স্বাভাবিক গতি ফিরেছে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্যে

দেশের অন্যতম বৃহৎ ও শতভাগ রপ্তানিমুখী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মূল্যের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের থাবায় এবার ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ে রপ্তানি বাণিজ্য। মহামারীর কারণে আখাউড়া স্থলবন্দরে অন্তত ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে আগের তুলনায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানির পরিমাণও বেড়েছে। এখন প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য যাচ্ছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায়। তবে এখন যে কয়টি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, তার মধ্যে মাছের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

স্থলবন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর রড-সিমেন্ট আমদানি বন্ধ করে দেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এছাড়া তিন মাসেরও বেশি সময় মাছ রপ্তানিও বন্ধ রাখেন তারা। কিন্তু এখন রড-সিমেন্ট রপ্তানি হওয়ার পাশাপাশি মাছ রপ্তানির পরিমাণও আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৩ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও ১৯৯৫ সাল থেকেই আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। এই বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্য ত্রিপুরা রাজ্য থেকে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে যায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকা মূল্যের রড, সিমেন্ট, পাথর, প্লাস্টিক, মাছ, তুলা, ভোজ্য তেল ও খাদ্যসামগ্রীসহ অর্ধশত পণ্য রপ্তানি হতে থাকে আগরতলায়। কিন্তু ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ার পর থেকেই ধস নামতে থাকে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্যে। তবে রপ্তানির পরিমাণ কমে যাওয়ার পরও গড়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই কোটি টাকা মূল্যের অন্তত ৫০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হতো। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর রপ্তানির পরিমাণ আরও কমে যায়। ভারতে দৈনিক মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়। শুধু ভোজ্য তেল, সিমেন্ট, মাছ ও খাদ্যসামগ্রী রপ্তানির মাধ্যমে কোনরকম সচল থাকে আখাউড়া স্থলবন্দর। তবে মাস দেড়েক ধরে রপ্তানির পরিমাণ আশানুরূপ হারে বেড়েছে। এখন প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের অর্ধশত ট্রাক মাছ, রড, সিমেন্ট, কয়লা, তুলা ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সুয়েব ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রাজীব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে প্রথম দিকে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নামে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশিদের দেয়া পণ্য রপ্তানির অর্ডার বাতিল করতে থাকেন। এতে আর্থিকভাবে লোকসানে পড়েন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তখন রপ্তানি কার্যক্রম চালু থাকলেও পরিমাণ ছিল স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অর্ধেক। কিন্তু এখন আবার রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। রপ্তানির পরিমাণ যদি বাড়তে থাকে তাহলে ব্যবসায়ীরা যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সেটি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এক-দেড় মাস আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে অন্তত ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। তবে মাস দুয়েক ধরে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। যদিও ভোজ্য তেল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মাছ আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছেন তারা। এতে স্বাভাবিক রূপে ফিরছে আখাউড়া স্থলবন্দর।

আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক মিয়া বলেন, মাস দুয়েক ধরে মাছের চাহিদা বেড়েছে। এখন দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ টন বিভিন্ন প্রজাতির (ইলিশ ও চিংড়ি ব্যতীত) মাছ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। আর প্রতি কেজি মাছের গড় মূল্য আড়াই ডলার।

আরও খবর
শিক্ষার মাধ্যমে শান্তির পথ ধরে প্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে ছাত্রলীগ
আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালুর দাবি
ডাক বিভাগের মানিঅর্ডার ফরম, সিল ও রসিদ জাল করে অর্থ আত্মসাৎ
চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে এলাকাবাসী দেখতে চান তৃতীয় লিঙ্গের রিতুকে
খাল উদ্ধার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অব্যাহত
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে
সিলেটে যুক্তরাজ্য ফেরতরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে : হট্টগোল
সিলেটে যুক্তরাজ্য ফেরতরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে : হট্টগোল
ধর্ষণ মামলায় তিন ধর্ষকের যাবজ্জীবন
নির্যাতনে আইনজীবী হত্যা : পুলিশ কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ
ক্যাসিনো ব্যবসায়ী জাকির ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট
দেশে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে মির্জা ফখরুল

মঙ্গলবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২১ , ২১ পৌষ ১৪২৭, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

স্বাভাবিক গতি ফিরেছে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্যে

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

দেশের অন্যতম বৃহৎ ও শতভাগ রপ্তানিমুখী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মূল্যের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের থাবায় এবার ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ে রপ্তানি বাণিজ্য। মহামারীর কারণে আখাউড়া স্থলবন্দরে অন্তত ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে আগের তুলনায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানির পরিমাণও বেড়েছে। এখন প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য যাচ্ছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায়। তবে এখন যে কয়টি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, তার মধ্যে মাছের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

স্থলবন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর রড-সিমেন্ট আমদানি বন্ধ করে দেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এছাড়া তিন মাসেরও বেশি সময় মাছ রপ্তানিও বন্ধ রাখেন তারা। কিন্তু এখন রড-সিমেন্ট রপ্তানি হওয়ার পাশাপাশি মাছ রপ্তানির পরিমাণও আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৩ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও ১৯৯৫ সাল থেকেই আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। এই বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্য ত্রিপুরা রাজ্য থেকে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে যায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকা মূল্যের রড, সিমেন্ট, পাথর, প্লাস্টিক, মাছ, তুলা, ভোজ্য তেল ও খাদ্যসামগ্রীসহ অর্ধশত পণ্য রপ্তানি হতে থাকে আগরতলায়। কিন্তু ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ার পর থেকেই ধস নামতে থাকে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্যে। তবে রপ্তানির পরিমাণ কমে যাওয়ার পরও গড়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই কোটি টাকা মূল্যের অন্তত ৫০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হতো। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর রপ্তানির পরিমাণ আরও কমে যায়। ভারতে দৈনিক মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়। শুধু ভোজ্য তেল, সিমেন্ট, মাছ ও খাদ্যসামগ্রী রপ্তানির মাধ্যমে কোনরকম সচল থাকে আখাউড়া স্থলবন্দর। তবে মাস দেড়েক ধরে রপ্তানির পরিমাণ আশানুরূপ হারে বেড়েছে। এখন প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের অর্ধশত ট্রাক মাছ, রড, সিমেন্ট, কয়লা, তুলা ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সুয়েব ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রাজীব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে প্রথম দিকে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নামে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশিদের দেয়া পণ্য রপ্তানির অর্ডার বাতিল করতে থাকেন। এতে আর্থিকভাবে লোকসানে পড়েন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তখন রপ্তানি কার্যক্রম চালু থাকলেও পরিমাণ ছিল স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অর্ধেক। কিন্তু এখন আবার রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। রপ্তানির পরিমাণ যদি বাড়তে থাকে তাহলে ব্যবসায়ীরা যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সেটি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এক-দেড় মাস আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে অন্তত ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। তবে মাস দুয়েক ধরে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। যদিও ভোজ্য তেল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মাছ আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছেন তারা। এতে স্বাভাবিক রূপে ফিরছে আখাউড়া স্থলবন্দর।

আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক মিয়া বলেন, মাস দুয়েক ধরে মাছের চাহিদা বেড়েছে। এখন দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ টন বিভিন্ন প্রজাতির (ইলিশ ও চিংড়ি ব্যতীত) মাছ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। আর প্রতি কেজি মাছের গড় মূল্য আড়াই ডলার।