ব্রিটেনের হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চাপে ব্রিটেনের হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। ব্রিটেনে এখন করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ চলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও তাদের আশঙ্কা, এখনও এই দফার সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছায়নি দেশটি। লন্ডনের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের উপচে পড়া ভিড়ে প্রচ- চাপ পড়েছে। রয়্যাল লন্ডন হাসপাতাল জানিয়েছে, তারা দুর্যোগপূর্ণ ওষুধ পরিস্থিতি চালু করেছে। এর অর্থ হলো তারা উচ্চমানের জরুরি সেবা দিতে পারবে না। চালু করা হয়েছে বেশ কয়েকটি নাইটিঙ্গেল হাসপাতাল। বিবিসি

যুক্তরাজ্যে ৫৫ হাজার ৮৯২ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৯৬৪ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৮০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৭৩ হাজার ৫১২ জনের। লন্ডনের ইনটেভি কেয়ারের শীর্ষ একজন চিকিৎসক অধ্যাপক হিউ মন্টোগোমারি এ পরিস্থিতির জন্য যারা লকডাউনে বিধিনিষেধ ভেঙেছেন এবং মাস্ক পরেননি তাদেরই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, যারা লকডাউন, বিধি-নিষেধ ভাঙছেন, মাস্ক ব্যবহার করছেন না, তাদের হাতে রক্ত রয়েছে। লন্ডনের একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিশ্বজিৎ রায় জানান, তার চাকরি জীবনে হাসপাতালে রোগীর এমন চাপ তিনি এর আগে কখনও দেখেননি। তিনি যে হাসপাতালে কাজ করেন সেখানে অতিরিক্ত শতাধিক বেড সংযোজন করেও রোগীর চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে না। বিশ্বজিৎ রায় বলেন, আমার হাসপাতালে বেড অনুযায়ী রোগী নেয়া হয়। কিন্তু বেড সব পূর্ণ হয়ে এখন অন্য জায়গা যেমন ওয়েটিং এরিয়া, করিডোর সব রোগীর জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে যে কাকে রেখে কাকে চিকিৎসা দেব। তিনি আরও বলেন, একজন রোগী এলে তাকে তো অক্সিজেন, চিকিৎসা কিংবা প্রয়োজনীয় জরুরি অন্য সহায়তা দিতে হবে। এগুলো দিতে নার্স বা স্টাফ যত থাকা দরকার তা রোগীর অনুপাতে অনেক কমে গেছে। হাসপাতালে যেসব জায়গায় রোগী রাখা যায় সেগুলোর সব জায়গায় রোগী রাখার পরেও বাইরে রোগী অপেক্ষারত রয়েছেন জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, কিন্তু আমরা তো নির্ধারণ করতে পারছি না যে কাকে অগ্রাধিকার দেব। আমরা কল্পনাও করতে পারিনি পরিস্থিতি এমন হবে।

বিশ্বজিৎ রায় আরও বলেন, ব্রিটেনে চিকিৎসা দেয়া একটি টিমওয়ার্কের বিষয় অর্থাৎ ডাক্তার, নার্স, হেলথওয়ার্কার, অক্সিজেন ও চিকিৎসা যাকে যতটুকু দরকার সেটি দিতে হয় ও এসব সাপোর্ট পর্যাপ্ত থাকতে হয়। কিন্তু আমরা হিমশিম খাচ্ছি কাকে রেখে কাকে রিসিভ করব, কোনটাকে অগ্রাধিকার দেব, কোথায় রাখবো, কী লজিস্টিক, কে অক্সিজেন ম্যানেজ করবে, কে ওষুধ দেবে- সব কিছু নিয়ে হিমশিম অবস্থা।

কিন্তু দ্বিতীয় ওয়েভে এসে কী পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বজিৎ রায় বলছেন, ভয়াবহ। সেদিন দেখলাম নন কোভিড প্যাটেন্ট রোগী এসেছিল। তাদের ওয়েটিং এরিয়ায় ট্রিটমেন্ট দিতে হচ্ছে। আর কোন জায়গা ছিল না। ওদিকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী অপেক্ষা করছে। এ অবস্থা বাড়তে থাকবে। মনে হচ্ছে সেকেন্ড ওয়েভের পিক পয়েন্টে আমরা এখনও যাইনি।

শনিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২১ , ১৮ পৌষ ১৪২৭, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

ব্রিটেনের হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে

image

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চাপে ব্রিটেনের হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। ব্রিটেনে এখন করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ চলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও তাদের আশঙ্কা, এখনও এই দফার সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছায়নি দেশটি। লন্ডনের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের উপচে পড়া ভিড়ে প্রচ- চাপ পড়েছে। রয়্যাল লন্ডন হাসপাতাল জানিয়েছে, তারা দুর্যোগপূর্ণ ওষুধ পরিস্থিতি চালু করেছে। এর অর্থ হলো তারা উচ্চমানের জরুরি সেবা দিতে পারবে না। চালু করা হয়েছে বেশ কয়েকটি নাইটিঙ্গেল হাসপাতাল। বিবিসি

যুক্তরাজ্যে ৫৫ হাজার ৮৯২ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৯৬৪ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৮০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৭৩ হাজার ৫১২ জনের। লন্ডনের ইনটেভি কেয়ারের শীর্ষ একজন চিকিৎসক অধ্যাপক হিউ মন্টোগোমারি এ পরিস্থিতির জন্য যারা লকডাউনে বিধিনিষেধ ভেঙেছেন এবং মাস্ক পরেননি তাদেরই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, যারা লকডাউন, বিধি-নিষেধ ভাঙছেন, মাস্ক ব্যবহার করছেন না, তাদের হাতে রক্ত রয়েছে। লন্ডনের একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিশ্বজিৎ রায় জানান, তার চাকরি জীবনে হাসপাতালে রোগীর এমন চাপ তিনি এর আগে কখনও দেখেননি। তিনি যে হাসপাতালে কাজ করেন সেখানে অতিরিক্ত শতাধিক বেড সংযোজন করেও রোগীর চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে না। বিশ্বজিৎ রায় বলেন, আমার হাসপাতালে বেড অনুযায়ী রোগী নেয়া হয়। কিন্তু বেড সব পূর্ণ হয়ে এখন অন্য জায়গা যেমন ওয়েটিং এরিয়া, করিডোর সব রোগীর জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে যে কাকে রেখে কাকে চিকিৎসা দেব। তিনি আরও বলেন, একজন রোগী এলে তাকে তো অক্সিজেন, চিকিৎসা কিংবা প্রয়োজনীয় জরুরি অন্য সহায়তা দিতে হবে। এগুলো দিতে নার্স বা স্টাফ যত থাকা দরকার তা রোগীর অনুপাতে অনেক কমে গেছে। হাসপাতালে যেসব জায়গায় রোগী রাখা যায় সেগুলোর সব জায়গায় রোগী রাখার পরেও বাইরে রোগী অপেক্ষারত রয়েছেন জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, কিন্তু আমরা তো নির্ধারণ করতে পারছি না যে কাকে অগ্রাধিকার দেব। আমরা কল্পনাও করতে পারিনি পরিস্থিতি এমন হবে।

বিশ্বজিৎ রায় আরও বলেন, ব্রিটেনে চিকিৎসা দেয়া একটি টিমওয়ার্কের বিষয় অর্থাৎ ডাক্তার, নার্স, হেলথওয়ার্কার, অক্সিজেন ও চিকিৎসা যাকে যতটুকু দরকার সেটি দিতে হয় ও এসব সাপোর্ট পর্যাপ্ত থাকতে হয়। কিন্তু আমরা হিমশিম খাচ্ছি কাকে রেখে কাকে রিসিভ করব, কোনটাকে অগ্রাধিকার দেব, কোথায় রাখবো, কী লজিস্টিক, কে অক্সিজেন ম্যানেজ করবে, কে ওষুধ দেবে- সব কিছু নিয়ে হিমশিম অবস্থা।

কিন্তু দ্বিতীয় ওয়েভে এসে কী পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বজিৎ রায় বলছেন, ভয়াবহ। সেদিন দেখলাম নন কোভিড প্যাটেন্ট রোগী এসেছিল। তাদের ওয়েটিং এরিয়ায় ট্রিটমেন্ট দিতে হচ্ছে। আর কোন জায়গা ছিল না। ওদিকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী অপেক্ষা করছে। এ অবস্থা বাড়তে থাকবে। মনে হচ্ছে সেকেন্ড ওয়েভের পিক পয়েন্টে আমরা এখনও যাইনি।