প্রবৃদ্ধির গতি আনতে সরকারি বেসকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর এমসিসিআইর

গত মে মাসে লকডাউন তুলে দেয়ার পর অর্থনীতিতে কিছুটা গতি ফিরে এলেও প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি ফেরাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে ধীরগতি, বিনিয়োগ হ্রাস এবং সামগ্রিক আয়ের শ্লথ প্রবৃদ্ধি। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্য সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ উল্লেযোগ্য মাত্রায় বাড়ানো প্রয়োজন।

মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা (এমসিসিআই) এর চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় দেশের অর্থনীতির এ চিত্র তুলে ধরা হয়। গতকাল পর্যালোচনাটি প্রকাশ করে তারা।

এর তথ্য অনুযায়ী, কৃষি খাতে চলতি অর্থবছরের তথ্য এখনও হাতে আসেনি। গত অর্থবছরে কৃষিক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ১১ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরে তা ছিল ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট উৎপাদনের ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। মোট শ্রমশক্তির ৩৯ শতাংশের কর্মসংস্থান হয়েছে এই খাতে। তবে সরকার করোনার কারণে ৫০০০ কোটি টাকা আর্থিক কর্মসূচি ঘোষণা করে এ খাতের জন্য। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক আরও ৫০০০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা ঘোষণা করে। এখন পর্যন্ত ৭৮,৫২৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সেই ঋণসহায়তার ৩৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ গ্রহণ করেছে বলে পর্যালোচনাটিতে জানানো হয়েছে।

শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিও ২০১৯-২০ এ কমে গেছে আগের অর্থবছরের তুলনায়। এ অর্থবছরের তথ্য এখন হাতে আসেনি এমসিসিআইর। গত অর্থবছরে করোনার কারণে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। ২০১৯-২০ এ প্রবৃদ্ধি হয় ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরে তা ছিল ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদনশীল শিল্প কল-কারখানায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে আরও কম। ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আগের অর্থবছরে ছিল ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ।

গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির এই নিম্নহার করোনার কারণে শেষ দুই প্রান্তিকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ার ফল।

তবে ক্ষুদ্র শিল্পে প্রবৃদ্ধি ততটা কমেনি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ১০ দশমিক ৯৫। পরের বছর তা হয়েছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। রকার এই খাতের প্রবৃদ্ধি ফেরাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে।

আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আরও ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ৮৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ ঋণ বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ বছর করোনার কারণে বিদ্যুতের ব্যবহারও কমে যায়। সার্বিকভাবে আর্থিকখাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে করোনার মধ্যে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। কিন্তু এক বছর পরে সেই প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট স্থবিরতা কাটতে শুরু করার পর চলতি অর্থবছর ২০২০-২১ এর প্রথম প্রান্তিকে কর আদায়ের পরিমাণ আগের বছরের এই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে।

আশা জাগিয়ে রপ্তানিও বেড়েছে এই সময়ে। আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।

বিদেশি অর্থ প্রবাহ বা রেমিট্যান্স কোভিড সত্ত্বেও বিস্ময়করভাবে বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, সরকোরের আর্থিক প্রণোদনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিসহায়তার সুবাদে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।

আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে কিঞ্চিত, দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। আগের বছর ছিল ৫ দশমিক ৬৮। এ বছর ৫ দশমিক ৯৭।

শুক্রবার, ০১ জানুয়ারী ২০২১ , ১৭ পৌষ ১৪২৭, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

প্রবৃদ্ধির গতি আনতে সরকারি বেসকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর এমসিসিআইর

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

গত মে মাসে লকডাউন তুলে দেয়ার পর অর্থনীতিতে কিছুটা গতি ফিরে এলেও প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি ফেরাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে ধীরগতি, বিনিয়োগ হ্রাস এবং সামগ্রিক আয়ের শ্লথ প্রবৃদ্ধি। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্য সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ উল্লেযোগ্য মাত্রায় বাড়ানো প্রয়োজন।

মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা (এমসিসিআই) এর চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় দেশের অর্থনীতির এ চিত্র তুলে ধরা হয়। গতকাল পর্যালোচনাটি প্রকাশ করে তারা।

এর তথ্য অনুযায়ী, কৃষি খাতে চলতি অর্থবছরের তথ্য এখনও হাতে আসেনি। গত অর্থবছরে কৃষিক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ১১ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরে তা ছিল ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট উৎপাদনের ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। মোট শ্রমশক্তির ৩৯ শতাংশের কর্মসংস্থান হয়েছে এই খাতে। তবে সরকার করোনার কারণে ৫০০০ কোটি টাকা আর্থিক কর্মসূচি ঘোষণা করে এ খাতের জন্য। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক আরও ৫০০০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা ঘোষণা করে। এখন পর্যন্ত ৭৮,৫২৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সেই ঋণসহায়তার ৩৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ গ্রহণ করেছে বলে পর্যালোচনাটিতে জানানো হয়েছে।

শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিও ২০১৯-২০ এ কমে গেছে আগের অর্থবছরের তুলনায়। এ অর্থবছরের তথ্য এখন হাতে আসেনি এমসিসিআইর। গত অর্থবছরে করোনার কারণে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। ২০১৯-২০ এ প্রবৃদ্ধি হয় ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরে তা ছিল ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদনশীল শিল্প কল-কারখানায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে আরও কম। ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আগের অর্থবছরে ছিল ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ।

গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির এই নিম্নহার করোনার কারণে শেষ দুই প্রান্তিকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ার ফল।

তবে ক্ষুদ্র শিল্পে প্রবৃদ্ধি ততটা কমেনি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ১০ দশমিক ৯৫। পরের বছর তা হয়েছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। রকার এই খাতের প্রবৃদ্ধি ফেরাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে।

আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আরও ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ৮৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ ঋণ বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ বছর করোনার কারণে বিদ্যুতের ব্যবহারও কমে যায়। সার্বিকভাবে আর্থিকখাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে করোনার মধ্যে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। কিন্তু এক বছর পরে সেই প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট স্থবিরতা কাটতে শুরু করার পর চলতি অর্থবছর ২০২০-২১ এর প্রথম প্রান্তিকে কর আদায়ের পরিমাণ আগের বছরের এই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে।

আশা জাগিয়ে রপ্তানিও বেড়েছে এই সময়ে। আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।

বিদেশি অর্থ প্রবাহ বা রেমিট্যান্স কোভিড সত্ত্বেও বিস্ময়করভাবে বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, সরকোরের আর্থিক প্রণোদনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিসহায়তার সুবাদে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।

আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে কিঞ্চিত, দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। আগের বছর ছিল ৫ দশমিক ৬৮। এ বছর ৫ দশমিক ৯৭।