বড়দিনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা!

মিথুশিলাক মুরমু

খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিনের দিনে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। অতীতে বেশ কয়েকবার অবগত হলেও তেমন আমলে নিইনি; কিন্তু এবার আমার পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় সত্যটি স্বচ্ছ জলের মতো পরিষ্কার হয়েছে। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি-বাংলাদেশ, নর্থ-সাউথ ইউনির্ভাসিটিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২৫ ডিসেম্বর, প্রভু যিশু খ্রিস্টের জন্মদিনে সেমিস্টার পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে; এবারও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন- ইউজিসি তথ্যমতে, ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের নানা প্রান্তে শিক্ষাদান করে আসছে। এছাড়াও রয়েছে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার খ্রিস্টিয়ান ছেলেমেয়েরা অধ্যয়ন করছে। আমরা ইতিপূর্বেও অবলোকন করেছি, ‘বড়দিনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা’ (২০ ডিসেম্বর, ২০১৩; বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)। আবার নিশ্চিত হয়েছি যে, প্রভু যিশু খ্রিস্টের পুনরুত্থান অর্থাৎ ইস্টার সানডে’তেও যথারীতি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে; শুধু ক্যারিয়ারের দিকে তাকিয়ে খ্রিস্টিয়ান ছেলেমেয়েরা গুরুজন, শিক্ষকদের মতামতকে উপেক্ষা করার সাহস দেখাতে পারে না। হতাশা, ক্ষুব্ধতা এবং শিক্ষকদের প্রতি ভক্তিহীনতায় পরীক্ষার হলে উপস্থিত হয়ে থাকে।

স্বাধীন দেশের নাগরিক এবং সাংবিধানিকভাবে ধর্মীয় নিরপেক্ষতার দেশে ধর্মীয় উৎসব দিনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে কী না ভেবে দেখা দরকার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২. কতে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ অনুচ্ছেদ ২৮.১ এ বলা হয়েছে ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।’ এবং ২৮.৩ তে রয়েছে-‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না।’ অর্থাৎ মর্মাথ আমরা যেটি বুঝেছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, পরীক্ষা কিংবা রেজাল্টের ক্ষেত্রেও ধর্মকে কোনভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠীর রক্তে রঞ্জিতের প্রতীক সবুজ জমিনের ওপর লাল রং পতাকা আমাদের অসাম্প্রদায়িকতারই প্রতীক। একটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে যেতে না যেতেই একি দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছে আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যপীঠগুলো! ধর্মীয় উৎসবাদিকে বা ধর্মীয় অধিকারকে ক্ষুণœ করে কখনও মহত্ত্বর গুণাবলি অর্জন করা সম্ভবপর নয়।

২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ খ্রিস্টাব্দের বড়দিনে মাননীয় রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বিশে^ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও আচার ও অনুষ্ঠানাদি স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে। বিদ্যমান সম্প্রীতির এই সুমহান ঐতিহ্যকে আরও সুদৃঢ় করতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে। ... জাতির পিতা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।’ সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতেও উল্লেখ করেছেন, “বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি। ... ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে সবাই একসঙ্গে উৎসব পালন করব। আমাদের সংবিধানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। সবাই মিলে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। তাই এই দেশে আমাদের সবার। বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, দয়া করে ধর্মীয় উৎসবাদিতে পরীক্ষা, ক্লাস কিংবা আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলোকে এড়িয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করলে আমরা কৃতার্থ হবো। আমাদের ছেলেমেয়েরা সম্প্রীতির বাংলাদেশকে ভালোবাসবে, সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাবে।

মঙ্গলবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২১ , ২১ পৌষ ১৪২৭, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

বড়দিনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা!

মিথুশিলাক মুরমু

খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিনের দিনে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। অতীতে বেশ কয়েকবার অবগত হলেও তেমন আমলে নিইনি; কিন্তু এবার আমার পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় সত্যটি স্বচ্ছ জলের মতো পরিষ্কার হয়েছে। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি-বাংলাদেশ, নর্থ-সাউথ ইউনির্ভাসিটিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২৫ ডিসেম্বর, প্রভু যিশু খ্রিস্টের জন্মদিনে সেমিস্টার পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে; এবারও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন- ইউজিসি তথ্যমতে, ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের নানা প্রান্তে শিক্ষাদান করে আসছে। এছাড়াও রয়েছে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার খ্রিস্টিয়ান ছেলেমেয়েরা অধ্যয়ন করছে। আমরা ইতিপূর্বেও অবলোকন করেছি, ‘বড়দিনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা’ (২০ ডিসেম্বর, ২০১৩; বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)। আবার নিশ্চিত হয়েছি যে, প্রভু যিশু খ্রিস্টের পুনরুত্থান অর্থাৎ ইস্টার সানডে’তেও যথারীতি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে; শুধু ক্যারিয়ারের দিকে তাকিয়ে খ্রিস্টিয়ান ছেলেমেয়েরা গুরুজন, শিক্ষকদের মতামতকে উপেক্ষা করার সাহস দেখাতে পারে না। হতাশা, ক্ষুব্ধতা এবং শিক্ষকদের প্রতি ভক্তিহীনতায় পরীক্ষার হলে উপস্থিত হয়ে থাকে।

স্বাধীন দেশের নাগরিক এবং সাংবিধানিকভাবে ধর্মীয় নিরপেক্ষতার দেশে ধর্মীয় উৎসব দিনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে কী না ভেবে দেখা দরকার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২. কতে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ অনুচ্ছেদ ২৮.১ এ বলা হয়েছে ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।’ এবং ২৮.৩ তে রয়েছে-‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না।’ অর্থাৎ মর্মাথ আমরা যেটি বুঝেছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, পরীক্ষা কিংবা রেজাল্টের ক্ষেত্রেও ধর্মকে কোনভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠীর রক্তে রঞ্জিতের প্রতীক সবুজ জমিনের ওপর লাল রং পতাকা আমাদের অসাম্প্রদায়িকতারই প্রতীক। একটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে যেতে না যেতেই একি দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছে আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যপীঠগুলো! ধর্মীয় উৎসবাদিকে বা ধর্মীয় অধিকারকে ক্ষুণœ করে কখনও মহত্ত্বর গুণাবলি অর্জন করা সম্ভবপর নয়।

২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ খ্রিস্টাব্দের বড়দিনে মাননীয় রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বিশে^ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও আচার ও অনুষ্ঠানাদি স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে। বিদ্যমান সম্প্রীতির এই সুমহান ঐতিহ্যকে আরও সুদৃঢ় করতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে। ... জাতির পিতা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।’ সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতেও উল্লেখ করেছেন, “বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি। ... ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে সবাই একসঙ্গে উৎসব পালন করব। আমাদের সংবিধানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। সবাই মিলে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। তাই এই দেশে আমাদের সবার। বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, দয়া করে ধর্মীয় উৎসবাদিতে পরীক্ষা, ক্লাস কিংবা আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলোকে এড়িয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করলে আমরা কৃতার্থ হবো। আমাদের ছেলেমেয়েরা সম্প্রীতির বাংলাদেশকে ভালোবাসবে, সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাবে।