যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ভাঙচুরকারীদের গ্রেফতার দাবি

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ভাঙচুরকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং সব ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়েছে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সচেতন নাগরিক আয়োজিত সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে। পাশাপাশি কর্মসূচি থেকে সরকারের কাছে পাঁচদফা দাবিও জানানো হয়। গতকাল বিকেলে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ থেকে বক্তারা বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সুঁতিকাগার চট্টগ্রাম সব সময় সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। যাত্রামোহন সেনগুপ্ত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অবিভক্ত ভারত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় দেশের মানুষ ভ্রমণের জন্য যায়। অথচ চট্টগ্রামে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন স্থাপনা থেকেও তা রক্ষা করা হয়নি। বারবার এসব ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলো ভেঙে ফেলার চক্রান্ত হয়েছে। যাত্রামোহন সেনগুপ্তের ঐতিহাসিক বাড়ির সামনের অংশ ভেঙেছে বুলডোজার দিয়ে। সরকারের পক্ষ থেকে তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি উল্লেখ করে সমাবেশ থেকে বলা হয়, নতুন প্রজন্ম কিভাবে জানবে এটা ঐতিহাসিক স্থাপনা? তাদের ইতিহাস ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। যার ফলে মৌলবাদীরা এসবের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস পায়। যারা এসব স্থাপনায় আঘাত করেছে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে ঘটনা তদন্ত করা হোক। একইসঙ্গে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতি সংরক্ষণ করার দাবি জানান বক্তারা।

সাংবাদিক মিন্টু চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম বলেন, আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ির আইনি জটিলতা নিরসনের। এজন্য সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সব স্থাপনাকে আমরা হারিয়ে যেতে দিব না। এই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আমরা তুলে ধরব। অবিলম্বে এ স্থাপনা ভাঙচুরকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এমন স্থাপনা ভাঙচুরকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক। যারা এমন দৃষ্টতা দেখিয়েছে তাদের শাস্তি দেয়া হোক। পাশপাশি এমন স্থাপনাকে সংরক্ষণ করে জাদুঘর করা হোক।

নারীনেত্রী নুর জাহান খান বলেন, চট্টগ্রামের তরুণ সাংবাদিকরা যাত্রামোহন সেনের বাড়ি রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে। এই আন্দোলনটি তারাই পরিচালনা করেছে। চট্টগ্রামের এসব স্মৃতি স্থাপনায় আঘাত করেছে ভূমিদস্যুরা। কত বড় দুঃসাহস তারা দেখিয়েছে, এর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সোচ্চার হতে হবে।

একাত্তরের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নরুল আবছার সংহতি জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের দল সরকারে থাকা অবস্থায় কেন এমন হচ্ছে বারবার। এদেশ সিরিয়া, পাকিস্তান হবে না। যাত্রামোহন সেনের বাড়ি ভাঙচুর করে যে ধৃষ্টতা ভূমিদস্যুরা দেখিয়েছে তার বিচার হতেই হবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এ নিয়ে আন্দোলনে রাজপথে থাকব।

খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, লালন ভাস্কর্য ভেঙেছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে, এসবে প্রশ্রয় পেয়েছে বলে এবার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিধন্য যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ির ওপর আঘাত এসেছে। আগের ঘটনাগুলোর সঙ্গে আপস হয়েছে বলে ভূমিদস্যুরা এ সুযোগ পেয়েছে। তিনি অপরাধের সঙ্গে যুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ভূমিদস্যুরা প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এই ভাঙচুর চালিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এসব স্মৃতিচিহ্ন ঐতিহ্য এবং বধ্যভূমি রক্ষা করতে হবে, দেশকে বাঁচাতে হবে। সম্মিলিতভাবে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষা করতে হবে।

সমাবেশে খেলাঘর কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, সংবিধান মানুষের জন্য, যারা সংবিধান মানে না তারা পশু। মুক্তিযুদ্ধের সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সংবিধানবিরোধী এমন কর্মকা- মানা যায় না। দেশে গণতন্ত্র আছে বলা হলেও এখানে চলছে লুটপাট। আর লুটপাট ও সুশাসন এক সঙ্গে চলে না। আমরা জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও যাত্রামোহন সেনের বাড়ি রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যাব। এই বাড়িটি সংরক্ষণ করতে হবে।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক উত্তম চৌধুরী, জামাল খান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, উদীচীর সংগঠক শীলা দাশগুপ্তা, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাসান, ন্যাপনেতা মিটুল দাশগুপ্ত, সিপিবি চট্টগ্রামের নারী সেলের আহ্বায়ক রেখা চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওমর ফারুক রাসেল, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের টিভি ইউনিটের প্রধান মাসুদুল হক, চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান সাংবাদিক আলীউর রহমান, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিঞ্চন ভৌমিক, বোধন আবৃত্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী, কবি ও সাংবাদিক আহমেদ মুনীর চৌধুরী, ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী।

বিপ্লবীদের স্মৃতিধন্য স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো সংরক্ষণের দাবি নিয়ে নাগরিকদের পদযাত্রা নগরীর রহমতগঞ্জে যাত্রামোহন সেনগুপ্তর বাড়ির সামনে গিয়ে কমর্সূচি সমাপ্ত করেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অশোক সাহা। কর্মসূচিতে সংহতি জানায় মহিলা পরিষদ, খেলাঘর, ছাত্র ইউনিয়ন, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, নাট্য সংগঠন ফেইম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ অসংখ্য সংগঠন।

নাগরিক সমাবেশ থেকে ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষা এবং তা সংরক্ষণসহ পাঁচদফা দাবি ঘোষণা করেন সাংবাদিক প্রীতম দাশ। দাবিগুলো হলোÑ ১. যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ভাঙচুরকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ২. দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন  সেনগুপ্তের ঐতিহাসিক বাড়িসহ সম্পত্তি সরকারি অধিগ্রহণ এবং সেখান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাদুঘর স্থাপন করতে হবে এবং সেখানে অতীতের সব লিজ/ইজারা বাতিল করতে হবে। ৩. ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনা সংরক্ষণ করতে হবে। ৪. মাস্টার দা সূর্যসেনসহ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সব যোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সড়কের নামকরণ করতে হবে এবং পাঠ্যপুস্তকে বিপ্লবী কর্মকা-ের সঠিক ইতিহাস যুক্ত করতে হবে। ৫. ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্ম ও মৃত্যুদিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে।

শনিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২১ , ২৫ পৌষ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ভাঙচুরকারীদের গ্রেফতার দাবি

চট্টগ্রাম ব্যুরো

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ভাঙচুরকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং সব ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়েছে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সচেতন নাগরিক আয়োজিত সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে। পাশাপাশি কর্মসূচি থেকে সরকারের কাছে পাঁচদফা দাবিও জানানো হয়। গতকাল বিকেলে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ থেকে বক্তারা বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সুঁতিকাগার চট্টগ্রাম সব সময় সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। যাত্রামোহন সেনগুপ্ত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অবিভক্ত ভারত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় দেশের মানুষ ভ্রমণের জন্য যায়। অথচ চট্টগ্রামে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন স্থাপনা থেকেও তা রক্ষা করা হয়নি। বারবার এসব ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলো ভেঙে ফেলার চক্রান্ত হয়েছে। যাত্রামোহন সেনগুপ্তের ঐতিহাসিক বাড়ির সামনের অংশ ভেঙেছে বুলডোজার দিয়ে। সরকারের পক্ষ থেকে তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি উল্লেখ করে সমাবেশ থেকে বলা হয়, নতুন প্রজন্ম কিভাবে জানবে এটা ঐতিহাসিক স্থাপনা? তাদের ইতিহাস ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। যার ফলে মৌলবাদীরা এসবের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস পায়। যারা এসব স্থাপনায় আঘাত করেছে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে ঘটনা তদন্ত করা হোক। একইসঙ্গে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতি সংরক্ষণ করার দাবি জানান বক্তারা।

সাংবাদিক মিন্টু চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম বলেন, আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ির আইনি জটিলতা নিরসনের। এজন্য সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সব স্থাপনাকে আমরা হারিয়ে যেতে দিব না। এই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আমরা তুলে ধরব। অবিলম্বে এ স্থাপনা ভাঙচুরকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এমন স্থাপনা ভাঙচুরকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক। যারা এমন দৃষ্টতা দেখিয়েছে তাদের শাস্তি দেয়া হোক। পাশপাশি এমন স্থাপনাকে সংরক্ষণ করে জাদুঘর করা হোক।

নারীনেত্রী নুর জাহান খান বলেন, চট্টগ্রামের তরুণ সাংবাদিকরা যাত্রামোহন সেনের বাড়ি রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে। এই আন্দোলনটি তারাই পরিচালনা করেছে। চট্টগ্রামের এসব স্মৃতি স্থাপনায় আঘাত করেছে ভূমিদস্যুরা। কত বড় দুঃসাহস তারা দেখিয়েছে, এর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সোচ্চার হতে হবে।

একাত্তরের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নরুল আবছার সংহতি জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের দল সরকারে থাকা অবস্থায় কেন এমন হচ্ছে বারবার। এদেশ সিরিয়া, পাকিস্তান হবে না। যাত্রামোহন সেনের বাড়ি ভাঙচুর করে যে ধৃষ্টতা ভূমিদস্যুরা দেখিয়েছে তার বিচার হতেই হবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এ নিয়ে আন্দোলনে রাজপথে থাকব।

খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, লালন ভাস্কর্য ভেঙেছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে, এসবে প্রশ্রয় পেয়েছে বলে এবার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিধন্য যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ির ওপর আঘাত এসেছে। আগের ঘটনাগুলোর সঙ্গে আপস হয়েছে বলে ভূমিদস্যুরা এ সুযোগ পেয়েছে। তিনি অপরাধের সঙ্গে যুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ভূমিদস্যুরা প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এই ভাঙচুর চালিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এসব স্মৃতিচিহ্ন ঐতিহ্য এবং বধ্যভূমি রক্ষা করতে হবে, দেশকে বাঁচাতে হবে। সম্মিলিতভাবে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষা করতে হবে।

সমাবেশে খেলাঘর কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, সংবিধান মানুষের জন্য, যারা সংবিধান মানে না তারা পশু। মুক্তিযুদ্ধের সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সংবিধানবিরোধী এমন কর্মকা- মানা যায় না। দেশে গণতন্ত্র আছে বলা হলেও এখানে চলছে লুটপাট। আর লুটপাট ও সুশাসন এক সঙ্গে চলে না। আমরা জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও যাত্রামোহন সেনের বাড়ি রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যাব। এই বাড়িটি সংরক্ষণ করতে হবে।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক উত্তম চৌধুরী, জামাল খান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, উদীচীর সংগঠক শীলা দাশগুপ্তা, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাসান, ন্যাপনেতা মিটুল দাশগুপ্ত, সিপিবি চট্টগ্রামের নারী সেলের আহ্বায়ক রেখা চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওমর ফারুক রাসেল, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের টিভি ইউনিটের প্রধান মাসুদুল হক, চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান সাংবাদিক আলীউর রহমান, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিঞ্চন ভৌমিক, বোধন আবৃত্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী, কবি ও সাংবাদিক আহমেদ মুনীর চৌধুরী, ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী।

বিপ্লবীদের স্মৃতিধন্য স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো সংরক্ষণের দাবি নিয়ে নাগরিকদের পদযাত্রা নগরীর রহমতগঞ্জে যাত্রামোহন সেনগুপ্তর বাড়ির সামনে গিয়ে কমর্সূচি সমাপ্ত করেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অশোক সাহা। কর্মসূচিতে সংহতি জানায় মহিলা পরিষদ, খেলাঘর, ছাত্র ইউনিয়ন, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, নাট্য সংগঠন ফেইম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ অসংখ্য সংগঠন।

নাগরিক সমাবেশ থেকে ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষা এবং তা সংরক্ষণসহ পাঁচদফা দাবি ঘোষণা করেন সাংবাদিক প্রীতম দাশ। দাবিগুলো হলোÑ ১. যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ভাঙচুরকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ২. দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন  সেনগুপ্তের ঐতিহাসিক বাড়িসহ সম্পত্তি সরকারি অধিগ্রহণ এবং সেখান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাদুঘর স্থাপন করতে হবে এবং সেখানে অতীতের সব লিজ/ইজারা বাতিল করতে হবে। ৩. ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনা সংরক্ষণ করতে হবে। ৪. মাস্টার দা সূর্যসেনসহ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সব যোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সড়কের নামকরণ করতে হবে এবং পাঠ্যপুস্তকে বিপ্লবী কর্মকা-ের সঠিক ইতিহাস যুক্ত করতে হবে। ৫. ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্ম ও মৃত্যুদিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে।