মেয়াদ শেষের দেড় বছরেও নতুন নড়িয়া সেতুর ৩০ শতাংশ সম্পন্ন

নড়িয়া উপজেলার ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ৫ বছর ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ। ভারি যানবাহনগুলো শরীয়তপুর সদর উপজেলার প্রেমতলা হয়ে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। ভেঙ্গে পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্য। আগের সেতুর পাশ দিয়ে নির্মাণাধীণ নতুন সেতুর কাজে ধীরগতি। দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি করেও অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৯৭- ৯৮ অর্থবছরে কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতু। সেতুটি পারাপার হয়ে নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার মানুষ জাজিরা হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করেন। ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহন করে থাকেন। ২০১৫ সালে সেতুর পূর্ব প্রান্তের পিলার আর সংযোগ সড়কের মাটি সরে যাওয়ায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় সব ধরনের যান চলাচল। শুধু মানুষ পারাপারের জন্য মূল সেতুর সঙ্গে বেইলি সেতু স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর দুই প্রান্তে দেয়া হয়েছে লোহার ব্যারিকেড ।

এলজিইডি শরীয়তপুর কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, জনদুর্ভোগ লাঘবে ঝুঁকিপূর্ণ ওই সেতুর স্থলে একটি নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। আগের সেতুর পাশ দিয়ে ১৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যে ওই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুনে কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর কয়েকবার মেয়াদ বৃদ্ধি করেও কাজ শেষ হয়নি।

এ পর্যন্ত সেতুর ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৪ পিয়ারের মধ্যে ২টি সম্পন্ন হয়েছে এবং এভারমেন্ট ওয়াল ২টির মধ্যে ১টির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

নড়িয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, ব্রিজটা বন্ধ হওয়ার পর থেকে বেচা বিক্রি কমে গেছে। পণ্য পরিবহন নিয়ে নানা সমস্যার মধ্যে আছি। ব্রিজের পশ্চিম পাশের ৪টি ইউনিয়নের মানুষ এখন বাজারে আসে না তারা অন্যসব বাজার থেকে মালামাল কিনে থাকেন। এমন অবস্থা থাকলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।

নড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা মো. হারিস বলেন, আমি বাড়ির নির্মাণ কাজ ধরেছি। ইট কিনেছি নদীর ওপার ভাটা থেকে। এখন ১৫ কিলোমিটার ঘুরে সেই ইট আনতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। শুধু ব্রিজের সমস্যার জন্য আমরা নড়িয়ার মানুষ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। বরকত হোসেন মুরাদ বলেন, একমাত্র ঠিকাদারের গাফিলতি কারণে কাজের এমন দশা। বছরের পর বছর সময় পার হচ্ছে কিন্তু দুইটা পিলার ছাড়া আর কিছুই হয় নাই। চার পাঁচজন শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছে এতে এক যুগেও ব্রিজের কাজ শেষ হবে না। নির্মাণ এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় ওই প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী আবুল হাশেমের সঙ্গে। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেনি। মোবাইলে ফোন রিসিভের অনুরোধ করা হলেও তিনি কথা বলেননি।

নড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী শাহাবউদ্দীন খান বলেন, উপজেলা শহরের এই সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। সেতুটি নির্মাণে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে বলেও তিনি স্বীকার করেন। তিনি জানান, ঠিকাদারকে পত্র দেয়ার পরও কাজ বিলম্ব হওয়ায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং তার কন্ট্যাক্ট বাতিল করা হবে। নতুন প্রযুক্তিতে নতুন ডিজাইনে সেতু নির্মাণের জন্য হেড কোয়াটার কাজ করতেছে। আশা করতেছি আগামী বছর মার্চ মাসে আবার নতুন করে সেতুর কাজ শুরু হবে।

image
আরও খবর
বেদে পল্লীতে তাবিজ-কবজের আড়ালে রমরমা মাদক ব্যবসা
কুমিল্লায় সাবেক স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
নিয়ামতপুরে যৌতুক দাবি গৃহবধূর চুল কর্তন স্বামী-শাশুড়ি গ্রেফতার
টিআরএম বাস্তবায়নসহ ৭ দফা দাবিতে পদযাত্রা
বগুড়ায় ধর্মঘট প্রত্যাহার : ইট বিক্রি শুরু
বাঘায় যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কিশোরগঞ্জে আ’লীগ মেয়র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে ১৫ সাংস্কৃতিক সংগঠন
গাংনীতে ত্রিমুখী লড়াই
সৈয়দপুরে নৌকাপ্রতীকে একাট্টা আওয়ামী লীগ
ঈশ্বরদীতে আ’লীগ ঐক্যবদ্ধ, বিএনপি দ্বিধাবিভক্ত
পটকা মাছ খেয়ে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু, ৩ মেয়ে হাসপাতালে
বরিশালে বিয়ের আসরে বরের চাচা নিহত
ধলেশ্বরীর বুকে অসংখ্য চর সংকটে বোরো সেচ, জেলেরা
বেলাবতে জমি বিবাদে সংঘর্ষ : হাসপাতালে ৮

শুক্রবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২১ , ২৪ পৌষ ১৪২৭, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

মেয়াদ শেষের দেড় বছরেও নতুন নড়িয়া সেতুর ৩০ শতাংশ সম্পন্ন

কাজী মনিরুজ্জামান মনির, শরীয়তপুর

image

নড়িয়া উপজেলার ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ৫ বছর ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ। ভারি যানবাহনগুলো শরীয়তপুর সদর উপজেলার প্রেমতলা হয়ে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। ভেঙ্গে পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্য। আগের সেতুর পাশ দিয়ে নির্মাণাধীণ নতুন সেতুর কাজে ধীরগতি। দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি করেও অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৯৭- ৯৮ অর্থবছরে কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতু। সেতুটি পারাপার হয়ে নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার মানুষ জাজিরা হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করেন। ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহন করে থাকেন। ২০১৫ সালে সেতুর পূর্ব প্রান্তের পিলার আর সংযোগ সড়কের মাটি সরে যাওয়ায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় সব ধরনের যান চলাচল। শুধু মানুষ পারাপারের জন্য মূল সেতুর সঙ্গে বেইলি সেতু স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর দুই প্রান্তে দেয়া হয়েছে লোহার ব্যারিকেড ।

এলজিইডি শরীয়তপুর কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, জনদুর্ভোগ লাঘবে ঝুঁকিপূর্ণ ওই সেতুর স্থলে একটি নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। আগের সেতুর পাশ দিয়ে ১৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যে ওই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুনে কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর কয়েকবার মেয়াদ বৃদ্ধি করেও কাজ শেষ হয়নি।

এ পর্যন্ত সেতুর ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৪ পিয়ারের মধ্যে ২টি সম্পন্ন হয়েছে এবং এভারমেন্ট ওয়াল ২টির মধ্যে ১টির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

নড়িয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, ব্রিজটা বন্ধ হওয়ার পর থেকে বেচা বিক্রি কমে গেছে। পণ্য পরিবহন নিয়ে নানা সমস্যার মধ্যে আছি। ব্রিজের পশ্চিম পাশের ৪টি ইউনিয়নের মানুষ এখন বাজারে আসে না তারা অন্যসব বাজার থেকে মালামাল কিনে থাকেন। এমন অবস্থা থাকলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।

নড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা মো. হারিস বলেন, আমি বাড়ির নির্মাণ কাজ ধরেছি। ইট কিনেছি নদীর ওপার ভাটা থেকে। এখন ১৫ কিলোমিটার ঘুরে সেই ইট আনতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। শুধু ব্রিজের সমস্যার জন্য আমরা নড়িয়ার মানুষ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। বরকত হোসেন মুরাদ বলেন, একমাত্র ঠিকাদারের গাফিলতি কারণে কাজের এমন দশা। বছরের পর বছর সময় পার হচ্ছে কিন্তু দুইটা পিলার ছাড়া আর কিছুই হয় নাই। চার পাঁচজন শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছে এতে এক যুগেও ব্রিজের কাজ শেষ হবে না। নির্মাণ এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় ওই প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী আবুল হাশেমের সঙ্গে। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেনি। মোবাইলে ফোন রিসিভের অনুরোধ করা হলেও তিনি কথা বলেননি।

নড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী শাহাবউদ্দীন খান বলেন, উপজেলা শহরের এই সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। সেতুটি নির্মাণে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে বলেও তিনি স্বীকার করেন। তিনি জানান, ঠিকাদারকে পত্র দেয়ার পরও কাজ বিলম্ব হওয়ায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং তার কন্ট্যাক্ট বাতিল করা হবে। নতুন প্রযুক্তিতে নতুন ডিজাইনে সেতু নির্মাণের জন্য হেড কোয়াটার কাজ করতেছে। আশা করতেছি আগামী বছর মার্চ মাসে আবার নতুন করে সেতুর কাজ শুরু হবে।