ডাক বিভাগের মানিঅর্ডার ফরম ও সিল সই জাল করে একটি চক্র প্রতারণার মাধ্যমে সাড়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে। গত দুই বছর ধরে এ চক্র প্রতারণা করে আসছে। এ চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ কর্মচারীসহ ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনও কয়েকজন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করার জন্য র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।
অন্যদিকে প্রতারণার ঘটনার জিপিওর কেউ জড়িত বা কারও গাফিলতি আছে কিনা তা উদ্ঘাটনে পৃথক ৪টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত ও শঙ্খলা কমিটি কাজ করছেন।
র্যাব সদর দফতর থেকে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা জেনারেল পোস্ট অফিস (জিপিও) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানতে পারেন, একটি প্রতারক চক্র মানিঅর্ডার ফরম জাল করে অভিনব উপায়ে টাকা উত্তোলন করছে। কিন্তু তারা প্রতারক জালিয়াত চক্রকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। এরপর গত জুন ও জুলাই মাসে কয়েক হাজার জাল মানিঅর্ডারের সন্ধান পায়। শুধু ঢাকা জিপিওতে ৮ হাজার জাল মানিঅর্ডারের সন্ধান পাওয়া গেছে। এভাবে মিরপুর ও নিউ মার্কেট পোস্ট অফিসেও কয়েক হাজার জাল মানিঅর্ডারের সন্ধান পাওয়া গেছে।
ঢাকা জিপিও কর্তৃপক্ষ সন্দেহভাজন প্রতারক হিসেবে ফজলুল হক, আবুল বাসার ও শিমু বেগমের নামে মামলা করেন। মামলা করার ফলে সন্দেহভাজন আসামি আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর জিপিও কর্তৃপক্ষ র্যাবের কাছে সহায়তা চেয়ে অভিযোগ করেন। র্যাবের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানো হয়।
সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পোস্ট অফিসের জালিয়াত চক্রের মূল হোতা মো. ফজলুল হক আশরাফ ও তার স্ত্রী আছমা আক্তার শিমুকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও জিপিওর বিপুল পরিমাণ সিল ও মানিঅর্ডারের ফরম উদ্ধার করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসবাদে জানা গেছে, অভিযুক্ত আসামি মো. ফজলুল হক আশরাফ ২০১৮ সাল থেকে ডাক বিভাগের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহায়তায় মানিঅর্ডারের টাকার পরিমাণ পরিবর্তন করে পোস্ট অফিসের এ জালিয়াতি শুরু করেছিল। জালিয়াত চক্র জিপিওর জাল মানিঅর্ডার ফরমে আসল মানিঅর্ডারের সিল সম্বলিত নকল মানি অর্ডারগুলো কৌশলে জিপিওসহ দেশের বিভিন্ন পোস্ট অফিসে বিতরণ চ্যানেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করত। যার কারণে মানিঅর্ডার ফরমগুলো বিতরণ হওয়ায় ডেলিভারি পয়েন্ট থেকে কোনরূপ সন্দেহ প্রকাশ করা হতো না। এ চক্র মানিঅর্ডার ফরমগুলো সরকারি খামে করে দেশের বিভিন্ন পোস্ট মাস্টারের কাছে পাঠাতো। বেশ কিছুদিন আগে গাজীপুরের কালীগঞ্জ নাগরী পোস্ট অফিস থেকে ৪৫০টি চিঠি বিভিন্ন পোস্ট মাস্টারের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওইসব খামের ভিতর বিভিন্ন অঙ্কের জাল মানিঅর্ডার ছিল। প্রতিটি খামে প্রেরকের স্থলে নাগরী পোস্ট মাস্টারের সিল ব্যবহার করেছে।
নরসিংদী পোস্ট মাস্টারের কাছে একটি খাম পৌঁছলে খাম ও মানিঅর্ডার দেখে তার সন্দেহ হয়। কারণ মানিঅর্ডার ফরম সাধারণত খামে পাঠানো হয় না। তার সন্দেহের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানালে তারা ঘটনাটি তদন্ত করে জানতে পারে মানিঅর্ডার ফরমগুলো জাল।
অভিযুক্তদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, মানিঅর্ডার ফরম জালিয়াতির সঙ্গে জিপিওর কিছু কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে বলে স্বীকার করে। তাদের দেয়া তথ্যমতে ৩ কর্মচারীসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলোÑ আমজাদ আলী, মোস্তাফিজুর রহমান, ডলি রানী সাহা ও লিংকন সাহা।
তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার, স্ক্যানার, প্রিন্টার ও জাল ডাক টিকিটে, জাল মানিঅর্ডার, বিভিন্ন (জিপিও) পোস্ট অফিসের সিল ৪২টি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে জিপিওর সিনিয়র পোস্ট মাস্টার খন্দকার শাহনুর সাব্বির মুঠোফোনে বলেছেন, বিশেষায়িত ডাক বিভাগের মানিঅর্ডার ফরম, ই-কমার্স ক্যাশসহ পোস্ট অফিসের এসব কাজ তদারকি করা ও টাকা বিতরণের জন্য নিদিষ্ট ব্যক্তি থাকে। আর টাকা আত্মসাৎ ও মানিঅর্ডার ফরম সিল নকল করার ঘটনা তদন্তে ডাক বিভাগ থেকে পৃথক ৪টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত পর্যায়ে আছে। র্যাবও কাজ করছেন। আর এসব ঘটনায় রাজধানীর পল্টন ও মিরপুর থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব তদন্ত করছেন।
মঙ্গলবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২১ , ২১ পৌষ ১৪২৭, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
বাকী বিল্লাহ
ডাক বিভাগের মানিঅর্ডার ফরম ও সিল সই জাল করে একটি চক্র প্রতারণার মাধ্যমে সাড়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে। গত দুই বছর ধরে এ চক্র প্রতারণা করে আসছে। এ চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ কর্মচারীসহ ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনও কয়েকজন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করার জন্য র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।
অন্যদিকে প্রতারণার ঘটনার জিপিওর কেউ জড়িত বা কারও গাফিলতি আছে কিনা তা উদ্ঘাটনে পৃথক ৪টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত ও শঙ্খলা কমিটি কাজ করছেন।
র্যাব সদর দফতর থেকে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা জেনারেল পোস্ট অফিস (জিপিও) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানতে পারেন, একটি প্রতারক চক্র মানিঅর্ডার ফরম জাল করে অভিনব উপায়ে টাকা উত্তোলন করছে। কিন্তু তারা প্রতারক জালিয়াত চক্রকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। এরপর গত জুন ও জুলাই মাসে কয়েক হাজার জাল মানিঅর্ডারের সন্ধান পায়। শুধু ঢাকা জিপিওতে ৮ হাজার জাল মানিঅর্ডারের সন্ধান পাওয়া গেছে। এভাবে মিরপুর ও নিউ মার্কেট পোস্ট অফিসেও কয়েক হাজার জাল মানিঅর্ডারের সন্ধান পাওয়া গেছে।
ঢাকা জিপিও কর্তৃপক্ষ সন্দেহভাজন প্রতারক হিসেবে ফজলুল হক, আবুল বাসার ও শিমু বেগমের নামে মামলা করেন। মামলা করার ফলে সন্দেহভাজন আসামি আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর জিপিও কর্তৃপক্ষ র্যাবের কাছে সহায়তা চেয়ে অভিযোগ করেন। র্যাবের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানো হয়।
সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পোস্ট অফিসের জালিয়াত চক্রের মূল হোতা মো. ফজলুল হক আশরাফ ও তার স্ত্রী আছমা আক্তার শিমুকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও জিপিওর বিপুল পরিমাণ সিল ও মানিঅর্ডারের ফরম উদ্ধার করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসবাদে জানা গেছে, অভিযুক্ত আসামি মো. ফজলুল হক আশরাফ ২০১৮ সাল থেকে ডাক বিভাগের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহায়তায় মানিঅর্ডারের টাকার পরিমাণ পরিবর্তন করে পোস্ট অফিসের এ জালিয়াতি শুরু করেছিল। জালিয়াত চক্র জিপিওর জাল মানিঅর্ডার ফরমে আসল মানিঅর্ডারের সিল সম্বলিত নকল মানি অর্ডারগুলো কৌশলে জিপিওসহ দেশের বিভিন্ন পোস্ট অফিসে বিতরণ চ্যানেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করত। যার কারণে মানিঅর্ডার ফরমগুলো বিতরণ হওয়ায় ডেলিভারি পয়েন্ট থেকে কোনরূপ সন্দেহ প্রকাশ করা হতো না। এ চক্র মানিঅর্ডার ফরমগুলো সরকারি খামে করে দেশের বিভিন্ন পোস্ট মাস্টারের কাছে পাঠাতো। বেশ কিছুদিন আগে গাজীপুরের কালীগঞ্জ নাগরী পোস্ট অফিস থেকে ৪৫০টি চিঠি বিভিন্ন পোস্ট মাস্টারের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওইসব খামের ভিতর বিভিন্ন অঙ্কের জাল মানিঅর্ডার ছিল। প্রতিটি খামে প্রেরকের স্থলে নাগরী পোস্ট মাস্টারের সিল ব্যবহার করেছে।
নরসিংদী পোস্ট মাস্টারের কাছে একটি খাম পৌঁছলে খাম ও মানিঅর্ডার দেখে তার সন্দেহ হয়। কারণ মানিঅর্ডার ফরম সাধারণত খামে পাঠানো হয় না। তার সন্দেহের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানালে তারা ঘটনাটি তদন্ত করে জানতে পারে মানিঅর্ডার ফরমগুলো জাল।
অভিযুক্তদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, মানিঅর্ডার ফরম জালিয়াতির সঙ্গে জিপিওর কিছু কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে বলে স্বীকার করে। তাদের দেয়া তথ্যমতে ৩ কর্মচারীসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলোÑ আমজাদ আলী, মোস্তাফিজুর রহমান, ডলি রানী সাহা ও লিংকন সাহা।
তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার, স্ক্যানার, প্রিন্টার ও জাল ডাক টিকিটে, জাল মানিঅর্ডার, বিভিন্ন (জিপিও) পোস্ট অফিসের সিল ৪২টি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে জিপিওর সিনিয়র পোস্ট মাস্টার খন্দকার শাহনুর সাব্বির মুঠোফোনে বলেছেন, বিশেষায়িত ডাক বিভাগের মানিঅর্ডার ফরম, ই-কমার্স ক্যাশসহ পোস্ট অফিসের এসব কাজ তদারকি করা ও টাকা বিতরণের জন্য নিদিষ্ট ব্যক্তি থাকে। আর টাকা আত্মসাৎ ও মানিঅর্ডার ফরম সিল নকল করার ঘটনা তদন্তে ডাক বিভাগ থেকে পৃথক ৪টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত পর্যায়ে আছে। র্যাবও কাজ করছেন। আর এসব ঘটনায় রাজধানীর পল্টন ও মিরপুর থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব তদন্ত করছেন।