বোরো সেচের বৈদ্যুতিক সংযোগে কৃষক হয়রানির অভিযোগ

বোরো চাষের প্রসিদ্ধ এলাকা বলে পরিচিত ময়মনসিংহের ফুলপুরে মৌসুমের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি অধিকাংশ কৃষক। দেরিতে আবেদন করায় অনেকে লাইসেন্স পাচ্ছেন না আবার অনেকে সেচ লাইসেন্স পেলেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছেন না। প্রতিদিন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বিএডিসি,পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও পিডিপি অফিসে কৃষকদের ভিড় করতে দেখা গেছে। বোরো চাষের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে আসা অনেক কৃষক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেও রয়েছে অভিযোগ। কৃষকরা বিদ্যুৎ অফিসে গেলে বলা হয় লাইসেন্স লাগবে আর বিএডিসি থেকে লাইসেন্স নিতে আসলে বলা হয় আগে আসলেন না কেন এবার হবে না আবেদন করে রাখুন আগামীতে পাবেন। সময়মতো বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় এবার ফুলপুরে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় চলতি ২০২০-২১ বোর মৌসুমে ২২৪৫৫ হেক্টর জমিতে ৯৬৯৫৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

নভেম্বর থেকে মৌসুম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত বিদ্যুত সংযোগ না পাওয়ায় অনেকেই বীজতলা তৈরি শুরু করতে পারেননি। প্রায় ৩ হাজার আবেদনের মধ্যে বিএডিসি অফিসে এখনো তদন্তের অপেক্ষায় ১৭শ আবেদনপত্র জমা পড়ে আছে। মধ্যে মাত্র ৯৮৭ লাইসেন্স প্রথম পর্যায়ে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। সেচ লাইসেন্স দিতে বিএডিসি অফিসে একটি সেন্টিগ্রেট কাজ করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ফুলপুর বিএডিসি অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওয়াসিম আকরাম ময়মনসিংহ সদর, ফুলপুর, মুক্তাগাছা, তারাকান্দা এই ৪ উপজেলায় দায়িত্বে নিয়োজিত। ফুলপুর আসলে তিনি অফিসে না বসে একটি কম্পিউটারের দোকানে বসে লাইসেন্স পেতে চাওয়া কৃষকদের সঙ্গে দালালদের মাধ্যমে দেন-দরবার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে তার সাথে ফোনে কথা বললে তিনি জানান যারা আগে আবেদন করেছে তাদেরকেই এখনো লাইসেন্স দেয়া সম্ভব হয়নি, নতুনদের দেই কি করে। যারা লাইসেন্স পাচ্ছে না তারাই নানান মিথ্যা অভিযোগ করছে বলে জানান তিনি। সোমবার পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে দেখা যায় অনেক কৃষক বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ডেপুটি ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে নজরুল ইসলাম নামে জনৈক কর্মচারী তাদের বাধা দিচ্ছে। বাধা দেয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে এ প্রতিনিধিকে ওই কর্মচারী জানায় অডিট আসায় বড় সাব কাউকে অফিসে ঢুকতে দিতে বারণ করেছেন। এ সময় বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গত তিন-চার দিন যাবত তারা বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে আসলেও আজ না কাল বলে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে।

উপজেলার শালিকাকান্দা গ্রামের কৃষক তাইজ উদ্দিন, কাইচাপুর গ্রামের মানিক মিয়া, ধনার ভিটা গ্রামের কুদরত আলী, শালিয়া গ্রামের অখিল চন্দ্র প-িতসহ অনেক কৃষক হয়রানির অভিযোগ করে বলেন সময়মতো বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় তারা বোর আবাদ শুরু করতে পারছেন না। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৩ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আরিফুল হকের সাথে এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান সেচ কমিটি যাচাই-বাছাই করতে দেরি করলে আমার কি করার আছে। যারা লাইসেন্স পেয়েছে তাদের কে সংযোগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

পিডিপির নির্বাহী প্রকৌশলী এ জেড এম আনোয়ারুজ্জামান বলেন পুরাতন যাদের এ্যাকাউন্ট আছে তাদের লাইসেন্স থাক বা না থাক আমি সংযোগ দিয়ে দিচ্ছি। নতুনদের জন্য সেচ কমিটির মতামত চাচ্ছি। ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শীতেষ চন্দ্র সরকার বলেন বোরো চাষের জন্য সেচ লাইসেন্স প্রাপ্তি ও বিদ্যুৎ-সংযোগে কোন গাফিলতি মেনে নেয়া হবে না। কৃষকরা তার কাছে এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ করলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২১ , ২৩ পৌষ ১৪২৭, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

বোরো সেচের বৈদ্যুতিক সংযোগে কৃষক হয়রানির অভিযোগ

প্রতিনিধি, ফুলপুর (ময়মনসিংহ)

বোরো চাষের প্রসিদ্ধ এলাকা বলে পরিচিত ময়মনসিংহের ফুলপুরে মৌসুমের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি অধিকাংশ কৃষক। দেরিতে আবেদন করায় অনেকে লাইসেন্স পাচ্ছেন না আবার অনেকে সেচ লাইসেন্স পেলেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছেন না। প্রতিদিন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বিএডিসি,পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও পিডিপি অফিসে কৃষকদের ভিড় করতে দেখা গেছে। বোরো চাষের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে আসা অনেক কৃষক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেও রয়েছে অভিযোগ। কৃষকরা বিদ্যুৎ অফিসে গেলে বলা হয় লাইসেন্স লাগবে আর বিএডিসি থেকে লাইসেন্স নিতে আসলে বলা হয় আগে আসলেন না কেন এবার হবে না আবেদন করে রাখুন আগামীতে পাবেন। সময়মতো বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় এবার ফুলপুরে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় চলতি ২০২০-২১ বোর মৌসুমে ২২৪৫৫ হেক্টর জমিতে ৯৬৯৫৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

নভেম্বর থেকে মৌসুম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত বিদ্যুত সংযোগ না পাওয়ায় অনেকেই বীজতলা তৈরি শুরু করতে পারেননি। প্রায় ৩ হাজার আবেদনের মধ্যে বিএডিসি অফিসে এখনো তদন্তের অপেক্ষায় ১৭শ আবেদনপত্র জমা পড়ে আছে। মধ্যে মাত্র ৯৮৭ লাইসেন্স প্রথম পর্যায়ে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। সেচ লাইসেন্স দিতে বিএডিসি অফিসে একটি সেন্টিগ্রেট কাজ করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ফুলপুর বিএডিসি অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওয়াসিম আকরাম ময়মনসিংহ সদর, ফুলপুর, মুক্তাগাছা, তারাকান্দা এই ৪ উপজেলায় দায়িত্বে নিয়োজিত। ফুলপুর আসলে তিনি অফিসে না বসে একটি কম্পিউটারের দোকানে বসে লাইসেন্স পেতে চাওয়া কৃষকদের সঙ্গে দালালদের মাধ্যমে দেন-দরবার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে তার সাথে ফোনে কথা বললে তিনি জানান যারা আগে আবেদন করেছে তাদেরকেই এখনো লাইসেন্স দেয়া সম্ভব হয়নি, নতুনদের দেই কি করে। যারা লাইসেন্স পাচ্ছে না তারাই নানান মিথ্যা অভিযোগ করছে বলে জানান তিনি। সোমবার পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে দেখা যায় অনেক কৃষক বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ডেপুটি ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে নজরুল ইসলাম নামে জনৈক কর্মচারী তাদের বাধা দিচ্ছে। বাধা দেয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে এ প্রতিনিধিকে ওই কর্মচারী জানায় অডিট আসায় বড় সাব কাউকে অফিসে ঢুকতে দিতে বারণ করেছেন। এ সময় বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গত তিন-চার দিন যাবত তারা বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে আসলেও আজ না কাল বলে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে।

উপজেলার শালিকাকান্দা গ্রামের কৃষক তাইজ উদ্দিন, কাইচাপুর গ্রামের মানিক মিয়া, ধনার ভিটা গ্রামের কুদরত আলী, শালিয়া গ্রামের অখিল চন্দ্র প-িতসহ অনেক কৃষক হয়রানির অভিযোগ করে বলেন সময়মতো বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় তারা বোর আবাদ শুরু করতে পারছেন না। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৩ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আরিফুল হকের সাথে এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান সেচ কমিটি যাচাই-বাছাই করতে দেরি করলে আমার কি করার আছে। যারা লাইসেন্স পেয়েছে তাদের কে সংযোগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

পিডিপির নির্বাহী প্রকৌশলী এ জেড এম আনোয়ারুজ্জামান বলেন পুরাতন যাদের এ্যাকাউন্ট আছে তাদের লাইসেন্স থাক বা না থাক আমি সংযোগ দিয়ে দিচ্ছি। নতুনদের জন্য সেচ কমিটির মতামত চাচ্ছি। ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শীতেষ চন্দ্র সরকার বলেন বোরো চাষের জন্য সেচ লাইসেন্স প্রাপ্তি ও বিদ্যুৎ-সংযোগে কোন গাফিলতি মেনে নেয়া হবে না। কৃষকরা তার কাছে এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ করলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।