নোয়াখালীর সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের বেদেপল্লীতে প্রায় ৫শ’ পরিবারে ৩ হাজারের বেশি বেদের বসবাস। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালে পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামে বসবাস শুরু করা বেদেরা। এখানে বসবাসের পর বেদেদের মধ্যে একটি দল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শুরু করে মাদক (ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজা) ব্যবসা। অতি লাভের আশায় সাপের বাক্স, সস্তা চুড়ি বা কসমেটিক্সের ঝাঁপিতে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় তাবিজ-কবজের আড়ালে ওই মাদক বহন এবং বিক্রি করে আসছে তারা। এখন নোয়াখালী সদরের বেদেপল্লী মাদকের সয়লাব হয়ে উঠেছে। হাত বাড়ালেই ওই এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে মাদকদ্রব্য। বেদেপল্লীর কড়ই তোলা, মুন্সীবাজার ও শাজাহান খোনার মসজিদ এলাকায় ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজার মতো মাদকদ্রব্য কেনা-বেচা হচ্ছে প্রতিনিয়তই। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের অনেক সর্দার মাদক বিক্রয় করছেন এবং অনেকে মাদক বিক্রেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে মাসিক বা সাপ্তাহিক ভাতা নিচ্ছেন। এছাড়া বেদেপাড়ার ৫-৬ জন মাদক গডফাদার মিলে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পুঁজি সংগ্রহ করে ওই টাকা দিয়ে সাভার, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য কিনে এনে বেদেপল্লীতে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করছেন।
মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের গডফাদারদের বিষয়ে জানতে চাইলে বেদে সম্প্রদায়ের একাধিক ব্যক্তি শর্তে বলেন, এওজবালিয়ার দুটি ওয়ার্ডে মাদকের বড় কারবারি হলেন, বাদশা মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম, বেলাল হোসেনের ছেলে মো. রাসেল, রাখালের ছেলে আলমগীর, উরিয়া মিয়ার ছেলে টুকু। এরা সাভার, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে বড় বড় মাদকের চালান নিয়ে আসেন বেদেপল্লীতে। জানা যায়, ইয়াবার বড় চালানগুলো বেদেপল্লীতে পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করেন ভাসমান বেদেরা। বেদেদের মধ্যে মো. সেলিমের ছেলে নবীন ও রাখাল করেন গাঁজার ব্যবসা। বেদে পল্লীর দু-একটি ঘরে জুয়া এবং নারীদের অনৈতিক কর্মকা-ের অভিযোগও করেন তারা। মাদক ব্যবসায়ীদের রয়েছে নিত্যনতুন আধুনিক দামি মোটরসাইকেল। মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছোরত আলীর ছেলে ওছমান ইয়াবার মামলায় চট্টগ্রাম জেল হাজতে, রাখালের ছেলে আলমগীর ইয়াবা মামলায় কক্সবাজার জেল হাজতে রয়েছেন। মাদক মালায় জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন রাজু মিয়ার ছেলে আরিফ। বেদে পল্লী যুবসমাজের সভাপতি ও সর্দার মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, উল্লেখিত গুটিকয়েক মাদকের ডিলার, বিক্রেতা ও সেবীর কারণে বেদে পল্লীর শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বেদেদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, বেদেপল্লীর মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের নাম ইউনিয়ন পরিষদ ও থানা পুলিশকে জানিয়েছেন তারা। বেদেপল্লীর শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রশাসনের সহযোগিতা চান বেদেরা।
সুধারাম মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন বলেন, ইতিপূর্বে বেদে পাড়ার বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বেদেদের মধ্যে দুটি গ্রুপ থাকায় তারা মাদকসহ যাবতীয় বিষয়ে একে-অপরকে দোষ দেয়ার চেষ্টা করেন। ওসি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের কোন ছাড় নেই।
শুক্রবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২১ , ২৪ পৌষ ১৪২৭, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
প্রতিনিধি, নোয়াখালী
নোয়াখালীর সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের বেদেপল্লীতে প্রায় ৫শ’ পরিবারে ৩ হাজারের বেশি বেদের বসবাস। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালে পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামে বসবাস শুরু করা বেদেরা। এখানে বসবাসের পর বেদেদের মধ্যে একটি দল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শুরু করে মাদক (ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজা) ব্যবসা। অতি লাভের আশায় সাপের বাক্স, সস্তা চুড়ি বা কসমেটিক্সের ঝাঁপিতে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় তাবিজ-কবজের আড়ালে ওই মাদক বহন এবং বিক্রি করে আসছে তারা। এখন নোয়াখালী সদরের বেদেপল্লী মাদকের সয়লাব হয়ে উঠেছে। হাত বাড়ালেই ওই এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে মাদকদ্রব্য। বেদেপল্লীর কড়ই তোলা, মুন্সীবাজার ও শাজাহান খোনার মসজিদ এলাকায় ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজার মতো মাদকদ্রব্য কেনা-বেচা হচ্ছে প্রতিনিয়তই। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের অনেক সর্দার মাদক বিক্রয় করছেন এবং অনেকে মাদক বিক্রেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে মাসিক বা সাপ্তাহিক ভাতা নিচ্ছেন। এছাড়া বেদেপাড়ার ৫-৬ জন মাদক গডফাদার মিলে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পুঁজি সংগ্রহ করে ওই টাকা দিয়ে সাভার, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য কিনে এনে বেদেপল্লীতে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করছেন।
মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের গডফাদারদের বিষয়ে জানতে চাইলে বেদে সম্প্রদায়ের একাধিক ব্যক্তি শর্তে বলেন, এওজবালিয়ার দুটি ওয়ার্ডে মাদকের বড় কারবারি হলেন, বাদশা মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম, বেলাল হোসেনের ছেলে মো. রাসেল, রাখালের ছেলে আলমগীর, উরিয়া মিয়ার ছেলে টুকু। এরা সাভার, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে বড় বড় মাদকের চালান নিয়ে আসেন বেদেপল্লীতে। জানা যায়, ইয়াবার বড় চালানগুলো বেদেপল্লীতে পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করেন ভাসমান বেদেরা। বেদেদের মধ্যে মো. সেলিমের ছেলে নবীন ও রাখাল করেন গাঁজার ব্যবসা। বেদে পল্লীর দু-একটি ঘরে জুয়া এবং নারীদের অনৈতিক কর্মকা-ের অভিযোগও করেন তারা। মাদক ব্যবসায়ীদের রয়েছে নিত্যনতুন আধুনিক দামি মোটরসাইকেল। মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছোরত আলীর ছেলে ওছমান ইয়াবার মামলায় চট্টগ্রাম জেল হাজতে, রাখালের ছেলে আলমগীর ইয়াবা মামলায় কক্সবাজার জেল হাজতে রয়েছেন। মাদক মালায় জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন রাজু মিয়ার ছেলে আরিফ। বেদে পল্লী যুবসমাজের সভাপতি ও সর্দার মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, উল্লেখিত গুটিকয়েক মাদকের ডিলার, বিক্রেতা ও সেবীর কারণে বেদে পল্লীর শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বেদেদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, বেদেপল্লীর মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের নাম ইউনিয়ন পরিষদ ও থানা পুলিশকে জানিয়েছেন তারা। বেদেপল্লীর শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রশাসনের সহযোগিতা চান বেদেরা।
সুধারাম মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন বলেন, ইতিপূর্বে বেদে পাড়ার বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বেদেদের মধ্যে দুটি গ্রুপ থাকায় তারা মাদকসহ যাবতীয় বিষয়ে একে-অপরকে দোষ দেয়ার চেষ্টা করেন। ওসি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের কোন ছাড় নেই।