ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
২০২০ সাল শেষ হয়ে গেল। দেশের ষোলো কোটি মানুষ আগ্রহ ও উৎসাহের সঙ্গে অপেক্ষা করছে নতুন ২০২১ সালকে অভ্যর্থনা জানাতে। একদিকে ২০২০ সাল হচ্ছে একটি দশকের সমাপ্তি বর্ষ- অন্যদিকে সরকারের বিভিন্ন মেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের বছর। ২০২০ সালের পরে ২০২১-এ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। অন্যদিকে জাতির পিতার শততম বর্ষপূর্তি পালন করা হবে। তাই ২০২১ সাল আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। বিগত ৫০ ও ১০০ বছরের ইতিহাস ও যাবতীয় কর্মকান্ডের এক চুলচেরা বিশ্লেষণ, হিসাব বিবরণী, বিশেষ অর্জনের স্তুতিগান, বিশেষ পর্যবেক্ষণ, সমীক্ষা, মূল্যায়ন, পরবর্তী ভিশন অর্জনের কর্মসূচি, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকার হলো আগত ২০২১ সাল। ঘটনাবহুল ২০২০-এর তালিকায় ভালো-মন্দ অনেক কিছুই আছে। হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নি, দুর্ঘটনা মৃত্যুর ঘটনা বাদে অন্যগুলো ততটা মর্মস্পর্শী নয়। তবে ২০২১-এ যেন এ জাতীয় মৃত্যুর পুনরাবৃত্তি না ঘটে দেশের জনগণ সে প্রত্যাশা করে।
২০২০ সাল কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য সারা বিশ্ববাসী ছিল আতঙ্কগ্রস্ত। এই মহামারী ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে ছড়িয়ে পড়লেও পুরো ২০২০ সালে বিশ্বকে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। এর রেশ ২০২১ সালেও থেকে যাবে। বলা হচ্ছে, ভ্যাকসিন হচ্ছে এর প্রতিষেধক। কিন্তু এ ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নতুন এক সংকটের জন্ম দেবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘মাই নেশন্স ফার্স্ট’ ধারণায় উদ্দীপ্ত হয়ে ভ্যাকসিনটি বাজারে আসার আগেই প্রি-অর্ডারের মাধ্যমে এর কোটি কোটি ডোজের প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছেন। আর এভাবেই জন্ম হয়েছে ‘ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ’। এর মূল কথা হচ্ছে, অন্য কোন দেশ ভ্যাকসিন পাক বা না পাক, নিজ দেশে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। ২০২১ সালে এ ভ্যাকসিনের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে জন্ম হবে এক ধরনের বৈষম্যের। বিংশ শতাব্দীতে ধনী ও গরিব দেশগুলোর মাঝে আর্থিক প্রশ্নে এক ধরনের বৈষম্যের জন্ম হয়েছিল। ধনী দেশ আরও ধনী হয়েছে, আর গরিব দেশ আরও গরিব হয়েছে। কিন্তু একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে ভ্যাকসিন নিয়ে নতুন ধরনের বৈষম্য। অনেক গরিব দেশের পক্ষেই কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন ক্রয়ে করা (প্রতি ব্যক্তির জন্য দুই ডোজ) সম্ভব হয়ে উঠবে না। যাই হোক ২০২১ সালে বিশ্বের সব দেশেই করোনা ভ্যাকসিনের সরবরাহ, সংরক্ষণ ও বিতরণে সহানুভূতি ও সহনশীলতা কাজ করবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করেন এমন গবেষকদের মতে, বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটি পরিবার আছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ কোটি পরিবার বাস করে গ্রামে। আর ১ কোটির বেশি পরিবার বসবাস করে শহরে। গ্রামে বসবাসরত মানুষের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ কাঁচাঘরে বসবাস করে। এদের একটি বড় অংশ স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও বৈদ্যুতিক সেবা থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই শিশু। তন্মধ্যে ১২ লাখ শিশু আছে, যাদের টোকাই বা পথশিশু বলা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১৩ লাখ শিশুর শীতের কাপড় নেই। প্রায় ৬ লাখ শিশু অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকলেও তাদের দেখার কেউ নেই। ৫ লক্ষাধিক শিশুর ঘর ও বিছানা নেই। প্রায় পাঁচ লাখ শিশুর গোসলের ব্যবস্থা নেই এবং তারা গোসল করতে পারে না। এ আলোচনার বাইরে থাকা অসংখ্য বনি আদমের খবর কেউ রাখেই না। তবে এ অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে এবং সরকার বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা চলমান আছে।
আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং ধাপে ধাপে সেটাকে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করা। আর এটি করতে রাষ্ট্রের প্রয়োজন দারিদ্র্য দূর করা, আয় ও ব্যয়ের বৈষম্য দূর করে স্বাধীনতার সনদে উল্লিখিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও রাষ্ট্রের সর্বত্র ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বাস্তব অবস্থা এর বিপরীত। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত দেশের কোটি কোটি নাগরিক যখন দিশেহারা, ঠিক তখনই কিছু ধনী মানুষের উত্থানের গল্প রীতিমতো অবাক করে দেয় তরুণ প্রজন্মকে। স্বাধীনতার এত বছরেও দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের তালিকা ও নারী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা জাতির সামনে প্রকাশ বা চূড়ান্ত হলো না; বরং উল্টো অসংখ্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ভুয়া সনদ নিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করল। অথচ বাংলার আনাচে-কানাচে পড়ে আছে অসংখ্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, যাদের মুখে দিনে একবার অন্ন জোটে না। তারামন ও কাঁকন বিবির মতো অসংখ্য নারী মুক্তিযোদ্ধা জীবন পার করছে এ বিলাসী জীবনযাপনকারী ব্যক্তিদের উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে, যাদের খবর কেউ রাখে না। একটি স্বাধীন দেশে এটি কখনই কাম্য হতে পারে না বলে মনে করে তরুণ প্রজন্ম।
২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতীয় সব ইস্যুতে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হোক। স্বাধীনতার সুফল জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সমানভাবে ভোগ করুক। কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ও ব্যক্তির মাঝে তা কুক্ষিগত না থাকুক। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিপূর্ণভাবে সুরক্ষিত থাকুক। ক্ষয়িষ্ণু লক্ষ্য আর নিশ্চল গণতন্ত্রে ফিরে আসুক গতিশীলতা। সুরুচি আর শালীনতা ফিরে আসুক রাজনৈতিক শব্দচয়নে। দূর হোক অশালীন আর কুরুচিপূর্ণ বাক্যবিনিময়। সাম্য, মানবিক মর্যাদা আর ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে ফিরে আসুক হারানো আত্মবিশ্বাস, আত্মনির্ভরশীলতা, মর্যাদাবোধ, জাতীয়তাবোধ, বলিষ্ঠ জীবন আর মানবতাবোধ।
ইতিহাসের সাহসী সন্তানরা লাখো প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। আমাদের দায়িত্ব এ দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’ তাহলেই বিশ্বদরবারে জাতি হিসেবে আমাদের সমৃদ্ধি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক,
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী]
শুক্রবার, ০১ জানুয়ারী ২০২১ , ১৭ পৌষ ১৪২৭, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
২০২০ সাল শেষ হয়ে গেল। দেশের ষোলো কোটি মানুষ আগ্রহ ও উৎসাহের সঙ্গে অপেক্ষা করছে নতুন ২০২১ সালকে অভ্যর্থনা জানাতে। একদিকে ২০২০ সাল হচ্ছে একটি দশকের সমাপ্তি বর্ষ- অন্যদিকে সরকারের বিভিন্ন মেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের বছর। ২০২০ সালের পরে ২০২১-এ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। অন্যদিকে জাতির পিতার শততম বর্ষপূর্তি পালন করা হবে। তাই ২০২১ সাল আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। বিগত ৫০ ও ১০০ বছরের ইতিহাস ও যাবতীয় কর্মকান্ডের এক চুলচেরা বিশ্লেষণ, হিসাব বিবরণী, বিশেষ অর্জনের স্তুতিগান, বিশেষ পর্যবেক্ষণ, সমীক্ষা, মূল্যায়ন, পরবর্তী ভিশন অর্জনের কর্মসূচি, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকার হলো আগত ২০২১ সাল। ঘটনাবহুল ২০২০-এর তালিকায় ভালো-মন্দ অনেক কিছুই আছে। হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নি, দুর্ঘটনা মৃত্যুর ঘটনা বাদে অন্যগুলো ততটা মর্মস্পর্শী নয়। তবে ২০২১-এ যেন এ জাতীয় মৃত্যুর পুনরাবৃত্তি না ঘটে দেশের জনগণ সে প্রত্যাশা করে।
২০২০ সাল কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য সারা বিশ্ববাসী ছিল আতঙ্কগ্রস্ত। এই মহামারী ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে ছড়িয়ে পড়লেও পুরো ২০২০ সালে বিশ্বকে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। এর রেশ ২০২১ সালেও থেকে যাবে। বলা হচ্ছে, ভ্যাকসিন হচ্ছে এর প্রতিষেধক। কিন্তু এ ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নতুন এক সংকটের জন্ম দেবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘মাই নেশন্স ফার্স্ট’ ধারণায় উদ্দীপ্ত হয়ে ভ্যাকসিনটি বাজারে আসার আগেই প্রি-অর্ডারের মাধ্যমে এর কোটি কোটি ডোজের প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছেন। আর এভাবেই জন্ম হয়েছে ‘ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ’। এর মূল কথা হচ্ছে, অন্য কোন দেশ ভ্যাকসিন পাক বা না পাক, নিজ দেশে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। ২০২১ সালে এ ভ্যাকসিনের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে জন্ম হবে এক ধরনের বৈষম্যের। বিংশ শতাব্দীতে ধনী ও গরিব দেশগুলোর মাঝে আর্থিক প্রশ্নে এক ধরনের বৈষম্যের জন্ম হয়েছিল। ধনী দেশ আরও ধনী হয়েছে, আর গরিব দেশ আরও গরিব হয়েছে। কিন্তু একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে ভ্যাকসিন নিয়ে নতুন ধরনের বৈষম্য। অনেক গরিব দেশের পক্ষেই কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন ক্রয়ে করা (প্রতি ব্যক্তির জন্য দুই ডোজ) সম্ভব হয়ে উঠবে না। যাই হোক ২০২১ সালে বিশ্বের সব দেশেই করোনা ভ্যাকসিনের সরবরাহ, সংরক্ষণ ও বিতরণে সহানুভূতি ও সহনশীলতা কাজ করবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করেন এমন গবেষকদের মতে, বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটি পরিবার আছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ কোটি পরিবার বাস করে গ্রামে। আর ১ কোটির বেশি পরিবার বসবাস করে শহরে। গ্রামে বসবাসরত মানুষের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ কাঁচাঘরে বসবাস করে। এদের একটি বড় অংশ স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও বৈদ্যুতিক সেবা থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই শিশু। তন্মধ্যে ১২ লাখ শিশু আছে, যাদের টোকাই বা পথশিশু বলা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১৩ লাখ শিশুর শীতের কাপড় নেই। প্রায় ৬ লাখ শিশু অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকলেও তাদের দেখার কেউ নেই। ৫ লক্ষাধিক শিশুর ঘর ও বিছানা নেই। প্রায় পাঁচ লাখ শিশুর গোসলের ব্যবস্থা নেই এবং তারা গোসল করতে পারে না। এ আলোচনার বাইরে থাকা অসংখ্য বনি আদমের খবর কেউ রাখেই না। তবে এ অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে এবং সরকার বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা চলমান আছে।
আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং ধাপে ধাপে সেটাকে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করা। আর এটি করতে রাষ্ট্রের প্রয়োজন দারিদ্র্য দূর করা, আয় ও ব্যয়ের বৈষম্য দূর করে স্বাধীনতার সনদে উল্লিখিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও রাষ্ট্রের সর্বত্র ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বাস্তব অবস্থা এর বিপরীত। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত দেশের কোটি কোটি নাগরিক যখন দিশেহারা, ঠিক তখনই কিছু ধনী মানুষের উত্থানের গল্প রীতিমতো অবাক করে দেয় তরুণ প্রজন্মকে। স্বাধীনতার এত বছরেও দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের তালিকা ও নারী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা জাতির সামনে প্রকাশ বা চূড়ান্ত হলো না; বরং উল্টো অসংখ্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ভুয়া সনদ নিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করল। অথচ বাংলার আনাচে-কানাচে পড়ে আছে অসংখ্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, যাদের মুখে দিনে একবার অন্ন জোটে না। তারামন ও কাঁকন বিবির মতো অসংখ্য নারী মুক্তিযোদ্ধা জীবন পার করছে এ বিলাসী জীবনযাপনকারী ব্যক্তিদের উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে, যাদের খবর কেউ রাখে না। একটি স্বাধীন দেশে এটি কখনই কাম্য হতে পারে না বলে মনে করে তরুণ প্রজন্ম।
২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতীয় সব ইস্যুতে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হোক। স্বাধীনতার সুফল জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সমানভাবে ভোগ করুক। কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ও ব্যক্তির মাঝে তা কুক্ষিগত না থাকুক। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিপূর্ণভাবে সুরক্ষিত থাকুক। ক্ষয়িষ্ণু লক্ষ্য আর নিশ্চল গণতন্ত্রে ফিরে আসুক গতিশীলতা। সুরুচি আর শালীনতা ফিরে আসুক রাজনৈতিক শব্দচয়নে। দূর হোক অশালীন আর কুরুচিপূর্ণ বাক্যবিনিময়। সাম্য, মানবিক মর্যাদা আর ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে ফিরে আসুক হারানো আত্মবিশ্বাস, আত্মনির্ভরশীলতা, মর্যাদাবোধ, জাতীয়তাবোধ, বলিষ্ঠ জীবন আর মানবতাবোধ।
ইতিহাসের সাহসী সন্তানরা লাখো প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। আমাদের দায়িত্ব এ দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’ তাহলেই বিশ্বদরবারে জাতি হিসেবে আমাদের সমৃদ্ধি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক,
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী]