করোনাকালে বাসকের চাহিদা তুঙ্গে

নীলকণ্ঠ, অপরাজিতা, জাফরান, আলকুশি, নাগদানা, এলোভেরা ও বাসকসহ কাব্যিক নামের শত ভেষজে ঠাসা বাগান। বিরল গাছে থরেথরে সাজানো গোছানো ফুলফল ও গুটি। তাতে ঘুরে বেড়ায় বর্ণময় প্রজাপতি, শশব্যস্ত মৌমাছি ও নানাজাতের পাখি। এ যেন বহুস্তরী উদ্যানে গাছগাছালি আর গুল্মলতার বৈচিত্র্যময় সমাহার। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি জনপদে ফল-ফসলের পাশাপাশি ভেষজের এমন বাণিজ্যিক বাগান হরদম চোখে পড়ে।

জানা যায়, লাভজনক হওয়ায় পাহাড়ি গ্রাম টেলকি, আমলিতলা, ঘুঘুরবাজার, অরণখোলা ও গাছাবাড়ীর অনেকেই ভেষজ আবাদে ঝুঁকছেন। গুবুদিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের পাঁচ একর বাগানে রয়েছে চার শতাধিক দেশি-বিদেশি ভেষজ গাছ।

শতাধিক ভেষজের এখন বাণিজ্যিক কালেকশন হয়। সবচেয়ে দামি ও দুষ্প্রাপ্য ভেষজ কালো আদা, রিতো ও অর্থোসিনের সন্তোষজনক ফলন হচ্ছে। রিতো থেকে স্থানীয়ভাবে সাবান ও জুয়েলারি শিল্পের পণ্য এবং কালো আদায় দূরারোগ্য ব্যাধির হারবাল ওষুধ তৈরি হচ্ছে। প্রতিমাসে বাগান থেকে ৩-৪ লাখ টাকার ভেষজ বিক্রি করেন তিনি। হামদর্দের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক নুরুল আলম জানান, দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মেডিসিন কোম্পানির গবেষকরা এখানে সারাবছর মাঠ গবেষণায় আসেন। দেশে মেডিসিনাল প্লান্টসের তেমন বাণিজ্যিক আবাদ না হওয়ায় এলোপ্যাথিক ও হারবাল কোম্পানিরা বিদেশ থেকে কাঁচামাল আনেন। অথচ মধুপুরের পাহাড়ি এলাকার প্রচলিত ফল-ফসলের পাশাপাশি ভেষজ প্লানটেশন হলে কোটি কোটি টাকা আয় হতো।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন জানান, বাগানে প্রায় আড়াই লাখ উৎপাদনক্ষম বাসক গাছ রয়েছে। করোনার কারণে বাসকের বিপুল চাহিদা থাকায় দামও বেড়েছে। প্রতি মণ বাসক এখন ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাসক থেকে সাধারণত কফ সিরাফ ও ঠাণ্ডাজাতীয় রোগের ওষুধ তৈরি হয়।

মধুপুরে বর্তমানে প্রায় ১০০ টনের বেশি বাসক উৎপাদন হয় বলে জানান তিনি। একমির মার্কেটিং প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শীতকালে এমনিতেই ঠাণ্ডা ও কফকাশির জন্য বাজারে বাসক সিরাফের চাহিদা থাকে। এবার করোনার দরুণ বাসকে তৈরি সিরাফ ও ওষুধের চাহিদা সারাবছর লেগে আছে। সাধনা, হামদর্দ ও শক্তির মতো হারবাল এবং স্কয়ার, একমি ও ফাইজারের মতো এলোপ্যাথিক কোম্পানি মধুপুর থেকে সরাসরি বাসক পাতা কিনছেন। অরণখোলা গ্রামের ভেষজ ব্যবসায়ী বন্দেজ আলী জানান, বাণিজ্যিক উদ্যান ছাড়াও গৃহস্থরা বাড়ির আঙ্গিনায়, পতিত জমি, খেতের আইল এবং আনারস বাগানে সাথী ফসল হিসেবে ভেষজের আবাদ করছেন। তার মতো পাইকাররা গ্রামে গ্রামে ঘুরে কিনে নিচ্ছেন। ভেষজ বিক্রি করে অনেকেই লাখ টাকা রোজগার করছেন। এদিকে ওষুধ ছাড়াও ভেষজ চা হিসাবেও বাসকের চাহিদা রয়েছে। অনেকটা চা পাতার মতোই বাসক পাতা প্যাকেটজাত ও বাজারজাত করছেন।

হামদর্দের বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিপণন বিভাগের মাঠকর্মী আনোয়ার হোসেন জানান, এক সময়ে মধুপুরের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল থেকে প্রচুর ভেষজ কাঁচামাল সংগ্রহ করা হতো। এখন গৃহস্থরা ভেষজ গাছগাছড়ার আবাদ করছেন। পাইকার বা নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে বড় কোম্পানি এসব কাঁচামাল কিনছেন। মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদুল হাসান জানান, মধুপুরে ভেষজ গাছগাছড়ার চাষ নিয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের কোন গবেষণা নেই। পাহাড়ি কৃষকরা নিজের আগ্রহে ভেষজ গাছগাছড়ার চাষে মনোনিবেশ করছেন। কেউ অফিসে এলে তাকে পরামর্শ দেয়া হবে।

image
আরও খবর
ডিলার সিন্ডিকেটে সারের কৃত্রিম সঙ্কট : বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক
কুয়াকাটায় পরিবেশ রক্ষায় সাংবাদিকদের মানববন্ধন
ডিলার সিন্ডিকেটে সারের কৃত্রিম সঙ্কট : বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক
কুয়াকাটায় পরিবেশ রক্ষায় সাংবাদিকদের মানববন্ধন
সৈয়দপুরে দিনরাত কর্মমুখর প্রেসপাড়া : কাগজের দাম বৃদ্ধি
গুরুদাসপুরে প্রার্থী ডিসি-এসপি’র মতবিনিময়
জগন্নাথপুরে রাস্তা কাটা নিয়ে সংঘর্ষ আহত ৫
লালমনিরহাটে কমছে ধানের দাম
কুমিল্লায় মাদক গ্রেফতার চার
ভরা মৌসুমে পিয়াজ আমদানি শঙ্কায় মাদারীপুরের কৃষক
বেলকুচিতে প্রার্থিতা বহাল বিএনপির আলতাফের
কুড়িগ্রামে শরিয়াভিত্তিক বিনিয়োগের নামে ৯ কোটি আত্মসাৎ : বিক্ষোভ
ছয় জেলায় শীতবস্ত্র পেলেন শীতার্ত মানুষ
ভোলায় বিদ্যালয়মুখী হচ্ছে ঝরে পড়া ৪২০০ শিক্ষার্থী

বুধবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২১ , ২২ পৌষ ১৪২৭, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

করোনাকালে বাসকের চাহিদা তুঙ্গে

বিসান বিহারী দাস, টাঙ্গাইল

image

নীলকণ্ঠ, অপরাজিতা, জাফরান, আলকুশি, নাগদানা, এলোভেরা ও বাসকসহ কাব্যিক নামের শত ভেষজে ঠাসা বাগান। বিরল গাছে থরেথরে সাজানো গোছানো ফুলফল ও গুটি। তাতে ঘুরে বেড়ায় বর্ণময় প্রজাপতি, শশব্যস্ত মৌমাছি ও নানাজাতের পাখি। এ যেন বহুস্তরী উদ্যানে গাছগাছালি আর গুল্মলতার বৈচিত্র্যময় সমাহার। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি জনপদে ফল-ফসলের পাশাপাশি ভেষজের এমন বাণিজ্যিক বাগান হরদম চোখে পড়ে।

জানা যায়, লাভজনক হওয়ায় পাহাড়ি গ্রাম টেলকি, আমলিতলা, ঘুঘুরবাজার, অরণখোলা ও গাছাবাড়ীর অনেকেই ভেষজ আবাদে ঝুঁকছেন। গুবুদিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের পাঁচ একর বাগানে রয়েছে চার শতাধিক দেশি-বিদেশি ভেষজ গাছ।

শতাধিক ভেষজের এখন বাণিজ্যিক কালেকশন হয়। সবচেয়ে দামি ও দুষ্প্রাপ্য ভেষজ কালো আদা, রিতো ও অর্থোসিনের সন্তোষজনক ফলন হচ্ছে। রিতো থেকে স্থানীয়ভাবে সাবান ও জুয়েলারি শিল্পের পণ্য এবং কালো আদায় দূরারোগ্য ব্যাধির হারবাল ওষুধ তৈরি হচ্ছে। প্রতিমাসে বাগান থেকে ৩-৪ লাখ টাকার ভেষজ বিক্রি করেন তিনি। হামদর্দের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক নুরুল আলম জানান, দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মেডিসিন কোম্পানির গবেষকরা এখানে সারাবছর মাঠ গবেষণায় আসেন। দেশে মেডিসিনাল প্লান্টসের তেমন বাণিজ্যিক আবাদ না হওয়ায় এলোপ্যাথিক ও হারবাল কোম্পানিরা বিদেশ থেকে কাঁচামাল আনেন। অথচ মধুপুরের পাহাড়ি এলাকার প্রচলিত ফল-ফসলের পাশাপাশি ভেষজ প্লানটেশন হলে কোটি কোটি টাকা আয় হতো।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন জানান, বাগানে প্রায় আড়াই লাখ উৎপাদনক্ষম বাসক গাছ রয়েছে। করোনার কারণে বাসকের বিপুল চাহিদা থাকায় দামও বেড়েছে। প্রতি মণ বাসক এখন ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাসক থেকে সাধারণত কফ সিরাফ ও ঠাণ্ডাজাতীয় রোগের ওষুধ তৈরি হয়।

মধুপুরে বর্তমানে প্রায় ১০০ টনের বেশি বাসক উৎপাদন হয় বলে জানান তিনি। একমির মার্কেটিং প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শীতকালে এমনিতেই ঠাণ্ডা ও কফকাশির জন্য বাজারে বাসক সিরাফের চাহিদা থাকে। এবার করোনার দরুণ বাসকে তৈরি সিরাফ ও ওষুধের চাহিদা সারাবছর লেগে আছে। সাধনা, হামদর্দ ও শক্তির মতো হারবাল এবং স্কয়ার, একমি ও ফাইজারের মতো এলোপ্যাথিক কোম্পানি মধুপুর থেকে সরাসরি বাসক পাতা কিনছেন। অরণখোলা গ্রামের ভেষজ ব্যবসায়ী বন্দেজ আলী জানান, বাণিজ্যিক উদ্যান ছাড়াও গৃহস্থরা বাড়ির আঙ্গিনায়, পতিত জমি, খেতের আইল এবং আনারস বাগানে সাথী ফসল হিসেবে ভেষজের আবাদ করছেন। তার মতো পাইকাররা গ্রামে গ্রামে ঘুরে কিনে নিচ্ছেন। ভেষজ বিক্রি করে অনেকেই লাখ টাকা রোজগার করছেন। এদিকে ওষুধ ছাড়াও ভেষজ চা হিসাবেও বাসকের চাহিদা রয়েছে। অনেকটা চা পাতার মতোই বাসক পাতা প্যাকেটজাত ও বাজারজাত করছেন।

হামদর্দের বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিপণন বিভাগের মাঠকর্মী আনোয়ার হোসেন জানান, এক সময়ে মধুপুরের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল থেকে প্রচুর ভেষজ কাঁচামাল সংগ্রহ করা হতো। এখন গৃহস্থরা ভেষজ গাছগাছড়ার আবাদ করছেন। পাইকার বা নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে বড় কোম্পানি এসব কাঁচামাল কিনছেন। মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদুল হাসান জানান, মধুপুরে ভেষজ গাছগাছড়ার চাষ নিয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের কোন গবেষণা নেই। পাহাড়ি কৃষকরা নিজের আগ্রহে ভেষজ গাছগাছড়ার চাষে মনোনিবেশ করছেন। কেউ অফিসে এলে তাকে পরামর্শ দেয়া হবে।