রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মায়ানমার কোন প্রতিশ্রুতি কার্যকর করছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ময়ানমারে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা সব দিক থেকে চেষ্টা করছি, আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তারা (মায়ানমার) অনেক কিছু কমিটমেন্ট করেছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
তবে রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফিরে যেতেই হবে। সেজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আমার সার্বক্ষণিক কাজ করছি। আমরা যেখানে যাওয়া প্রয়োজন সেখানে যাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন, একটা ফর্মুলা দিয়েছেন। আমি নিজে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়েছেন, আমাদের বর্ডার গার্ড লেভেলে আলোচনা চলছে। মায়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে এসেছেন। সবই হচ্ছে, কিন্তু তারপরও রেজাল্ট হচ্ছে না।
কক্সবাজারে মাদক বিস্তাররোধ ও রোহিঙ্গাদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পগুলো চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রয়োজনে বিজিবি ও র্যাবের সহযোগিতা নেবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও এপিবিএন’র ২টি ইউনিট কাজ করছে। পাশাপাশি জেলা পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও র্যাব কাজ করছে। তবে মাদক ও অভ্যন্তরীণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্ব¡াবধায়নে ক্যাম্পের চারদিকে ১৪২ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১১১ কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে তা শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া যারা নিজের ইচ্ছায় ভাসানচরে গেছেন তাদের সরকারের পাশাপাশি ২২টি এনজিওর মাধ্যমে সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করা হচ্ছে। তবে ভাসানচরে স্থানীয় উৎসুক জনতাকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ভাসানচরে যেতে দেয়া হবে না।
গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বলপ্রয়োগে বাস্তচ্যুত মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির প্রথম সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, জননিরাপত্তা সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা। গত ১৪ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি গঠন করে গেজেট জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে ১৭ সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়।
সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সভায় মায়ানমারে সংগঠিত অভ্যন্তরীণ দাঙ্গার কারণে বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, তারা কী অবস্থায় আছে, তারা কীভাবে যাবে সবকিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকরা যত্রতত্র যাতায়াত করতে না পারে। তারাও যাতে ‘অন্য রকম’ পরিস্থিতিতে না পড়ে সেজন্যই কাঁটাতারের ব্যবস্থা। শুধু কাঁটাতারের বেড়া নয়, সেখানে হাঁটার রাস্তা থাকবে, টাওয়ার থাকবে, সিসি ক্যামেরা থাকবে। কাঁটাতারের বেড়া ও ওয়াকওয়ের কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্যাম্পে মারামারি এমনকি কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য দিনে-রাতে টহল আরও জোরদার করা হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২১ , ২৩ পৌষ ১৪২৭, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মায়ানমার কোন প্রতিশ্রুতি কার্যকর করছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ময়ানমারে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা সব দিক থেকে চেষ্টা করছি, আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তারা (মায়ানমার) অনেক কিছু কমিটমেন্ট করেছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
তবে রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফিরে যেতেই হবে। সেজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আমার সার্বক্ষণিক কাজ করছি। আমরা যেখানে যাওয়া প্রয়োজন সেখানে যাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন, একটা ফর্মুলা দিয়েছেন। আমি নিজে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়েছেন, আমাদের বর্ডার গার্ড লেভেলে আলোচনা চলছে। মায়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে এসেছেন। সবই হচ্ছে, কিন্তু তারপরও রেজাল্ট হচ্ছে না।
কক্সবাজারে মাদক বিস্তাররোধ ও রোহিঙ্গাদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পগুলো চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রয়োজনে বিজিবি ও র্যাবের সহযোগিতা নেবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও এপিবিএন’র ২টি ইউনিট কাজ করছে। পাশাপাশি জেলা পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও র্যাব কাজ করছে। তবে মাদক ও অভ্যন্তরীণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্ব¡াবধায়নে ক্যাম্পের চারদিকে ১৪২ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১১১ কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে তা শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া যারা নিজের ইচ্ছায় ভাসানচরে গেছেন তাদের সরকারের পাশাপাশি ২২টি এনজিওর মাধ্যমে সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করা হচ্ছে। তবে ভাসানচরে স্থানীয় উৎসুক জনতাকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ভাসানচরে যেতে দেয়া হবে না।
গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বলপ্রয়োগে বাস্তচ্যুত মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির প্রথম সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, জননিরাপত্তা সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা। গত ১৪ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি গঠন করে গেজেট জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে ১৭ সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়।
সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সভায় মায়ানমারে সংগঠিত অভ্যন্তরীণ দাঙ্গার কারণে বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, তারা কী অবস্থায় আছে, তারা কীভাবে যাবে সবকিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকরা যত্রতত্র যাতায়াত করতে না পারে। তারাও যাতে ‘অন্য রকম’ পরিস্থিতিতে না পড়ে সেজন্যই কাঁটাতারের ব্যবস্থা। শুধু কাঁটাতারের বেড়া নয়, সেখানে হাঁটার রাস্তা থাকবে, টাওয়ার থাকবে, সিসি ক্যামেরা থাকবে। কাঁটাতারের বেড়া ও ওয়াকওয়ের কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্যাম্পে মারামারি এমনকি কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য দিনে-রাতে টহল আরও জোরদার করা হচ্ছে।’