রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ৩২ জন কম্পিউটার অপারেটর জ্যেষ্ঠতা ও অভিজ্ঞতাকে পাশকাটিয়ে অনিয়ম এবং অবৈধভাবে চারবার পদবি বদল ও তিনবার পদোন্নতি নিয়ে ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) হয়েছেন। এই চরম অনিয়মের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত শুরু করলেও দীর্ঘ আড়াই বছরেও সে তদন্ত শেষ হচ্ছে না। জানা গেছে, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা এসব অনিয়মের সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন। তবে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে আরও সময় প্রয়োজন। তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের অনিয়ম প্রমাণিত হলে দুদক মামলা করবে।
সোনালী ব্যাংকে ঘুষবাণিজ্য ও অনিয়মের মাধ্যমে এভাবে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি হওয়া এবং চারবার পদবি বদল ও তিনবার পদোন্নতি হওয়া সম্পর্কে ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট ‘সংবাদ’-এ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। পরে এ দুর্নীতির বিষয়টি আমলে নিয়ে দুদক তদন্ত শুরু করে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে। দুদকের উপসহকারী পরিচালক নূর আলম সিদ্দিকীকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। জানা গেছে, তদন্ত কর্মকর্তা সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে দুদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। দুদকের এ সংক্রান্ত তদন্তের আরেকটি খবর দৈনিক সংবাদে ২০১৯ সালের ৭ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে। অবৈধভাবে কম্পিউটার অপারেটরদের এজিএম হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার আরেকটি খবর দৈনিক সংবাদে ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট প্রকাশিত হয়। এ সব খবর ছাপা হওয়ার পর দুদক তদন্ত শুরু করলেও অজ্ঞাত কারণে দীর্ঘ সময়েও তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে না।
জানা যায়, সোনালী ব্যাংকে ২০০৪ সালে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কম্পিউটার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা প্রার্থীদের কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। শুরুতে এ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া তদারকি করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে যে, তখনকার প্রভাবশালী সিবিএ নেতাদের প্রভাব বিস্তার ও অপকৌশলের কারণে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপে বুয়েটের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে শুধু কম্পিউটারে টাইপ করতে জানা এবং ভুয়া কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সনদ ও অভিজ্ঞতা সনদধারী ১০০ জনকে কম্পিউটার অপারেটর ও প্রায় ৫০ জনকে সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর ৪ বছরের মধ্যে ঘুষ প্রদানসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংকের মূল ধারায় তাদের পদোন্নতি শুরু হয়।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড হওয়ার পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে পরিচালনা পর্ষদ অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করে কম্পিউটার অপারেটর পদকে অ্যাসিস্ট্যান্ট অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে অনুমোদন দেয়। কম্পিউটার অপারেটর পদটি ব্লক পোস্ট হলেও অনিয়ম করে তাদের পদের নাম পরিবর্তন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। যারা কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি নিয়েছেন তাদের তো মূলধারার ব্যাংকিংয়ের কোন অভিজ্ঞতা নেই।
২০১২ সালে তাদের অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। ২০১৫ সালে পরিচালনা পর্ষদ আবার অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করে কম্পিউটার অপারেটরদের মূলধারার ব্যাংকিংয়ে যুক্ত করতে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে অনুমোদন দেয়। পরিচালনা পর্ষদ ২০১৮ সালে ১৩১ জন এবং ২০১৯ সালে ১৩৫ জনকে এজিএম পদে পদোন্নতি দেয়। কম্পিউটার অপারেটরদের মধ্য থেকে একাধিকবার পদ পরিবর্তন এবং পদোন্নতি পেয়ে ২০১৮ সালে ২২ জন এবং ২০১৯ সালে ১০ জন এজিএম হয়েছেন। অথচ তাদের সবাই কম্পিউটার অপারেটর (ব্লক পোস্ট) হিসেবে চাকরি নিয়েছেন। জানা গেছে, এভাবে অবৈধ উপায়ে পদবি পরিবর্তন এবং পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখন এজিএম থেকে ডিজিএম পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য নানা উপায়ে বিভিন্ন মহলে তদবির করছেন।
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের এই অনিয়ম নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে তদন্ত করছেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক নূর আলম সিদ্দিকী। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি নিয়ম অনুযায়ী কোন কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তদন্ত কতদিনে শেষ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি এ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অনিয়ম করে যারা পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের সবাইকেই দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনেকে নিজের পক্ষে নানা যুক্তি ও কাগজপত্র উপস্থাপন করেছেন। তবে তাদের পদোন্নতির ব্যাপারে অনিয়ম হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদক। জানা গেছে, দুদক প্রশ্ন তুলেছে যে, কম্পিউটার অপারেটর পদকে কোন নিয়মের ভিত্তিতে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অ্যাসিস্ট্যান্ট অপারেশন ম্যানেজার এবং শেষ পর্যন্ত তাদের এজিএম হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায় তদন্ত করতে গিয়ে আরও বিষয় বেরিয়ে আসছে। ফলে তদন্তের পরিধি অনেক বেড়েছে। এজন্য তদন্ত শেষ করতে আরও ৬ মাস লাগতে পারে।
রবিবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২১ , ১৯ পৌষ ১৪২৭, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ৩২ জন কম্পিউটার অপারেটর জ্যেষ্ঠতা ও অভিজ্ঞতাকে পাশকাটিয়ে অনিয়ম এবং অবৈধভাবে চারবার পদবি বদল ও তিনবার পদোন্নতি নিয়ে ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) হয়েছেন। এই চরম অনিয়মের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত শুরু করলেও দীর্ঘ আড়াই বছরেও সে তদন্ত শেষ হচ্ছে না। জানা গেছে, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা এসব অনিয়মের সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন। তবে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে আরও সময় প্রয়োজন। তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের অনিয়ম প্রমাণিত হলে দুদক মামলা করবে।
সোনালী ব্যাংকে ঘুষবাণিজ্য ও অনিয়মের মাধ্যমে এভাবে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি হওয়া এবং চারবার পদবি বদল ও তিনবার পদোন্নতি হওয়া সম্পর্কে ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট ‘সংবাদ’-এ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। পরে এ দুর্নীতির বিষয়টি আমলে নিয়ে দুদক তদন্ত শুরু করে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে। দুদকের উপসহকারী পরিচালক নূর আলম সিদ্দিকীকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। জানা গেছে, তদন্ত কর্মকর্তা সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে দুদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। দুদকের এ সংক্রান্ত তদন্তের আরেকটি খবর দৈনিক সংবাদে ২০১৯ সালের ৭ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে। অবৈধভাবে কম্পিউটার অপারেটরদের এজিএম হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার আরেকটি খবর দৈনিক সংবাদে ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট প্রকাশিত হয়। এ সব খবর ছাপা হওয়ার পর দুদক তদন্ত শুরু করলেও অজ্ঞাত কারণে দীর্ঘ সময়েও তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে না।
জানা যায়, সোনালী ব্যাংকে ২০০৪ সালে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কম্পিউটার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা প্রার্থীদের কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। শুরুতে এ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া তদারকি করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে যে, তখনকার প্রভাবশালী সিবিএ নেতাদের প্রভাব বিস্তার ও অপকৌশলের কারণে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপে বুয়েটের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে শুধু কম্পিউটারে টাইপ করতে জানা এবং ভুয়া কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সনদ ও অভিজ্ঞতা সনদধারী ১০০ জনকে কম্পিউটার অপারেটর ও প্রায় ৫০ জনকে সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর ৪ বছরের মধ্যে ঘুষ প্রদানসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংকের মূল ধারায় তাদের পদোন্নতি শুরু হয়।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড হওয়ার পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে পরিচালনা পর্ষদ অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করে কম্পিউটার অপারেটর পদকে অ্যাসিস্ট্যান্ট অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে অনুমোদন দেয়। কম্পিউটার অপারেটর পদটি ব্লক পোস্ট হলেও অনিয়ম করে তাদের পদের নাম পরিবর্তন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। যারা কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি নিয়েছেন তাদের তো মূলধারার ব্যাংকিংয়ের কোন অভিজ্ঞতা নেই।
২০১২ সালে তাদের অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। ২০১৫ সালে পরিচালনা পর্ষদ আবার অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করে কম্পিউটার অপারেটরদের মূলধারার ব্যাংকিংয়ে যুক্ত করতে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে অনুমোদন দেয়। পরিচালনা পর্ষদ ২০১৮ সালে ১৩১ জন এবং ২০১৯ সালে ১৩৫ জনকে এজিএম পদে পদোন্নতি দেয়। কম্পিউটার অপারেটরদের মধ্য থেকে একাধিকবার পদ পরিবর্তন এবং পদোন্নতি পেয়ে ২০১৮ সালে ২২ জন এবং ২০১৯ সালে ১০ জন এজিএম হয়েছেন। অথচ তাদের সবাই কম্পিউটার অপারেটর (ব্লক পোস্ট) হিসেবে চাকরি নিয়েছেন। জানা গেছে, এভাবে অবৈধ উপায়ে পদবি পরিবর্তন এবং পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখন এজিএম থেকে ডিজিএম পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য নানা উপায়ে বিভিন্ন মহলে তদবির করছেন।
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের এই অনিয়ম নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে তদন্ত করছেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক নূর আলম সিদ্দিকী। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি নিয়ম অনুযায়ী কোন কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তদন্ত কতদিনে শেষ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি এ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অনিয়ম করে যারা পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের সবাইকেই দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনেকে নিজের পক্ষে নানা যুক্তি ও কাগজপত্র উপস্থাপন করেছেন। তবে তাদের পদোন্নতির ব্যাপারে অনিয়ম হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদক। জানা গেছে, দুদক প্রশ্ন তুলেছে যে, কম্পিউটার অপারেটর পদকে কোন নিয়মের ভিত্তিতে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অ্যাসিস্ট্যান্ট অপারেশন ম্যানেজার এবং শেষ পর্যন্ত তাদের এজিএম হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায় তদন্ত করতে গিয়ে আরও বিষয় বেরিয়ে আসছে। ফলে তদন্তের পরিধি অনেক বেড়েছে। এজন্য তদন্ত শেষ করতে আরও ৬ মাস লাগতে পারে।