শীতকালীন সবজিতে পুষ্টির জোগান

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

বাংলাদেশের ঋতু পরিক্রমায় শীতকালটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে অন্য অনেককিছুর সঙ্গে শীতকালীন শাকসবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সাধারণত শীতের শুরুর দিকে উৎপাদন কম হওয়ায় তখন এগুলো শাকসবজির মূল্য অনেক বেশি থাকে। সে সময় সবার পক্ষে এত দাম দিয়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণ শাকসবজি সবাই কিনে খেতে পারে না। কারণ বাংলাদেশের সব মানুষের ক্রয় সামর্থ্য সমান নয়। এখন বাজারে শীতকালীন শাকসবজির অনেক সরবরাহ। কাজেই সেসব শীতকালীন শাকসবজি এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর ক্রয়মূল্য সবার নাগালের মধ্যেই রয়েছে।

কোন একটি ফসল উৎপাদিত হওয়ার পর তা পরবর্তী মৌসুমে আবার নতুনভাবে উৎপাদিত না হওয়া পর্যন্ত সেগুলো দিয়ে বাকি সময়ের চাহিদা মেটাতে হয়। এর মধ্যে বিদেশে রপ্তানি, সময়মতো আমদানি করতে না পারা, সঠিকভাবে ও পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে না পারা। এমনকি অনেক সময় অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে মৌসুমের মধ্যখানে এসে ক্রাইসিস দেখা দিতে পারে। তখন আবার মূল্য বেড়ে যায়। গত বছরের শেষ দিকে এসে পিয়াজ, গোল আলুর মূল্যবৃদ্ধি তেমন একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। কিন্তু সরকার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে এবং বাঙালি উদ্যোগী কৃষক ভাইদের মাথার ঘামে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে।

শাকসবজি বিষয়টি পুরো বিপরীত। কারণ শাকসবজি তাজা ও কাঁচা প্রকৃতির হওয়ায় তা পচনশীল হয়ে থাকে, যা দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণ করে গুদামজাত করা যায় না। আর সেজন্যই উৎপাদন মৌসুমে এসব শাকসবজির মূল্য খুবই উঠা-নামা করতে দেখা যায়। সেজন্য শীতকালীন শাকসবজি নিয়ে অনেক সময় বিপর্যয়ে পড়তে দেখা যায় উৎপাদক কৃষককে। অনেক সময় পানির দরে বিক্রি করতে হয় সেসব শাকসবজি। গত দুবছর আগেও আলু, টমেটো ইত্যাদি বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে দিতে দেখেছি। কিন্তু এ বছর এখনও দাম এমন পর্যায়ে রয়েছে যেখানে উৎপাদক ও ভোক্তা কাউকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে না।

এখন করোনাকাল চলছে। করোনাকালে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শারীরিক রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব বলে স্বাস্থ্যবিধির অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উল্লিখিত শীতকালীন শাকসবজি খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শীতকালে মানুষের শরীরে পুষ্টির বিশেষ কিছু চাহিদা সৃষ্টি হয়। সেখানে বাংলাদেশে উৎপাদি শাকসবজি খুবই ভালো। যেসব শাকসবজি মোটেও সংরক্ষণ করে রেখে খাওয়া যায় না সেসব তাৎক্ষণিক সংগ্রহ করে খেতে হবে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ইত্যাদি রেখে খাওয়া যায় না। কিন্তু গোল আলু, টমেটো ইত্যাদি সারা বছরই খাওয়া যায়। তবে এখন বাজারে শীতকালীন শাকসবজি অনেক সরবরাহ ও সমারোহ। সেজন্য দাম কম বলে প্রয়োজন মতো সবাই কিনে খেতে পারছেন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় গড়ে কমপক্ষে ২৫০ গ্রাম শাকসবজি থাকার বিষয়টি এখন নিশ্চিত করা সম্ভব। কাজেই সবাইকেই এ সময়ে বেশি পরিমাণে শীতকালীন শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেয়া প্রয়োজন। এটি সম্ভব তার কারণ শীতকালীন সব শাকসবজিই এখন দামে এবং উৎপাদনে সবার নাগালোর মধ্যে।

[লেখক : কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়]

kbdhumayun08@gmail.com

রবিবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২১ , ১৯ পৌষ ১৪২৭, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

শীতকালীন সবজিতে পুষ্টির জোগান

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

image

বাংলাদেশের ঋতু পরিক্রমায় শীতকালটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে অন্য অনেককিছুর সঙ্গে শীতকালীন শাকসবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সাধারণত শীতের শুরুর দিকে উৎপাদন কম হওয়ায় তখন এগুলো শাকসবজির মূল্য অনেক বেশি থাকে। সে সময় সবার পক্ষে এত দাম দিয়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণ শাকসবজি সবাই কিনে খেতে পারে না। কারণ বাংলাদেশের সব মানুষের ক্রয় সামর্থ্য সমান নয়। এখন বাজারে শীতকালীন শাকসবজির অনেক সরবরাহ। কাজেই সেসব শীতকালীন শাকসবজি এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর ক্রয়মূল্য সবার নাগালের মধ্যেই রয়েছে।

কোন একটি ফসল উৎপাদিত হওয়ার পর তা পরবর্তী মৌসুমে আবার নতুনভাবে উৎপাদিত না হওয়া পর্যন্ত সেগুলো দিয়ে বাকি সময়ের চাহিদা মেটাতে হয়। এর মধ্যে বিদেশে রপ্তানি, সময়মতো আমদানি করতে না পারা, সঠিকভাবে ও পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে না পারা। এমনকি অনেক সময় অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে মৌসুমের মধ্যখানে এসে ক্রাইসিস দেখা দিতে পারে। তখন আবার মূল্য বেড়ে যায়। গত বছরের শেষ দিকে এসে পিয়াজ, গোল আলুর মূল্যবৃদ্ধি তেমন একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। কিন্তু সরকার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে এবং বাঙালি উদ্যোগী কৃষক ভাইদের মাথার ঘামে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে।

শাকসবজি বিষয়টি পুরো বিপরীত। কারণ শাকসবজি তাজা ও কাঁচা প্রকৃতির হওয়ায় তা পচনশীল হয়ে থাকে, যা দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণ করে গুদামজাত করা যায় না। আর সেজন্যই উৎপাদন মৌসুমে এসব শাকসবজির মূল্য খুবই উঠা-নামা করতে দেখা যায়। সেজন্য শীতকালীন শাকসবজি নিয়ে অনেক সময় বিপর্যয়ে পড়তে দেখা যায় উৎপাদক কৃষককে। অনেক সময় পানির দরে বিক্রি করতে হয় সেসব শাকসবজি। গত দুবছর আগেও আলু, টমেটো ইত্যাদি বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে দিতে দেখেছি। কিন্তু এ বছর এখনও দাম এমন পর্যায়ে রয়েছে যেখানে উৎপাদক ও ভোক্তা কাউকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে না।

এখন করোনাকাল চলছে। করোনাকালে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শারীরিক রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব বলে স্বাস্থ্যবিধির অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উল্লিখিত শীতকালীন শাকসবজি খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শীতকালে মানুষের শরীরে পুষ্টির বিশেষ কিছু চাহিদা সৃষ্টি হয়। সেখানে বাংলাদেশে উৎপাদি শাকসবজি খুবই ভালো। যেসব শাকসবজি মোটেও সংরক্ষণ করে রেখে খাওয়া যায় না সেসব তাৎক্ষণিক সংগ্রহ করে খেতে হবে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ইত্যাদি রেখে খাওয়া যায় না। কিন্তু গোল আলু, টমেটো ইত্যাদি সারা বছরই খাওয়া যায়। তবে এখন বাজারে শীতকালীন শাকসবজি অনেক সরবরাহ ও সমারোহ। সেজন্য দাম কম বলে প্রয়োজন মতো সবাই কিনে খেতে পারছেন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় গড়ে কমপক্ষে ২৫০ গ্রাম শাকসবজি থাকার বিষয়টি এখন নিশ্চিত করা সম্ভব। কাজেই সবাইকেই এ সময়ে বেশি পরিমাণে শীতকালীন শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেয়া প্রয়োজন। এটি সম্ভব তার কারণ শীতকালীন সব শাকসবজিই এখন দামে এবং উৎপাদনে সবার নাগালোর মধ্যে।

[লেখক : কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়]

kbdhumayun08@gmail.com