কংগ্রেসে হামলা : নিহত ৪, স্তম্ভিত বিশ্ব

ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবের পর বাইডেনকে অনুমোদন

সংবাদ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটাল হিলে হামলা। দুইশ’ বছরের মধ্যে এমন অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে যেতে হয়নি মার্কিনিদের। এর আগে একবার হামলা হয়েছিল ১৮১৪ সালে। যুক্তরাজ্য ও তার মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের যুদ্ধের সময়।

বাংলাদেশে যেমন সংসদ ভবন যুক্তরাষ্ট্রে তেমন ক্যাপিটাল হিল। দেশটির আইনপ্রণেতারা এখানেই অধিবেশনে বসেন। গত বুধবার সেখানে হামলা চালায় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। যার পেছনে স্বয়ং ট্রাম্পের উসকানি দেখছে মার্কিন বিভিন্ন মহল। এমন ঘটনায় স্তম্ভিত হয়েছে বিশ্ব। প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশের নেতারা এ হামলায় নিন্দা জানিয়েছেন। হামলার পরপর হামলাকারীদের ট্রাম্পের টুইটার ও ফেইসবুক অ্যাকাউন্ড সাময়িক বন্ধ করে দেয় কোম্পানি দুটি। কারণ ওই দুই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে পোস্টে হামলাকারীদের প্রশংসা করেছিলেন ট্রাম্প। ওই হামলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন।

নজিরবিহীন এই হামলার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সরানোর দাবি ওঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এদের মধ্যে আছেন বর্তমান ও সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য, আছেন ব্যবসায়ী, আছে গণমাধ্যমও। আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। সেদিন নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন।

ট্রাম্পকে সরানোর এখন দুটি পথ রয়েছে। একটি হলো ইমপিচমেন্ট, অন্যটি হলো মার্কিন সংবিধানের ২৫তম অধ্যাদেশ ধারা সক্রিয় করা। দ্বিতীয় পথে অনুসরণ করলে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ মন্ত্রিপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিতে হবে। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী ক্ষমতা ও দায়িত্ব পালনে অক্ষমতাজনিত কারণে প্রেসিডেন্টকে অপসারণ করা যেতে পারে। জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে ক্যাপিটাল হিলে অধিবেশন বসে। অধিবেশন চলাকালীন হামলা চালায় ট্রাম্পের সমর্থকরা। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘাত হয়। নজিরবিহীন এই ঘটনায় চারজন নিহত হন, তারমধ্যে একজন নারীও আছেন। হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সমর্থকদের ডাক দিয়েছিলেন নির্বাচনী ভোটের ফলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাকে প্রতিহত করার জন্য। অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর বাইডেনকে স্বীকৃতি দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন কংগ্রেসম্যানরা।

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, যেটির অবস্থান ক্যাপিটাল হিল, ওয়াশিংটন ডিসির সবচয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার একটি। বুধবার ১টার পর ট্রাম্পের কয়েকশ সমর্থক সেখানে স্থাপিত ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যেতে চাইলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা বাধা দেয়। তখন ট্রাম্পের সমর্থকরা তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে সেøাগান দিতে দিতে এগোতে থাকে। ৯০ মিনিট পরে যখন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা ক্যাপিটাল হিলের দরজাগুলো বন্ধ করায় ব্যস্ত, তখন বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা সেই ভবনে ঢুকে পড়ে।

তার কিছুক্ষণের মধ্যেই আইনসভার কক্ষ থেকে আইনপ্রণেতাদের সরিয়ে নেয়া হয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও ছিলেন তাদের মধ্যে। ইলেক্টোরাল ভোট গণনার দায়িত্ব তার হাতে।

বেলা ৩টার দিকে সংসদের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় অস্ত্রধারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিক্ষোভকারীদের দিকে অস্ত্র তাক করতে দেখা যায়। এর আগে বিকেলে ট্রাম্প সমর্থক এক বিক্ষোভকারীকে সংসদের ডায়াসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

এই ঘটনায় নিহত নারীর পরিচয় পাওয়া যায়নি। বুকে গুলি লাগে তার। ক্যাপিটাল হিলের মাঠে পড়ে ছিলেন। সিএনএনকে জানায় পুলিশ। তবে গোলাগুলির বিস্তারিত তৎক্ষণাৎ নিশ্চিত হতে পারেনি সংবাদমাধ্যমটি। পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এর বিস্তারিত আরও পরে জানানো হবে। ওয়াশিংটন ডিসির প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা রবার্ট কোন্টি বলেন, আরও তিনজন দাঙ্গার সময় নিহত হয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে প্রতিটি মৃত্যুই অত্যন্ত বেদনায়দায়ক। আমরা নিহতদের সঙ্গে সম্পর্কিত সবার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

এ ঘটনায় বেশকিছু পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হয়েছেন। তাদের অন্তত একজনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হয়েছে সিএনএন।

ক্যাপিটাল হিলের যে পাশে সিনেট, সেখানে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ধোঁয়ার গ্রেনেড ছোড়ে। সিনেটের পশ্চিম পাশে কাচ ভাঙা হয়েছে। সেখানে কয়েকশত পুলিশ কর্মকর্তাকে জড়ো করা হয়।

তারা স্থানীয় সময় সাড়ে ৩টা নাগাদ বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে সমর্থ হয়। সেখানে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, ভবনের যে অংশে সিনেট, সেখান থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছেন। তবে সেখান থেকে কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কিছু বলেননি ওই পুলিশ কর্মকর্তা। সেখানকার সময় ৫টা ৪০ মিনিটে গোটা ক্যাপিটাল হিলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে বলে সেখানকার সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস সিএনএনকে জানান।

ক্যাপিটাল হিলে এমন অনুপ্রবেশের ঘটনা সর্বশেষ হয়েছিল ১৮১৪ সালে, যখন ব্রিটিশরা এখানে আক্রমণ করেছিল এবং অগ্নিসংযোগ করেছিল। তখন ১৮১২ সাল থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধ চলছিল সেখানে। এসব তথ্য ইউএস ক্যাপিটাল হিস্টরিক্যাল সোসাইটির স্কলারশিপ অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের ডিরেক্টর স্যামুয়েল হলিডের।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের দমনে এর চেয়ে বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। সে সময় হোয়াইট হাউসের বাইরে বিক্ষোভরত আন্দোলন কর্মীদের পুলিশ দিয়ে বলপূর্বক সরিয়ে দেয়া হয়েছিল, ট্রাম্প কাছের একটি চার্চে গিয়ে ছবি তুলবেন সে জন্য রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথমে বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটাল হিলের বাইরের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ফেলে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ের কাছে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে বিক্ষোভকারীদের। এ সময় কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা লোহার ফটক ঠেলে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তখন পুলিশও ওই লোহার ফটক ঠেলে তাদের বাইরে রাখার চেষ্টা করে। এরমধ্যে ক্যাপিটাল হিলের সিঁড়িতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং সেখানে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ সেখানে বিক্ষোভকারীদের ওপর পেপার স্প্রেও প্রয়োগ করে।

এ সময় টিয়ার শেলও ছোড়া হয়েছে, যদিও বোঝা যায়নি সেগুলো বিক্ষোভকারীরা নাকি পুলিশ ছুড়েছে। এ সময় সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের কাশতে কাশতে চোখের পানি মুছতে দেখা গেছে।

যখন বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটাল হিলের ভেতর ঢুকে পড়ে, তখন দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা আইন প্রণেতাদের অবহিত করেন যে, বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটাল হিলের গোলঘর (রোটুন্ডা) পর্যন্ত চলে এসেছে এবং তাদের আত্মরক্ষার জন্য চেয়ার টেবিলের নিচে মুখ গোঁজার দরকার হতে পারে। আইনপ্রণেতাদের অনেককে গ্যাস মাস্ক পরে ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ের এক ভবন থেকে আরেক ভবনে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। তাদের অনেকে ফোনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলছিলেন। এরপর বিকেল ৫টার দিকে কংগ্রেসের নেতাদের ক্যাপিটাল কমপ্লেক্সে সরিয়ে কাছের সেনাঘাঁটি ম্যাকনেয়ারে নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়। এ সময় ট্রাম্পই স্বয়ং ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ডসহ সুরক্ষায় নিয়োজিত অন্যান্য বাহিনীকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছেন তার প্রেস সেক্রেটারি কেইলি ম্যাকএনানি। পেন্টাগনের মুখপাত্র জনাথন হফম্যান জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা বিভাগ ওয়াশিংটন ডিসিতে নিয়োজিত ন্যাশনাল গার্ড নামিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তার জন্য।

তিনি জানিয়েছেন, অ্যাকটিং সেক্রেটারি মিলার কংগ্রেসের নেতৃত্বের সঙ্গে পরিস্থিতি বিষয়ে যোগাযোগ রাখছেন এবং সেক্রেটারি ম্যাকার্থি ওয়াশিংটন ডিসির প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের অধীনে।

তবে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের সুরক্ষায় ন্যাশনাল গার্ডকে ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না। কেননা এ সপ্তাহের ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এ বিষয়ে বেসামরিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতরাই তা করবে।

গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে কারফিউ ঘোষণা করেছেন সেখানকার মেয়র মুরিয়েল বাউজার।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আইনপ্রণেতারা কংগ্রেসে ফিরে আসেন এবং যথারীতি কাজে ফিরে যান। সেখানে রাত ৮টায় ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট গণনার মাধ্যমে বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করতে চলমান অধিবেশন শুরু হয় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সভাপতিত্বে।

ট্রাম্প সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের সময় বাইডেন ক্যাপিটাল হিলে ছিলেন। অধিবেশন শুরু হতেই তিনি বলেন, চলুন কাজে ফেরা যাক।

এর আগে সন্ধ্যায় দেয়া এক বিবৃতিতে হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি অধিবেশন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, আজ আমাদের গণতন্ত্রের ওপর এক লজ্জাজনক আঘাত এলো। তা আমাদের গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানে কালিমা লেপে দিয়েছে। কিন্তু জো বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা করার যে দায়িত্ব তা আমাদের কোনভাবেই নিরস্ত করতে পারবে না।

সেই বিবৃতিতে তিনি জানান, সংসদ নেতা হোয়ের এবং হুইপ ক্লাইবার্নের সঙ্গে আলাপ করে এবং পেন্টাগন, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংসদীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে বিক্ষোভ যখন চলছিল রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারাও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। অধিবেশনের আগে তারা কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন।

সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল অধিবেশনে দাঁড়িয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এতে দমে যাবে না। আমরা গুন্ডাদের দ্বারা, উচ্ছৃঙ্খল জনতা বা কোন হুমকির মুখে পিছপা হব না। আমরা ২০২০ নির্বাচনে বিজয়ীকে স্বীকৃতি দেব।

বিজয় কেড়ে নিলে এমনই ঘটে : ট্রাম্প

সংঘর্ষের এক ঘণ্টা পর সমর্থকদের বাড়ি ফিরে যেতে বলেন ট্রাম্পও। সমর্থকদের প্রতি এই আহ্বান জানানো ভিডিওতেও তিনি নির্বাচন নিয়ে তার অভিযোগগুলোর পুনরাবৃত্তি করেন। এ সময় তিনি বলেন, বাড়ি ফিরে যান। আমরা আপনাদের ভালোবাসি। আপনাদের বিশেষ স্থান আমাদের কাছে।

এ সময় বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমবেদনাসহ তিনি বলেন, আমি আপনাদের কষ্ট বুঝতে পারি। আমি জানি আপনারা আহত হয়েছেন। আমাদের কাছ থেকে বিজয় চুরি করে নেয়া হয়েছে। আমাদের ব্যাপক বিজয় হয়েছিল। সবাই তা জানে। বিশেষ করে আমাদের বিপক্ষের মানুষরা তা আরও ভালো জানে। কিন্তু আপনাদের এখন ফিরতে হবে। আমাদের শান্তি বজায় রাখতে হবে।

পরে ট্রাম্প বিক্ষোভকারীদের পক্ষে কথা বলেন এবং তাদের প্রশংসা করেন।

পরে তিনি একটি টুইট করেন যেখানে তিনি বলেন, যখন খুব বাজেভাবে দেশপ্রেমিকদের কাছ বিজয় কেড়ে নেয়া হয়, বিশেষ করে যখন সেই মানুষের সঙ্গে দীর্ঘকাল ধরে অন্যায় করে আসা হয়েছে, তখন এ ধরনের ঘটনাই ঘটে। আপনারা বাড়ি যান। ভালোবাসা নিয়ে ও শান্তিতে। আজকের দিনটি মনে রাখুন। পরে টুইটার তার এই টুইটটি সরিয়ে দেয়।

ট্রাম্প শিবিরের অন্যারাও তাদের টুইটে বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

ট্রাম্পকে সরানোর কথা ভাবছেন মন্ত্রী রিপাবলিকানরা

সংবাদ ডেস্ক

মার্কিন মন্ত্রিসভার সদস্যরা পার্লামেন্ট ভবনে তাণ্ডবের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আগেই সরিয়ে দিতে আলোচনা শুরু করেছেন। উগ্রবাদী ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার পর এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর ভিত্তিতে তাকে সরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভা যদি প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব পালনে অযোগ্য বলে বিবেচনা করে তাহলে তাকে সরিয়ে দিতে পারবে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই সংশোধনী প্রয়োগ করা হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স তাকে সরিয়ে দিতে মন্ত্রিসভায় ভোটাভুটির নেতৃত্ব দেবেন।

গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা গত বুধবার কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে বসেন। উভয় কক্ষের এই অধিবেশনে পপুলার ভোটের ভিত্তিতে ইলেকটোরাল কলেজের দেয়া ভোটগুলো গোনা হয় এবং তা চূড়ান্তভাবে প্রত্যয়ন করা হয়। অধিবেশনের কয়েক ঘণ্টা আগেই এর বিরোধিতা করে ওয়াশিংটনে জড়ো হন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক, যাদের মধ্যে উগ্রপন্থি বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরাও ছিলেন। সেই সমাবেশের বক্তব্যে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

এরপরই বেশ কিছু ট্রাম্প সমর্থক পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করে। নজিরবিহীন এই তাণ্ডবের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে চার জনে দাঁড়িয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নিহতদের কারও পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এই ঘটনার পর মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিপাবলিকান নেতাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ২৫তম সংশোধনী নিয়ে আলোচনা চলছে। তারা বলছেন ট্রাম্প নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছেন।

সিবিএস’র প্রতিবেদক মার্গারেট ব্রেনান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত মাইক পেন্সের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন কিছুই উপস্থাপন করা হয়নি। আর এবিসি প্রতিবেদক ক্যাথেরিন ফল্ডারস জানিয়েছেন, একাধিক সূত্র ট্রাম্পকে সরিয়ে দেয়ার আলোচনা চলার কথা জানিয়েছেন। ট্রাম্প জোরপূর্বক যে ভীতি প্রদর্শন করছেন তা নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করে জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেন, ক্যাপিটাল হিলে হামলার ঘটনা হৃদয়বিদারক এবং অস্বস্তিকর দৃশ্য। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে বলেন, নির্বাচনের পর থেকে কিছু নেতার বেপরোয়া আচরণ এবং আমাদের প্রতিষ্ঠান, ঐতিহ্য, আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা আমাকে ভীতসন্ত্রস্ত করে।

উটাহ রাজ্যের সিনেটর মিট রমনি এ হামলাকে বিদ্রোহ বলে উল্লেখ করেন এবং এজন্য ট্রাম্পকে দোষারোপ করেন। ওইমিং রাজ্যের প্রতিনিধি লিজ চেনী বলেন, এতে কোন সন্দেহ নেই যে ট্রাম্পই এই উশৃঙ্খল জনতাকে সমবেত করেছেন। এদের উত্তেজিত করেছেন এবং এদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন।

তিনিই এই আগুন জ্বালিয়েছেন বলে তিনি ফক্স নিউজকে বলেন।

আরকানেসের টম কট্টন কলেন, আমেরিকার জনগণকে বিভান্ত করবেন না এবং এসব বিশৃঙ্খল জনতাকে পরিত্যাগ করুন। কট্টন প্রেসিডেন্টের ওপর বিরক্ত অন্য প্রতিনিধিদের বলেন, প্রেসিডেন্টের উচিত এসব বন্ধ করা। দু’জন পুরনো রিপাবলিকান কর্মী ও প্রেসিডেন্টের মিত্র বলেন, ট্রাম্পের উচিত পদত্যাগ করা।

এদের একজন বলেন, পেন্সের উচিত তার ওপর ২৫তম সংশোধন প্রয়োগ করে তাকে বরখাস্ত করা। আর একজন বলেন, এই মহূর্তে তাকে পদচূত্য করা উচিত। উইসকনসিনের প্রতিনিধি মাইক গ্যালাগার বলেন, প্রেসিডেন্টের বলা উচিত আমি হেরে গেছি।

জো বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে গত বুধবার কংগ্রেস ভবনে তাণ্ডবের পর ডেমোক্র্যাট আইন প্রণেতারাও ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের তাগিদ দিয়েছেন। হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটির ডেমোক্র্যাটরা মাইক পেন্সকে চিঠি দিয়ে ট্রাম্পকে সরানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প গণতন্ত্রকে হেয় করে দিয়েছেন। বুধবার ট্রাম্পের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়, ওই ভাষণ থেকে বোঝা যায় তিনি মানসিকভাবে সুস্থ নন। অন্যরা অভিযোগ করেন ট্রাম্প সন্ত্রাসবাদে মদত দিচ্ছেন।

শুক্রবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২১ , ২৪ পৌষ ১৪২৭, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

কংগ্রেসে হামলা : নিহত ৪, স্তম্ভিত বিশ্ব

image

ক্যাপিটাল হিলে কংগ্রেস অধিবেশন চলাকালে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা

ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবের পর বাইডেনকে অনুমোদন

সংবাদ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটাল হিলে হামলা। দুইশ’ বছরের মধ্যে এমন অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে যেতে হয়নি মার্কিনিদের। এর আগে একবার হামলা হয়েছিল ১৮১৪ সালে। যুক্তরাজ্য ও তার মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের যুদ্ধের সময়।

বাংলাদেশে যেমন সংসদ ভবন যুক্তরাষ্ট্রে তেমন ক্যাপিটাল হিল। দেশটির আইনপ্রণেতারা এখানেই অধিবেশনে বসেন। গত বুধবার সেখানে হামলা চালায় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। যার পেছনে স্বয়ং ট্রাম্পের উসকানি দেখছে মার্কিন বিভিন্ন মহল। এমন ঘটনায় স্তম্ভিত হয়েছে বিশ্ব। প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশের নেতারা এ হামলায় নিন্দা জানিয়েছেন। হামলার পরপর হামলাকারীদের ট্রাম্পের টুইটার ও ফেইসবুক অ্যাকাউন্ড সাময়িক বন্ধ করে দেয় কোম্পানি দুটি। কারণ ওই দুই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে পোস্টে হামলাকারীদের প্রশংসা করেছিলেন ট্রাম্প। ওই হামলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন।

নজিরবিহীন এই হামলার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সরানোর দাবি ওঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এদের মধ্যে আছেন বর্তমান ও সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য, আছেন ব্যবসায়ী, আছে গণমাধ্যমও। আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। সেদিন নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন।

ট্রাম্পকে সরানোর এখন দুটি পথ রয়েছে। একটি হলো ইমপিচমেন্ট, অন্যটি হলো মার্কিন সংবিধানের ২৫তম অধ্যাদেশ ধারা সক্রিয় করা। দ্বিতীয় পথে অনুসরণ করলে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ মন্ত্রিপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিতে হবে। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী ক্ষমতা ও দায়িত্ব পালনে অক্ষমতাজনিত কারণে প্রেসিডেন্টকে অপসারণ করা যেতে পারে। জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে ক্যাপিটাল হিলে অধিবেশন বসে। অধিবেশন চলাকালীন হামলা চালায় ট্রাম্পের সমর্থকরা। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘাত হয়। নজিরবিহীন এই ঘটনায় চারজন নিহত হন, তারমধ্যে একজন নারীও আছেন। হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সমর্থকদের ডাক দিয়েছিলেন নির্বাচনী ভোটের ফলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাকে প্রতিহত করার জন্য। অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর বাইডেনকে স্বীকৃতি দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন কংগ্রেসম্যানরা।

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, যেটির অবস্থান ক্যাপিটাল হিল, ওয়াশিংটন ডিসির সবচয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার একটি। বুধবার ১টার পর ট্রাম্পের কয়েকশ সমর্থক সেখানে স্থাপিত ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যেতে চাইলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা বাধা দেয়। তখন ট্রাম্পের সমর্থকরা তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে সেøাগান দিতে দিতে এগোতে থাকে। ৯০ মিনিট পরে যখন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা ক্যাপিটাল হিলের দরজাগুলো বন্ধ করায় ব্যস্ত, তখন বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা সেই ভবনে ঢুকে পড়ে।

তার কিছুক্ষণের মধ্যেই আইনসভার কক্ষ থেকে আইনপ্রণেতাদের সরিয়ে নেয়া হয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও ছিলেন তাদের মধ্যে। ইলেক্টোরাল ভোট গণনার দায়িত্ব তার হাতে।

বেলা ৩টার দিকে সংসদের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় অস্ত্রধারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিক্ষোভকারীদের দিকে অস্ত্র তাক করতে দেখা যায়। এর আগে বিকেলে ট্রাম্প সমর্থক এক বিক্ষোভকারীকে সংসদের ডায়াসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

এই ঘটনায় নিহত নারীর পরিচয় পাওয়া যায়নি। বুকে গুলি লাগে তার। ক্যাপিটাল হিলের মাঠে পড়ে ছিলেন। সিএনএনকে জানায় পুলিশ। তবে গোলাগুলির বিস্তারিত তৎক্ষণাৎ নিশ্চিত হতে পারেনি সংবাদমাধ্যমটি। পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এর বিস্তারিত আরও পরে জানানো হবে। ওয়াশিংটন ডিসির প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা রবার্ট কোন্টি বলেন, আরও তিনজন দাঙ্গার সময় নিহত হয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে প্রতিটি মৃত্যুই অত্যন্ত বেদনায়দায়ক। আমরা নিহতদের সঙ্গে সম্পর্কিত সবার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

এ ঘটনায় বেশকিছু পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হয়েছেন। তাদের অন্তত একজনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হয়েছে সিএনএন।

ক্যাপিটাল হিলের যে পাশে সিনেট, সেখানে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ধোঁয়ার গ্রেনেড ছোড়ে। সিনেটের পশ্চিম পাশে কাচ ভাঙা হয়েছে। সেখানে কয়েকশত পুলিশ কর্মকর্তাকে জড়ো করা হয়।

তারা স্থানীয় সময় সাড়ে ৩টা নাগাদ বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে সমর্থ হয়। সেখানে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, ভবনের যে অংশে সিনেট, সেখান থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছেন। তবে সেখান থেকে কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কিছু বলেননি ওই পুলিশ কর্মকর্তা। সেখানকার সময় ৫টা ৪০ মিনিটে গোটা ক্যাপিটাল হিলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে বলে সেখানকার সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস সিএনএনকে জানান।

ক্যাপিটাল হিলে এমন অনুপ্রবেশের ঘটনা সর্বশেষ হয়েছিল ১৮১৪ সালে, যখন ব্রিটিশরা এখানে আক্রমণ করেছিল এবং অগ্নিসংযোগ করেছিল। তখন ১৮১২ সাল থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধ চলছিল সেখানে। এসব তথ্য ইউএস ক্যাপিটাল হিস্টরিক্যাল সোসাইটির স্কলারশিপ অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের ডিরেক্টর স্যামুয়েল হলিডের।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের দমনে এর চেয়ে বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। সে সময় হোয়াইট হাউসের বাইরে বিক্ষোভরত আন্দোলন কর্মীদের পুলিশ দিয়ে বলপূর্বক সরিয়ে দেয়া হয়েছিল, ট্রাম্প কাছের একটি চার্চে গিয়ে ছবি তুলবেন সে জন্য রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথমে বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটাল হিলের বাইরের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ফেলে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ের কাছে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে বিক্ষোভকারীদের। এ সময় কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা লোহার ফটক ঠেলে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তখন পুলিশও ওই লোহার ফটক ঠেলে তাদের বাইরে রাখার চেষ্টা করে। এরমধ্যে ক্যাপিটাল হিলের সিঁড়িতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং সেখানে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ সেখানে বিক্ষোভকারীদের ওপর পেপার স্প্রেও প্রয়োগ করে।

এ সময় টিয়ার শেলও ছোড়া হয়েছে, যদিও বোঝা যায়নি সেগুলো বিক্ষোভকারীরা নাকি পুলিশ ছুড়েছে। এ সময় সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের কাশতে কাশতে চোখের পানি মুছতে দেখা গেছে।

যখন বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটাল হিলের ভেতর ঢুকে পড়ে, তখন দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা আইন প্রণেতাদের অবহিত করেন যে, বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটাল হিলের গোলঘর (রোটুন্ডা) পর্যন্ত চলে এসেছে এবং তাদের আত্মরক্ষার জন্য চেয়ার টেবিলের নিচে মুখ গোঁজার দরকার হতে পারে। আইনপ্রণেতাদের অনেককে গ্যাস মাস্ক পরে ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ের এক ভবন থেকে আরেক ভবনে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। তাদের অনেকে ফোনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলছিলেন। এরপর বিকেল ৫টার দিকে কংগ্রেসের নেতাদের ক্যাপিটাল কমপ্লেক্সে সরিয়ে কাছের সেনাঘাঁটি ম্যাকনেয়ারে নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়। এ সময় ট্রাম্পই স্বয়ং ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ডসহ সুরক্ষায় নিয়োজিত অন্যান্য বাহিনীকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছেন তার প্রেস সেক্রেটারি কেইলি ম্যাকএনানি। পেন্টাগনের মুখপাত্র জনাথন হফম্যান জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা বিভাগ ওয়াশিংটন ডিসিতে নিয়োজিত ন্যাশনাল গার্ড নামিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তার জন্য।

তিনি জানিয়েছেন, অ্যাকটিং সেক্রেটারি মিলার কংগ্রেসের নেতৃত্বের সঙ্গে পরিস্থিতি বিষয়ে যোগাযোগ রাখছেন এবং সেক্রেটারি ম্যাকার্থি ওয়াশিংটন ডিসির প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের অধীনে।

তবে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের সুরক্ষায় ন্যাশনাল গার্ডকে ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না। কেননা এ সপ্তাহের ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এ বিষয়ে বেসামরিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতরাই তা করবে।

গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে কারফিউ ঘোষণা করেছেন সেখানকার মেয়র মুরিয়েল বাউজার।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আইনপ্রণেতারা কংগ্রেসে ফিরে আসেন এবং যথারীতি কাজে ফিরে যান। সেখানে রাত ৮টায় ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট গণনার মাধ্যমে বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করতে চলমান অধিবেশন শুরু হয় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সভাপতিত্বে।

ট্রাম্প সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের সময় বাইডেন ক্যাপিটাল হিলে ছিলেন। অধিবেশন শুরু হতেই তিনি বলেন, চলুন কাজে ফেরা যাক।

এর আগে সন্ধ্যায় দেয়া এক বিবৃতিতে হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি অধিবেশন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, আজ আমাদের গণতন্ত্রের ওপর এক লজ্জাজনক আঘাত এলো। তা আমাদের গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানে কালিমা লেপে দিয়েছে। কিন্তু জো বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা করার যে দায়িত্ব তা আমাদের কোনভাবেই নিরস্ত করতে পারবে না।

সেই বিবৃতিতে তিনি জানান, সংসদ নেতা হোয়ের এবং হুইপ ক্লাইবার্নের সঙ্গে আলাপ করে এবং পেন্টাগন, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংসদীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে বিক্ষোভ যখন চলছিল রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারাও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। অধিবেশনের আগে তারা কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন।

সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল অধিবেশনে দাঁড়িয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এতে দমে যাবে না। আমরা গুন্ডাদের দ্বারা, উচ্ছৃঙ্খল জনতা বা কোন হুমকির মুখে পিছপা হব না। আমরা ২০২০ নির্বাচনে বিজয়ীকে স্বীকৃতি দেব।

বিজয় কেড়ে নিলে এমনই ঘটে : ট্রাম্প

সংঘর্ষের এক ঘণ্টা পর সমর্থকদের বাড়ি ফিরে যেতে বলেন ট্রাম্পও। সমর্থকদের প্রতি এই আহ্বান জানানো ভিডিওতেও তিনি নির্বাচন নিয়ে তার অভিযোগগুলোর পুনরাবৃত্তি করেন। এ সময় তিনি বলেন, বাড়ি ফিরে যান। আমরা আপনাদের ভালোবাসি। আপনাদের বিশেষ স্থান আমাদের কাছে।

এ সময় বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমবেদনাসহ তিনি বলেন, আমি আপনাদের কষ্ট বুঝতে পারি। আমি জানি আপনারা আহত হয়েছেন। আমাদের কাছ থেকে বিজয় চুরি করে নেয়া হয়েছে। আমাদের ব্যাপক বিজয় হয়েছিল। সবাই তা জানে। বিশেষ করে আমাদের বিপক্ষের মানুষরা তা আরও ভালো জানে। কিন্তু আপনাদের এখন ফিরতে হবে। আমাদের শান্তি বজায় রাখতে হবে।

পরে ট্রাম্প বিক্ষোভকারীদের পক্ষে কথা বলেন এবং তাদের প্রশংসা করেন।

পরে তিনি একটি টুইট করেন যেখানে তিনি বলেন, যখন খুব বাজেভাবে দেশপ্রেমিকদের কাছ বিজয় কেড়ে নেয়া হয়, বিশেষ করে যখন সেই মানুষের সঙ্গে দীর্ঘকাল ধরে অন্যায় করে আসা হয়েছে, তখন এ ধরনের ঘটনাই ঘটে। আপনারা বাড়ি যান। ভালোবাসা নিয়ে ও শান্তিতে। আজকের দিনটি মনে রাখুন। পরে টুইটার তার এই টুইটটি সরিয়ে দেয়।

ট্রাম্প শিবিরের অন্যারাও তাদের টুইটে বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

ট্রাম্পকে সরানোর কথা ভাবছেন মন্ত্রী রিপাবলিকানরা

সংবাদ ডেস্ক

মার্কিন মন্ত্রিসভার সদস্যরা পার্লামেন্ট ভবনে তাণ্ডবের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আগেই সরিয়ে দিতে আলোচনা শুরু করেছেন। উগ্রবাদী ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার পর এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর ভিত্তিতে তাকে সরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভা যদি প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব পালনে অযোগ্য বলে বিবেচনা করে তাহলে তাকে সরিয়ে দিতে পারবে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই সংশোধনী প্রয়োগ করা হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স তাকে সরিয়ে দিতে মন্ত্রিসভায় ভোটাভুটির নেতৃত্ব দেবেন।

গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা গত বুধবার কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে বসেন। উভয় কক্ষের এই অধিবেশনে পপুলার ভোটের ভিত্তিতে ইলেকটোরাল কলেজের দেয়া ভোটগুলো গোনা হয় এবং তা চূড়ান্তভাবে প্রত্যয়ন করা হয়। অধিবেশনের কয়েক ঘণ্টা আগেই এর বিরোধিতা করে ওয়াশিংটনে জড়ো হন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক, যাদের মধ্যে উগ্রপন্থি বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরাও ছিলেন। সেই সমাবেশের বক্তব্যে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

এরপরই বেশ কিছু ট্রাম্প সমর্থক পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করে। নজিরবিহীন এই তাণ্ডবের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে চার জনে দাঁড়িয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নিহতদের কারও পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এই ঘটনার পর মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিপাবলিকান নেতাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ২৫তম সংশোধনী নিয়ে আলোচনা চলছে। তারা বলছেন ট্রাম্প নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছেন।

সিবিএস’র প্রতিবেদক মার্গারেট ব্রেনান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত মাইক পেন্সের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন কিছুই উপস্থাপন করা হয়নি। আর এবিসি প্রতিবেদক ক্যাথেরিন ফল্ডারস জানিয়েছেন, একাধিক সূত্র ট্রাম্পকে সরিয়ে দেয়ার আলোচনা চলার কথা জানিয়েছেন। ট্রাম্প জোরপূর্বক যে ভীতি প্রদর্শন করছেন তা নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করে জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেন, ক্যাপিটাল হিলে হামলার ঘটনা হৃদয়বিদারক এবং অস্বস্তিকর দৃশ্য। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে বলেন, নির্বাচনের পর থেকে কিছু নেতার বেপরোয়া আচরণ এবং আমাদের প্রতিষ্ঠান, ঐতিহ্য, আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা আমাকে ভীতসন্ত্রস্ত করে।

উটাহ রাজ্যের সিনেটর মিট রমনি এ হামলাকে বিদ্রোহ বলে উল্লেখ করেন এবং এজন্য ট্রাম্পকে দোষারোপ করেন। ওইমিং রাজ্যের প্রতিনিধি লিজ চেনী বলেন, এতে কোন সন্দেহ নেই যে ট্রাম্পই এই উশৃঙ্খল জনতাকে সমবেত করেছেন। এদের উত্তেজিত করেছেন এবং এদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন।

তিনিই এই আগুন জ্বালিয়েছেন বলে তিনি ফক্স নিউজকে বলেন।

আরকানেসের টম কট্টন কলেন, আমেরিকার জনগণকে বিভান্ত করবেন না এবং এসব বিশৃঙ্খল জনতাকে পরিত্যাগ করুন। কট্টন প্রেসিডেন্টের ওপর বিরক্ত অন্য প্রতিনিধিদের বলেন, প্রেসিডেন্টের উচিত এসব বন্ধ করা। দু’জন পুরনো রিপাবলিকান কর্মী ও প্রেসিডেন্টের মিত্র বলেন, ট্রাম্পের উচিত পদত্যাগ করা।

এদের একজন বলেন, পেন্সের উচিত তার ওপর ২৫তম সংশোধন প্রয়োগ করে তাকে বরখাস্ত করা। আর একজন বলেন, এই মহূর্তে তাকে পদচূত্য করা উচিত। উইসকনসিনের প্রতিনিধি মাইক গ্যালাগার বলেন, প্রেসিডেন্টের বলা উচিত আমি হেরে গেছি।

জো বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে গত বুধবার কংগ্রেস ভবনে তাণ্ডবের পর ডেমোক্র্যাট আইন প্রণেতারাও ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের তাগিদ দিয়েছেন। হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটির ডেমোক্র্যাটরা মাইক পেন্সকে চিঠি দিয়ে ট্রাম্পকে সরানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প গণতন্ত্রকে হেয় করে দিয়েছেন। বুধবার ট্রাম্পের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়, ওই ভাষণ থেকে বোঝা যায় তিনি মানসিকভাবে সুস্থ নন। অন্যরা অভিযোগ করেন ট্রাম্প সন্ত্রাসবাদে মদত দিচ্ছেন।