ধর্ষণ মামলায় তিন ধর্ষকের যাবজ্জীবন

সুনামগঞ্জে পৃথক তিনটি ধর্ষণ মামলায় তিন ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ধর্ষণ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- দিরাই উপজেলার জগদল গ্রামের আবদুল খালিকের ছেলে আবদুল বাতির ওরফে বাতেন, একই জেলার ছাতক উপজেলার গণক্ষাই গ্রামের মৃত কানু বিশ্বাসের ছেলে কাঞ্চন বিশ্বাস এবং জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীধরপাশা গ্রামের মৃত মোক্তার আলীর ছেলে সুমন মিয়া ওরফে স্বপন।

অপহরণ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ছাতক উপজেলার আন্দাইরগাঁও গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর ছেলে, জালাল উদ্দিন ও হেলাল উদ্দিন, একই গ্রামের আবু রায়হানের ছেলে সাজল মিয়া এবং মৃত সইফুর রহমানের ছেলে অজুদ মিয়া। আদালত সূত্র জানায়, ধর্ষক বাতেন দিরাই উপজেলার জগদল গ্রামে ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ রাত ১টার দিকে ভিকটিমের শয়ণকক্ষের কাঠের দরজা ভেঙে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে গ্রাম্য পঞ্চায়েতে আসামি বাতেন ভিকটিমকে বিবাহ করার অঙ্গিকার করার পর বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকে।

একপর্যায়ে ভিকটিম গর্ভধারণ করলে থানায় গিয়ে আসামি বাতেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ওই নারী। তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে বাতেনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে আসামি আবদুল বাতিন ওরফে বাতেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা প্রদান করেন। রায় ঘোষণাকালে বাতেন পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক।

ধর্ষক কাঞ্চন বিশ^াস জেলার ছাতক উপজেলার গণক্ষাই গ্রামের ২০১৪ সালের ১৬ আগস্ট প্রতিবেশীর ৭ বছরের নাবালিকা কণ্যাকে পেয়ারা খাওয়ানো লোভ দেখিয়ে ধর্ষকের শয়ণকক্ষে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে ওই শিশু কন্যার বাবা বাদী হয়ে কাঞ্চনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ আসামি কাঞ্চনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। আদালত ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামি কাঞ্চনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন।

ধর্ষক সুমন মিয়া ওরফে স্বপন ২০০৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার খাজাখালু এক ১৪ বছরের এক কিশোরীকে ফুসলিয়ে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় তুলে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার স্থানীয় সানলাইট হোটেলে রেখে তিনবার ধর্ষণ করে। পরের দিন ধর্ষক সুমন ভিকটিমকে তার বাড়ি শ্রীধরপাশা নিয়ে যাওয়ার সময় উপজেলার কলকলি বাজারে পৌঁছলে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হলে তাদের আটক করে। ভিকটিমের স্বজনদের খবর দিয়ে স্বজনরা এসে থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ আসামি সুমনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত সুমন মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। সুমন মিয়া পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতারের জন্য আদালত পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্যদিকে, ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল ছাতকের একটি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে ভিকটিম তার মা ও ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে বাড়ি যাচ্ছিলেন। ছাতক থেকে বাড়ি ফেরার পথে জাউয়া বাজার এলাকায় পৌঁছামাত্র আসামি জালাল উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, সাজল মিয়া ও অজুদ মিয় ভিকটিমকে বহনকারী অটোরিকশার গতিরোধ করে। এ সময় ভিকটিমের মা ও ভাইকে মারপিট করে ৩০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে আসামিরা ভিকটিমকে অন্য একটি অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ মামলায় পুলিশ তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।

এ মামলায় আদালত ১১ জনের সাক্ষ্য প্রদান ও দীর্ঘ শুনানি শেষে আসামি জালাল উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, সাজল মিয়া ও অজুদ মিয়াকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও প্রত্যেকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট রান্টু রায়।

আরও খবর
শিক্ষার মাধ্যমে শান্তির পথ ধরে প্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে ছাত্রলীগ
আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালুর দাবি
ডাক বিভাগের মানিঅর্ডার ফরম, সিল ও রসিদ জাল করে অর্থ আত্মসাৎ
চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে এলাকাবাসী দেখতে চান তৃতীয় লিঙ্গের রিতুকে
খাল উদ্ধার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অব্যাহত
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে
সিলেটে যুক্তরাজ্য ফেরতরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে : হট্টগোল
সিলেটে যুক্তরাজ্য ফেরতরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে : হট্টগোল
নির্যাতনে আইনজীবী হত্যা : পুলিশ কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ
স্বাভাবিক গতি ফিরেছে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্যে
ক্যাসিনো ব্যবসায়ী জাকির ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট
দেশে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে মির্জা ফখরুল

মঙ্গলবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২১ , ২১ পৌষ ১৪২৭, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

সুনামগঞ্জে

ধর্ষণ মামলায় তিন ধর্ষকের যাবজ্জীবন

প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জে পৃথক তিনটি ধর্ষণ মামলায় তিন ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ধর্ষণ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- দিরাই উপজেলার জগদল গ্রামের আবদুল খালিকের ছেলে আবদুল বাতির ওরফে বাতেন, একই জেলার ছাতক উপজেলার গণক্ষাই গ্রামের মৃত কানু বিশ্বাসের ছেলে কাঞ্চন বিশ্বাস এবং জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীধরপাশা গ্রামের মৃত মোক্তার আলীর ছেলে সুমন মিয়া ওরফে স্বপন।

অপহরণ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ছাতক উপজেলার আন্দাইরগাঁও গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর ছেলে, জালাল উদ্দিন ও হেলাল উদ্দিন, একই গ্রামের আবু রায়হানের ছেলে সাজল মিয়া এবং মৃত সইফুর রহমানের ছেলে অজুদ মিয়া। আদালত সূত্র জানায়, ধর্ষক বাতেন দিরাই উপজেলার জগদল গ্রামে ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ রাত ১টার দিকে ভিকটিমের শয়ণকক্ষের কাঠের দরজা ভেঙে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে গ্রাম্য পঞ্চায়েতে আসামি বাতেন ভিকটিমকে বিবাহ করার অঙ্গিকার করার পর বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকে।

একপর্যায়ে ভিকটিম গর্ভধারণ করলে থানায় গিয়ে আসামি বাতেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ওই নারী। তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে বাতেনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে আসামি আবদুল বাতিন ওরফে বাতেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা প্রদান করেন। রায় ঘোষণাকালে বাতেন পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক।

ধর্ষক কাঞ্চন বিশ^াস জেলার ছাতক উপজেলার গণক্ষাই গ্রামের ২০১৪ সালের ১৬ আগস্ট প্রতিবেশীর ৭ বছরের নাবালিকা কণ্যাকে পেয়ারা খাওয়ানো লোভ দেখিয়ে ধর্ষকের শয়ণকক্ষে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে ওই শিশু কন্যার বাবা বাদী হয়ে কাঞ্চনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ আসামি কাঞ্চনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। আদালত ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামি কাঞ্চনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন।

ধর্ষক সুমন মিয়া ওরফে স্বপন ২০০৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার খাজাখালু এক ১৪ বছরের এক কিশোরীকে ফুসলিয়ে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় তুলে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার স্থানীয় সানলাইট হোটেলে রেখে তিনবার ধর্ষণ করে। পরের দিন ধর্ষক সুমন ভিকটিমকে তার বাড়ি শ্রীধরপাশা নিয়ে যাওয়ার সময় উপজেলার কলকলি বাজারে পৌঁছলে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হলে তাদের আটক করে। ভিকটিমের স্বজনদের খবর দিয়ে স্বজনরা এসে থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ আসামি সুমনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত সুমন মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। সুমন মিয়া পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতারের জন্য আদালত পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্যদিকে, ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল ছাতকের একটি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে ভিকটিম তার মা ও ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে বাড়ি যাচ্ছিলেন। ছাতক থেকে বাড়ি ফেরার পথে জাউয়া বাজার এলাকায় পৌঁছামাত্র আসামি জালাল উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, সাজল মিয়া ও অজুদ মিয় ভিকটিমকে বহনকারী অটোরিকশার গতিরোধ করে। এ সময় ভিকটিমের মা ও ভাইকে মারপিট করে ৩০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে আসামিরা ভিকটিমকে অন্য একটি অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ মামলায় পুলিশ তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।

এ মামলায় আদালত ১১ জনের সাক্ষ্য প্রদান ও দীর্ঘ শুনানি শেষে আসামি জালাল উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, সাজল মিয়া ও অজুদ মিয়াকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও প্রত্যেকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট রান্টু রায়।