বিদ্যুতে নজর এবার সঞ্চালনে

শতভাগ বিদ্যুতায়নের দ্বারপ্রান্তে দেশ। তবে সঞ্চালন ও বিতরণ খাতে যথাযথ উন্নতি হয়নি। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, লো-ভোল্টেজ এবং লোডশেডিং সমস্যা রয়ে গেছে। রাজধানীসহ জেলাশহরগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি তুলামূলক ভালো। তবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে জরাজীর্ণ বিতরণ লাইন এবং ওভারলোডেড ট্রান্সফর্মারের কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট রয়ে গেছে। আগের চেয়ে লোডশেডিং কমলেও সামান্য বাতাসেই পেয়ে বসে দুর্ঘটনার ভয়। তাই বন্ধ রাখতে হয় বিদ্যুৎ সরবরাহ। বড় ধরনের ঝড়ে কোথাও গাছ, খুঁটি উপড়ে গেলে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায়ও সরবরাহ চালু করতে হিমশিম খেতে হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এতোদিন নজর ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মোট বরাদ্দের প্রায় ৭০ ভাগই সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যয় হবে। এরমধ্যে সঞ্চালন খাতে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা এবং বিতরণ খাতে দশ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। চলতি বাজেটে বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য বরাদ্দ ২৪ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সংবাদকে সম্প্রতি বলেন, ‘মুজিববর্ষেই দেশ শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আসবে। আমাদের লক্ষ্য এবার নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এজন্য সঞ্চালন ও বিতরণ খাতে বাজেট বরাদ্দ বেশি রাখা হয়েছে।’

প্রতিমন্ত্রী জানান, রাজধানীসহ ব্যস্ত জেলাশহরগুলোতে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী অটোমেশন, স্মার্ট গ্রিড, স্ক্যাডা সেন্টার, আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিং বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

সঞ্চালন উন্নয়নে এক প্রতিষ্ঠান, নানা প্রকল্প

রাষ্ট্রীয় একমাত্র প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সঞ্চালনের উন্নয়নে কাজ করছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়নে ‘সাউথ-ওয়েস্ট ট্রান্সমিশন এক্সপ্যানশন প্রজেক্ট’ এর বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া তিন হাজার দুইশ’ ৭৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা।

চট্টগ্রামের মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং আশপাশে নিমার্ণাধীন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে এ অঞ্চলে মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। তিনশ’ চব্বিশ কোটি ৫৮ লাখ টাকার এই প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি প্রায় ৬৭ শতাংশ। এবছর জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া পিজিসিবির আরও কুড়িটিরও বেশি প্রকল্প চলমান রয়েছে যা সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

বিতরণ উন্নয়নে ৬ প্রতিষ্ঠান

বিতরণের উন্নয়নে কাজ করবে রাষ্ট্রীয় ৬টি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) বিরতণ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) জন্য পায় দুই হাজার দুইশ’ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) জন্য এক হাজার সাতশ’ কোটি টাকা, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) জন্য প্রায় সাতশ’ কোটি টাকা, নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) জন্য প্রায় সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা এবং ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) বিরতণ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।

পিডিবির জন্য কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহ জোনে প্রিপেইড মিটার স্থাপন ছাড়াও চট্টগ্রামের উভয় জোনের সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ এলাকার বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নে পৃথক পৃথক প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে। তিন পার্বত্য জেলার বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণেও পিডিবিকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরইবি’র আওতাধীন এলাকায় সাতটি পৃথক প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

আরইবি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন (অব.) গত রোববার রাতে সংবাদকে জানান, বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালনে এ বছর সর্বোচ্চ জোর দেয়া হবে। চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) আরইবি প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। যার সিংহভাগ বিতরণ খাতের উন্নয়নে ব্যয় হবে।

রোহিঙ্গা আশ্রিত এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণে বাজেট বরাদ্দ প্রসঙ্গে আরইবি’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসলে রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া এখানে বিষয় নয়, সরকারের লক্ষ্য তাদের ফেরত দেয়া। আবার কিছু ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। আমরা এডিবির কাছ থেকে কুতুপালং এলাকার রাস্তাঘাট আলোকিত করতে এবং কক্সবাজারে বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে দুটি পৃথক অনুদান পাব। আলোচনা চলছে। যা মোট সাতশ’ কোটি টাকার মতো হতে পারে।’

ঢাকার দুই কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকো’র ছয়টি করে পৃথক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পেয়েছে। দুটি কোম্পানিই প্রিপেইড মিটার এবং ভূগর্ভস্থ লাইন নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে এই অর্থ বিনিয়োগ করবে। এছাড়া ওজোপাডিকো ৪টি এবং নেসকো তিনটি প্রকল্পে বরাদ্দ পেয়েছে।

ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান সংবাদকে বলেন, ‘ডিপিডিসির গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পের অধীনে ৩ হাজার ৩১১ কেভি ক্ষমতার ১৫টি ট্রান্সফরমার, ১৯৭টি ৩৩ ও ১১ কেভি জিআইএস ব্রেকার, ১৬৫ কিলোমিটার ৩৩ কেভি সোর্স লাইন, ৩৩ হাজার ১৫৭টি ১৫ ও ১২ মিটার পোল, ১ হাজার ৪৯৩ কিলোমিটার নতুন ওভারহেড বিতরণ লাইন, ১ হাজার ৪৬২ কিলোমিটার ওভারহেড লাইন রেনোভেশন, ৩৬১ কিলোমিটার নতুন আন্ডারগ্রাউন্ড ১১ কেভি লাইন এবং ২ হাজার ৫৭৫টি ১১০ দশমিক ৪ কেভি বিতরণ ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হবে।’

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘গত এগারো বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতকে প্রাধান্য দেয়া হলেও সঞ্চালন ও বিতরণ খাতেও কাজ হয়েছে। ২০০৯ সালে সঞ্চালন লাইন ছিল ৮ হাজার সার্কিট কিলোমিটার। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৩৭৯ সার্কিট কিলোমিটার। গ্রিড সাবস্টেশনে ক্ষমতা ১৫ হাজার ৮৭০ এমভিএ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৭ হাজার ৩০৪ এমবিএ। ২০০৯ সালে বিতরণ লাইন ছিল দুই লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে পাঁচ লাখ ৮৮ হাজার কিলোমিটার।’

মঙ্গলবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২১ , ২১ পৌষ ১৪২৭, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

বিদ্যুতে নজর এবার সঞ্চালনে

ফয়েজ আহমেদ তুষার |

শতভাগ বিদ্যুতায়নের দ্বারপ্রান্তে দেশ। তবে সঞ্চালন ও বিতরণ খাতে যথাযথ উন্নতি হয়নি। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, লো-ভোল্টেজ এবং লোডশেডিং সমস্যা রয়ে গেছে। রাজধানীসহ জেলাশহরগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি তুলামূলক ভালো। তবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে জরাজীর্ণ বিতরণ লাইন এবং ওভারলোডেড ট্রান্সফর্মারের কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট রয়ে গেছে। আগের চেয়ে লোডশেডিং কমলেও সামান্য বাতাসেই পেয়ে বসে দুর্ঘটনার ভয়। তাই বন্ধ রাখতে হয় বিদ্যুৎ সরবরাহ। বড় ধরনের ঝড়ে কোথাও গাছ, খুঁটি উপড়ে গেলে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায়ও সরবরাহ চালু করতে হিমশিম খেতে হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এতোদিন নজর ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মোট বরাদ্দের প্রায় ৭০ ভাগই সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যয় হবে। এরমধ্যে সঞ্চালন খাতে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা এবং বিতরণ খাতে দশ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। চলতি বাজেটে বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য বরাদ্দ ২৪ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সংবাদকে সম্প্রতি বলেন, ‘মুজিববর্ষেই দেশ শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আসবে। আমাদের লক্ষ্য এবার নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এজন্য সঞ্চালন ও বিতরণ খাতে বাজেট বরাদ্দ বেশি রাখা হয়েছে।’

প্রতিমন্ত্রী জানান, রাজধানীসহ ব্যস্ত জেলাশহরগুলোতে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী অটোমেশন, স্মার্ট গ্রিড, স্ক্যাডা সেন্টার, আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিং বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

সঞ্চালন উন্নয়নে এক প্রতিষ্ঠান, নানা প্রকল্প

রাষ্ট্রীয় একমাত্র প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সঞ্চালনের উন্নয়নে কাজ করছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়নে ‘সাউথ-ওয়েস্ট ট্রান্সমিশন এক্সপ্যানশন প্রজেক্ট’ এর বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া তিন হাজার দুইশ’ ৭৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা।

চট্টগ্রামের মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং আশপাশে নিমার্ণাধীন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে এ অঞ্চলে মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। তিনশ’ চব্বিশ কোটি ৫৮ লাখ টাকার এই প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি প্রায় ৬৭ শতাংশ। এবছর জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া পিজিসিবির আরও কুড়িটিরও বেশি প্রকল্প চলমান রয়েছে যা সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

বিতরণ উন্নয়নে ৬ প্রতিষ্ঠান

বিতরণের উন্নয়নে কাজ করবে রাষ্ট্রীয় ৬টি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) বিরতণ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) জন্য পায় দুই হাজার দুইশ’ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) জন্য এক হাজার সাতশ’ কোটি টাকা, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) জন্য প্রায় সাতশ’ কোটি টাকা, নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) জন্য প্রায় সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা এবং ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) বিরতণ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।

পিডিবির জন্য কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহ জোনে প্রিপেইড মিটার স্থাপন ছাড়াও চট্টগ্রামের উভয় জোনের সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ এলাকার বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নে পৃথক পৃথক প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে। তিন পার্বত্য জেলার বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণেও পিডিবিকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরইবি’র আওতাধীন এলাকায় সাতটি পৃথক প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

আরইবি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন (অব.) গত রোববার রাতে সংবাদকে জানান, বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালনে এ বছর সর্বোচ্চ জোর দেয়া হবে। চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) আরইবি প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। যার সিংহভাগ বিতরণ খাতের উন্নয়নে ব্যয় হবে।

রোহিঙ্গা আশ্রিত এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণে বাজেট বরাদ্দ প্রসঙ্গে আরইবি’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসলে রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া এখানে বিষয় নয়, সরকারের লক্ষ্য তাদের ফেরত দেয়া। আবার কিছু ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। আমরা এডিবির কাছ থেকে কুতুপালং এলাকার রাস্তাঘাট আলোকিত করতে এবং কক্সবাজারে বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে দুটি পৃথক অনুদান পাব। আলোচনা চলছে। যা মোট সাতশ’ কোটি টাকার মতো হতে পারে।’

ঢাকার দুই কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকো’র ছয়টি করে পৃথক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পেয়েছে। দুটি কোম্পানিই প্রিপেইড মিটার এবং ভূগর্ভস্থ লাইন নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে এই অর্থ বিনিয়োগ করবে। এছাড়া ওজোপাডিকো ৪টি এবং নেসকো তিনটি প্রকল্পে বরাদ্দ পেয়েছে।

ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান সংবাদকে বলেন, ‘ডিপিডিসির গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পের অধীনে ৩ হাজার ৩১১ কেভি ক্ষমতার ১৫টি ট্রান্সফরমার, ১৯৭টি ৩৩ ও ১১ কেভি জিআইএস ব্রেকার, ১৬৫ কিলোমিটার ৩৩ কেভি সোর্স লাইন, ৩৩ হাজার ১৫৭টি ১৫ ও ১২ মিটার পোল, ১ হাজার ৪৯৩ কিলোমিটার নতুন ওভারহেড বিতরণ লাইন, ১ হাজার ৪৬২ কিলোমিটার ওভারহেড লাইন রেনোভেশন, ৩৬১ কিলোমিটার নতুন আন্ডারগ্রাউন্ড ১১ কেভি লাইন এবং ২ হাজার ৫৭৫টি ১১০ দশমিক ৪ কেভি বিতরণ ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হবে।’

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘গত এগারো বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতকে প্রাধান্য দেয়া হলেও সঞ্চালন ও বিতরণ খাতেও কাজ হয়েছে। ২০০৯ সালে সঞ্চালন লাইন ছিল ৮ হাজার সার্কিট কিলোমিটার। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৩৭৯ সার্কিট কিলোমিটার। গ্রিড সাবস্টেশনে ক্ষমতা ১৫ হাজার ৮৭০ এমভিএ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৭ হাজার ৩০৪ এমবিএ। ২০০৯ সালে বিতরণ লাইন ছিল দুই লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে পাঁচ লাখ ৮৮ হাজার কিলোমিটার।’