পিয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেয়া হবে

বাণিজ্যমন্ত্রী

পিয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হবে বলে জানান তিনি। গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন টিপু মনুশি।

গত বছরের মার্চ মাসে ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে পিয়াজ সংকটে পড়ে দেশ। তখন অন্য দেশ থেকে আমদানি সহজ করতে পিয়াজের ওপর ধার্য ৫ শতাংশ শুল্ক মুক্ত করে দেয় সরকার। এখন পিয়াজের ওপর ৫ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা প্রস্তাব করব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে কী করা যায় তারা সেটা করবে। যদি মনে করে, দেয়াটা (শুল্ক) ভালো তাহলে দেবে। আমার যেটা সাজেশন তাদের প্রতি এবং আপনাদেরও জানাতে চাই, ভারতের পিয়াজ আমরা নেব কি নেব না, কী পরিমাণ ডিউটি আরোপ করব, এটা যেন আমাদের উৎপাদকদের কথা বিবেচনা করে এবং ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয়। কোন অবস্থাতেই যাতে উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাদের সাপোর্ট না দিলে সামনের দিনগুলোতে আমাদের আরও খারাপ অবস্থা হবে।

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় আরেকটা কথা হলো, ভারত যে সময় পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল সেই সময় আমরা তুরস্ক, মিশর, চীনসহ আরও অনেক দেশ থেকে পিয়াজ আমদানি করেছি। তখন যে ৫ শতাংশ ডিউটি ছিল সেটা উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল, যাতে একটু কম দামে পিয়াজ পাওয়া যায়। এখন যদি ভারতের পিয়াজের জন্য ডিউটি আবার বসাতেও হয়, তাহলে যে এলসিগুলো আগে ওপেন করা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে তারা যেন এর আওতার বাইরে থাকে। তারা পিয়াজ আনার পর লাভ করতে পারেনি, লোকসান করেছে, সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে আমরা লক্ষ্য রাখছি আমাদের কৃষকরা যেন মার না খায়। আজকে আলোচনা করে ঠিক করব আমরা কী করব। যদি দেখি ভারতের পিয়াজ ৩৯ টাকায় ঢুকছে। সেটা আমাদের জন্য আতঙ্কের কোন কারণ নেই। ভারত তাদের দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে তারা পিয়াজ রপ্তানি কখনও বন্ধ করে, কখনও খুলে দেয়। এখন তারা খুলে দিয়েছে। গত মার্চের মাঝামাঝিতে বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা আমাদের কৃষকের স্বার্থটা আগে দেখব। পাশাপাশি ভোক্তাদেরও দেখব। আমাদের আশা আগামী তিন বছরের মধ্যে পিয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হব।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ভারত আজকে পিয়াজ ছেড়েছে। ভারত থেকে পিয়াজ ঢুকছে ৩৯ টাকা দরে। আর ঢাকার বাজারে সেই পিয়াজ পাইকারিতে ৪৫ টাকা, আর খুচরা বাজারে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। তবে আমাদের পিয়াজ কিন্তু সেই রেটেই আছে। পাশাপাশি ভারতের পিয়াজ ঢুকলেও সমস্যার কিছু নেই। আজ বিকেলে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বৈঠক করবেন, সেখানে আলোচনা করে এ বিষয় ফয়সালা করবেন।

পিয়াজ সংকটের কারণে আমদানি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পিয়াজের ক্রাইসিসের কারণে আমদানি হবে এমনটা নয়, নিয়মিত আমদানি হয়। আমাদের দেশে এই মুহূর্তে যে পরিমাণ পিয়াজ ভারত বাদে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি হচ্ছে, পাশাপাশি মুরি কাটা পিয়াজ উঠতে শুরু করেছে, আমাদের কোন সমস্যা নেই। আগামী মার্চ মাসে যে পিয়াজ আসবে সে পর্যন্ত কোন সমস্যা হবে না। আমরা পর্যবেক্ষণে রাখব যদি আমদানি করতে হয় করব। এখন পিয়াজ উঠবে সেই সময় আমদানি করলে কৃষকরা দাম পাবে না। আমাদের ধারণা পিয়াজ উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৮ টাকা। সেটা যদি কৃষকরা ২৫ টাকায় বিক্রি করতে না পারে তাহলে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। আর সেই পিয়াজ ঢাকা পর্যন্ত আসতে ৪০ টাকায় ভোক্তারা পাবে।

ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভোজ্য তেলের ব্যাপারে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দামটা বেড়ে গেছে। সেজন্যই ভোজ্য তেলের দামের প্রভাবটা আমাদের দেশে পড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা বার বার মিটিং করছে। যেটা আমদানি করে আমাদের চলতে হয় সেটাতো আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর ভরসা করতেই হবে। কিন্তু এ সুযোগটা নিয়ে কেউ যেন এক্সট্রা বেনিফিট না নেয়, সেটা আমরা রক্ষ্য রাখব।

সোমবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২১ , ২০ পৌষ ১৪২৭, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

পিয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেয়া হবে

বাণিজ্যমন্ত্রী

পিয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হবে বলে জানান তিনি। গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন টিপু মনুশি।

গত বছরের মার্চ মাসে ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে পিয়াজ সংকটে পড়ে দেশ। তখন অন্য দেশ থেকে আমদানি সহজ করতে পিয়াজের ওপর ধার্য ৫ শতাংশ শুল্ক মুক্ত করে দেয় সরকার। এখন পিয়াজের ওপর ৫ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা প্রস্তাব করব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে কী করা যায় তারা সেটা করবে। যদি মনে করে, দেয়াটা (শুল্ক) ভালো তাহলে দেবে। আমার যেটা সাজেশন তাদের প্রতি এবং আপনাদেরও জানাতে চাই, ভারতের পিয়াজ আমরা নেব কি নেব না, কী পরিমাণ ডিউটি আরোপ করব, এটা যেন আমাদের উৎপাদকদের কথা বিবেচনা করে এবং ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয়। কোন অবস্থাতেই যাতে উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাদের সাপোর্ট না দিলে সামনের দিনগুলোতে আমাদের আরও খারাপ অবস্থা হবে।

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় আরেকটা কথা হলো, ভারত যে সময় পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল সেই সময় আমরা তুরস্ক, মিশর, চীনসহ আরও অনেক দেশ থেকে পিয়াজ আমদানি করেছি। তখন যে ৫ শতাংশ ডিউটি ছিল সেটা উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল, যাতে একটু কম দামে পিয়াজ পাওয়া যায়। এখন যদি ভারতের পিয়াজের জন্য ডিউটি আবার বসাতেও হয়, তাহলে যে এলসিগুলো আগে ওপেন করা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে তারা যেন এর আওতার বাইরে থাকে। তারা পিয়াজ আনার পর লাভ করতে পারেনি, লোকসান করেছে, সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে আমরা লক্ষ্য রাখছি আমাদের কৃষকরা যেন মার না খায়। আজকে আলোচনা করে ঠিক করব আমরা কী করব। যদি দেখি ভারতের পিয়াজ ৩৯ টাকায় ঢুকছে। সেটা আমাদের জন্য আতঙ্কের কোন কারণ নেই। ভারত তাদের দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে তারা পিয়াজ রপ্তানি কখনও বন্ধ করে, কখনও খুলে দেয়। এখন তারা খুলে দিয়েছে। গত মার্চের মাঝামাঝিতে বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা আমাদের কৃষকের স্বার্থটা আগে দেখব। পাশাপাশি ভোক্তাদেরও দেখব। আমাদের আশা আগামী তিন বছরের মধ্যে পিয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হব।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ভারত আজকে পিয়াজ ছেড়েছে। ভারত থেকে পিয়াজ ঢুকছে ৩৯ টাকা দরে। আর ঢাকার বাজারে সেই পিয়াজ পাইকারিতে ৪৫ টাকা, আর খুচরা বাজারে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। তবে আমাদের পিয়াজ কিন্তু সেই রেটেই আছে। পাশাপাশি ভারতের পিয়াজ ঢুকলেও সমস্যার কিছু নেই। আজ বিকেলে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বৈঠক করবেন, সেখানে আলোচনা করে এ বিষয় ফয়সালা করবেন।

পিয়াজ সংকটের কারণে আমদানি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পিয়াজের ক্রাইসিসের কারণে আমদানি হবে এমনটা নয়, নিয়মিত আমদানি হয়। আমাদের দেশে এই মুহূর্তে যে পরিমাণ পিয়াজ ভারত বাদে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি হচ্ছে, পাশাপাশি মুরি কাটা পিয়াজ উঠতে শুরু করেছে, আমাদের কোন সমস্যা নেই। আগামী মার্চ মাসে যে পিয়াজ আসবে সে পর্যন্ত কোন সমস্যা হবে না। আমরা পর্যবেক্ষণে রাখব যদি আমদানি করতে হয় করব। এখন পিয়াজ উঠবে সেই সময় আমদানি করলে কৃষকরা দাম পাবে না। আমাদের ধারণা পিয়াজ উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৮ টাকা। সেটা যদি কৃষকরা ২৫ টাকায় বিক্রি করতে না পারে তাহলে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। আর সেই পিয়াজ ঢাকা পর্যন্ত আসতে ৪০ টাকায় ভোক্তারা পাবে।

ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভোজ্য তেলের ব্যাপারে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দামটা বেড়ে গেছে। সেজন্যই ভোজ্য তেলের দামের প্রভাবটা আমাদের দেশে পড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা বার বার মিটিং করছে। যেটা আমদানি করে আমাদের চলতে হয় সেটাতো আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর ভরসা করতেই হবে। কিন্তু এ সুযোগটা নিয়ে কেউ যেন এক্সট্রা বেনিফিট না নেয়, সেটা আমরা রক্ষ্য রাখব।