ছাত্রলীগের স্মারক ডাকটিকিট নিয়ে বিতর্ক

আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে ডাক বিভাগ। এই টিকিটে লেখা হয়েছে, ‘৪ জানুয়ারি ২০২১, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’। এ নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দু’দিন ধরে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’র ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত ৪ জানুয়ারি এ ডাকটিকিট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

জেসমিন ইসলাম নামের একজন ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা এখন স্বাধীন বাংলাদেশ। মুসলিম শব্দটা বহু আগে ছাত্রলীগ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। নতুন করে এই শব্দ সংযোজনের কারণ কী? আমরা কি পাকিস্তানে ফিরে যাচ্ছি?’ জেসমিনের মন্তবের ব্যাখ্যা দিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার লিখেছেন, ‘ডাকটিকিট ইতিহাসকে ধারণ করে। ভাবুন, যদি লিখি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন, তবে কতটা সত্য আপনার নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবেন? মুসলিম লেখায় সাম্প্রদায়িকতা নেই- তখনকার প্রয়োজন ছিল, এটা বঙ্গবন্ধু জানতেন। পরে তিনিই বাদ দেন। আমরা পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ করিনি? ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হীনম্মন্যতা ও অপরাধ। সত্য যা, তাকে মোকাবিলা করুন।’

প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ নিজের ফেসবুক আইডিতে বলেন, ‘ছাত্রলীগ থেকে পূর্ব পাকিস্তান শব্দটি ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে ক্রমশ অ¤্রয়িমাণ হয়ে আসে। একাত্তরে পুরোপুরি মুছে যায়। কিন্তু যেসব নেতা-কর্মী পূর্ব পাকিস্তানকালের, তারা সেই ধারা বহন করতেই পারেন অন্তরঙ্গে। তার প্রতিফলন যে ঘটানো হবে ডাকটিকিটে, তা বিস্ময়কর বৈকি। ওই শব্দটি মুছে গেলে তাদের নামগন্ধ মুছে যেতে পারে, সেই আশঙ্কায়ও হয়তো। তাহলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ জুনে ৭২ বছর পালন করবে? তাহলে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পালনের কী হবে? গোলমাল লাগছে।’

এই ডাকটিকিটকে শুধু ভুল নয়, ধৃষ্টতা আখ্যায়িত করে জাহিদুর রহমান নামে অপর একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সুস্পষ্ট ইতিহাস বিকৃত। এটি নিয়ে ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। আপনি মুক্তিযোদ্ধা কিংবা প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা যেই হোন না কেন, বর্তমানে যা করে যাচ্ছেন সেটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ৩০ লাখ বাঙালি জীবন দিয়েছে পূর্ব পাকিস্তানকে স্মরণ করার জন্য নয়। আপনি যে এই কাজটি মৌলবাদী অপশক্তিকে খুশি করার জন্য করেননি, সেটা বোঝার উপায় কী?’

শশীমোহন রায় নামে একজন ফেসবুকে বলেন, “স্যার ‘মুসলিম ছাত্রলীগ’ থেকে মুসলিম শব্দটা বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পুনরায় লেখার কারণে কি সাম্প্রদায়িকতা প্রকাশ পাচ্ছে না? কিংবা কেবলমাত্র একটি সম্প্রদায়কে বড় করে দেখানো হচ্ছে না? যদিও বর্তমান ছাত্রলীগে অসংখ্য সনাতনী ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তাই পুনরায় ‘মুসলিম’ শব্দটি সংযোজন করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? ধৃষ্টতা হলে মার্জনা করবেন।’

এই মন্তব্যের জবাবে মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘এটি ডাকটিকিট- ইতিহাস বিকৃত করার সুযোগ নাই- এটা মোটেই সাম্প্রদায়িকতা নয়। সাম্প্রদায়িকতা আপনার অন্তরে।’

ডাকটিকিটে ইতিহাসের সত্যটা তুলে ধরা হয়- উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, এতে কোন পরিবর্তন করা যায় না। ইতিহাসে যেটুকু যে অবস্থায় আছে, সেটাই প্রকাশ করতে হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এর বিকল্প কী আছে যে তা দিয়ে সত্য প্রকাশ করতে পারব? ইতিহাসের ধারাবাহিকতা থাকে। সেই ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে মুসলিম বাদ গেছে। তারপর পূর্ব পাকিস্তান ও মুসলিম দুটো শব্দ বাদ গিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হয়েছে।’

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একেএম ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ হলেও সময়ের পরিক্রমায় এখন সংগঠনটির নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

image
আরও খবর
বিদেশে যেতে অন্ধকারে পা বাড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণকাজ ১৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে
দেশপ্রিয়র বাড়ি ভাঙচুরের তদন্ত চান চসিক প্রশাসক
জামিন মেলেনি সাবেক ওসি প্রদীপের
অস্ত্র মামলায় নূর হোসেনের যাবজ্জীবন
পুলিশের হাতে সন্ত্রাসী নূরের সাজা পরোয়ানা
ট্রানজিট ক্যাম্পে দুর্ঘটনার হিসাব নেই রাষ্ট্রের কাছে
সালিসি বৈঠকে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা
সম্রাটের ঘনিষ্ঠ ৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিচ্ছে দুদক
অবৈধভাবে খাল এবং রাস্তা দখলকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অব্যাহত থাকবে ঢাকা উত্তরের মেয়র
বরিশালে ধর্ষণের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন
আবুল কাশেম হত্যা বিচার কাজ ২৬ বছর পর ফের শুরু হচ্ছে

বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২১ , ২৩ পৌষ ১৪২৭, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

ছাত্রলীগের স্মারক ডাকটিকিট নিয়ে বিতর্ক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে ডাক বিভাগ। এই টিকিটে লেখা হয়েছে, ‘৪ জানুয়ারি ২০২১, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’। এ নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দু’দিন ধরে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’র ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত ৪ জানুয়ারি এ ডাকটিকিট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

জেসমিন ইসলাম নামের একজন ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা এখন স্বাধীন বাংলাদেশ। মুসলিম শব্দটা বহু আগে ছাত্রলীগ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। নতুন করে এই শব্দ সংযোজনের কারণ কী? আমরা কি পাকিস্তানে ফিরে যাচ্ছি?’ জেসমিনের মন্তবের ব্যাখ্যা দিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার লিখেছেন, ‘ডাকটিকিট ইতিহাসকে ধারণ করে। ভাবুন, যদি লিখি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন, তবে কতটা সত্য আপনার নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবেন? মুসলিম লেখায় সাম্প্রদায়িকতা নেই- তখনকার প্রয়োজন ছিল, এটা বঙ্গবন্ধু জানতেন। পরে তিনিই বাদ দেন। আমরা পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ করিনি? ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হীনম্মন্যতা ও অপরাধ। সত্য যা, তাকে মোকাবিলা করুন।’

প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ নিজের ফেসবুক আইডিতে বলেন, ‘ছাত্রলীগ থেকে পূর্ব পাকিস্তান শব্দটি ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে ক্রমশ অ¤্রয়িমাণ হয়ে আসে। একাত্তরে পুরোপুরি মুছে যায়। কিন্তু যেসব নেতা-কর্মী পূর্ব পাকিস্তানকালের, তারা সেই ধারা বহন করতেই পারেন অন্তরঙ্গে। তার প্রতিফলন যে ঘটানো হবে ডাকটিকিটে, তা বিস্ময়কর বৈকি। ওই শব্দটি মুছে গেলে তাদের নামগন্ধ মুছে যেতে পারে, সেই আশঙ্কায়ও হয়তো। তাহলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ জুনে ৭২ বছর পালন করবে? তাহলে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পালনের কী হবে? গোলমাল লাগছে।’

এই ডাকটিকিটকে শুধু ভুল নয়, ধৃষ্টতা আখ্যায়িত করে জাহিদুর রহমান নামে অপর একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সুস্পষ্ট ইতিহাস বিকৃত। এটি নিয়ে ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। আপনি মুক্তিযোদ্ধা কিংবা প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা যেই হোন না কেন, বর্তমানে যা করে যাচ্ছেন সেটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ৩০ লাখ বাঙালি জীবন দিয়েছে পূর্ব পাকিস্তানকে স্মরণ করার জন্য নয়। আপনি যে এই কাজটি মৌলবাদী অপশক্তিকে খুশি করার জন্য করেননি, সেটা বোঝার উপায় কী?’

শশীমোহন রায় নামে একজন ফেসবুকে বলেন, “স্যার ‘মুসলিম ছাত্রলীগ’ থেকে মুসলিম শব্দটা বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পুনরায় লেখার কারণে কি সাম্প্রদায়িকতা প্রকাশ পাচ্ছে না? কিংবা কেবলমাত্র একটি সম্প্রদায়কে বড় করে দেখানো হচ্ছে না? যদিও বর্তমান ছাত্রলীগে অসংখ্য সনাতনী ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তাই পুনরায় ‘মুসলিম’ শব্দটি সংযোজন করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? ধৃষ্টতা হলে মার্জনা করবেন।’

এই মন্তব্যের জবাবে মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘এটি ডাকটিকিট- ইতিহাস বিকৃত করার সুযোগ নাই- এটা মোটেই সাম্প্রদায়িকতা নয়। সাম্প্রদায়িকতা আপনার অন্তরে।’

ডাকটিকিটে ইতিহাসের সত্যটা তুলে ধরা হয়- উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, এতে কোন পরিবর্তন করা যায় না। ইতিহাসে যেটুকু যে অবস্থায় আছে, সেটাই প্রকাশ করতে হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এর বিকল্প কী আছে যে তা দিয়ে সত্য প্রকাশ করতে পারব? ইতিহাসের ধারাবাহিকতা থাকে। সেই ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে মুসলিম বাদ গেছে। তারপর পূর্ব পাকিস্তান ও মুসলিম দুটো শব্দ বাদ গিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হয়েছে।’

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একেএম ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ হলেও সময়ের পরিক্রমায় এখন সংগঠনটির নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।