নারী নেত্রী আয়শা খানমের জীবনাবসান

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি, নারী নেত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়শা খানম আর নেই। গতকাল ভোরে রাজধানীতে নিজ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আয়শা খানমের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন। বিকেলে জানাজা শেষে স্বামীর বাড়ি নেত্রকোনা পৌরসভার কাটলি গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও আয়শা খানমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। শোক জানিয়েছেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরুসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বাসদ, সিপিবি, জাতীয় পার্টি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও আয়শা খানমের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে।

আয়শা খানম বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব প্রগতিশীল আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। তিনি ছাত্রজীবন শেষে বঞ্চিত অধিকারহীন নারীদের অধিকার আদায়ে আমৃত্যু নিয়োজিত ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি আয়শা খানম বাষট্টির ছাত্রআন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন।

গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় আয়শা খানমের মরদেহ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেয়া হয়, সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে নেত্রকোনায় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন, সাবেক ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, পুলিশ সুপার আকবর আলি মুন্সীসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তার মৃত্যুতে স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, রাজনৈতিক নেতারা, বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা গভীর শোক প্রকাশ করেন।

আয়শা খানমের জন্ম নেত্রকোনার গাবড়াগাতি গ্রামে ১৯৪৭ সালের ১৮ অক্টোবর। পাকিস্তান আমলে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মধ্যদিয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করতে নামেন তিনি। ডামি রাইফেল হাতে ঢাকায় নারী শিক্ষার্থীদের মিছিলের যে ছবি আলোচিত হয়, তাতে আয়শা খানমও ছিলেন। এছাড়া ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বক্তৃতা দিয়েছিলেন আয়শা খানম? দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজেকে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত করেন আয়শা খানম। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্যাতনের শিকার নারীদের পুনর্বাসন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় কাজও করেন তিনি? শুরু থেকেই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আয়শা খানম। প্রথমে ছিলেন সহ-সাধারণ সম্পাদক, দশক কাল আগে সভাপতি নির্বাচিত হন এবং আমৃত্যু সেই পদে ছিলেন। আয়শা খানম এক কন্যা, আত্মীয়-স্বজন এবং অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।

image
আরও খবর
দেশীয় কয়লা উত্তোলন থেকে দূরে থাকা আত্মঘাতী নীতি
নির্বাচন এলে অভিযোগের বাক্স খুলে বসে বিএনপি তথ্যমন্ত্রী
বরিশালে করোনা পরীক্ষার আরটি পিসিআর ল্যাব আবারও বন্ধ
বিতর্কিতরা যাতে কমিটিতে আসতে না পারে দল সচেষ্ট থাকবে কাদের
বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা পৌঁছে দিয়েছি ১৪৪টি দেশে : নাজমুন
গত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাংলা সাহিত্যিক শওকত ওসমান
নাট্যব্যক্তিত্ব মীর মুজতবা আলীর জন্মোৎসব
দিনাজপুরে শতবর্ষী মঞ্চে নাটক ‘ক্ষত-বিক্ষত’
বাঁশখালীতে বঙ্গবন্ধুর নামে সমুদ্র সৈকত ও পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার দাবি
কম্পিউটার অপারেটর থেকে এজিএম : আড়াই বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি
আশ্রয়হীন ১৫৩৪ পরিবার পাচ্ছে স্থায়ী ঠিকানা
ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গৃহবধূ
গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে একদলীয় শাসন চলছে ফখরুল

রবিবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২১ , ১৯ পৌষ ১৪২৭, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

নারী নেত্রী আয়শা খানমের জীবনাবসান

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি, নারী নেত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়শা খানম আর নেই। গতকাল ভোরে রাজধানীতে নিজ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আয়শা খানমের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন। বিকেলে জানাজা শেষে স্বামীর বাড়ি নেত্রকোনা পৌরসভার কাটলি গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও আয়শা খানমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। শোক জানিয়েছেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরুসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বাসদ, সিপিবি, জাতীয় পার্টি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও আয়শা খানমের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে।

আয়শা খানম বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব প্রগতিশীল আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। তিনি ছাত্রজীবন শেষে বঞ্চিত অধিকারহীন নারীদের অধিকার আদায়ে আমৃত্যু নিয়োজিত ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি আয়শা খানম বাষট্টির ছাত্রআন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন।

গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় আয়শা খানমের মরদেহ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেয়া হয়, সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে নেত্রকোনায় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন, সাবেক ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, পুলিশ সুপার আকবর আলি মুন্সীসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তার মৃত্যুতে স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, রাজনৈতিক নেতারা, বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা গভীর শোক প্রকাশ করেন।

আয়শা খানমের জন্ম নেত্রকোনার গাবড়াগাতি গ্রামে ১৯৪৭ সালের ১৮ অক্টোবর। পাকিস্তান আমলে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মধ্যদিয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করতে নামেন তিনি। ডামি রাইফেল হাতে ঢাকায় নারী শিক্ষার্থীদের মিছিলের যে ছবি আলোচিত হয়, তাতে আয়শা খানমও ছিলেন। এছাড়া ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বক্তৃতা দিয়েছিলেন আয়শা খানম? দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজেকে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত করেন আয়শা খানম। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্যাতনের শিকার নারীদের পুনর্বাসন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় কাজও করেন তিনি? শুরু থেকেই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আয়শা খানম। প্রথমে ছিলেন সহ-সাধারণ সম্পাদক, দশক কাল আগে সভাপতি নির্বাচিত হন এবং আমৃত্যু সেই পদে ছিলেন। আয়শা খানম এক কন্যা, আত্মীয়-স্বজন এবং অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।