ডিলার সিন্ডিকেটে সারের কৃত্রিম সঙ্কট : বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক

যশোরের কেশবপুরে বিসিআইসি ডিলাররা সিন্ডিকেট করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় বাজারে সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে রাতের আধারে সার বিক্রি করে দিচ্ছেন ঘের ব্যবসায়ীদের কাছে। ফলে কৃষকরা বাধ্য হচ্ছেন চড়া মূল্যে সার কিনতে। গত দুই মাস ধরে এ অবস্থা চললেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় বিসিআইসি ডিলাররা হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। বর্তমান বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রকাশ্যে প্রতিকেজি টিএসপি ৮ টাকা, ডিএপি ৯ টাকা, ইউরিয়া ২ টাকা ও এমওপি ২ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারের মূল্য বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে বলেন, বাজারে সারের কোন সংকট নেই। ব্যবসায়ীরা মিথ্যা কথা বলে বেশি দামে বিক্রি করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, ১৫ আগস্ট থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময়কে বোরো মৌসুম ধরা হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার সারের মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতিবস্তা টিএসটি ১১০০ টাকা, ডিএপি ৮০০ টাকা, এমওপি ৮০০ টাকা ও ইউরিয়া ৮০০ টাকা। সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষকের কাছে সার বিক্রির জন্যে এ উপজেলায় ১৩ বিসিআইসি ডিলার চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

এছাড়াও ৮১ খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছেন। এর অনুকুলে ২০২০-২১ অর্থ বছরে বিসিআইসি ডিলাররা গত নভেম্বরে ইউরিয়া ৩৩৮, টিএসপি ৫৮, ডিএপি ৪৯৬, এমওপি ৩১৭, ডিসেম্বরে ইউরিয়া ৫৮৫, টিএসপি ১৫০, ডিএপি ৫৩৭ ও এমওপি ৩৪৩ মেট্রিকটন সার উত্তোলন করেছেন। সারের চাহিদা দেয়া হয়েছে জানুয়ারিতে ইউরিয়া ১৮০০, ফেব্রুয়ারীতে ২ হাজার মেট্রিকটন ডিএপি জানুয়ারিতে ৮‘শ, ফেব্রুয়ারিতে ৬‘শ মেট্রিকটন। টিএসপি জানুয়ারীতে ৩৫০, ফেব্রুয়ারীতে ১৫০ মেট্রিকটন ও মার্চে ১০০ মেট্রিকটন। চাহিদার প্রায় সমপরিমান সার ডিলাররা প্রতিমাসে উত্তোলন করে থাকেন। এরপরও বর্তমান বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বস্তাপ্রতি টিএসটি ৪০০ টাকা, ডিএপি ৪৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

পৌরসভার হাবাসপোল এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) টিএসপি ১৫০০ টাকা, এমওপি ৮৫০ টাকা, ইউরিয়া ৯০০ টাকা ও জিপসাম (৩০ কেজি) ৩০০ টাকা দরে কিনেছেন।

বিসিআইসি ডিলার মেসার্স সিংহ ট্রেডার্সের মালিক বিষ্ণুপদ সিংহ বলেন, কৃষকের চাহিদা অনুযায়ি সরকারিভাবে সারের বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সারের চাহিদা মেটাতে বাইরে থেকে বেশি দামে সার কিনে আনতে হচ্ছে। যে কারণে বাজারে সারের দাম বেশি। অপর বিসিআইসি ডিলার মেসার্স কনিকা এন্টারপ্রাইজের মালিক সাধন কুমার কুন্ডু বলেন, টিএসপির কোন সরকারি বরাদ্দ নেই। ২/১ জন ডিলার বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশি দামে কিনে আনছেন। তাই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ডিএপিতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। এরপরও কেন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে তা তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, বাজারে সারের কোন সংকট নেই। ব্যবসায়ীরা প্রতিমাসেই বরাদ্দ পাচ্ছেন। তারপরও মিথ্যা কথা বলে ইচ্ছামত বেশি দামে বিক্রি করছেন। কোন অবস্থাতেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গত ৩০ ডিসেম্বর সিংহ ট্রেডার্সে ৭৬ মেট্রিকটন ডিএপি সার এসেছে। যা দিয়ে কেশবপুরের সমস্ত চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে তিনি দাবি করেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি পদক্ষেপ নিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম আরাফাত হোসেন বলেন, বেশি দামে সার বিক্রির কথা শুনেছি। কিন্তু আমরা গেলেও কোন প্রমাণ না পওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারছি না। যদি কেউ বেশী দামের ভাউচার আনতে পারে তাহলে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

আরও খবর
করোনাকালে বাসকের চাহিদা তুঙ্গে
ডিলার সিন্ডিকেটে সারের কৃত্রিম সঙ্কট : বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক
কুয়াকাটায় পরিবেশ রক্ষায় সাংবাদিকদের মানববন্ধন
কুয়াকাটায় পরিবেশ রক্ষায় সাংবাদিকদের মানববন্ধন
সৈয়দপুরে দিনরাত কর্মমুখর প্রেসপাড়া : কাগজের দাম বৃদ্ধি
গুরুদাসপুরে প্রার্থী ডিসি-এসপি’র মতবিনিময়
জগন্নাথপুরে রাস্তা কাটা নিয়ে সংঘর্ষ আহত ৫
লালমনিরহাটে কমছে ধানের দাম
কুমিল্লায় মাদক গ্রেফতার চার
ভরা মৌসুমে পিয়াজ আমদানি শঙ্কায় মাদারীপুরের কৃষক
বেলকুচিতে প্রার্থিতা বহাল বিএনপির আলতাফের
কুড়িগ্রামে শরিয়াভিত্তিক বিনিয়োগের নামে ৯ কোটি আত্মসাৎ : বিক্ষোভ
ছয় জেলায় শীতবস্ত্র পেলেন শীতার্ত মানুষ
ভোলায় বিদ্যালয়মুখী হচ্ছে ঝরে পড়া ৪২০০ শিক্ষার্থী

বুধবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২১ , ২২ পৌষ ১৪২৭, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

ডিলার সিন্ডিকেটে সারের কৃত্রিম সঙ্কট : বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক

প্রতিনিধি, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের কেশবপুরে বিসিআইসি ডিলাররা সিন্ডিকেট করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় বাজারে সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে রাতের আধারে সার বিক্রি করে দিচ্ছেন ঘের ব্যবসায়ীদের কাছে। ফলে কৃষকরা বাধ্য হচ্ছেন চড়া মূল্যে সার কিনতে। গত দুই মাস ধরে এ অবস্থা চললেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় বিসিআইসি ডিলাররা হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। বর্তমান বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রকাশ্যে প্রতিকেজি টিএসপি ৮ টাকা, ডিএপি ৯ টাকা, ইউরিয়া ২ টাকা ও এমওপি ২ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারের মূল্য বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে বলেন, বাজারে সারের কোন সংকট নেই। ব্যবসায়ীরা মিথ্যা কথা বলে বেশি দামে বিক্রি করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, ১৫ আগস্ট থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময়কে বোরো মৌসুম ধরা হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার সারের মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতিবস্তা টিএসটি ১১০০ টাকা, ডিএপি ৮০০ টাকা, এমওপি ৮০০ টাকা ও ইউরিয়া ৮০০ টাকা। সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষকের কাছে সার বিক্রির জন্যে এ উপজেলায় ১৩ বিসিআইসি ডিলার চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

এছাড়াও ৮১ খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছেন। এর অনুকুলে ২০২০-২১ অর্থ বছরে বিসিআইসি ডিলাররা গত নভেম্বরে ইউরিয়া ৩৩৮, টিএসপি ৫৮, ডিএপি ৪৯৬, এমওপি ৩১৭, ডিসেম্বরে ইউরিয়া ৫৮৫, টিএসপি ১৫০, ডিএপি ৫৩৭ ও এমওপি ৩৪৩ মেট্রিকটন সার উত্তোলন করেছেন। সারের চাহিদা দেয়া হয়েছে জানুয়ারিতে ইউরিয়া ১৮০০, ফেব্রুয়ারীতে ২ হাজার মেট্রিকটন ডিএপি জানুয়ারিতে ৮‘শ, ফেব্রুয়ারিতে ৬‘শ মেট্রিকটন। টিএসপি জানুয়ারীতে ৩৫০, ফেব্রুয়ারীতে ১৫০ মেট্রিকটন ও মার্চে ১০০ মেট্রিকটন। চাহিদার প্রায় সমপরিমান সার ডিলাররা প্রতিমাসে উত্তোলন করে থাকেন। এরপরও বর্তমান বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বস্তাপ্রতি টিএসটি ৪০০ টাকা, ডিএপি ৪৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

পৌরসভার হাবাসপোল এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) টিএসপি ১৫০০ টাকা, এমওপি ৮৫০ টাকা, ইউরিয়া ৯০০ টাকা ও জিপসাম (৩০ কেজি) ৩০০ টাকা দরে কিনেছেন।

বিসিআইসি ডিলার মেসার্স সিংহ ট্রেডার্সের মালিক বিষ্ণুপদ সিংহ বলেন, কৃষকের চাহিদা অনুযায়ি সরকারিভাবে সারের বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সারের চাহিদা মেটাতে বাইরে থেকে বেশি দামে সার কিনে আনতে হচ্ছে। যে কারণে বাজারে সারের দাম বেশি। অপর বিসিআইসি ডিলার মেসার্স কনিকা এন্টারপ্রাইজের মালিক সাধন কুমার কুন্ডু বলেন, টিএসপির কোন সরকারি বরাদ্দ নেই। ২/১ জন ডিলার বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশি দামে কিনে আনছেন। তাই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ডিএপিতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। এরপরও কেন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে তা তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, বাজারে সারের কোন সংকট নেই। ব্যবসায়ীরা প্রতিমাসেই বরাদ্দ পাচ্ছেন। তারপরও মিথ্যা কথা বলে ইচ্ছামত বেশি দামে বিক্রি করছেন। কোন অবস্থাতেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গত ৩০ ডিসেম্বর সিংহ ট্রেডার্সে ৭৬ মেট্রিকটন ডিএপি সার এসেছে। যা দিয়ে কেশবপুরের সমস্ত চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে তিনি দাবি করেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি পদক্ষেপ নিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম আরাফাত হোসেন বলেন, বেশি দামে সার বিক্রির কথা শুনেছি। কিন্তু আমরা গেলেও কোন প্রমাণ না পওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারছি না। যদি কেউ বেশী দামের ভাউচার আনতে পারে তাহলে পদক্ষেপ নেয়া হবে।