এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মার্কিন কংগ্রেসের যৌথসভায় জো বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ২০ জানুয়ারি শপথ নিতে আর কোন বাধা থাকবে না।

এদিকে নিজের পরাজয় মেনে নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা জানিয়ে তিনি এ পরাজয় মেনে নেন। সিএনএন

ট্রাম্প এক বার্তায় বলেন, আমি যদিও নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে একমত নইৃ তবুও আগামী ২০ জানুয়ারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর করবো।

শপথের পূর্বেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতাচ্যুত করার দাবি উঠছে। পার্লামেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের বিক্ষোভ, ভাঙচুর, সন্ত্রাসী সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু এবং ১৪ জন পুলিশ আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ৫২ জনকে। সংঘাত এড়াতে জারি করা কারফিউ চলবে আগামী ১৫ দিন।

যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্ব নজিরবিহীন এ ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। দৃশ্য ছিল এমন ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিল বা সংসদ ভবনের ভেতরে অবরুদ্ধ দেশটির আইনপ্রণেতারা আর বাইরে কারফিউ। এমন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় রাতভর চলে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনা। অবশেষ ভোট গণনা শেষে তা সত্যায়ন করে জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট ও কমলা হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে চূড়ান্তভাবে বিজয়ী ঘোষণা করে কংগ্রেসের যৌথ সভা। গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষায় মার্কিন নেতাদের এ অভূতপূর্ব রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেন জো বাইডেন। এরআগে রিপাবলিকান সদস্যদের দাখিল করা অ্যারিজোনা ও পেনসিলভানিয়ার ফলাফল বাতিলের আবেদন নিরয় দীর্ঘ বিতর্ক ও ভোটাভুটি শেষে তা খারিজ হয়ে যায়। পরে এক এক করে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট সত্যায়ন করে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন অধিবেশনের সভাপতি ভাইস প্রেসিডন্ট মাইক পেন্স। এতে বাইডেনে-হ্যারিসের প্রাপ্ত ৩০৬ ইলেকটোরাল ভোট এবং ট্রাম্প-পেন্সের ২৩২ অক্ষুণœ থাকে।

নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ পরিচালনা করেন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। হাউজ ও সিনেট যৌথ অধিবেশন শুরু হয় স্থানীয় সময় ৬ জানুয়ারি বুধবার রাত ৮টায়। শেষ হয় পরদিন জানুয়ারি ৭ বৃহস্পতিবার সকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে। যদিও রিপাবলিকান সিনেটরদের জর্জিয়া এবং উইসকনসিনের ভোট বাতিলের দাবি কোন প্রকার ভোটাভুটি ছাড়াই খারিজ হয়ে যায়। আবার অনেক রিপাবলিকান সদস্য তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের সহিংস বিক্ষোভ ও হামলার পর উত্তাল হয়ে উঠে যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনায় খোদ রিপাবলিকান দলের মিট রমনি, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ অনেকেই ট্রাম্পকে দায়ী করে তার বিচার দাবি করেন। নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা।

২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথের আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রায় দু’সপ্তাহ ক্ষমতায় থাকছেন।

ইলেকটোরাল ভোট সত্যায়নের প্রক্রিয়া বানচাল করতে ব্যর্থ হয়ে ট্রাম্প তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবারও কোন চক্রান্ত করতে পারেন এমন আশঙ্কা করেছেন অনেকে।

তাই আমেরিকার প্রথম দুই নারী মুসলিম কংগ্রেস সদস্যের একজন ইলহান ওমরসহ অনেক নেতা ট্রাম্পকে ইমপিচমেন্টের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত হাউজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি জানান, যারা এ সহিংস হামলার জন্য দায়ী তাদের শাস্তি পেতে হবে। সংসদ ভবনে এমন ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় হতবাক দেশটির হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটিও।

কমিটি বলেছে, পার্লামেন্ট ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের সহিংস বিক্ষোভ ও হামলার দায় ট্রাম্পেরই। ট্রাম্প টুইটারে একের পর এক বিতর্কিত পোস্ট করেছেন। এসব আচরণ প্রমাণ করে তিনি মানসিকভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের প্রতি ট্রাম্পকে ক্ষমতাচু্যুত করার আহ্বান জানিয়েছে হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটি।