এটা গণতন্ত্র নয়

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটাল হিলে গত বুধবার যৌথ অধিবেশন চলার সময় সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকরা। হামলার ঘটনায় চারজন মারা গেছেন। এর আগে হোয়াইট হাউজের কাছে ট্রাম্প ‘সেভ আমেরিকা মার্চ’ নামের র‌্যালিতে সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, কখনোই পরাজয় মেনে নেব না। আমরা ক্যাপিটাল হিলে যাব।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ট্রাম্প ও তার আইনজীবী রুডি জুলিয়ানির উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এ মুহূর্তে আমাদের গণতন্ত্র নজিরবিহীন হামলার মুখে রয়েছে। ক্যাপিটালে হামলা মানে দেশের স্বাধীনতার আশ্রয়স্থলে হামলা।

হামলার ঘটনায় ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দিতে দেশটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন ব্যবসায়ীরা। ট্রাম্পের পক্ষ ত্যাগ করতে শুরু করেছেন রিপাবলিকান অনেক নেতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটার ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ব্লক করেছে।

গত ৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলেও ট্রাম্প পরাজয় মেনে নেননি। শুরু থেকেই তিনি ভোট জালিয়াতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনছেন। কারচুপির অভিযোগে তিনি আদালতে গেছেন। আইনি লড়াইয়ে হেরেছেন। এরপরও তিনি হোয়াইট হাউজ ছাড়তে রাজি নন। তিনি বারবারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার হুমকি দিয়েছেন। গোঁড়া সমর্থকদের তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই উসকানি দিচ্ছিলেন। তারই চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে- ক্যাপিটাল হিলে হামলা।

কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনায় হতবাক হয়েছে গোটা বিশ্ব। বর্তমান বিশ্বে এমন হামলার ঘটনা আর ঘটেছে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। কংগ্রেস ভবনকে মনে করা হয় ‘গণতন্ত্রের তীর্থস্থান’। যুক্তরাষ্ট্র সারা পৃথিবীতে গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেয়, দেশে দেশে গণতন্ত্রের অ্যাডভোকেসি করে। সেই দেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটল।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়। নির্বাচনে একপক্ষ জয়ী হবে, আরেকপক্ষ পরাজিত হবে। পরাজয় মেনে নেয়া, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। নির্বাচনের ফল দেখে কারও মনপুত নাও হতে পারে, থাকতে পারে ভিন্নমত। মত বা ক্ষোভ প্রকাশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে এর সীমা আছে। হামলা বা সহিংসতা গণতন্ত্রের ভাষা নয়।

কারও ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়নি। জনগণের ভোটে নির্দিষ্ট সময় পরপর ক্ষমতার পালাবদল ঘটবে- এটাই গণতান্ত্রিক নিয়ম। এ নিয়ম রক্ষা করা না গেলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে, অপশক্তি মাথা চাড়া দেয়। এজন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা জরুরি।

আমরা আশা করব, যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি হবে না। সেখানে জনগণের ইচ্ছা ও ভোটের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে- এটা আমাদের প্রত্যাশা। সন্ত্রাস-সহিংসতা কখনও বিজয়ী হয় না। বিজয়ী হয় গণতন্ত্র।

শুক্রবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২১ , ২৪ পৌষ ১৪২৭, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে হামলা

এটা গণতন্ত্র নয়

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটাল হিলে গত বুধবার যৌথ অধিবেশন চলার সময় সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকরা। হামলার ঘটনায় চারজন মারা গেছেন। এর আগে হোয়াইট হাউজের কাছে ট্রাম্প ‘সেভ আমেরিকা মার্চ’ নামের র‌্যালিতে সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, কখনোই পরাজয় মেনে নেব না। আমরা ক্যাপিটাল হিলে যাব।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ট্রাম্প ও তার আইনজীবী রুডি জুলিয়ানির উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এ মুহূর্তে আমাদের গণতন্ত্র নজিরবিহীন হামলার মুখে রয়েছে। ক্যাপিটালে হামলা মানে দেশের স্বাধীনতার আশ্রয়স্থলে হামলা।

হামলার ঘটনায় ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দিতে দেশটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন ব্যবসায়ীরা। ট্রাম্পের পক্ষ ত্যাগ করতে শুরু করেছেন রিপাবলিকান অনেক নেতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটার ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ব্লক করেছে।

গত ৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলেও ট্রাম্প পরাজয় মেনে নেননি। শুরু থেকেই তিনি ভোট জালিয়াতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনছেন। কারচুপির অভিযোগে তিনি আদালতে গেছেন। আইনি লড়াইয়ে হেরেছেন। এরপরও তিনি হোয়াইট হাউজ ছাড়তে রাজি নন। তিনি বারবারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার হুমকি দিয়েছেন। গোঁড়া সমর্থকদের তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই উসকানি দিচ্ছিলেন। তারই চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে- ক্যাপিটাল হিলে হামলা।

কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনায় হতবাক হয়েছে গোটা বিশ্ব। বর্তমান বিশ্বে এমন হামলার ঘটনা আর ঘটেছে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। কংগ্রেস ভবনকে মনে করা হয় ‘গণতন্ত্রের তীর্থস্থান’। যুক্তরাষ্ট্র সারা পৃথিবীতে গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেয়, দেশে দেশে গণতন্ত্রের অ্যাডভোকেসি করে। সেই দেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটল।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়। নির্বাচনে একপক্ষ জয়ী হবে, আরেকপক্ষ পরাজিত হবে। পরাজয় মেনে নেয়া, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। নির্বাচনের ফল দেখে কারও মনপুত নাও হতে পারে, থাকতে পারে ভিন্নমত। মত বা ক্ষোভ প্রকাশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে এর সীমা আছে। হামলা বা সহিংসতা গণতন্ত্রের ভাষা নয়।

কারও ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়নি। জনগণের ভোটে নির্দিষ্ট সময় পরপর ক্ষমতার পালাবদল ঘটবে- এটাই গণতান্ত্রিক নিয়ম। এ নিয়ম রক্ষা করা না গেলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে, অপশক্তি মাথা চাড়া দেয়। এজন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা জরুরি।

আমরা আশা করব, যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি হবে না। সেখানে জনগণের ইচ্ছা ও ভোটের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে- এটা আমাদের প্রত্যাশা। সন্ত্রাস-সহিংসতা কখনও বিজয়ী হয় না। বিজয়ী হয় গণতন্ত্র।