পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে আন্দোলন বন্ধের চাপ দিচ্ছে

রংপুরের শ্যামপুর চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে চিনিকল রক্ষা কমিটি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছে আন্দোলনরত শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষি নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন করা যাবে না বলে নানামুখী হুমকি দিয়ে চিনিকল এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে রংপুর নগরীর একটি অডিটরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন শ্যামপুর চিনিকল রক্ষা কমিটির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে চিনিকল খুলে দেয়ার দাবিতে ১৩ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর পরেও দাবি মানা না হলে লাগাতার হরতাল এবং অবরোধের মাধ্যমে কঠোর কর্মসূচি দেবার ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চিনিকল রক্ষা কমিটির সমন্বয়ক আবদুল কুদ্দুস। লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয় রংপুর জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্যামপুর চিনিকলসহ ৬টি চিনিকল লোকসানের ধুয়া তুলে বন্ধ করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। অথচ জাপান, থাইলান্ড এই চিনিকল কিনতে চাচ্ছে তাহলে তারা কেন কিনতে চাইছে? তারা বলেন, শ্যামপুর চিনিকল এলাকায় বিপুল পরিমাণ আখ উৎপাদিত হলেও মিল বন্ধ হওয়ার কারণে আখ শুকিয়ে খড়িতে পরিণত হচ্ছে। এই চিনিকলের ওপর নির্ভরশীল শত শত শ্রমিক হাজার হাজার আখচাষি মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয় দীর্ঘদিনের পুরনো যন্ত্রপাতি, মাথাভারি প্রশাসন, উন্নতমানের বীজ, সার ও প্রণোদনা প্রশিক্ষণের অভাব, রাজনৈতিক প্রভাবে অধিক জনবল নিয়োগ, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং এর সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক কর্মচারীদের কিছু অসাধু নেতাদের যোগসাজসে বেপরোয়া দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাই প্রধানত চিনিশিল্পে লোকসানের মূল কারণ।

সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় শ্যামপুর চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিক কর্মচারী ও আখচাষিরা ধারাবাহিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করাকালে শ্যামপুর ও বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের আন্দোলন করতে নিষেধ করা পুলিশ কর্তৃক নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আন্দোলন না করার হুমকি এবং জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের এবং সরকারের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন করা যাবে না বলে আস্ফালন করে শ্রমিক কর্মচারী ও আখচাষিদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। এমনি অবস্থায় রংপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সামাজিক পোশাজীবী সংগঠন রংপুরের একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার জন্য শ্যামপুর চিনিকল রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বলেন, আমরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না, আমরা শ্যামপুর চিনিকলের ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী ও আখচাষিদের রক্ষা করতে আন্দোলনে নেমেছি।

সংবাদ সম্মেলনে এ আন্দোলনে শরীক হবার জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের একাত্মতা প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাসদ জেলা সমন্বয়ক আবদুল কুদ্দুস, গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, সিপিবির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা শাহাদত হোসেন বাসদ মার্কসবাদীর জেলা সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু, শ্যামপুর চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা খতিবুর রহমান, আখচাষি নেতা আলতাফ হোসেন, জাসদ জেলা সম্পাদক কুমারেশ রায়, খুলনা পাটকল শ্রমিক নেতা রুহুল আমিন, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক অশোক সরকার, বাংলাদেশ জাসদের গৌতম রায়, পেশাজীবী নেতা ডা. মামুনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২১ , ২০ পৌষ ১৪২৭, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

চিনিকল শ্রমিকদের অভিযোগ

পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে আন্দোলন বন্ধের চাপ দিচ্ছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

রংপুরের শ্যামপুর চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে চিনিকল রক্ষা কমিটি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছে আন্দোলনরত শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষি নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন করা যাবে না বলে নানামুখী হুমকি দিয়ে চিনিকল এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে রংপুর নগরীর একটি অডিটরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন শ্যামপুর চিনিকল রক্ষা কমিটির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে চিনিকল খুলে দেয়ার দাবিতে ১৩ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর পরেও দাবি মানা না হলে লাগাতার হরতাল এবং অবরোধের মাধ্যমে কঠোর কর্মসূচি দেবার ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চিনিকল রক্ষা কমিটির সমন্বয়ক আবদুল কুদ্দুস। লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয় রংপুর জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্যামপুর চিনিকলসহ ৬টি চিনিকল লোকসানের ধুয়া তুলে বন্ধ করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। অথচ জাপান, থাইলান্ড এই চিনিকল কিনতে চাচ্ছে তাহলে তারা কেন কিনতে চাইছে? তারা বলেন, শ্যামপুর চিনিকল এলাকায় বিপুল পরিমাণ আখ উৎপাদিত হলেও মিল বন্ধ হওয়ার কারণে আখ শুকিয়ে খড়িতে পরিণত হচ্ছে। এই চিনিকলের ওপর নির্ভরশীল শত শত শ্রমিক হাজার হাজার আখচাষি মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয় দীর্ঘদিনের পুরনো যন্ত্রপাতি, মাথাভারি প্রশাসন, উন্নতমানের বীজ, সার ও প্রণোদনা প্রশিক্ষণের অভাব, রাজনৈতিক প্রভাবে অধিক জনবল নিয়োগ, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং এর সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক কর্মচারীদের কিছু অসাধু নেতাদের যোগসাজসে বেপরোয়া দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাই প্রধানত চিনিশিল্পে লোকসানের মূল কারণ।

সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় শ্যামপুর চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিক কর্মচারী ও আখচাষিরা ধারাবাহিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করাকালে শ্যামপুর ও বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের আন্দোলন করতে নিষেধ করা পুলিশ কর্তৃক নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আন্দোলন না করার হুমকি এবং জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের এবং সরকারের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন করা যাবে না বলে আস্ফালন করে শ্রমিক কর্মচারী ও আখচাষিদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। এমনি অবস্থায় রংপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সামাজিক পোশাজীবী সংগঠন রংপুরের একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার জন্য শ্যামপুর চিনিকল রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বলেন, আমরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না, আমরা শ্যামপুর চিনিকলের ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী ও আখচাষিদের রক্ষা করতে আন্দোলনে নেমেছি।

সংবাদ সম্মেলনে এ আন্দোলনে শরীক হবার জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের একাত্মতা প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাসদ জেলা সমন্বয়ক আবদুল কুদ্দুস, গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, সিপিবির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা শাহাদত হোসেন বাসদ মার্কসবাদীর জেলা সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু, শ্যামপুর চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা খতিবুর রহমান, আখচাষি নেতা আলতাফ হোসেন, জাসদ জেলা সম্পাদক কুমারেশ রায়, খুলনা পাটকল শ্রমিক নেতা রুহুল আমিন, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক অশোক সরকার, বাংলাদেশ জাসদের গৌতম রায়, পেশাজীবী নেতা ডা. মামুনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।