ব্যাপক লোকসানের মুখে জ্যাক মা

সম্প্রতি ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে জ্যাক মা। হঠাৎ করেই ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবার ওপর খ—গহস্ত হয়েছে চীন সরকার। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের হস্তক্ষেপে ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছে আলিবাবা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট গ্রুপের আইপিও। এরপরই শুরু হয়েছে আলিবাবার বিরুদ্ধে সরকারি নিরীক্ষা। এতে মাত্র দুই মাসে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের সম্পদ হারিয়েছেন আলিবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। রয়টার্স।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্যাক মা চীনের প্রযুক্তি খাতের বিস্ময়কর উত্থানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এ বছর তার সম্পদ ৬১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে এবং এশিয়ার শীর্ষ ধনী ব্যক্তির খেতাব ফিরে পাওয়ার পথে ছিলেন। কিন্তু অক্টোবরের শেষ নাগাদ চীন সরকার তার কোম্পানির বিষয়ে কঠোর নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করায় তার সম্পদ দুই মাসে ১১ বিলিয়ন ডলার কমে বছর শেষে ৫০ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ফলে ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার ইনডেক্সে বিশ্বের ৫০০ ধনী ব্যক্তির তালিকায় ২৫তম স্থানে নেমে যায় তার নাম।

এর আগে আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তের একচেটিয়া আচরণের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। এটি করা হয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্লাটফর্মে পণ্য বিক্রিকে ঠেকানোর জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে আলিবাবা ও টেনসেন্টের মতো চীনা টেক জায়ান্টদের ব্যাপকভাবে সরকারি নজরদারির মাঝে পড়তে হয়েছে। অক্টোবরে সাংহাইয়ে এক কনফারেন্সে তিনি বলেছিলেন, এটি অর্থনৈতিক বিকাশের পর্যায়ে একটি জটিল মুহূর্ত। পরের ২০ মিনিট তিনি সরকারের আইনকানুন নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। যেখানে হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে তিনি বলেছিলেন, চীনে কোন নিয়মতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ঝুঁকি নেই। কারণ চীনে কোন নিয়মই নেই। তার সেই বক্তব্যের পর থেকে চীনের প্রযুক্তি জগতের ওপর খ—গ নেমে আসতে শুরু করে। এটি মূলত খোলামেলা আলাপে অভ্যস্ত একজন নির্বাহীর নির্দোষ কথাবার্তা ছিল, যিনি মূলত আত্মবিশ্বাসী আলাপের জন্য অধিক পরিচিত ছিলেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেপ্টেম্বর থেকে চীন সরকার একটি সমন্বিত কঠোর নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা চালু করে। নভেম্বরে অ্যান্ট গ্রুপের পাবলিক অফারিং বিচ্ছিন্ন করা হয়। পাশাপাশি নতুন অ্যান্টিট্রাস্ট আইনও সামনে আসে, যা আলিবাবা গ্রুপের বাজারমূল্য কমিয়ে এনেছে ১৪০ বিলিয়ন ডলার কিংবা ১৭ শতাংশ। এর মাঝে সবসময় উজ্জ্বল দেখা যাওয়া মা এক রকম লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। পরে ডিসেম্বরের শুরুতে যখন তার সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রক পর্যবেক্ষণে অধীনে তখন সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম এই আলোচিত ব্যক্তিকে সরকারের পক্ষ থেকে দেশে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে সম্পদ ও প্রভাব নিম্নগামী হওয়া শুরু করলেও ব্যক্তিগতভাবে এখনও মা বেশ শক্ত আছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিকটজন। এদিকে অনেকেই বলছেন, বেইজিং দেশের প্রযুক্তি খাতের জায়ান্টদের অতিরিক্ত ক্ষমতা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতাকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবেও দেখা হচ্ছে, যাকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

এক সময় অর্থনৈতিক উন্নতির অন্যতম চালক হিসেবে দারুণ প্রশংসিত হয়েছিলেন জ্যাক মা, টেনসেন্ট হোল্ডিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান মা হুয়াটেং এবং অন্য ব্যবসায়ী মোঘল। বিশাল পরিমাণ ভোক্তাকে নিজেদের পতাকাতলে এনে চীনের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাবও ফেলেছিলেন তারা। কিন্তু সন্দেহের তীর এখন তাক করা হয়েছে তাদের সবার দিকে।

শনিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২১ , ১৮ পৌষ ১৪২৭, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

ব্যাপক লোকসানের মুখে জ্যাক মা

সংবাদ ডেস্ক |

image

সম্প্রতি ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে জ্যাক মা। হঠাৎ করেই ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবার ওপর খ—গহস্ত হয়েছে চীন সরকার। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের হস্তক্ষেপে ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছে আলিবাবা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট গ্রুপের আইপিও। এরপরই শুরু হয়েছে আলিবাবার বিরুদ্ধে সরকারি নিরীক্ষা। এতে মাত্র দুই মাসে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের সম্পদ হারিয়েছেন আলিবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। রয়টার্স।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্যাক মা চীনের প্রযুক্তি খাতের বিস্ময়কর উত্থানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এ বছর তার সম্পদ ৬১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে এবং এশিয়ার শীর্ষ ধনী ব্যক্তির খেতাব ফিরে পাওয়ার পথে ছিলেন। কিন্তু অক্টোবরের শেষ নাগাদ চীন সরকার তার কোম্পানির বিষয়ে কঠোর নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করায় তার সম্পদ দুই মাসে ১১ বিলিয়ন ডলার কমে বছর শেষে ৫০ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ফলে ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার ইনডেক্সে বিশ্বের ৫০০ ধনী ব্যক্তির তালিকায় ২৫তম স্থানে নেমে যায় তার নাম।

এর আগে আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তের একচেটিয়া আচরণের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। এটি করা হয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্লাটফর্মে পণ্য বিক্রিকে ঠেকানোর জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে আলিবাবা ও টেনসেন্টের মতো চীনা টেক জায়ান্টদের ব্যাপকভাবে সরকারি নজরদারির মাঝে পড়তে হয়েছে। অক্টোবরে সাংহাইয়ে এক কনফারেন্সে তিনি বলেছিলেন, এটি অর্থনৈতিক বিকাশের পর্যায়ে একটি জটিল মুহূর্ত। পরের ২০ মিনিট তিনি সরকারের আইনকানুন নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। যেখানে হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে তিনি বলেছিলেন, চীনে কোন নিয়মতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ঝুঁকি নেই। কারণ চীনে কোন নিয়মই নেই। তার সেই বক্তব্যের পর থেকে চীনের প্রযুক্তি জগতের ওপর খ—গ নেমে আসতে শুরু করে। এটি মূলত খোলামেলা আলাপে অভ্যস্ত একজন নির্বাহীর নির্দোষ কথাবার্তা ছিল, যিনি মূলত আত্মবিশ্বাসী আলাপের জন্য অধিক পরিচিত ছিলেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেপ্টেম্বর থেকে চীন সরকার একটি সমন্বিত কঠোর নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা চালু করে। নভেম্বরে অ্যান্ট গ্রুপের পাবলিক অফারিং বিচ্ছিন্ন করা হয়। পাশাপাশি নতুন অ্যান্টিট্রাস্ট আইনও সামনে আসে, যা আলিবাবা গ্রুপের বাজারমূল্য কমিয়ে এনেছে ১৪০ বিলিয়ন ডলার কিংবা ১৭ শতাংশ। এর মাঝে সবসময় উজ্জ্বল দেখা যাওয়া মা এক রকম লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। পরে ডিসেম্বরের শুরুতে যখন তার সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রক পর্যবেক্ষণে অধীনে তখন সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম এই আলোচিত ব্যক্তিকে সরকারের পক্ষ থেকে দেশে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে সম্পদ ও প্রভাব নিম্নগামী হওয়া শুরু করলেও ব্যক্তিগতভাবে এখনও মা বেশ শক্ত আছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিকটজন। এদিকে অনেকেই বলছেন, বেইজিং দেশের প্রযুক্তি খাতের জায়ান্টদের অতিরিক্ত ক্ষমতা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতাকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবেও দেখা হচ্ছে, যাকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

এক সময় অর্থনৈতিক উন্নতির অন্যতম চালক হিসেবে দারুণ প্রশংসিত হয়েছিলেন জ্যাক মা, টেনসেন্ট হোল্ডিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান মা হুয়াটেং এবং অন্য ব্যবসায়ী মোঘল। বিশাল পরিমাণ ভোক্তাকে নিজেদের পতাকাতলে এনে চীনের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাবও ফেলেছিলেন তারা। কিন্তু সন্দেহের তীর এখন তাক করা হয়েছে তাদের সবার দিকে।