চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের লবণ বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারে!

খাচ্ছে মানুষ-গবাদি পশু, ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য

শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা সোডিয়াম সালফেটকে ভোজ্যলবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড) হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে মেহেরপুরে। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী এই লবণ খোলা বাজারে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এ লবণ সাধারণ খাবার লবণের সঙ্গে মিশিয়ে প্যাকেটজাত করে মানুষের ঘরে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। আবার কোন কোন সময় বস্তা ভর্তি করে ফেরি করে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে। এ শিল্প লবণ (ইন্ডাস্ট্রিয়াল বা গ্লোবাল সল্ট) ভোক্তাদের পেটে যাওয়ায় কিডনি ও লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে আবার হতে পারে গলোগ- রোগ। অধিক মুনাফা করতে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এ লবণ আমদানি করছেন সিলেট, খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে। মেহেরপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আব্দুল ওহাবের চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের ঘর থেকে বিক্রি করা হচ্ছে এই আয়োডিন বিহীন লবণ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় একই লবণ ব্যবহার করা হচ্ছে চামড়ায়। বস্তা প্রতি ৫শ থেকে ৬শ টাকা মিলছে এই লবণ। কিনছে বিভিন্ন গ্রাম্য ফেরিওয়ালারা। সস্তায় বিক্রি করছে মেহেরপুর শহর ছাপিয়ে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে। কম দামে লবণ পেয়ে অনেকটা অজ্ঞতা থেকে গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষরা কিনছেন এই লবণ। নিজেও খাচ্ছেন আবার কোন কোন সময় গবাদি পশুকেও খাওয়াচ্ছেন। ১৯৮৯ সালে আয়োডিন স্বল্পতার রোগ নিবারণ আইন পাস করার এবং ১৯৯৩ সালে এক সমীক্ষায় বাংলাদেশে ৪৭ দশমিক এক শতাংশ মানুষের গলোগ- রোগ থাকার কথা ধরা পড়ার পর ১৯৯৪ সালে আয়োডিনহীন লবণ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রকাশ্যেই বিক্রি করা হচ্ছে এই লবণ। অথচ এই লবণ ব্যবহার করার নিয়ম বিভিন্ন শিল্প কারখানায়। মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. মকলেছুর রহমান জানান, আয়োডিনের অভাবে গলোগ- রোগ হয়, যাতে থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে গলা ফুলে যায়। এতে বিকলাঙ্গতাও দেখা দিতে পারে। আয়োডিনের অভাবে গর্ভবতীদের গর্ভ¯্রাবেরও ঝুঁকি থাকে। আব্দুল ওহাব এর চামড়ার ঘরে কর্মরত সুধির দাস নামের এক শ্রমিক জানান, এই লবণ প্রতিদিনই বিক্রি করি। ৫০ কেজির দাম ৪৮০ টাকা ও ৬০ কেজির দাম ৫৮০ টাকা। কি কাজে ব্যবহৃত হয় জানতে চাইলে আরেক কর্মচারী বাবু জানান, বিভিন্ন ভ্যান চালকরা কিনে নিয়ে যায়। এটা মানুষ খায়, আবার আপনি চাইলে গরুকেও খাওয়াতে পারবেন। লবণে আয়োডিন আছে কিনা জানতে চাইলে দু’জনেই বলেন, আমরা জানি না। এ ব্যাপারে আব্দুল ওহাব জানান, ৫০ কেজির বস্তা ৪৮০ টাকা ও ৬০ কেজির বস্তা ৫৮০ টাকায় বিক্রি করছি। বিক্রি করার কোন অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এ বিষয়ে মেহেরপুর মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদুল আলম বলেন, এইভাবে আয়োডিন বিহীন লবণ মানুষ বা গবাদি পশুকে খাওয়ানোর জন্য বিক্রি করা অপরাধ। এটা মানুষের শরীরে জন্য ক্ষতিকর। আমরা বিষয়টি অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখবো। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেবো।

আরও খবর
পিয়াজের উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে দিশেহারা কৃষক
তুলার ঘোষণা দিয়ে সোফার কাপড় আমদানি!
এসএমপির সব থানার ওসিকে একযোগে বদলি
মান্দায় পানের বরজে গাঁজা গাছ : আটক ১
ভালুকায় মুজিবর্ষে ঘর পাচ্ছেন ১৯৯ গৃহহীন
কক্সবাজারে পর্নোগ্রাফি আইনে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আটক
দশমিনায় নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা
দুলাভাইয়ের ছুরিকাঘাতে শ্যালক নিহত
দশমিনায় ২ পুলিশকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
রংপুর চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে বামগণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশ
বালিয়াকান্দিতে এক মাসেই অর্ধশতাধিক বিবাহ বিচ্ছেদ
কাঁচাবাজারে দরপতন চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী
নাওয়া-খাওয়া ভুলে প্রার্থী এখন ভোটারদের দ্বারে
সাপাহারে ছেলের লাঠির আঘাতে মায়ের মৃত্যু

শনিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২১ , ২৫ পৌষ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের লবণ বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারে!

খাচ্ছে মানুষ-গবাদি পশু, ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য

প্রতিনিধি, মেহেরপুর

শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা সোডিয়াম সালফেটকে ভোজ্যলবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড) হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে মেহেরপুরে। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী এই লবণ খোলা বাজারে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এ লবণ সাধারণ খাবার লবণের সঙ্গে মিশিয়ে প্যাকেটজাত করে মানুষের ঘরে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। আবার কোন কোন সময় বস্তা ভর্তি করে ফেরি করে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে। এ শিল্প লবণ (ইন্ডাস্ট্রিয়াল বা গ্লোবাল সল্ট) ভোক্তাদের পেটে যাওয়ায় কিডনি ও লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে আবার হতে পারে গলোগ- রোগ। অধিক মুনাফা করতে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এ লবণ আমদানি করছেন সিলেট, খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে। মেহেরপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আব্দুল ওহাবের চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের ঘর থেকে বিক্রি করা হচ্ছে এই আয়োডিন বিহীন লবণ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় একই লবণ ব্যবহার করা হচ্ছে চামড়ায়। বস্তা প্রতি ৫শ থেকে ৬শ টাকা মিলছে এই লবণ। কিনছে বিভিন্ন গ্রাম্য ফেরিওয়ালারা। সস্তায় বিক্রি করছে মেহেরপুর শহর ছাপিয়ে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে। কম দামে লবণ পেয়ে অনেকটা অজ্ঞতা থেকে গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষরা কিনছেন এই লবণ। নিজেও খাচ্ছেন আবার কোন কোন সময় গবাদি পশুকেও খাওয়াচ্ছেন। ১৯৮৯ সালে আয়োডিন স্বল্পতার রোগ নিবারণ আইন পাস করার এবং ১৯৯৩ সালে এক সমীক্ষায় বাংলাদেশে ৪৭ দশমিক এক শতাংশ মানুষের গলোগ- রোগ থাকার কথা ধরা পড়ার পর ১৯৯৪ সালে আয়োডিনহীন লবণ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রকাশ্যেই বিক্রি করা হচ্ছে এই লবণ। অথচ এই লবণ ব্যবহার করার নিয়ম বিভিন্ন শিল্প কারখানায়। মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. মকলেছুর রহমান জানান, আয়োডিনের অভাবে গলোগ- রোগ হয়, যাতে থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে গলা ফুলে যায়। এতে বিকলাঙ্গতাও দেখা দিতে পারে। আয়োডিনের অভাবে গর্ভবতীদের গর্ভ¯্রাবেরও ঝুঁকি থাকে। আব্দুল ওহাব এর চামড়ার ঘরে কর্মরত সুধির দাস নামের এক শ্রমিক জানান, এই লবণ প্রতিদিনই বিক্রি করি। ৫০ কেজির দাম ৪৮০ টাকা ও ৬০ কেজির দাম ৫৮০ টাকা। কি কাজে ব্যবহৃত হয় জানতে চাইলে আরেক কর্মচারী বাবু জানান, বিভিন্ন ভ্যান চালকরা কিনে নিয়ে যায়। এটা মানুষ খায়, আবার আপনি চাইলে গরুকেও খাওয়াতে পারবেন। লবণে আয়োডিন আছে কিনা জানতে চাইলে দু’জনেই বলেন, আমরা জানি না। এ ব্যাপারে আব্দুল ওহাব জানান, ৫০ কেজির বস্তা ৪৮০ টাকা ও ৬০ কেজির বস্তা ৫৮০ টাকায় বিক্রি করছি। বিক্রি করার কোন অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এ বিষয়ে মেহেরপুর মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদুল আলম বলেন, এইভাবে আয়োডিন বিহীন লবণ মানুষ বা গবাদি পশুকে খাওয়ানোর জন্য বিক্রি করা অপরাধ। এটা মানুষের শরীরে জন্য ক্ষতিকর। আমরা বিষয়টি অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখবো। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেবো।