বাজার মূল্য নির্ধারণ করার দাবি
গত দুই বছর দেশে পিয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে পিয়াজ আবাদে পিয়াজ চাষিরা এ বছর পিয়াজ আবাদে বেশি ঝুঁকেছে। অধিক লাভের আশায় চড়া দামে পিয়াজ আবাদ করে বিপাকে পড়েছে পিয়াজ চাষিরা, কারণ পিয়াজ উঠার সময়ে ভারতের পিয়াজ আমদানির কারনে বাজারে নতুন পিয়াজের দাম হঠাৎ করে কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ পুষিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে পিয়াজ চাষিরা।
দেশের সর্বাধিক পিয়াজ উৎপাদন এলাকা পাবনার সাথিয়া এবং সুজানগর উপজেলার বিভিন্ন পিয়াজের পাইকারি হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পিয়াজ ব্যবসায়ীরা হাট-বাজারে এসেছে তবে পিয়াজের দাম বাড়েনি। কারণ দেশের পিয়াজের বৃহৎ পাইকারি বাজারগুলোতে ভারতীয় পিয়াজের প্রভাবে নতুন পিয়াজের দাম কমে গেছে ফলে কম দামে ব্যবসায়ীদের কাছে পিয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা।
উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে দিশেহারা কৃষকরা সরকারের কাছে পিয়াজের দাম নির্ধারণের জন্য দাবি জানিয়েছে সাধারণ কৃষক।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ঘুঘুদহ গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, গতবছর পিয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণে বীজ সঙ্কট দেখা দেয়। বীজ সঙ্কট উপেক্ষা করে প্রায় ১০ গুণ বেশি দামে ৪ হাজার টাকা কেজি দরে প্রায় ১৬ কেজি পিয়াজের বাল্ব কিনে অতিরিক্ত দামে শ্রমিক লাগিয়ে প্রায় ৯৫ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র দুই বিঘা জমিতে কন্দ পিয়াজ (মুরিকাটা পিয়াজ) আবাদ করি। অন্যান্য বছর এক বিঘা জমিতে কন্দ পিয়াজ আবাদ করতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হলেও এবার এক বিঘা জমিতে পিয়াজ আবাদে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। পিয়াজ বীজ আর পিয়াজ বাল্ব কিনতে অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় এ বছর পিয়াজ আবাদের খরচ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আজিজুর রহমান দুই বিঘা জমি থেকে প্রায় ৯০ মণ পিয়াজ উৎপাদন করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ২০ মণ পিয়াজ বিক্রি করেছে মাত্র ১০০০ টাকা মন দরে। এর আগের সপ্তাহে বাজারে ১২০০ টাকা মন পিয়াজ বিক্রি হওয়ায় আজিজুর রহমান আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ১০০০ টাকা মণ দরে ২০ মণ পিয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। বাজার একই রকম থাকলে অথবা আরও কমে গেলে উৎপাদন খরচও উঠবে না বলে জানান আজিজুল।
একই অবস্থা দেশের প্রায় সব পিয়াজ উৎপাদনকারী এলাকার সাধারণ কৃষকদের। পিয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক সপ্তাহ আগেও ১৫০০ থেক ১৬০০ টাকা মণ দরে পিয়াজ বিক্রি হয়েছে কিন্তু জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ভারত পিয়াজ রফতানি করবে এমন সংবাদ চাউর হওয়ার পর থেকে বাজারে পিয়াজের দাম কমতে থাকে।
সাঁথিয়ার বোয়াইলমারি হাটের পিয়াজের পাইকারি বাজারের আড়তদার আব্দুল হাই বলেন, ভারতীয় পিয়াজ আমদানি শুরু হওয়ার কারণে পিয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। পাইকারি বাজারে এক মন পিয়াজ এখন ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় সর্বনি¤œ।
ঢাকার বাদামতলির পিয়াজের ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বলেন, বাজার হ্রাস যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা পিয়াজ মজুদ করছে না। এছাড়া খুচরা বাজারে পিয়াজের আমদানি প্রচুর থাকায় পিয়াজের চাহিদাও অনেক কমে গেছে। গতবছর এ সময় প্রতি হাট থেকে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ মণ পিয়াজ কিনলেও চাহিদা কম থাকায় এ বছর ৫০ থেকে ৬০ মণের বেশি পিয়াজ কিনতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চারা পিয়াজ উঠার আগে কন্দ পিয়াজ বাজারে আসে, ফলে পিয়াজের অভাব পূরণ হয়। কৃষি সম্প্রসারণ আধিদফতর (খামার বাড়ি) এর কন্ট্রোল রুম এর দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার মো. রাশেদ ইফতেখার বলেন, এ বছর দেশে বীজ পিয়াজ আবাদ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হজার হেক্টর জমিতে আর কন্দ পিয়াজ (মূলকাটা) পিয়াজ আবাদ হয়েছে ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এদিকে, নতুন পিয়াজের দাম কমে যাওয়ায় দিশেহারা কৃষকরা দাবি জানিয়েছে, পিয়াজ নিয়ে সঙ্কট নিরসনে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ আর পিয়াজের মূল্য নির্ধাণের জন্য।
পিয়াজ চাষি রইজ উদ্দিন বলেন, চাষিরা লাভের আশায় চাষাবাদ করে, কিন্তু ফসল আবাদ করে উৎপাদন খরচ তুলতে না পারা কৃষকদের জন্য দুর্ভাগ্য। আমরা পিয়াজের দাম ২০০-৩০০ টাকা কেজি হোক তা চাইনা আবার ২৫-৩০ টাকায় নেমে আসুক তাও চাইনা কারণ বাজার মূল্য বাড়লে উৎপাদন খরচ বাড়ে আবার বাজার মূল্য অতিরিক্ত কম হলে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়।
এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে কৃষকরা পিয়াজ চাষে আগ্রহ হারাবে বলে জানান তিনি। কৃষকদের স্বার্থে সরকারকে পিয়াজের বাজার নির্ধারণ করার দাবি জানান তিনি যাতে কওে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পায়।
শনিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২১ , ২৫ পৌষ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
বাজার মূল্য নির্ধারণ করার দাবি
হাবিবুর রহমান স্বপন, পাবনা
গত দুই বছর দেশে পিয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে পিয়াজ আবাদে পিয়াজ চাষিরা এ বছর পিয়াজ আবাদে বেশি ঝুঁকেছে। অধিক লাভের আশায় চড়া দামে পিয়াজ আবাদ করে বিপাকে পড়েছে পিয়াজ চাষিরা, কারণ পিয়াজ উঠার সময়ে ভারতের পিয়াজ আমদানির কারনে বাজারে নতুন পিয়াজের দাম হঠাৎ করে কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ পুষিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে পিয়াজ চাষিরা।
দেশের সর্বাধিক পিয়াজ উৎপাদন এলাকা পাবনার সাথিয়া এবং সুজানগর উপজেলার বিভিন্ন পিয়াজের পাইকারি হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পিয়াজ ব্যবসায়ীরা হাট-বাজারে এসেছে তবে পিয়াজের দাম বাড়েনি। কারণ দেশের পিয়াজের বৃহৎ পাইকারি বাজারগুলোতে ভারতীয় পিয়াজের প্রভাবে নতুন পিয়াজের দাম কমে গেছে ফলে কম দামে ব্যবসায়ীদের কাছে পিয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা।
উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে দিশেহারা কৃষকরা সরকারের কাছে পিয়াজের দাম নির্ধারণের জন্য দাবি জানিয়েছে সাধারণ কৃষক।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ঘুঘুদহ গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, গতবছর পিয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণে বীজ সঙ্কট দেখা দেয়। বীজ সঙ্কট উপেক্ষা করে প্রায় ১০ গুণ বেশি দামে ৪ হাজার টাকা কেজি দরে প্রায় ১৬ কেজি পিয়াজের বাল্ব কিনে অতিরিক্ত দামে শ্রমিক লাগিয়ে প্রায় ৯৫ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র দুই বিঘা জমিতে কন্দ পিয়াজ (মুরিকাটা পিয়াজ) আবাদ করি। অন্যান্য বছর এক বিঘা জমিতে কন্দ পিয়াজ আবাদ করতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হলেও এবার এক বিঘা জমিতে পিয়াজ আবাদে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। পিয়াজ বীজ আর পিয়াজ বাল্ব কিনতে অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় এ বছর পিয়াজ আবাদের খরচ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আজিজুর রহমান দুই বিঘা জমি থেকে প্রায় ৯০ মণ পিয়াজ উৎপাদন করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ২০ মণ পিয়াজ বিক্রি করেছে মাত্র ১০০০ টাকা মন দরে। এর আগের সপ্তাহে বাজারে ১২০০ টাকা মন পিয়াজ বিক্রি হওয়ায় আজিজুর রহমান আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ১০০০ টাকা মণ দরে ২০ মণ পিয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। বাজার একই রকম থাকলে অথবা আরও কমে গেলে উৎপাদন খরচও উঠবে না বলে জানান আজিজুল।
একই অবস্থা দেশের প্রায় সব পিয়াজ উৎপাদনকারী এলাকার সাধারণ কৃষকদের। পিয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক সপ্তাহ আগেও ১৫০০ থেক ১৬০০ টাকা মণ দরে পিয়াজ বিক্রি হয়েছে কিন্তু জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ভারত পিয়াজ রফতানি করবে এমন সংবাদ চাউর হওয়ার পর থেকে বাজারে পিয়াজের দাম কমতে থাকে।
সাঁথিয়ার বোয়াইলমারি হাটের পিয়াজের পাইকারি বাজারের আড়তদার আব্দুল হাই বলেন, ভারতীয় পিয়াজ আমদানি শুরু হওয়ার কারণে পিয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। পাইকারি বাজারে এক মন পিয়াজ এখন ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় সর্বনি¤œ।
ঢাকার বাদামতলির পিয়াজের ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বলেন, বাজার হ্রাস যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা পিয়াজ মজুদ করছে না। এছাড়া খুচরা বাজারে পিয়াজের আমদানি প্রচুর থাকায় পিয়াজের চাহিদাও অনেক কমে গেছে। গতবছর এ সময় প্রতি হাট থেকে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ মণ পিয়াজ কিনলেও চাহিদা কম থাকায় এ বছর ৫০ থেকে ৬০ মণের বেশি পিয়াজ কিনতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চারা পিয়াজ উঠার আগে কন্দ পিয়াজ বাজারে আসে, ফলে পিয়াজের অভাব পূরণ হয়। কৃষি সম্প্রসারণ আধিদফতর (খামার বাড়ি) এর কন্ট্রোল রুম এর দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার মো. রাশেদ ইফতেখার বলেন, এ বছর দেশে বীজ পিয়াজ আবাদ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হজার হেক্টর জমিতে আর কন্দ পিয়াজ (মূলকাটা) পিয়াজ আবাদ হয়েছে ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এদিকে, নতুন পিয়াজের দাম কমে যাওয়ায় দিশেহারা কৃষকরা দাবি জানিয়েছে, পিয়াজ নিয়ে সঙ্কট নিরসনে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ আর পিয়াজের মূল্য নির্ধাণের জন্য।
পিয়াজ চাষি রইজ উদ্দিন বলেন, চাষিরা লাভের আশায় চাষাবাদ করে, কিন্তু ফসল আবাদ করে উৎপাদন খরচ তুলতে না পারা কৃষকদের জন্য দুর্ভাগ্য। আমরা পিয়াজের দাম ২০০-৩০০ টাকা কেজি হোক তা চাইনা আবার ২৫-৩০ টাকায় নেমে আসুক তাও চাইনা কারণ বাজার মূল্য বাড়লে উৎপাদন খরচ বাড়ে আবার বাজার মূল্য অতিরিক্ত কম হলে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়।
এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে কৃষকরা পিয়াজ চাষে আগ্রহ হারাবে বলে জানান তিনি। কৃষকদের স্বার্থে সরকারকে পিয়াজের বাজার নির্ধারণ করার দাবি জানান তিনি যাতে কওে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পায়।