২৫ জনকে প্লাজমার ব্যবস্থা করেন
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠা নগরের কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন এ পর্যন্ত কোরানায় আক্রান্ত ২৫ জন রোগীর প্লাজমার ব্যবস্থা করেছেন। করোনায় লকডাউনের সময় করোনা রোগীকে প্লাজমা দেয়ার বিষয়টি ছিল অনেকের অজানা। মানুষজনও এ ব্যাপারে সচেতন ছিল না। ওই সময়ে প্লাজমা প্রয়োজন হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক সমিরুল ইসলামের। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার অবস্থা ছিল সংকটাপন্ন। সেই দুঃসময়ে এই চিকিৎসকের জন্য প্লাজমা জোগাড় করে দেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। ওই চিকিৎসক করোনার কাছে হেরে গেলেও এখন পর্যন্ত ২৫ জন রোগীর প্লাজমার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। শুধু প্লাজমা জোগাড় করে দেয়া নয়, আরও নানা সেবা তিনি দিয়েছেন।
করোনায় আক্রান্ত মানুষের আতঙ্ককে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। মানুষ বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে বাড়তি দামে ওষুধ কিনেছেন। কিন্তু মানুষ যাতে ন্যায্য মূল্যে ওষুধ কিনতে পারে, সে উদ্যোগ নিয়েছিল চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। ‘আমার ফার্মেসি’ নামে এ সেবা কার্যক্রম চালু করে ওসি মহসিন। করোনার শুরুতেই চট্টগ্রামে চিকিৎসকদের চেম্বারে তালা ঝুলতে শুরু করে। কোন ডাক্তারই পাওয়া যাচ্ছিল না। তখনই মোহাম্মদ মহসীন ১০ জন ডাক্তারের সমন্বয়ে চট্টগ্রামে শুরু করেন টেলিমেডিসিন সেবা ‘হ্যালো ডাক্তার’। সুনির্দিষ্ট একটি নম্বরে ফোন করেই চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন চট্টগ্রামবাসী। চট্টগ্রামে এটিই ছিল প্রথম টেলিমেডিসিন সেবা।
করোনাঝুঁকি এড়াতে লোকজন যাতে ঘর থেকে বের না হয়, সেজন্য থানায় ফোন করা হলে বাসায় বাজারও পৌঁছে দেয় পুলিশ। করোনা রোগী ছাড়া প্রসূতিকেও হাসপাতালে গভীর রাতে পৌঁছে দেয় পুলিশ নিজের গাড়িতে করে। মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে এবং বাইরে জমায়েত বন্ধে করতে দেশে প্রথমবারের মতো ড্রোন উড়িয়ে লকডাউন কার্যকর করে ওসি মহসীনের কোতোয়ালি থানা। লকডাউনের সময় সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে অযথা ঘোরাঘুরি করায় আটকও করেন তিনি।
এছাড়া কখনও টেলিমেডিসিন সেবার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন রোগীকে, কখনও অসুস্থ রোগীকে গভীর রাতে পৌঁছে দিয়েছেন হাসপাতালে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা প্রধান কাজ হলেও করোনায় ভূমিকা রেখেছেন নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে। সংক্রমিত হবেন জেনেও নগরবাসীকে ঘরে রেখে নিজে থেকেছিলেন রাস্তায়।
জানা গেছে, নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় করোনাভাইরাসে মারা যান মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রফিক। সৌদি আরব থেকে ফেরা সেকান্দর হোসেন নগরের এনায়েত বাজার এলাকার বাসায় করোনায় মারা যান। এদের স্বজনরা কেউ কাছে আসেননি। কোতোয়ালি থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে পুলিশের সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা লাশ দাফন করেন। অন্যদিকে সড়কে জীবাণুনাশক ছিটানো, দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং, বিনোদন কেন্দ্রে জমায়েত ঠেকানো, করোনা রোগী এবং সম্মুখযোদ্ধাদের সঙ্গে বাড়িওয়ালাদের বিমাতাসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, রোগীদের জন্য ফলমূল ভর্তি ভালোবাসার বাক্সসহ নানা পদক্ষেপ নেন পুলিশ কর্মকর্তা মহসীন।
করোনাকালে তিনমাস বাসায় যাননি ওসি মহসীন। মুঠোফোনের স্ক্রিনে দেখেছেন মা, স্ত্রী আর সন্তানদের ছবি। এক সময় তিনি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হন। তা জয় করে আবার নেমে পড়েন মাঠে। কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, এখনও লড়াই চলছে। করোনার প্রথম দিকের মতো এখনও মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী সাড়া দিচ্ছি। মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করছি। প্লাজমা লাগলে ব্যবস্থা করছি। বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবাও দিচ্ছি। যাতে পুলিশ সত্যিকার অর্থে মানুষের বন্ধু হতে পারে।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ছয়জন সদস্য মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ৬২৭ জন। হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন পুলিশের আরও ৩৬ জন সদস্য।
শুক্রবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২১ , ২৪ পৌষ ১৪২৭, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
২৫ জনকে প্লাজমার ব্যবস্থা করেন
নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম ব্যুরো
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠা নগরের কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন এ পর্যন্ত কোরানায় আক্রান্ত ২৫ জন রোগীর প্লাজমার ব্যবস্থা করেছেন। করোনায় লকডাউনের সময় করোনা রোগীকে প্লাজমা দেয়ার বিষয়টি ছিল অনেকের অজানা। মানুষজনও এ ব্যাপারে সচেতন ছিল না। ওই সময়ে প্লাজমা প্রয়োজন হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক সমিরুল ইসলামের। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার অবস্থা ছিল সংকটাপন্ন। সেই দুঃসময়ে এই চিকিৎসকের জন্য প্লাজমা জোগাড় করে দেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। ওই চিকিৎসক করোনার কাছে হেরে গেলেও এখন পর্যন্ত ২৫ জন রোগীর প্লাজমার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। শুধু প্লাজমা জোগাড় করে দেয়া নয়, আরও নানা সেবা তিনি দিয়েছেন।
করোনায় আক্রান্ত মানুষের আতঙ্ককে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। মানুষ বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে বাড়তি দামে ওষুধ কিনেছেন। কিন্তু মানুষ যাতে ন্যায্য মূল্যে ওষুধ কিনতে পারে, সে উদ্যোগ নিয়েছিল চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। ‘আমার ফার্মেসি’ নামে এ সেবা কার্যক্রম চালু করে ওসি মহসিন। করোনার শুরুতেই চট্টগ্রামে চিকিৎসকদের চেম্বারে তালা ঝুলতে শুরু করে। কোন ডাক্তারই পাওয়া যাচ্ছিল না। তখনই মোহাম্মদ মহসীন ১০ জন ডাক্তারের সমন্বয়ে চট্টগ্রামে শুরু করেন টেলিমেডিসিন সেবা ‘হ্যালো ডাক্তার’। সুনির্দিষ্ট একটি নম্বরে ফোন করেই চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন চট্টগ্রামবাসী। চট্টগ্রামে এটিই ছিল প্রথম টেলিমেডিসিন সেবা।
করোনাঝুঁকি এড়াতে লোকজন যাতে ঘর থেকে বের না হয়, সেজন্য থানায় ফোন করা হলে বাসায় বাজারও পৌঁছে দেয় পুলিশ। করোনা রোগী ছাড়া প্রসূতিকেও হাসপাতালে গভীর রাতে পৌঁছে দেয় পুলিশ নিজের গাড়িতে করে। মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে এবং বাইরে জমায়েত বন্ধে করতে দেশে প্রথমবারের মতো ড্রোন উড়িয়ে লকডাউন কার্যকর করে ওসি মহসীনের কোতোয়ালি থানা। লকডাউনের সময় সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে অযথা ঘোরাঘুরি করায় আটকও করেন তিনি।
এছাড়া কখনও টেলিমেডিসিন সেবার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন রোগীকে, কখনও অসুস্থ রোগীকে গভীর রাতে পৌঁছে দিয়েছেন হাসপাতালে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা প্রধান কাজ হলেও করোনায় ভূমিকা রেখেছেন নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে। সংক্রমিত হবেন জেনেও নগরবাসীকে ঘরে রেখে নিজে থেকেছিলেন রাস্তায়।
জানা গেছে, নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় করোনাভাইরাসে মারা যান মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রফিক। সৌদি আরব থেকে ফেরা সেকান্দর হোসেন নগরের এনায়েত বাজার এলাকার বাসায় করোনায় মারা যান। এদের স্বজনরা কেউ কাছে আসেননি। কোতোয়ালি থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে পুলিশের সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা লাশ দাফন করেন। অন্যদিকে সড়কে জীবাণুনাশক ছিটানো, দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং, বিনোদন কেন্দ্রে জমায়েত ঠেকানো, করোনা রোগী এবং সম্মুখযোদ্ধাদের সঙ্গে বাড়িওয়ালাদের বিমাতাসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, রোগীদের জন্য ফলমূল ভর্তি ভালোবাসার বাক্সসহ নানা পদক্ষেপ নেন পুলিশ কর্মকর্তা মহসীন।
করোনাকালে তিনমাস বাসায় যাননি ওসি মহসীন। মুঠোফোনের স্ক্রিনে দেখেছেন মা, স্ত্রী আর সন্তানদের ছবি। এক সময় তিনি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হন। তা জয় করে আবার নেমে পড়েন মাঠে। কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, এখনও লড়াই চলছে। করোনার প্রথম দিকের মতো এখনও মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী সাড়া দিচ্ছি। মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করছি। প্লাজমা লাগলে ব্যবস্থা করছি। বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবাও দিচ্ছি। যাতে পুলিশ সত্যিকার অর্থে মানুষের বন্ধু হতে পারে।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ছয়জন সদস্য মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ৬২৭ জন। হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন পুলিশের আরও ৩৬ জন সদস্য।