমানোর কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত চারদিনে প্রতি কেজি চালের দাম এক থেকে দেড় টাকা কমেছে। সামনে আরও কমবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

যশোর বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুশীল কুমার মন্ডল বলেন, আমদানি করার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমতে শুরু করেছে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, আমদানি শুল্ক কমানোর ঘোষণায় ইতোমধ্যে মোকামে কেনাবেচা কমে গেছে। নতুন করে অর্ডার দিচ্ছেন না পাইকাররা। মিলগেটে নতুন চাল বস্তা প্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

গৃহিণী সাবিহা রাসনা নিয়মিত বাজার করে থাকেন। তিনি জানান, নিত্যপণ্যের মূল্য একবার বাড়লে তা সহজে কমে না। তিনি আরও বলেন, পণ্যের দাম বাড়লে হাতে গোনা কয়েকজন সুবিধাভোগী মানুষ লাভবান হন, কিন্তু ক্ষতির মুখে পড়েন দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী।

সচেতন নাগরিক কমিটি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিকুল আলম টুটু বলেন, দেশে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থায় ঢিলেঢালা ভাব থাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাল নিয়ে মিল মালিক, ব্যবসায়ী ও মজুতদারিরা সুযোগ নিচ্ছে।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে দেয়ার খবরে স্থানীয় বাজার থেকে চালকলের মালিক ধান কেনা কমিয়ে দেয়ায় নওগাঁর বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম কমেছে ১০০ টাকা। হঠাৎ করে দাম কমাতে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকেরা। এদিকে ধানের দাম কমলেও স্থানীয় খুচরা এবং পাইকারি বাজারে চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। দেলুয়াবাড়ি বাজারের ধানের আড়তদার আবদুস সোবহান বলেন, ‘চাল আমদানির খবর শোনার পরপরই অনেক মিলার আড়তদারদের জানিয়ে দিয়েছেন, তারা আগে যেখানে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ থেকে সাত ট্রাক ধান কিনতেন, এখন সেখানে দুই থেকে তিন গাড়ি ধান কিনবেন। নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে দেয়ার খবরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা চাল কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে মোকামে চাল বিক্রি একেবারেই কমে গেছে।