করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে

হাসপাতালগুলোতে নমুনা সংগ্রহে অনীহা

রংপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে করোনা আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষার হার আশঙ্কাজনক কমে গেছে। সেই সঙ্গে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রংপুর অঞ্চলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাওয়ার মূল কারণ উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়া, জেলা পর্যায়ে নমুনা পরীক্ষার ব্যাপারে বুথ থাকলেও তা কার্যকর না থাকা, আর রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় মাত্র ১টি বুথ থাকলেও করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের অনীহা ও দায়িত্বহীনতা ।

রংপুর মেডিকেল কলেজে স্থাপিত পিসিআর ল্যাবে গত ১১ দিনের নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্তের সংখ্যা একেবারে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৫ জনে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর অঞ্চলে ১৩২টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা পজেটিভ হয়েছে মাত্র ৬ জনের। এরমধ্যে গাইবান্ধায় ১ জন এবং রংপুরে ৫ জন। ২৫ ডিসেম্বর নমুনা পরীক্ষায় ১৩৩ জনের মধ্যে করোনা পজেটিভ হয়েছে মাত্র ৫ জনের। এদের মধ্যে ২ জন রংপুরের, ২ জন কুড়িগ্রামের এবং ১ জন গাইবান্ধার। ২৬ ডিসেম্বর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র মাত্র ১ জনের, তার বাড়ি গাইবান্ধায়। ২৭ ডিসেম্বর মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯৪ জনের। এরমধ্যে পজেটিভ হয়েছে মাত্র ৫ জনের। আক্রান্তরা সবাই রংপুরের। ২৮ ডিসেম্বর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৬২ জনের, এরমধ্যে পজেটিভ হয়েছে মাত্র ৬ জনের। এদের মধ্যে কুড়িগ্রামে ১ জন এবং রংপুরে ৫ জন।

২৯ ডিসেম্বর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯৪ জনের এরমধ্যে পজেটিভ হয়েছে ৫ জনের। এদের মধ্যে গাইবান্ধায় ৩ জন লালমনিরহাটে ১ জন এবং রংপুরে ১ জন। অন্যদিকে ৩০ ডিসেম্বর মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯৪ জনের। করোনা পজেটিভ হয়েছে মাত্র ৪ জনের, এদের মধ্যে গাইবান্ধার ১ জন, কুড়িগ্রামের ১ জন এবং রংপুরের ২ জন। একইভাবে ৩১ ডিসেম্বর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯৪ জনের, এরমধ্যে করোনা পজেটিভ হয়েছে মাত্র ৮ জনের। এদের মধ্যে নীলফামরীতে ১ জন, কুড়িগ্রামে ২ জন, লালমনিরহাটে ১ জন এবং রংপুরে ৪ জন। অন্যদিকে ১ জানুয়ারি মোট ৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষার পর মাত্র ৬ জনের করোনা পজেটিভ প্রতিবেদন এসেছে। এরমধ্যে করোনা আক্রান্ত ৬ জনের মধ্যে ৫ জন লালমনিরহাটের।

একইভাবে ২ জানুয়ারি মাত্র ২৭ জনের নমুনা পরীক্ষার পর একজনও পজেটিভ বলে প্রতিবেদন আসেনি। অন্যদিকে ৩ জানুয়ারি রংপুর অঞ্চলে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৮০ জনের, এরমধ্যে করোনা পজেটিভ হয়েছে মাত্র ১ জনের। এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও পিসিআর প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরন্নবী লাইজু বলেন, তাদের পিসিআর ল্যাবে ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা যায় কিন্তু ইদানিং নমুনা কম আসছে আর আক্রান্তদের সংখ্যাও কমছে বলে জানান তিনি।

রংপুরের সিভিল সার্জন হিরম্ব কুমার জানান, রংপুর জেলায় নমুনা পরীক্ষার হার আশঙ্কাজনক কমেছে সত্য, এ কারণে নমুনা দিতে অনীহা ফলে যতটা নমুনা পাওয়া যায় তা পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। তবে রংপুর সিটি করপোরেশন তাদের অধীনে না হওয়ায় সেখানে আক্রান্তের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে কাগজ দেখতে হবে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান স্বীকার করেন করোনা আক্রান্তরা নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহী হচ্ছেন না, তাদের বুথে আসার সংখ্যা কমে যাওয়ায় প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, দেশের কোন সিটি করপোরেশন নমুনা সংগ্রহ করে না অথচ তারা করছেন।

কিন্তু সরকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে এজন্য বাড়তি ২শ’ টাকাসহ তিনশ’ টাকা নির্ধারণ করে দেয়ার পরও স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্তদের বাসায় আসার জন্য ফোন করলে ফোন রিসিভ করা হয় না, এমনি নগরবাসীর অভিযোগের তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ ব্যাপারে রংপুর করোনা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ ফকরুল আনাম বেজ্ঞুর অভিযোগ, রংপুর সিটি করপোরেশনে ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস করে। সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বহীনতার কারণেই নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছেন না অনেকেই। তিনি আরও বলেন, নগরীতে তাদের যে বুথ আছে সেখানে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারেন, এ বিষয়টি তারা মানতে চান না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহাদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে প্রতিদিন ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা যায়। সে কারণে রংপুর নগরী ও জেলাসহ কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার করোনা আক্রান্ত রোগীর নমুনা এখানেই পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। তিনিও আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসছে বলে দাবি করেন। অনেকেই পরীক্ষা করাতে অনীহা প্রকাশ করায় সমস্যা হচ্ছে বলে জানান। এজন্য প্রচারণা আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

আরও খবর
শিক্ষার মাধ্যমে শান্তির পথ ধরে প্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে ছাত্রলীগ
আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালুর দাবি
ডাক বিভাগের মানিঅর্ডার ফরম, সিল ও রসিদ জাল করে অর্থ আত্মসাৎ
চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে এলাকাবাসী দেখতে চান তৃতীয় লিঙ্গের রিতুকে
খাল উদ্ধার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অব্যাহত
সিলেটে যুক্তরাজ্য ফেরতরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে : হট্টগোল
সিলেটে যুক্তরাজ্য ফেরতরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে : হট্টগোল
ধর্ষণ মামলায় তিন ধর্ষকের যাবজ্জীবন
নির্যাতনে আইনজীবী হত্যা : পুলিশ কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ
স্বাভাবিক গতি ফিরেছে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্যে
ক্যাসিনো ব্যবসায়ী জাকির ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট
দেশে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে মির্জা ফখরুল

মঙ্গলবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২১ , ২১ পৌষ ১৪২৭, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

রংপুর অঞ্চলে

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে

হাসপাতালগুলোতে নমুনা সংগ্রহে অনীহা

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

রংপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে করোনা আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষার হার আশঙ্কাজনক কমে গেছে। সেই সঙ্গে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রংপুর অঞ্চলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাওয়ার মূল কারণ উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়া, জেলা পর্যায়ে নমুনা পরীক্ষার ব্যাপারে বুথ থাকলেও তা কার্যকর না থাকা, আর রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় মাত্র ১টি বুথ থাকলেও করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের অনীহা ও দায়িত্বহীনতা ।

রংপুর মেডিকেল কলেজে স্থাপিত পিসিআর ল্যাবে গত ১১ দিনের নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্তের সংখ্যা একেবারে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৫ জনে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর অঞ্চলে ১৩২টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা পজেটিভ হয়েছে মাত্র ৬ জনের। এরমধ্যে গাইবান্ধায় ১ জন এবং রংপুরে ৫ জন। ২৫ ডিসেম্বর নমুনা পরীক্ষায় ১৩৩ জনের মধ্যে করোনা পজেটিভ হয়েছে মাত্র ৫ জনের। এদের মধ্যে ২ জন রংপুরের, ২ জন কুড়িগ্রামের এবং ১ জন গাইবান্ধার। ২৬ ডিসেম্বর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র মাত্র ১ জনের, তার বাড়ি গাইবান্ধায়। ২৭ ডিসেম্বর মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯৪ জনের। এরমধ্যে পজেটিভ হয়েছে মাত্র ৫ জনের। আক্রান্তরা সবাই রংপুরের। ২৮ ডিসেম্বর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৬২ জনের, এরমধ্যে পজেটিভ হয়েছে মাত্র ৬ জনের। এদের মধ্যে কুড়িগ্রামে ১ জন এবং রংপুরে ৫ জন।

২৯ ডিসেম্বর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯৪ জনের এরমধ্যে পজেটিভ হয়েছে ৫ জনের। এদের মধ্যে গাইবান্ধায় ৩ জন লালমনিরহাটে ১ জন এবং রংপুরে ১ জন। অন্যদিকে ৩০ ডিসেম্বর মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯৪ জনের। করোনা পজেটিভ হয়েছে মাত্র ৪ জনের, এদের মধ্যে গাইবান্ধার ১ জন, কুড়িগ্রামের ১ জন এবং রংপুরের ২ জন। একইভাবে ৩১ ডিসেম্বর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯৪ জনের, এরমধ্যে করোনা পজেটিভ হয়েছে মাত্র ৮ জনের। এদের মধ্যে নীলফামরীতে ১ জন, কুড়িগ্রামে ২ জন, লালমনিরহাটে ১ জন এবং রংপুরে ৪ জন। অন্যদিকে ১ জানুয়ারি মোট ৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষার পর মাত্র ৬ জনের করোনা পজেটিভ প্রতিবেদন এসেছে। এরমধ্যে করোনা আক্রান্ত ৬ জনের মধ্যে ৫ জন লালমনিরহাটের।

একইভাবে ২ জানুয়ারি মাত্র ২৭ জনের নমুনা পরীক্ষার পর একজনও পজেটিভ বলে প্রতিবেদন আসেনি। অন্যদিকে ৩ জানুয়ারি রংপুর অঞ্চলে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৮০ জনের, এরমধ্যে করোনা পজেটিভ হয়েছে মাত্র ১ জনের। এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও পিসিআর প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরন্নবী লাইজু বলেন, তাদের পিসিআর ল্যাবে ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা যায় কিন্তু ইদানিং নমুনা কম আসছে আর আক্রান্তদের সংখ্যাও কমছে বলে জানান তিনি।

রংপুরের সিভিল সার্জন হিরম্ব কুমার জানান, রংপুর জেলায় নমুনা পরীক্ষার হার আশঙ্কাজনক কমেছে সত্য, এ কারণে নমুনা দিতে অনীহা ফলে যতটা নমুনা পাওয়া যায় তা পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। তবে রংপুর সিটি করপোরেশন তাদের অধীনে না হওয়ায় সেখানে আক্রান্তের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে কাগজ দেখতে হবে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান স্বীকার করেন করোনা আক্রান্তরা নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহী হচ্ছেন না, তাদের বুথে আসার সংখ্যা কমে যাওয়ায় প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, দেশের কোন সিটি করপোরেশন নমুনা সংগ্রহ করে না অথচ তারা করছেন।

কিন্তু সরকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে এজন্য বাড়তি ২শ’ টাকাসহ তিনশ’ টাকা নির্ধারণ করে দেয়ার পরও স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্তদের বাসায় আসার জন্য ফোন করলে ফোন রিসিভ করা হয় না, এমনি নগরবাসীর অভিযোগের তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ ব্যাপারে রংপুর করোনা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ ফকরুল আনাম বেজ্ঞুর অভিযোগ, রংপুর সিটি করপোরেশনে ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস করে। সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বহীনতার কারণেই নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছেন না অনেকেই। তিনি আরও বলেন, নগরীতে তাদের যে বুথ আছে সেখানে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারেন, এ বিষয়টি তারা মানতে চান না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহাদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে প্রতিদিন ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা যায়। সে কারণে রংপুর নগরী ও জেলাসহ কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার করোনা আক্রান্ত রোগীর নমুনা এখানেই পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। তিনিও আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসছে বলে দাবি করেন। অনেকেই পরীক্ষা করাতে অনীহা প্রকাশ করায় সমস্যা হচ্ছে বলে জানান। এজন্য প্রচারণা আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।