পাঁচ ধাপে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা

সরকার দুই বছরে পাঁচ ধাপে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকা দেবে। তিন পর্বে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জনকে করোনা টিকা দেয়া হবে। টিকায় অগ্রাধিকার পাবে করোনা প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষ। জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি করা খসড়া অনুযায়ী, জনপ্রতি দুটি করে মোট ২৭ কোটি ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ১৬ ডোজ টিকা দেয়া হবে।

খসড়া পরিকল্পনায় প্রথম ফেইজের টিকা দুই ধাপে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জন টিকা পাবে, যা মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে মোট জনসংখ্যার সাত শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন টিকার আওতায় আসবে।

প্রথম পর্যায়ে দুই ধাপে বিতরণ শেষে দ্বিতীয় পর্যায়ে টিকা দেয়া শুরু হবে। এ পর্যায়ে ১০ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৮ জন (মোট জনসংখ্যার ১১ থেকে ২০ শতাংশ) টিকা পাবেন।

তৃতীয় পর্যায়েও দুই ধাপে করোনা টিকা দেয়া হবে। এ পর্যায়ের প্রথম ধাপে জনসংখ্যার আরও ২০ শতাংশ অর্থাৎ তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ জনকে টিকা দেয়া হবে। শেষ ধাপে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ জনকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়নের

মানদণ্ড কি

সব স্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের কর্মীর তালিকা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে রয়েছে। জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের তালিকাও রয়েছে।

পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ধর্মীয় নেতাও টিকা পাওয়ার অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে, যাদের মধ্যে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার পুরোহিতরা অন্যতম। দাফন ও সৎকারে নিয়োজিত ৭৫ হাজার কর্মীও প্রথম ধাপে টিকা পাবে। এছাড়া স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরাও টিকার অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে।

এই তালিকা কীভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায় করা হবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘করোনার টিকা ব্যবস্থায় ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা মসজিদপ্রতি তিনজন অর্থাৎ ইমাম-মুয়াজ্জিন ও রেজিস্ট্রার (খাদেম)-তিনজনের নাম নির্ধারণ করেছেন। আর জেলা-উপজেলা পর্যায়ের গণমাধ্যমকর্মীদের তালিকাও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে রয়েছে। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রেসক্লাবগুলোর সহায়তা নেয়া হবে।’

অগ্রাধিকারের তালিকা প্রণয়নের দায়িত্ব ইউএনও’র

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনার টিকা ব্যবস্থাপনায় সম্প্রতি জাতীয় পর্যায়ে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া টিকাবিষয়ক জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক এবং সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন জেলা সিভিল সার্জন। এ কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন জেলা সদর আসনের সংসদ সদস্য।

উপজেলা কমিটির সভাপতি হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা। উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকবেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

করোনার টিকাবিষয়ক খসড়া জাতীয় পরিকল্পনাতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। সেসব কমিটির প্রধান হবেন জেলা সিভিল সার্জন বা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এ কমিটিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের রাখা হয়নি।

উপজেলা কমিটির চার দফা কাজের কথা বলা হয়েছে। প্রথম কাজ করোনা মোকাবিলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির কর্মী, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করা।

মঙ্গলবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২১ , ২১ পৌষ ১৪২৭, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

পাঁচ ধাপে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

সরকার দুই বছরে পাঁচ ধাপে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকা দেবে। তিন পর্বে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জনকে করোনা টিকা দেয়া হবে। টিকায় অগ্রাধিকার পাবে করোনা প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষ। জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি করা খসড়া অনুযায়ী, জনপ্রতি দুটি করে মোট ২৭ কোটি ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ১৬ ডোজ টিকা দেয়া হবে।

খসড়া পরিকল্পনায় প্রথম ফেইজের টিকা দুই ধাপে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জন টিকা পাবে, যা মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে মোট জনসংখ্যার সাত শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন টিকার আওতায় আসবে।

প্রথম পর্যায়ে দুই ধাপে বিতরণ শেষে দ্বিতীয় পর্যায়ে টিকা দেয়া শুরু হবে। এ পর্যায়ে ১০ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৮ জন (মোট জনসংখ্যার ১১ থেকে ২০ শতাংশ) টিকা পাবেন।

তৃতীয় পর্যায়েও দুই ধাপে করোনা টিকা দেয়া হবে। এ পর্যায়ের প্রথম ধাপে জনসংখ্যার আরও ২০ শতাংশ অর্থাৎ তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ জনকে টিকা দেয়া হবে। শেষ ধাপে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ জনকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়নের

মানদণ্ড কি

সব স্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের কর্মীর তালিকা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে রয়েছে। জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের তালিকাও রয়েছে।

পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ধর্মীয় নেতাও টিকা পাওয়ার অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে, যাদের মধ্যে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার পুরোহিতরা অন্যতম। দাফন ও সৎকারে নিয়োজিত ৭৫ হাজার কর্মীও প্রথম ধাপে টিকা পাবে। এছাড়া স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরাও টিকার অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে।

এই তালিকা কীভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায় করা হবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘করোনার টিকা ব্যবস্থায় ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা মসজিদপ্রতি তিনজন অর্থাৎ ইমাম-মুয়াজ্জিন ও রেজিস্ট্রার (খাদেম)-তিনজনের নাম নির্ধারণ করেছেন। আর জেলা-উপজেলা পর্যায়ের গণমাধ্যমকর্মীদের তালিকাও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে রয়েছে। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রেসক্লাবগুলোর সহায়তা নেয়া হবে।’

অগ্রাধিকারের তালিকা প্রণয়নের দায়িত্ব ইউএনও’র

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনার টিকা ব্যবস্থাপনায় সম্প্রতি জাতীয় পর্যায়ে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া টিকাবিষয়ক জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক এবং সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন জেলা সিভিল সার্জন। এ কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন জেলা সদর আসনের সংসদ সদস্য।

উপজেলা কমিটির সভাপতি হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা। উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকবেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

করোনার টিকাবিষয়ক খসড়া জাতীয় পরিকল্পনাতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। সেসব কমিটির প্রধান হবেন জেলা সিভিল সার্জন বা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এ কমিটিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের রাখা হয়নি।

উপজেলা কমিটির চার দফা কাজের কথা বলা হয়েছে। প্রথম কাজ করোনা মোকাবিলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির কর্মী, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করা।