‘করোনা দূর হোক, আমাদের স্কুল শুরু হোক’

‘করোনা দূর হোক, আমাদের স্কুল শুরু হোক’ এটা কোন স্লোগান নয়। এটা হলো কমলমতি শিশুদের মনের কথা। গতকাল সারাদেশে স্কুলগুলোতে পালিত হয়েছে নতুন বই উৎসব। এই উৎসবে ম্লান হয়ে গেল করোনার আতঙ্ক। তবুও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিতরণ করা হয়েছে বিনামূল্যে বই। নতুন বই হাতে পেয়ে এভাবে মনের কথা ব্যক্ত করল বরিশালের মুলাদী থানার নাজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ইসমাঈল সিকদার। ইসমাঈল সংবাদকে বলেন, ক্লাস ফোরের ৬টি বই পেয়েছি। বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি, সমাজ, বিজ্ঞান ও ইসলাম শিক্ষা। নতুন বইয়ের আনন্দ অন্য রকম। সুন্দর একটি ঘ্রাণ আসে। তবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা-করোনা দূর হোক, আমাদের স্কুল শুরু হোক।

গত বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বই বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং ইবতেদায়ির ১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৩ শিক্ষার্থীকে ২৪ কোটি ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫৭টি বই এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ২ কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থীর হাতে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি বই বিতরণ করা হবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছে। গত ১১ বছরে ৩৬৬ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৬টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এবারের বই বিতরণ শেষ হলে সর্বমোট ৪০১ কোটি ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৮টি বই বিতরণ করা হবে।

প্রাথমিকের শিক্ষা কর্মকর্তা সূত্র জানায়, গতকাল ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের প্রধান শিক্ষকরা বলেছেন, সব ক্লাসের বই এখনও হাতে পাননি তারা। আগামী দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে সব বই পাওয়া যাবে বলে শিক্ষা অফিস থেকে তাদের জানানো হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার বছরের প্রথম দিন একসঙ্গে পাঠ্যপুস্তক উৎসব না করে ভাগে ভাগে ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২টি বই তুলে দেয়া হবে। প্রাথমিক স্তরের বইগুলো শুক্র ও শনিবার এবং মাধ্যমিকের বইগুলো ১ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বিতরণ করতে সরকারের তরফ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকের সব বই বিতরণের জন্য সময়মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠনো হলেও মহামারীর মধ্যে বই ছাপনোর কাজে বিঘœ ঘটায় মাধ্যমিকের সব বই এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো সম্ভব হয়নি। মাধ্যমিকের যেসব বই এখনও বিদ্যালয়ে পাঠানো সম্ভব হয়নি, সেসব বই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পাঠানো হবে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দেখা যায়নি কচিকাঁচা মুখগুলো। শ্রেণীকক্ষেও ছিল সুনশান নীরবতা। কিন্তু বছরের প্রথম দিনেই যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। চারদিকে শিশু শিক্ষার্থীদের হাসির কলকল ধ্বনি। অভিভাবকদের হাজার বাধা সত্ত্বেও নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পেতে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছেন তারা। গতকাল নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

কোভিডের কারণে অভিভাবকদের হাতেই প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেয়ার সরকারি নির্দেশনা ছিল। তবে বিদ্যালয়গুলোতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। নতুন বই নিতে অভিভাবকদের সঙ্গে নাছোড়বান্দা সন্তানরাও উপস্থিত হয়েছেন। একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, সরকারি ছুটির দিন হলেও সরকারি নির্দেশনা মতে বছরের প্রথম দিনে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে অভিভাবকদের সঙ্গে এসেছে তাদের সন্তানরাও। একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, নতুন বই নিজ হাতে নেবে বলে বাসায় থাকতে রাজি হয়নি তাদের সন্তানরা। হাজার বাধা সত্ত্বেও তারা বিদ্যালয়ে আসবেই। বাধ্য হয়ে তাদেরও সঙ্গে নিয়ে আসতে হয়েছে বলে জানান অভিভাবকরা। তবে তাদের সবার মুখেই ছিল মাস্ক। বই নিয়েছেন নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহীন্দ্র কুমার মন্ডল বলেন, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এই শিশুরাই দেশের সম্পদ। তাই তাদের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে ভার্চুয়ালি, টেলিভিশন, অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কেননা এই শিশুরাই সুশিক্ষিত হয়ে দেশের হাল ধরবে। তিনি জানান, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য ১৭ লাখ ১৮ হাজার ৮৬২টি নতুন বই এসেছে। এরমধ্যে ইংরেজি ভার্সনের মোট ৮ হাজার ১৩টি বই। জেলাজুড়ে ৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৮ জন শিক্ষার্থীর মাঝে এসব বই বিতরণ করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ

নতুন বছরের প্রথম দিনে নারায়ণগঞ্জে নতুন বই পেয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ১০টায় সদর উপজেলার ৭৪নং কুতুব আইল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে এতে অংশ নেয় বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সময় ভাগ করে প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ করা হয়।

সকালে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহীন্দ্র কুমার মণ্ডল, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল হাসান, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শামীম ইয়াসমিন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিদা সুলতানা, মুক্তা বেগম, মনির হোসেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরিয়ম খাতুন প্রমুখ।

টঙ্গী (গাজীপুর)

গতকাল সকালে টঙ্গীর সিরাজউদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন অ্যান্ড কলেজ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে সরকারি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন কলেজ অধ্যক্ষ মো. ওয়াদুদুর রহমান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিরাজউদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান। ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন বই হাতে পেয়ে আনন্দে উল্লাসিত।

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সিমীত আকারে বই বিতরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে সদরের মির্জাপুর সরকারি এসকে পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. হারুন অর রশিদ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রফুল্ল কুমার সরকার প্রমুখ।

নওগাঁ

নওগাঁয় প্রাথমিক পর্যায়ে ১ কোটি ৪১ লাখ ৭ হাজার ৩শ’ ৩টি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৮শ’ ৩০টি বই বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বই উৎসব শুরু হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় শহরের হাটনওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নতুন বই তুলে দিয়ে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. হারুন-অর-রশিদ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে ২০২১ সালের নতুন বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। গতকাল বছরের প্রথম দিনেই স্ব স্ব বিদ্যালয়ে সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার মাধ্যমে এই বই উৎসব কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উদ্বেলিত হয়ে উঠে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা শহরের নবাবগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সীমিত পরিসরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুল ইসলাম সরকার।

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর ইউনিয়নের কোকদণ্ডী গুনাগরী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল সকালে বিদ্যালয় হলরুমে বই বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণপ্রসাদ সেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আ.ন.ম. শাহাদত আলম।

রংপুর

নতুন বছরের প্রথম দিনে রংপুরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করা হয়েছে। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে অল্প কিছু শিক্ষার্থীদের স্কুলে এনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নতুন বই দেয়া হয়েছে। বছরের প্রথম দিনে বই পেয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দে আত্মহারা। তারা নতুন বই দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বরিশাল

চলমান করোনা সংকটের মধ্যে বরিশালে বছরের প্রথম দিন সংক্ষিপ্তভাবে বই উৎসব উদ্বোধন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান গতকাল নগরীর সিস্টার ডে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন। এর মধ্যদিয়ে বরিশালে সর্বপ্রথম বই বিতরণ কার্যক্রমের শুভ সূচনা হলো। স্বল্প পরিসরের এ অনুষ্ঠানে দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয়ে আসতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা।

image

সারাদেশে গতকাল বিনামূল্যে বই বিতরণ উৎসব চলে। খুদে শিক্ষার্থীরা বই হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাস ও আনন্দে আত্মহারা। ছবিটি রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে তোলা

আরও খবর
আওয়ামী লীগ সব সময় দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে প্রধানমন্ত্রী
অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দিল ভারত
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পানি পর্যবেক্ষণ শুরু আজ থেকে
পিয়ারের উচ্চতা জটিলতা সমাধানে দুটি করে পাইল বৃদ্ধির সুপারিশ
নতুন বছরে ৬ লাখ মামলা কমানোর পরিকল্পনা
একদিনে ১৭ মৃত্যু নতুন শনাক্ত হাজারের নিচে
চার জেলায় সড়কে ঝরল ৮ প্রাণ
সিলেট জেলা আ’লীগ থেকে বাদ পড়ছেন ১১ নেতা
বাড়ির ছাদে ছাদে আতশবাজিতে নতুন বছরকে বরণ

শনিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২১ , ১৮ পৌষ ১৪২৭, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

‘করোনা দূর হোক, আমাদের স্কুল শুরু হোক’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

সারাদেশে গতকাল বিনামূল্যে বই বিতরণ উৎসব চলে। খুদে শিক্ষার্থীরা বই হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাস ও আনন্দে আত্মহারা। ছবিটি রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে তোলা

‘করোনা দূর হোক, আমাদের স্কুল শুরু হোক’ এটা কোন স্লোগান নয়। এটা হলো কমলমতি শিশুদের মনের কথা। গতকাল সারাদেশে স্কুলগুলোতে পালিত হয়েছে নতুন বই উৎসব। এই উৎসবে ম্লান হয়ে গেল করোনার আতঙ্ক। তবুও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিতরণ করা হয়েছে বিনামূল্যে বই। নতুন বই হাতে পেয়ে এভাবে মনের কথা ব্যক্ত করল বরিশালের মুলাদী থানার নাজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ইসমাঈল সিকদার। ইসমাঈল সংবাদকে বলেন, ক্লাস ফোরের ৬টি বই পেয়েছি। বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি, সমাজ, বিজ্ঞান ও ইসলাম শিক্ষা। নতুন বইয়ের আনন্দ অন্য রকম। সুন্দর একটি ঘ্রাণ আসে। তবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা-করোনা দূর হোক, আমাদের স্কুল শুরু হোক।

গত বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বই বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং ইবতেদায়ির ১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৩ শিক্ষার্থীকে ২৪ কোটি ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫৭টি বই এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ২ কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থীর হাতে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি বই বিতরণ করা হবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছে। গত ১১ বছরে ৩৬৬ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৬টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এবারের বই বিতরণ শেষ হলে সর্বমোট ৪০১ কোটি ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৮টি বই বিতরণ করা হবে।

প্রাথমিকের শিক্ষা কর্মকর্তা সূত্র জানায়, গতকাল ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের প্রধান শিক্ষকরা বলেছেন, সব ক্লাসের বই এখনও হাতে পাননি তারা। আগামী দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে সব বই পাওয়া যাবে বলে শিক্ষা অফিস থেকে তাদের জানানো হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার বছরের প্রথম দিন একসঙ্গে পাঠ্যপুস্তক উৎসব না করে ভাগে ভাগে ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২টি বই তুলে দেয়া হবে। প্রাথমিক স্তরের বইগুলো শুক্র ও শনিবার এবং মাধ্যমিকের বইগুলো ১ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বিতরণ করতে সরকারের তরফ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকের সব বই বিতরণের জন্য সময়মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠনো হলেও মহামারীর মধ্যে বই ছাপনোর কাজে বিঘœ ঘটায় মাধ্যমিকের সব বই এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো সম্ভব হয়নি। মাধ্যমিকের যেসব বই এখনও বিদ্যালয়ে পাঠানো সম্ভব হয়নি, সেসব বই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পাঠানো হবে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দেখা যায়নি কচিকাঁচা মুখগুলো। শ্রেণীকক্ষেও ছিল সুনশান নীরবতা। কিন্তু বছরের প্রথম দিনেই যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। চারদিকে শিশু শিক্ষার্থীদের হাসির কলকল ধ্বনি। অভিভাবকদের হাজার বাধা সত্ত্বেও নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পেতে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছেন তারা। গতকাল নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

কোভিডের কারণে অভিভাবকদের হাতেই প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেয়ার সরকারি নির্দেশনা ছিল। তবে বিদ্যালয়গুলোতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। নতুন বই নিতে অভিভাবকদের সঙ্গে নাছোড়বান্দা সন্তানরাও উপস্থিত হয়েছেন। একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, সরকারি ছুটির দিন হলেও সরকারি নির্দেশনা মতে বছরের প্রথম দিনে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে অভিভাবকদের সঙ্গে এসেছে তাদের সন্তানরাও। একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, নতুন বই নিজ হাতে নেবে বলে বাসায় থাকতে রাজি হয়নি তাদের সন্তানরা। হাজার বাধা সত্ত্বেও তারা বিদ্যালয়ে আসবেই। বাধ্য হয়ে তাদেরও সঙ্গে নিয়ে আসতে হয়েছে বলে জানান অভিভাবকরা। তবে তাদের সবার মুখেই ছিল মাস্ক। বই নিয়েছেন নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহীন্দ্র কুমার মন্ডল বলেন, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এই শিশুরাই দেশের সম্পদ। তাই তাদের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে ভার্চুয়ালি, টেলিভিশন, অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কেননা এই শিশুরাই সুশিক্ষিত হয়ে দেশের হাল ধরবে। তিনি জানান, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য ১৭ লাখ ১৮ হাজার ৮৬২টি নতুন বই এসেছে। এরমধ্যে ইংরেজি ভার্সনের মোট ৮ হাজার ১৩টি বই। জেলাজুড়ে ৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৮ জন শিক্ষার্থীর মাঝে এসব বই বিতরণ করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ

নতুন বছরের প্রথম দিনে নারায়ণগঞ্জে নতুন বই পেয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ১০টায় সদর উপজেলার ৭৪নং কুতুব আইল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে এতে অংশ নেয় বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সময় ভাগ করে প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ করা হয়।

সকালে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহীন্দ্র কুমার মণ্ডল, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল হাসান, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শামীম ইয়াসমিন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিদা সুলতানা, মুক্তা বেগম, মনির হোসেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরিয়ম খাতুন প্রমুখ।

টঙ্গী (গাজীপুর)

গতকাল সকালে টঙ্গীর সিরাজউদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন অ্যান্ড কলেজ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে সরকারি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন কলেজ অধ্যক্ষ মো. ওয়াদুদুর রহমান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিরাজউদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান। ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন বই হাতে পেয়ে আনন্দে উল্লাসিত।

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সিমীত আকারে বই বিতরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে সদরের মির্জাপুর সরকারি এসকে পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. হারুন অর রশিদ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রফুল্ল কুমার সরকার প্রমুখ।

নওগাঁ

নওগাঁয় প্রাথমিক পর্যায়ে ১ কোটি ৪১ লাখ ৭ হাজার ৩শ’ ৩টি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৮শ’ ৩০টি বই বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বই উৎসব শুরু হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় শহরের হাটনওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নতুন বই তুলে দিয়ে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. হারুন-অর-রশিদ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে ২০২১ সালের নতুন বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। গতকাল বছরের প্রথম দিনেই স্ব স্ব বিদ্যালয়ে সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার মাধ্যমে এই বই উৎসব কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উদ্বেলিত হয়ে উঠে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা শহরের নবাবগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সীমিত পরিসরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুল ইসলাম সরকার।

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর ইউনিয়নের কোকদণ্ডী গুনাগরী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল সকালে বিদ্যালয় হলরুমে বই বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণপ্রসাদ সেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আ.ন.ম. শাহাদত আলম।

রংপুর

নতুন বছরের প্রথম দিনে রংপুরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করা হয়েছে। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে অল্প কিছু শিক্ষার্থীদের স্কুলে এনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নতুন বই দেয়া হয়েছে। বছরের প্রথম দিনে বই পেয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দে আত্মহারা। তারা নতুন বই দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বরিশাল

চলমান করোনা সংকটের মধ্যে বরিশালে বছরের প্রথম দিন সংক্ষিপ্তভাবে বই উৎসব উদ্বোধন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান গতকাল নগরীর সিস্টার ডে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন। এর মধ্যদিয়ে বরিশালে সর্বপ্রথম বই বিতরণ কার্যক্রমের শুভ সূচনা হলো। স্বল্প পরিসরের এ অনুষ্ঠানে দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয়ে আসতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা।