উৎসমুখ তিনশ দূষিত হচ্ছে ঢাকার নদী

ঢাকার চারপাশে আছে ৫টি নদী। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু ও ধলেশ্বরী। এক সময় এই ৫টি নদী ঢাকা ও আশপাশ জেলার প্রকৃতি-পরিবেশ, নদী তীরবর্তী কৃষি ও মানুষের জন্য ছিল বড় অবলম্বন। কিন্তু এখন প্রতিদিন এই নদীর পানির দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে তীরের প্রকৃতি। কারণ ঢাকার চারপাশের নদীর তীরে তিনশ’র বেশি উৎসমুখ বা ড্রেন দিয়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩ লাখ কেজি বর্জ্য পড়ে দূষিত হচ্ছে পানি।

সরকারিভাবে ১৮৫টি উৎসমুখ চিহ্নিত করলেও বেসরকারি মতে তা তিনশ’র বেশি। এসব উৎসমুখ বন্ধ করতে ২০০৯ সালে তৎকালীন নৌমন্ত্রীকে সভাপতি করে গঠন করা হয়েছিল টাস্কফোর্স কমিটি। বর্তমানেও টাস্কফোর্স কমিটি সচল আছে। কিন্তু ১২ বছর বা একযুগেও উৎসমুখ বন্ধের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয় নি। তাই কমিটি ও টাস্কফোর্সের মধ্যে আটকে আছে নদী দূষণমুক্ত করার কাজ। নদী দূষণ প্রতিরোধে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিতভাবে কাজ করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

নদীর তীরে ছোট-বড় প্রায় ৭ হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কেজি বা ৩৫০ টন বিষাক্ত বর্জ্য পড়ে নদীর পানিতে। এরমধ্যে ৬০ শতাংশ শিল্প বর্জ্য, ৩০ শতাংশ সিটি করপোরেশন, ওয়াসা ও ইউনিয়ন পরিষদের ড্রেনের বর্র্জ্য, বাকি ১০ শতাংশ গৃহস্থালি ও অন্যান্য বর্জ্য। এর ফলে বুড়িগঙ্গার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ শূন্যের কোটায় মেনে এসেছে। বিষাক্ত পানির কারণে মাছ ও পোকামাকড়সহ কোন প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারছে না।

এভাবে দূষিত হওয়ার কারণে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ১০টি নদীর মধ্যে বুড়িগঙ্গা একটি। এই নদীর পানিতে ক্ষতিকর পদার্থ ক্রোমিয়াম, আয়রন ও জিংকের মতো ভারি ধাতু রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের উদ্ধৃতি দিয়ে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ রোধে একটি কর্মপরিকল্পনার প্রতিবেদনে। তাই বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকা চারপাশের নদীগুলো দূষণমুক্ত করতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করেছে নৌমন্ত্রণালয়।

বিআইডব্লিউটিএ’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ ও ধলেশ্বরী নদী প্রতিদিন মারাত্মক দূষিত হচ্ছে। এই দূষণের ফলে নদীর পানি তার স্বাভাবিক রং হারিয়ে ফেলেছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০০৭ অনুযায়ী, মৎস্য ও জলজ প্রাণীর জন্য প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকা প্রয়োজন ৫ মিলিগ্রাম বা তার বেশি।

কিন্তু বর্তমানে বুড়িগঙ্গার সদরঘাট এলাকায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ শূন্য দশমিক ২৪ মিলিগ্রাম, ধোলাইখালের ফরিদাবাদ এলাকায় আছে শূন্য দশমিক ৭৯ মিলিগ্রাম, শ্যামপুর খালের মুখে আছে শূন্য দশমিক ৯৮ মিলিগ্রাম, পাগলা ওয়াসা ট্রিটমেন্ট প্লান্টে নির্গত ড্রেনের ভাটিকে অক্সিজেন আছে শূন্য দশমিক ৫৬ মিলিগ্রাম, পাগলায় এলাকায় আছে শূন্য দশমিক ৬৩ মিলিগ্রাম, মিটফোর্ড হাসপাতালের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে অক্সিজেন আছে শূন্য দশমিক ২৯ মিলিগ্রাম। এভাবে বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন আছে গাবতলী ব্রিজের নিচে ২ দশমিক ২ মিলিগ্রাম। এছাড়া ঢাকার চারপাশের অন্য নদী তুরাগ, বালি, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ^রীর পানি দূষণের কারণে দ্রবীভূত অক্সিজেন পরিমাণ খুবই কম বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর মো. গোলাম সাদেক সংবাদকে বলেন, নদীর পানি দূষণমুক্ত করার জন্য একটি মেগাপ্রকল্প নিয়ে কাজ করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি। ইতোমধ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকার নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষার জন্য নৌপ্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে টাস্কফোর্স কমিটি কাজ করছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে নদীর ভিতরের বর্জ্য উত্তোলনের জন্য যন্ত্র কেনা হচ্ছে। এর মাধ্যমে নদীর তলদেশের বর্জ্য তোলা হবে বলে জানান তিনি।

ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইডিইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দূষণের জন্য ৩১৬টি উৎসমুখ বা ড্রেন চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব উৎসমুখ ঢাকা ওয়াসা, হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, ট্যানারি, সিমেন্ট কারখানা, ডকইয়ার্ড, গার্মেন্ট কারখানা ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য নদীতে পড়ছে।

আইডিইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুড়িগঙ্গা দূষণ করছে দুই তীরে গড়ে উঠা গার্মেন্টস, ডকইয়ার্ড, হাসপাতাল, লঞ্চ থেকে ফেলা বর্জ্য এবং পোড়া জ্বালানি তেল। সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত দূষণের উৎসমুখ ১০৭টি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ গাবতলী গরুর হাট, আপেল এন্টারপ্রাইজ, বেস টেক লিমিটেড, শাহ সিমেন্ট, এনডিএ, পূর্বাশা কাঁচাবাজার, ট্যানারি, ঢাকা ওয়াসা ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ড্রেন। সদরঘাট থেকে ফতুল্লা বিজি মাউথ পর্যন্ত ৫৭ উৎসমুখ চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা ওয়াসা ২২টি উৎসমুখ থেকে পানি ও বর্জ্য পড়ছে নদীতে।

শীতলক্ষ্যা নদীর সৈয়দপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের মুড়াপাড়া পর্যন্ত ৭০টি উৎসমুখ দিয়ে বর্জ্য নদীতে পড়ছে। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে এসডি ফ্লাওয়ার মিল, সৈয়দপুরে পূবালী সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে প্রিমিয়াম সিমেন্ট, শাহ সিমেন্ট, মেট্রোপলিটন সিমেন্ট, লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিল, র‌্যাক্স নিটওয়্যার, অলরাউন্ড নিটওয়্যার, সোহাগপুর টেক্সটাইল মিলস, প্রীতম ফ্যাশন, ইব্রাহিম টেক্সটাইল, আদমজী ইপিজেড, স্টার পার্টিকেল বোর্ড, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ, কাঁচপুর ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, ডেমরার বেঙ্গল প্যাকেজেস ও মীর সিমেন্টের ড্রেন উল্লেখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠান ড্রেন ও পাইপের মাধ্যমে শিল্প এবং প্রতিদিনের বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে নদী দূষণ করছে। ৮৭টি উৎসমুখ দিয়ে সারফেস ড্রেন, পাইপ ও অন্যান্য মাধ্যমে দূষিত হচ্ছে তুরাগ নদী। এরমধ্যে কামারপাড়ায় কংক্রিট রেডিমিক্স, নিশাদনগরে ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, টঙ্গী বাজার, বেঙ্গল ডাইং অ্যান্ড নিটিং, আইচি হাসপাতাল, আজমিরী গার্মেন্টস, বিসিক, ঢাকা ডাইং, মার্চেন্ট ডাইং, মেহমুদ হোসেন ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড, সার্ফ ফিটিং ওয়াশিং প্লান্ট ও প্যারাডাইস ওয়াশিং প্লান্টের ড্রেন। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ’র ঢাকা নদীবন্দর থেকে ১৮৫টি উৎসমুখ চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এসব উৎসমুখের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় নি বলে বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্র জানায়।

তবে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক সংবাদকে বলেন, ‘শিল্প কারখানার উৎসমুখগুলো বন্ধের দায়িত্ব পরিবেশ অধিদফতরের। আমরা শুধু উৎস মুখগুলো চিহ্নিত করে দিয়েছি। শিল্প কারখানায় ইটিপি ব্যবহার করার বাধ্যকতা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তা করা হয় না। এসব বিষয় নিয়ে টাস্কফোর্স কমিটি কাজ করছে।‘

শনিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২১ , ২৫ পৌষ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

উৎসমুখ তিনশ দূষিত হচ্ছে ঢাকার নদী

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

ঢাকার চারপাশে আছে ৫টি নদী। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু ও ধলেশ্বরী। এক সময় এই ৫টি নদী ঢাকা ও আশপাশ জেলার প্রকৃতি-পরিবেশ, নদী তীরবর্তী কৃষি ও মানুষের জন্য ছিল বড় অবলম্বন। কিন্তু এখন প্রতিদিন এই নদীর পানির দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে তীরের প্রকৃতি। কারণ ঢাকার চারপাশের নদীর তীরে তিনশ’র বেশি উৎসমুখ বা ড্রেন দিয়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩ লাখ কেজি বর্জ্য পড়ে দূষিত হচ্ছে পানি।

সরকারিভাবে ১৮৫টি উৎসমুখ চিহ্নিত করলেও বেসরকারি মতে তা তিনশ’র বেশি। এসব উৎসমুখ বন্ধ করতে ২০০৯ সালে তৎকালীন নৌমন্ত্রীকে সভাপতি করে গঠন করা হয়েছিল টাস্কফোর্স কমিটি। বর্তমানেও টাস্কফোর্স কমিটি সচল আছে। কিন্তু ১২ বছর বা একযুগেও উৎসমুখ বন্ধের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয় নি। তাই কমিটি ও টাস্কফোর্সের মধ্যে আটকে আছে নদী দূষণমুক্ত করার কাজ। নদী দূষণ প্রতিরোধে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিতভাবে কাজ করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

নদীর তীরে ছোট-বড় প্রায় ৭ হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কেজি বা ৩৫০ টন বিষাক্ত বর্জ্য পড়ে নদীর পানিতে। এরমধ্যে ৬০ শতাংশ শিল্প বর্জ্য, ৩০ শতাংশ সিটি করপোরেশন, ওয়াসা ও ইউনিয়ন পরিষদের ড্রেনের বর্র্জ্য, বাকি ১০ শতাংশ গৃহস্থালি ও অন্যান্য বর্জ্য। এর ফলে বুড়িগঙ্গার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ শূন্যের কোটায় মেনে এসেছে। বিষাক্ত পানির কারণে মাছ ও পোকামাকড়সহ কোন প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারছে না।

এভাবে দূষিত হওয়ার কারণে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ১০টি নদীর মধ্যে বুড়িগঙ্গা একটি। এই নদীর পানিতে ক্ষতিকর পদার্থ ক্রোমিয়াম, আয়রন ও জিংকের মতো ভারি ধাতু রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের উদ্ধৃতি দিয়ে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ রোধে একটি কর্মপরিকল্পনার প্রতিবেদনে। তাই বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকা চারপাশের নদীগুলো দূষণমুক্ত করতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করেছে নৌমন্ত্রণালয়।

বিআইডব্লিউটিএ’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ ও ধলেশ্বরী নদী প্রতিদিন মারাত্মক দূষিত হচ্ছে। এই দূষণের ফলে নদীর পানি তার স্বাভাবিক রং হারিয়ে ফেলেছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০০৭ অনুযায়ী, মৎস্য ও জলজ প্রাণীর জন্য প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকা প্রয়োজন ৫ মিলিগ্রাম বা তার বেশি।

কিন্তু বর্তমানে বুড়িগঙ্গার সদরঘাট এলাকায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ শূন্য দশমিক ২৪ মিলিগ্রাম, ধোলাইখালের ফরিদাবাদ এলাকায় আছে শূন্য দশমিক ৭৯ মিলিগ্রাম, শ্যামপুর খালের মুখে আছে শূন্য দশমিক ৯৮ মিলিগ্রাম, পাগলা ওয়াসা ট্রিটমেন্ট প্লান্টে নির্গত ড্রেনের ভাটিকে অক্সিজেন আছে শূন্য দশমিক ৫৬ মিলিগ্রাম, পাগলায় এলাকায় আছে শূন্য দশমিক ৬৩ মিলিগ্রাম, মিটফোর্ড হাসপাতালের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে অক্সিজেন আছে শূন্য দশমিক ২৯ মিলিগ্রাম। এভাবে বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন আছে গাবতলী ব্রিজের নিচে ২ দশমিক ২ মিলিগ্রাম। এছাড়া ঢাকার চারপাশের অন্য নদী তুরাগ, বালি, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ^রীর পানি দূষণের কারণে দ্রবীভূত অক্সিজেন পরিমাণ খুবই কম বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর মো. গোলাম সাদেক সংবাদকে বলেন, নদীর পানি দূষণমুক্ত করার জন্য একটি মেগাপ্রকল্প নিয়ে কাজ করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি। ইতোমধ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকার নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষার জন্য নৌপ্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে টাস্কফোর্স কমিটি কাজ করছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে নদীর ভিতরের বর্জ্য উত্তোলনের জন্য যন্ত্র কেনা হচ্ছে। এর মাধ্যমে নদীর তলদেশের বর্জ্য তোলা হবে বলে জানান তিনি।

ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইডিইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দূষণের জন্য ৩১৬টি উৎসমুখ বা ড্রেন চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব উৎসমুখ ঢাকা ওয়াসা, হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, ট্যানারি, সিমেন্ট কারখানা, ডকইয়ার্ড, গার্মেন্ট কারখানা ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য নদীতে পড়ছে।

আইডিইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুড়িগঙ্গা দূষণ করছে দুই তীরে গড়ে উঠা গার্মেন্টস, ডকইয়ার্ড, হাসপাতাল, লঞ্চ থেকে ফেলা বর্জ্য এবং পোড়া জ্বালানি তেল। সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত দূষণের উৎসমুখ ১০৭টি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ গাবতলী গরুর হাট, আপেল এন্টারপ্রাইজ, বেস টেক লিমিটেড, শাহ সিমেন্ট, এনডিএ, পূর্বাশা কাঁচাবাজার, ট্যানারি, ঢাকা ওয়াসা ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ড্রেন। সদরঘাট থেকে ফতুল্লা বিজি মাউথ পর্যন্ত ৫৭ উৎসমুখ চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা ওয়াসা ২২টি উৎসমুখ থেকে পানি ও বর্জ্য পড়ছে নদীতে।

শীতলক্ষ্যা নদীর সৈয়দপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের মুড়াপাড়া পর্যন্ত ৭০টি উৎসমুখ দিয়ে বর্জ্য নদীতে পড়ছে। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে এসডি ফ্লাওয়ার মিল, সৈয়দপুরে পূবালী সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে প্রিমিয়াম সিমেন্ট, শাহ সিমেন্ট, মেট্রোপলিটন সিমেন্ট, লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিল, র‌্যাক্স নিটওয়্যার, অলরাউন্ড নিটওয়্যার, সোহাগপুর টেক্সটাইল মিলস, প্রীতম ফ্যাশন, ইব্রাহিম টেক্সটাইল, আদমজী ইপিজেড, স্টার পার্টিকেল বোর্ড, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ, কাঁচপুর ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, ডেমরার বেঙ্গল প্যাকেজেস ও মীর সিমেন্টের ড্রেন উল্লেখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠান ড্রেন ও পাইপের মাধ্যমে শিল্প এবং প্রতিদিনের বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে নদী দূষণ করছে। ৮৭টি উৎসমুখ দিয়ে সারফেস ড্রেন, পাইপ ও অন্যান্য মাধ্যমে দূষিত হচ্ছে তুরাগ নদী। এরমধ্যে কামারপাড়ায় কংক্রিট রেডিমিক্স, নিশাদনগরে ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, টঙ্গী বাজার, বেঙ্গল ডাইং অ্যান্ড নিটিং, আইচি হাসপাতাল, আজমিরী গার্মেন্টস, বিসিক, ঢাকা ডাইং, মার্চেন্ট ডাইং, মেহমুদ হোসেন ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড, সার্ফ ফিটিং ওয়াশিং প্লান্ট ও প্যারাডাইস ওয়াশিং প্লান্টের ড্রেন। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ’র ঢাকা নদীবন্দর থেকে ১৮৫টি উৎসমুখ চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এসব উৎসমুখের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় নি বলে বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্র জানায়।

তবে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক সংবাদকে বলেন, ‘শিল্প কারখানার উৎসমুখগুলো বন্ধের দায়িত্ব পরিবেশ অধিদফতরের। আমরা শুধু উৎস মুখগুলো চিহ্নিত করে দিয়েছি। শিল্প কারখানায় ইটিপি ব্যবহার করার বাধ্যকতা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তা করা হয় না। এসব বিষয় নিয়ে টাস্কফোর্স কমিটি কাজ করছে।‘