বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ধীরে ধীরে বাড়ছে। সম্প্রতি লোকসানের দোহাই দিয়ে পাটকল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পণ্যটির রপ্তানি বৃদ্ধি ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভালোমতো রক্ষণাবেক্ষণ করলে এই খাতটি আরও বড় হবে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ৩০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৬৬ কোটি ৮১ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় বেড়েছে। এর আগে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের কাঁচা পাট, ৪৪ কোটি ৯২ লাখ ডলারের পাটের সুতা, ৯ কোটি ১৮ লাখ ডলারের চট ও বস্তা রপ্তানি হয়েছে। পাটের সুতা রপ্তানিতে ৪২ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং চট ও বস্তায় ৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে বিগত অর্থবছরের তুলনায় কাঁচা পাটের রপ্তানি কমেছে ৪ শতাংশ।
পাটজাত পণ্যের সঙ্গে ওষুধ রপ্তানিও বেড়েছে ১৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ ৮ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। এই সময় ওষুধ রপ্তানি ছিল ৮ কোটি ১৫ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে। গত ২০১৯-২০২০ বছরের প্রথম ছয় মাসে ৭ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।
সাবির্ক রপ্তানির হিসেবে দেখা যায়, গত এপ্রিলে রপ্তানি আয় তলানিতে পৌঁছলেও এরপর ধীরে ধীরে বাড়ছিল, তবে ডিসেম্বরে এসে আবার হোঁচট খেয়েছে। এই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৩১ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। ডিসেম্বরের এই ধসের কারণে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সার্বিক রপ্তানি কমেছে শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। অথচ মহামারীর মধ্যেও অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে অর্থাৎ জুলাই-নভেম্বর সময়ে ১ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি ছিল রপ্তানি আয়ে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে আরও দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ১ হাজার ৯২৩ কোটি ৩৪ লাখ (১৯.২৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এই ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১ হাজার ৯৬৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ১ হাজার ৯৩০ কোটি ২১ লাখ ডলার। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৩১ কোটি ডলার আয় হয়েছে, লক্ষ্য ছিল ৩৫২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আয় হয়েছিল ৩৫২ কোটি ৯১ লাখ ডলার।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে কম ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। তবে এই ছয় মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে। মোট আয় এসেছে ৮৫২ কোটি ৬১ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে উভেন পোশাক রপ্তানিতে। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৭০১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম।
বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২১ , ২৩ পৌষ ১৪২৭, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |
বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ধীরে ধীরে বাড়ছে। সম্প্রতি লোকসানের দোহাই দিয়ে পাটকল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পণ্যটির রপ্তানি বৃদ্ধি ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভালোমতো রক্ষণাবেক্ষণ করলে এই খাতটি আরও বড় হবে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ৩০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৬৬ কোটি ৮১ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় বেড়েছে। এর আগে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের কাঁচা পাট, ৪৪ কোটি ৯২ লাখ ডলারের পাটের সুতা, ৯ কোটি ১৮ লাখ ডলারের চট ও বস্তা রপ্তানি হয়েছে। পাটের সুতা রপ্তানিতে ৪২ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং চট ও বস্তায় ৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে বিগত অর্থবছরের তুলনায় কাঁচা পাটের রপ্তানি কমেছে ৪ শতাংশ।
পাটজাত পণ্যের সঙ্গে ওষুধ রপ্তানিও বেড়েছে ১৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ ৮ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। এই সময় ওষুধ রপ্তানি ছিল ৮ কোটি ১৫ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে। গত ২০১৯-২০২০ বছরের প্রথম ছয় মাসে ৭ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।
সাবির্ক রপ্তানির হিসেবে দেখা যায়, গত এপ্রিলে রপ্তানি আয় তলানিতে পৌঁছলেও এরপর ধীরে ধীরে বাড়ছিল, তবে ডিসেম্বরে এসে আবার হোঁচট খেয়েছে। এই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৩১ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। ডিসেম্বরের এই ধসের কারণে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সার্বিক রপ্তানি কমেছে শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। অথচ মহামারীর মধ্যেও অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে অর্থাৎ জুলাই-নভেম্বর সময়ে ১ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি ছিল রপ্তানি আয়ে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে আরও দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ১ হাজার ৯২৩ কোটি ৩৪ লাখ (১৯.২৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এই ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১ হাজার ৯৬৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ১ হাজার ৯৩০ কোটি ২১ লাখ ডলার। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৩১ কোটি ডলার আয় হয়েছে, লক্ষ্য ছিল ৩৫২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আয় হয়েছিল ৩৫২ কোটি ৯১ লাখ ডলার।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে কম ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। তবে এই ছয় মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে। মোট আয় এসেছে ৮৫২ কোটি ৬১ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে উভেন পোশাক রপ্তানিতে। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৭০১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম।