আবুল কাশেম হত্যা বিচার কাজ ২৬ বছর পর ফের শুরু হচ্ছে

খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি শেখ আবুল কাশেম হত্যার ২৬ বছর পর আবারও মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। মামলার এক আসামির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের আদেশে ২০১৪ সাল থেকে আলোচিত এ হত্যা মামলাটির বিচার কার্যক্রম স্থগিত ছিল।

বিষয়টিকে ঘিরে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে খুলনাবাসীর মধ্যে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের ২৫ এপ্রিল সকালে নগরীর খুলনা সদর থানার অদূরে স্যার ইকবাল রোডে বেসিক ব্যাংকের সামনে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গুলিতে শেখ আবুল কাশেম ও তার ড্রাইভার মিখাইল নিহত হন।

এ ব্যাপারে খুলনা থানায় মামলা হলে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। ১৯৯৬ সালের ৫ মে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সৈয়দ মনিরুল ইসলাম (মৃত), হোটেল ব্যবসায়ী তরিকুল হুদা টপি, তৎকালীন জাপা নেতা ও পরিবহণ ব্যবসায়ী আবদুল গফ্ফার বিশ্বাস, জাপা নেতা ইকতিয়ার উদ্দিন বাবলু (নিহত), খুলনা চেম্বারের বর্তমান সভাপতি কাজি আমিনুল হক, ওসিকুর রহমান, মোশফেকুর রহমান, মফিজুর রহমান, মিল্টন ও তারেকসহ ১০ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরমধ্যে ৩ আসামি আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

১ জন মামলা থেকে অব্যাহতি পান। দুজন মারা গেছেন। বাকি ৭ জন জামিনে রয়েছেন। ১৯৯৭ সালে চার্জশিট থেকে একজনের নাম বাদ দেয়ার আদেশ স্থগিত চেয়ে প্রথমদফা আবেদন করেন মামলার বাদী আলমগীর হোসেন। ১৯৯৯ সালে সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নেন উচ্চ আদালত। ২০০৯ সালে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ২০১৩ সালে সেটি প্রত্যাহার করে নেন উচ্চ আদালত।

মামলার আর এক আসামি আবদুল গফ্ফার বিশ্বাসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের মার্চে মামলাটি ছয় মাসের জন্য আবারও স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। পরে ২০১৫ সালের আগস্টে রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম পরিচালনায় স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। গত সোমবার ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি খুলনা জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আসে। এরপর ওই মামলার অবশিষ্ট কাযক্রম পরিচালনার জন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন ওই আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান। খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্ণকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আরিফ মাহমুদ লিটন বলেন, আদালতের পাওয়া চিঠি অনুযায়ী উচ্চ আদালত ওই মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছেন ২০১৮ সালের আগস্টে। আর তাতে আদালতের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করেছেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। লিটন বলেন, অজানা কারণে ওই চিঠি খুলনায় আসতে এতদিন লেগেছে।

খুলনা জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের উচ্চমান বেঞ্চ সহকারী মো. ছায়েদুল হক বলেন, ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে মামলাটি জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আসে। ওই সময় একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে সেটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়। সেখানে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ১৩৫ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ওই বছরই তা আবার জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে চলে আসে। ছায়েদুল বলেন, এতদিন স্থগিতাদেশ থাকায় মামলাটি ওইভাবেই পড়ে ছিল।

উচ্চ আদালতের চিঠি পাওয়ার পর পুনরায় মামলার কাযক্রম শুরু হয়েছে। আর যেন কোনভাবেই মামলাটি স্থগিত করা না হয়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদালতের কাছে অনুরোধ করেছেন আবুল কাশেমের ভাইপো ও হত্যা মামলার ৩ নম্বর সাক্ষী শেখ মনিরুজ্জামান। নিহতের বড় ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আবুল হোসেন বলেন, মামলার বাদী ১৪ বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন। প্রধান সাক্ষী আসাদুজ্জামান লিটু ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা এসপি খোন্দকার ইকবাল নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, বিচারের ভার আমরা আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। নিহত কাশেমের স্ত্রী-সন্তানরাও হতাশা থেকে এ মামলার ব্যাপারে কোন কথা বলতে চান না।

আরও খবর
বিদেশে যেতে অন্ধকারে পা বাড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণকাজ ১৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে
দেশপ্রিয়র বাড়ি ভাঙচুরের তদন্ত চান চসিক প্রশাসক
জামিন মেলেনি সাবেক ওসি প্রদীপের
ছাত্রলীগের স্মারক ডাকটিকিট নিয়ে বিতর্ক
অস্ত্র মামলায় নূর হোসেনের যাবজ্জীবন
পুলিশের হাতে সন্ত্রাসী নূরের সাজা পরোয়ানা
ট্রানজিট ক্যাম্পে দুর্ঘটনার হিসাব নেই রাষ্ট্রের কাছে
সালিসি বৈঠকে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা
সম্রাটের ঘনিষ্ঠ ৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিচ্ছে দুদক
অবৈধভাবে খাল এবং রাস্তা দখলকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অব্যাহত থাকবে ঢাকা উত্তরের মেয়র
বরিশালে ধর্ষণের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন

বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২১ , ২৩ পৌষ ১৪২৭, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

খুলনায় জাপা নেতা

আবুল কাশেম হত্যা বিচার কাজ ২৬ বছর পর ফের শুরু হচ্ছে

খুলনা ব্যুরো

খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি শেখ আবুল কাশেম হত্যার ২৬ বছর পর আবারও মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। মামলার এক আসামির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের আদেশে ২০১৪ সাল থেকে আলোচিত এ হত্যা মামলাটির বিচার কার্যক্রম স্থগিত ছিল।

বিষয়টিকে ঘিরে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে খুলনাবাসীর মধ্যে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের ২৫ এপ্রিল সকালে নগরীর খুলনা সদর থানার অদূরে স্যার ইকবাল রোডে বেসিক ব্যাংকের সামনে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গুলিতে শেখ আবুল কাশেম ও তার ড্রাইভার মিখাইল নিহত হন।

এ ব্যাপারে খুলনা থানায় মামলা হলে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। ১৯৯৬ সালের ৫ মে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সৈয়দ মনিরুল ইসলাম (মৃত), হোটেল ব্যবসায়ী তরিকুল হুদা টপি, তৎকালীন জাপা নেতা ও পরিবহণ ব্যবসায়ী আবদুল গফ্ফার বিশ্বাস, জাপা নেতা ইকতিয়ার উদ্দিন বাবলু (নিহত), খুলনা চেম্বারের বর্তমান সভাপতি কাজি আমিনুল হক, ওসিকুর রহমান, মোশফেকুর রহমান, মফিজুর রহমান, মিল্টন ও তারেকসহ ১০ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরমধ্যে ৩ আসামি আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

১ জন মামলা থেকে অব্যাহতি পান। দুজন মারা গেছেন। বাকি ৭ জন জামিনে রয়েছেন। ১৯৯৭ সালে চার্জশিট থেকে একজনের নাম বাদ দেয়ার আদেশ স্থগিত চেয়ে প্রথমদফা আবেদন করেন মামলার বাদী আলমগীর হোসেন। ১৯৯৯ সালে সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নেন উচ্চ আদালত। ২০০৯ সালে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ২০১৩ সালে সেটি প্রত্যাহার করে নেন উচ্চ আদালত।

মামলার আর এক আসামি আবদুল গফ্ফার বিশ্বাসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের মার্চে মামলাটি ছয় মাসের জন্য আবারও স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। পরে ২০১৫ সালের আগস্টে রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম পরিচালনায় স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। গত সোমবার ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি খুলনা জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আসে। এরপর ওই মামলার অবশিষ্ট কাযক্রম পরিচালনার জন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন ওই আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান। খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্ণকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আরিফ মাহমুদ লিটন বলেন, আদালতের পাওয়া চিঠি অনুযায়ী উচ্চ আদালত ওই মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছেন ২০১৮ সালের আগস্টে। আর তাতে আদালতের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করেছেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। লিটন বলেন, অজানা কারণে ওই চিঠি খুলনায় আসতে এতদিন লেগেছে।

খুলনা জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের উচ্চমান বেঞ্চ সহকারী মো. ছায়েদুল হক বলেন, ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে মামলাটি জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আসে। ওই সময় একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে সেটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়। সেখানে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ১৩৫ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ওই বছরই তা আবার জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে চলে আসে। ছায়েদুল বলেন, এতদিন স্থগিতাদেশ থাকায় মামলাটি ওইভাবেই পড়ে ছিল।

উচ্চ আদালতের চিঠি পাওয়ার পর পুনরায় মামলার কাযক্রম শুরু হয়েছে। আর যেন কোনভাবেই মামলাটি স্থগিত করা না হয়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদালতের কাছে অনুরোধ করেছেন আবুল কাশেমের ভাইপো ও হত্যা মামলার ৩ নম্বর সাক্ষী শেখ মনিরুজ্জামান। নিহতের বড় ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আবুল হোসেন বলেন, মামলার বাদী ১৪ বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন। প্রধান সাক্ষী আসাদুজ্জামান লিটু ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা এসপি খোন্দকার ইকবাল নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, বিচারের ভার আমরা আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। নিহত কাশেমের স্ত্রী-সন্তানরাও হতাশা থেকে এ মামলার ব্যাপারে কোন কথা বলতে চান না।