ওএমএস চালে অনিয়ম করা আ’লীগ নেতা পেলেন সমাজসেবা পুরস্কার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ওএমএস কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যক্তিকে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানকারী হিসেবে সরকারিভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা সমাজসেবা বিভাগ আর প্রশাসনের এই উদ্যোগ সমালোচনার ঝড় তুলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সর্বত্র। করোনা পরিস্থিতির শুরুতে গত মে মাসে সরকারের দেয়া বিশেষ ওএমএস তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক প্রভাব খাটান জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক ও শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ওএমএস ডিলার মো. শাহ আলম। ভিক্ষুক, ভবঘুরে, সাধারণ শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, চায়ের দোকানদার, তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়েরলোকজনের বদলে নিজের স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনদের নাম উঠান তালিকায়। গণমাধ্যমে এই খবর আসার পর জেলা প্রশাসন তদন্তে নেমে তার-স্ত্রী-সন্তানসহ ১৩ জনের নাম পায় ওই তালিকায়।

তারা হচ্ছেন- শাহ আলমের স্ত্রী মোছাম্মৎ মমতাজ আলম, মেয়ে আফরোজা, ডিলারের কাতার প্রবাসী শ্যালকের স্ত্রী মোছাম্মৎ জান্নাতুল ইসলাম, আরেক শ্যালকের স্ত্রী আছমা ইসলাম, বোন শামসুন্নাহার, মালয়েশিয়া প্রবাসী ভাতিজা নাছির, ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবহন শ্রমিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিম, আরেক ভাই মো. আলমগীর, শ্যালক মো. তাজুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম, বোনের দেবর আতাউর মিয়া, লুৎফুর মিয়া ও মাহবুব মিয়া। এরপরই জেলা ওএমএস কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান ১১ মে ডিলার মো. শাহ আলমের কাছে তার ডিলারশিপ কেন বাতিল করা হবে না মর্মে ব্যাখ্যা তলব করেন।

এতে বলা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রমণের উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে পৌর এলাকার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে কাউতলীর শহীদ লুৎফুর রহমান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ওএমএস ডিলার হিসেবে আপনি (শাহ আলম) ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রি করছেন। ১০নং ওয়ার্ডের ওএমএসের ভোক্তা তালিকায় আপনার স্ত্রী, মেয়ে, ভাই-বোনসহ নিকট আত্বীয়স্বজনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন মর্মে গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় যা ন্যায় সঙ্গত নয়। এই কর্মকান্ডের কারণে ওএমএস নীতিমালা, ২০১৫ মোতাবেক তার ডিলারশিপ কেন বাতিল হবে না দুই কর্মদিবসের মধ্যে এর সন্তোষজনক জবাব চাওয়া হয়। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ১৩ মে ওএমএস ডিলারশিপ বাতিল করা হয়। সেই শাহ আলমকেই সমাজসেবায় বিশেষ অবদানকারী ব্যক্তি হিসেবে বাছাই করে জেলা সমাজসেবা বিভাগ। জাতীয় সমাজসেবা দিবস-২০২১ উপলক্ষে গত শনিবার সার্কিট হাউজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। এরপরই বিষয়টি টক অব দি টাউনে পরিণত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর সমালোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা বিভাগের উপপরিচালক মাসুদুল হাসান তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

শুধু ওএমএস তালিকা কেলেঙ্কারির জন্যই নয়, টিসিবির ডিলার হিসেবে করোনার প্রথম পর্যায়ে ভোক্তাদের বঞ্চিত করারও অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দীপ তালুকদারের নেতৃত্বে শহরের কাউতলী মসজিদপাড়ার লোকমান হোসেনের (৪৫) দোকান সংলগ্ন বাসায় অভিযান চালিয়ে ২৪ বস্তায় থাকা ১২শ’ কেজি চিনি, ৪ বস্তা (২শ‘ কেজি ) মশুর ডাল এবং ৩ বস্তায় থাকা দেড়শো কেজি ছোলা বুট উদ্ধার করা হয়। এসব মালামাল শাহ আলম মজুদ রেখেছেন বলে লোকমান অভিযানকারীদের জানান। করোনা পরিস্থিতিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেডক্রিসেন্ট ইউনিটে বরাদ্দ আসা খাদ্য ও প্রয়োজনীয় উপকরণ ভর্তি ৫শ’ ব্যাগের মধ্যে ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শাহ আলম প্রভাব খাটিয়ে নেন একশ’ ব্যাগ। এগুলো কাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে তারও কোন স্বচ্ছতা নেই।

জেলা হোটেল-রেস্তরাঁ মালিক সমিতির নেতা শাহ আলম কর্মহীন হোটেল-রেস্তরাঁ শ্রমিকদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের নামে প্রতারণা করেছেন বলেও অভিযোগ তুলেন জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিল্প ও বনিক সমিতির পরিচালক পদ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যেক্তা সৃষ্টি প্রকল্পের জেলা পরিচালনা পরিষদের সদস্য শাহ আলম। এছাড়া তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য, জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক, সুইড ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক, কাউতলী শহীদ লুৎফুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি, জেলা জামে মসজিদ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এবং নিজ গ্রাম কাউতলীর ঈদগাহ মাঠের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, কাউতলী কবরস্থান কমিটিরও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম।

সোমবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২১ , ২০ পৌষ ১৪২৭, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

ওএমএস চালে অনিয়ম করা আ’লীগ নেতা পেলেন সমাজসেবা পুরস্কার

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ওএমএস কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যক্তিকে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানকারী হিসেবে সরকারিভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা সমাজসেবা বিভাগ আর প্রশাসনের এই উদ্যোগ সমালোচনার ঝড় তুলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সর্বত্র। করোনা পরিস্থিতির শুরুতে গত মে মাসে সরকারের দেয়া বিশেষ ওএমএস তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক প্রভাব খাটান জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক ও শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ওএমএস ডিলার মো. শাহ আলম। ভিক্ষুক, ভবঘুরে, সাধারণ শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, চায়ের দোকানদার, তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়েরলোকজনের বদলে নিজের স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনদের নাম উঠান তালিকায়। গণমাধ্যমে এই খবর আসার পর জেলা প্রশাসন তদন্তে নেমে তার-স্ত্রী-সন্তানসহ ১৩ জনের নাম পায় ওই তালিকায়।

তারা হচ্ছেন- শাহ আলমের স্ত্রী মোছাম্মৎ মমতাজ আলম, মেয়ে আফরোজা, ডিলারের কাতার প্রবাসী শ্যালকের স্ত্রী মোছাম্মৎ জান্নাতুল ইসলাম, আরেক শ্যালকের স্ত্রী আছমা ইসলাম, বোন শামসুন্নাহার, মালয়েশিয়া প্রবাসী ভাতিজা নাছির, ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবহন শ্রমিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিম, আরেক ভাই মো. আলমগীর, শ্যালক মো. তাজুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম, বোনের দেবর আতাউর মিয়া, লুৎফুর মিয়া ও মাহবুব মিয়া। এরপরই জেলা ওএমএস কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান ১১ মে ডিলার মো. শাহ আলমের কাছে তার ডিলারশিপ কেন বাতিল করা হবে না মর্মে ব্যাখ্যা তলব করেন।

এতে বলা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রমণের উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে পৌর এলাকার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে কাউতলীর শহীদ লুৎফুর রহমান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ওএমএস ডিলার হিসেবে আপনি (শাহ আলম) ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রি করছেন। ১০নং ওয়ার্ডের ওএমএসের ভোক্তা তালিকায় আপনার স্ত্রী, মেয়ে, ভাই-বোনসহ নিকট আত্বীয়স্বজনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন মর্মে গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় যা ন্যায় সঙ্গত নয়। এই কর্মকান্ডের কারণে ওএমএস নীতিমালা, ২০১৫ মোতাবেক তার ডিলারশিপ কেন বাতিল হবে না দুই কর্মদিবসের মধ্যে এর সন্তোষজনক জবাব চাওয়া হয়। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ১৩ মে ওএমএস ডিলারশিপ বাতিল করা হয়। সেই শাহ আলমকেই সমাজসেবায় বিশেষ অবদানকারী ব্যক্তি হিসেবে বাছাই করে জেলা সমাজসেবা বিভাগ। জাতীয় সমাজসেবা দিবস-২০২১ উপলক্ষে গত শনিবার সার্কিট হাউজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। এরপরই বিষয়টি টক অব দি টাউনে পরিণত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর সমালোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা বিভাগের উপপরিচালক মাসুদুল হাসান তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

শুধু ওএমএস তালিকা কেলেঙ্কারির জন্যই নয়, টিসিবির ডিলার হিসেবে করোনার প্রথম পর্যায়ে ভোক্তাদের বঞ্চিত করারও অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দীপ তালুকদারের নেতৃত্বে শহরের কাউতলী মসজিদপাড়ার লোকমান হোসেনের (৪৫) দোকান সংলগ্ন বাসায় অভিযান চালিয়ে ২৪ বস্তায় থাকা ১২শ’ কেজি চিনি, ৪ বস্তা (২শ‘ কেজি ) মশুর ডাল এবং ৩ বস্তায় থাকা দেড়শো কেজি ছোলা বুট উদ্ধার করা হয়। এসব মালামাল শাহ আলম মজুদ রেখেছেন বলে লোকমান অভিযানকারীদের জানান। করোনা পরিস্থিতিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেডক্রিসেন্ট ইউনিটে বরাদ্দ আসা খাদ্য ও প্রয়োজনীয় উপকরণ ভর্তি ৫শ’ ব্যাগের মধ্যে ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শাহ আলম প্রভাব খাটিয়ে নেন একশ’ ব্যাগ। এগুলো কাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে তারও কোন স্বচ্ছতা নেই।

জেলা হোটেল-রেস্তরাঁ মালিক সমিতির নেতা শাহ আলম কর্মহীন হোটেল-রেস্তরাঁ শ্রমিকদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের নামে প্রতারণা করেছেন বলেও অভিযোগ তুলেন জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিল্প ও বনিক সমিতির পরিচালক পদ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যেক্তা সৃষ্টি প্রকল্পের জেলা পরিচালনা পরিষদের সদস্য শাহ আলম। এছাড়া তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য, জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক, সুইড ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক, কাউতলী শহীদ লুৎফুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি, জেলা জামে মসজিদ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এবং নিজ গ্রাম কাউতলীর ঈদগাহ মাঠের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, কাউতলী কবরস্থান কমিটিরও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম।