খুলনায় ইটভাটা গিলে খাচ্ছে নদী

খুলনার ইটভাটা মালিকরা প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় ভাটা স্থাপন, পরিবেশ, ইটপ্রস্তুত আইন কোন কাজেই আসছে না। ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও তা মানা হচ্ছে না। কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে কাঁচা ইট। এতে এলাকার বনজসম্পদ উজাড় হচ্ছে। উল্টো এসব ভাটামালিকরা প্রতিবছর নদীর বুক দখল করে ভাটার বিস্তৃতি বাড়াচ্ছেন।

খুলনা জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, জেলায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইটভাটা ১৫৩টি। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর এসব ভাটার রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করতে হয়। সেক্ষেত্রে অনেকে নবায়ন করেন, অনেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পারেন না। যারা দিতে পারেন না তারাও ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী, বটিয়াঘাটার কাজিবাছা, পাইকগাছার শিপসা, কয়রার কপোতাক্ষ, ডুমুরিয়ার ভদ্রা, হরি, ঘ্যাংরাইলসহ বিভিন্ন নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে এসব ভাটা। এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ডুমুরিয়ার হরি ও ভদ্রা নদীর। ভাটাগুলো নদীর পশ্চিমপাশে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে নদীর ভেতরে অর্ধেক জায়গা দখল করেছে।

কেবি ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা ভদ্রা নদীর সীমানা নির্ধারণকারী পিলার থেকে আরও ভেতরে ইট-সুরকি ও বালু দিয়ে নদী ভরাট করে দখলে নিয়েছে। একইভাবে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে আরও ১৭টি ইটভাটা।

কেবি ব্রিকসের মালিক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বুলু বলেন, বেশিরভাগ জমিই স্থানীয় মালিকদের কাছ থেকে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি করে নেয়া হয়েছে। আর কিছু জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। সেখানে আমরা শুধুমাত্র মাটি কেটে ফেলে রাখি।

পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের কোন অনুমোদন আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছুর অনুমোদন নিয়েই ইটভাটা পরিচালনা করছি।

কৃষিজমিতে কীভাবে অনুমোদন পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০ বছর আগে থেকে এই ভাটার কার্যক্রম চলে আসছে। স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, নদীদখলের পর ভাটামালিকরা নদীতে বাঁধ দিয়ে ছোট ছোট পুকুর নির্মাণ করেছেন। এসব পুকুরে জমা পলিমাটি দিয়েই তারা ইট তৈরি করছেন।

এভাবে বাঁধ দেয়ায় নদীর স্রোত কমে যাচ্ছে। পলি পড়ে নদী নাব্য হারাচ্ছে, পাল্টে যাচ্ছে গতিপথ আবার কোথাও নদী প্রায় মরে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে সেতু ও বাজার। পানি নিষ্কাশনসহ নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষামৌসুমে জলাবদ্ধতায় নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

মোস্তফা আরও বলেন, নদীর পাড়ের এ জমি ভূমিহীন কৃষকরা সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছিলেন। সেইজমি ইটভাটার মালিকরা নানা কৌশলে দখলে নিয়ে তার সঙ্গে ব্যক্তিগত জমি মিলিয়ে ২০০৯ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ১৮টি ভাটা গড়ে তুলেছেন। এর অধিকাংশ ভাটা বসতবাড়ির ১০ থেকে ১০০ গজের মধ্যে। বসতবাড়ির কাছে হওয়ায় ভাটার ধোঁয়া-বালিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন বাসিন্দারা।

খর্নিয়া এলাকার কৃষক আবদুল মজিদ জানান, ভাটার ধুলা আর কালি ফসলি জমিতে পড়ায় শোভনা, কুলবাড়িয়া, ভদ্রদিয়া, খর্নিয়া, রানাই, চহেরা, শোলগাতিয়া এলাকার কৃষি জমিতে ফসল আবাদে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফসল উৎপাদনও কমে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষি জমির মাটিও আনা হচ্ছে ইটভাটাতে। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয় নারীনেত্রী রোজিনা পারভীন বলেন, নদীর অববাহিকায় প্রায় ১৩ লাখ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনতে নদী খননসহ অবৈধ দখল নেয়া নদী-খালে আড়াআড়ি বাঁধ ও নেট-পাটা উচ্ছেদের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড পলি অপসারণের জন্য ২০০৮ সালে হরি নদীতে ড্রেজিং শুরু করে। কিন্তু সেটি প্রভাবশালীমহলের কারণে বন্ধ হয়ে যায়।

আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান প্রতাপ রায় জানান, নদী-খাল দখল করে নির্মিত ইটভাটা মালিকরা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় শীর্ষপর্যায়ের হাতেগোনা কয়েকজন নেতা। যারা রক্ষক তারাই ভক্ষক।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ইটভাটা থেকে যে দূষিত গ্যাস ও তাপ নির্গত হয় তা আশপাশের জীবজন্তু, গাছপালা এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। ভাটার চিমনি দিয়ে বের হওয়া ধোঁয়ার তেজস্ক্রিয়তায় এলাকায় গাছের পাতা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কার্বন পড়ায় পাতার খাদ্য উৎপাদনে ব্যাহত হয়। আম, লিচু, নারিকেল প্রভৃতি গাছের ফুলের পরাগায়নেও ব্যাপক ক্ষতি হয়।

মোছাদ্দেক বলেন, ২০১৩ সালের ইটপ্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৮(১) ধারা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা ও কৃষিজমির ওপর ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ জমাদ্দার বলেন, ইটভাটা সরকারি জমির মধ্যে পড়লে সরকার নিয়ে নিলে আমাদের আপত্তি নেই। তবে নদী-খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের বিষয়ে তার জানা নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরাঞ্চলের (খুলনা, যশোর ও নড়াইল জেলা) প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, নদী দখল করে ইটভাটা স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকে।

পরিবেশ অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক সাইফুর রহমান খান বলেন, পরিবেশ আইনের আওতায় যদি সঠিক থাকে, তাহলে সেই ইটভাটার অনুমোদন দিয়ে থাকি। তবে নদী দখল করে ভাটা থাকলে তা সম্পূর্ণ অবৈধ।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, নদী সংস্কার সরকারের অগ্রাধিকারমূলক বিবেচনায় রয়েছে। সম্প্রতি ওই ইটভাটাগুলোর সীমানা নির্ধারণ করে লাল কাপড় দিয়ে খুঁটি গেড়ে দেয়া হয়েছে। দ্রুত অবৈধ ইটভাটার মধ্যে থাকা সরকারি জমি উদ্ধার এবং নদী-খালের আড়াআড়ি বাঁধ ও নেটপাটা উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, যারা নদী দখল করছে বা অবৈধভাবে ভাটা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওই এলাকায় আট লাখ টাকা জরিমানার সঙ্গে কয়েকটি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন্নাহার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন তৎপর হলেই অবৈধভাবে কেউ নদী দখল করে ইটভাটা স্থাপন করতে পারবে না। ঢাকায় যদি নদীদখলমুক্ত করা যায়, তবে খুলনায় কেন যাবে না?

image

ইটভাটার আগ্রাসনে সংকুচিত ভদ্রা নদীর সীমানা -সংবাদ

আরও খবর
কোভিড-১৯ প্রতিরোধ প্রকল্পে অতিরিক্ত ৫৬৫৯ কোটি টাকা অনুমোদন
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণায় গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান কাদেরের
ভাস্কর্যবিরোধীরা ভুল করছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ঘাতক ট্রাক নিভিয়ে দিল নাট্যশিল্পী আশার জীবনপ্রদীপ
পাবনায় মেয়র প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আ’লীগের বিক্ষোভ
৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যামামলা
কর্মকর্তাকে গালাগাল, জালিয়াতির অভিযোগে কর্মচারী গ্রেফতারের জের
সমাজসেবা সচিবের ব্যাখ্যা চেয়েছেন ডিসি
দ্বিতীয় দফায় পান্থপথ কালভার্ট থেকে ৯৪ টন বর্জ্য অপসারণ
ধর্ষণচেষ্টায় চিৎকার করায় শ্বাসরোধে হত্যা করে নানা

বুধবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২১ , ২২ পৌষ ১৪২৭, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

খুলনায় ইটভাটা গিলে খাচ্ছে নদী

শুভ্র শচীন, খুলনা

image

ইটভাটার আগ্রাসনে সংকুচিত ভদ্রা নদীর সীমানা -সংবাদ

খুলনার ইটভাটা মালিকরা প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় ভাটা স্থাপন, পরিবেশ, ইটপ্রস্তুত আইন কোন কাজেই আসছে না। ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও তা মানা হচ্ছে না। কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে কাঁচা ইট। এতে এলাকার বনজসম্পদ উজাড় হচ্ছে। উল্টো এসব ভাটামালিকরা প্রতিবছর নদীর বুক দখল করে ভাটার বিস্তৃতি বাড়াচ্ছেন।

খুলনা জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, জেলায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইটভাটা ১৫৩টি। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর এসব ভাটার রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করতে হয়। সেক্ষেত্রে অনেকে নবায়ন করেন, অনেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পারেন না। যারা দিতে পারেন না তারাও ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী, বটিয়াঘাটার কাজিবাছা, পাইকগাছার শিপসা, কয়রার কপোতাক্ষ, ডুমুরিয়ার ভদ্রা, হরি, ঘ্যাংরাইলসহ বিভিন্ন নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে এসব ভাটা। এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ডুমুরিয়ার হরি ও ভদ্রা নদীর। ভাটাগুলো নদীর পশ্চিমপাশে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে নদীর ভেতরে অর্ধেক জায়গা দখল করেছে।

কেবি ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা ভদ্রা নদীর সীমানা নির্ধারণকারী পিলার থেকে আরও ভেতরে ইট-সুরকি ও বালু দিয়ে নদী ভরাট করে দখলে নিয়েছে। একইভাবে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে আরও ১৭টি ইটভাটা।

কেবি ব্রিকসের মালিক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বুলু বলেন, বেশিরভাগ জমিই স্থানীয় মালিকদের কাছ থেকে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি করে নেয়া হয়েছে। আর কিছু জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। সেখানে আমরা শুধুমাত্র মাটি কেটে ফেলে রাখি।

পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের কোন অনুমোদন আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছুর অনুমোদন নিয়েই ইটভাটা পরিচালনা করছি।

কৃষিজমিতে কীভাবে অনুমোদন পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০ বছর আগে থেকে এই ভাটার কার্যক্রম চলে আসছে। স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, নদীদখলের পর ভাটামালিকরা নদীতে বাঁধ দিয়ে ছোট ছোট পুকুর নির্মাণ করেছেন। এসব পুকুরে জমা পলিমাটি দিয়েই তারা ইট তৈরি করছেন।

এভাবে বাঁধ দেয়ায় নদীর স্রোত কমে যাচ্ছে। পলি পড়ে নদী নাব্য হারাচ্ছে, পাল্টে যাচ্ছে গতিপথ আবার কোথাও নদী প্রায় মরে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে সেতু ও বাজার। পানি নিষ্কাশনসহ নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষামৌসুমে জলাবদ্ধতায় নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

মোস্তফা আরও বলেন, নদীর পাড়ের এ জমি ভূমিহীন কৃষকরা সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছিলেন। সেইজমি ইটভাটার মালিকরা নানা কৌশলে দখলে নিয়ে তার সঙ্গে ব্যক্তিগত জমি মিলিয়ে ২০০৯ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ১৮টি ভাটা গড়ে তুলেছেন। এর অধিকাংশ ভাটা বসতবাড়ির ১০ থেকে ১০০ গজের মধ্যে। বসতবাড়ির কাছে হওয়ায় ভাটার ধোঁয়া-বালিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন বাসিন্দারা।

খর্নিয়া এলাকার কৃষক আবদুল মজিদ জানান, ভাটার ধুলা আর কালি ফসলি জমিতে পড়ায় শোভনা, কুলবাড়িয়া, ভদ্রদিয়া, খর্নিয়া, রানাই, চহেরা, শোলগাতিয়া এলাকার কৃষি জমিতে ফসল আবাদে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফসল উৎপাদনও কমে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষি জমির মাটিও আনা হচ্ছে ইটভাটাতে। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয় নারীনেত্রী রোজিনা পারভীন বলেন, নদীর অববাহিকায় প্রায় ১৩ লাখ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনতে নদী খননসহ অবৈধ দখল নেয়া নদী-খালে আড়াআড়ি বাঁধ ও নেট-পাটা উচ্ছেদের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড পলি অপসারণের জন্য ২০০৮ সালে হরি নদীতে ড্রেজিং শুরু করে। কিন্তু সেটি প্রভাবশালীমহলের কারণে বন্ধ হয়ে যায়।

আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান প্রতাপ রায় জানান, নদী-খাল দখল করে নির্মিত ইটভাটা মালিকরা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় শীর্ষপর্যায়ের হাতেগোনা কয়েকজন নেতা। যারা রক্ষক তারাই ভক্ষক।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ইটভাটা থেকে যে দূষিত গ্যাস ও তাপ নির্গত হয় তা আশপাশের জীবজন্তু, গাছপালা এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। ভাটার চিমনি দিয়ে বের হওয়া ধোঁয়ার তেজস্ক্রিয়তায় এলাকায় গাছের পাতা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কার্বন পড়ায় পাতার খাদ্য উৎপাদনে ব্যাহত হয়। আম, লিচু, নারিকেল প্রভৃতি গাছের ফুলের পরাগায়নেও ব্যাপক ক্ষতি হয়।

মোছাদ্দেক বলেন, ২০১৩ সালের ইটপ্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৮(১) ধারা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা ও কৃষিজমির ওপর ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ জমাদ্দার বলেন, ইটভাটা সরকারি জমির মধ্যে পড়লে সরকার নিয়ে নিলে আমাদের আপত্তি নেই। তবে নদী-খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের বিষয়ে তার জানা নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরাঞ্চলের (খুলনা, যশোর ও নড়াইল জেলা) প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, নদী দখল করে ইটভাটা স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকে।

পরিবেশ অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক সাইফুর রহমান খান বলেন, পরিবেশ আইনের আওতায় যদি সঠিক থাকে, তাহলে সেই ইটভাটার অনুমোদন দিয়ে থাকি। তবে নদী দখল করে ভাটা থাকলে তা সম্পূর্ণ অবৈধ।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, নদী সংস্কার সরকারের অগ্রাধিকারমূলক বিবেচনায় রয়েছে। সম্প্রতি ওই ইটভাটাগুলোর সীমানা নির্ধারণ করে লাল কাপড় দিয়ে খুঁটি গেড়ে দেয়া হয়েছে। দ্রুত অবৈধ ইটভাটার মধ্যে থাকা সরকারি জমি উদ্ধার এবং নদী-খালের আড়াআড়ি বাঁধ ও নেটপাটা উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, যারা নদী দখল করছে বা অবৈধভাবে ভাটা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওই এলাকায় আট লাখ টাকা জরিমানার সঙ্গে কয়েকটি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন্নাহার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন তৎপর হলেই অবৈধভাবে কেউ নদী দখল করে ইটভাটা স্থাপন করতে পারবে না। ঢাকায় যদি নদীদখলমুক্ত করা যায়, তবে খুলনায় কেন যাবে না?