যে শহরে ভোর হয় পাখির কিচির মিচির শব্দে

পাখির শহর রাজশাহী। এই শহরে ভোর হয় পাখির কিচিরমিচির শব্দে। প্রতিটি সন্ধ্যাও নামে পাখির এমন কলতানে। ভোর থেকে সন্ধ্যা মাথার ওপর উড়ে যাচ্ছে হাজারো শামুক খোল, পানকৌড়ি ও নিশি বক; যা সৃষ্টি করেছে এক মনোরম দৃশ্যের। কেউ ছুটছে খাবার সংগ্রহ করতে, কেউ বা গাছের ছোট-ছোট ডাল ছিঁড়ে আনছে বাসা বাননোর জন্য। আবার কেউ বা তৈরি করা বাসায় ও গাছের ডালে বসে খুনসুটি করছে।

রাজশাহীর মানুষের ভালোবাসায় শীত চলে গেলেও ওরা আর বাড়ি ফেরে না। শান্তির শহর রাজশাহী এখন ওদের স্থায়ী আবাস স্থল। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, টেকনিক্যালি ট্রেনিং সেন্টার রাজশাহী ও ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সেস এলাকায় এমন কোন গাছ নেই যেখানে পাখিরা এসে বাসা বাঁধেনি। এমনকি, রাস্তার ডিভাইডারের ছোট গাছগুলোতেও বাসা বেঁধে শত শত শামুক খোল পাখি।

রাজশাহীর ‘সেভ দ্য নেচার অ্যান্ড লাইফ’ এর প্রতিষ্ঠাতা মিজানুর রহমান বলেন, গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরেই এই পাখিগুলো প্রথমে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় প্রজনন করে আসছে। কিন্তু, বছর খানেক আগে কারা-প্রাচীর নির্মাণের জন্য কয়েকটি বড় বড় গাছ কেটে ফেলে কর্তৃপক্ষ। যে কারণে এ বছর অনেক পাখি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এলাকায় ছোট-বড় গাছে আশ্রয় নিয়েছে। গত তিন বছর ধরেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় পাখিরা প্রজনন করছে। তবে এ বছর এখানে পাখির সংখ্যা বেশি বলে জানান তিনি। শুধু রাজশাহীর গাছগুলোতেই পাখির বসবাস করেনা, শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাজশাহীর পদ্মা নদীর ৩৯ কিলোমিটার এলাকায় ৪১ প্রজাতির মোট ২৭০৯টি জলচর পাখি পাওয়া গেছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ পাওয়া গেছে ৫৭৭টি প্রিয়ং হাঁস। বিরল প্রজাতির পাখির মধ্যে আছে কালো মানিকজোড় ও একটি ফুলুরি হাঁস। পদ্মানদীর বিশাল চরে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এ বছরের জলচর পাখিশুমারি। প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংঘ আইইউসিএন বাংলাদেশের ওয়াইল্ড বার্ড মনিটরিং প্রোগ্রাম ও সুইডেনের লিনিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে সোমবার থেকে পাখিশুমারি শুরু হয়েছে। আইইউসিএন বাংলাদেশ প্রতি বছর পাখিশুমারি করে। পাখিশুমারিতে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ বার্ডক্লাব, রাজশাহী বার্ডক্লাব ও বন অধিদফতরের সদস্যরা।

রাজশাহীর পদ্মা নদীর প্রায় ৩৯ কিলোমিটার অংশে পাখিশুমারি করা হয়েছে। রাজশাহীতে পদ্মা নদীর চর খানপুর থেকে শুরু করে মাঝারদিয়াড় চর পর্যন্ত শুমারির কাজ চালানো হয়। আগামী এক সপ্তাহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাখিশুমারি চলবে। বছর শেষে ওয়েটল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সংস্থা থেকে পাখিশুমারির ফল প্রকাশ করা হবে। আইইউসিএন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম কর্মকর্তা সরোয়ার আলম দিপু জানান, এ বছর পদ্মা নদীতে পরিযায়ী পাখির প্রজাতি বাড়লেও পাখির সংখ্যা কম। গত বছরের শুমারিতে পদ্মা নদীর ওই এলাকায় ৩৭ প্রজাতির মোট ৪০২৫টি পাখি গণনা করা হয়েছিল।

শনিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২১ , ২৫ পৌষ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

যে শহরে ভোর হয় পাখির কিচির মিচির শব্দে

সুব্রতদাস, রাজশাহী

পাখির শহর রাজশাহী। এই শহরে ভোর হয় পাখির কিচিরমিচির শব্দে। প্রতিটি সন্ধ্যাও নামে পাখির এমন কলতানে। ভোর থেকে সন্ধ্যা মাথার ওপর উড়ে যাচ্ছে হাজারো শামুক খোল, পানকৌড়ি ও নিশি বক; যা সৃষ্টি করেছে এক মনোরম দৃশ্যের। কেউ ছুটছে খাবার সংগ্রহ করতে, কেউ বা গাছের ছোট-ছোট ডাল ছিঁড়ে আনছে বাসা বাননোর জন্য। আবার কেউ বা তৈরি করা বাসায় ও গাছের ডালে বসে খুনসুটি করছে।

রাজশাহীর মানুষের ভালোবাসায় শীত চলে গেলেও ওরা আর বাড়ি ফেরে না। শান্তির শহর রাজশাহী এখন ওদের স্থায়ী আবাস স্থল। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, টেকনিক্যালি ট্রেনিং সেন্টার রাজশাহী ও ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সেস এলাকায় এমন কোন গাছ নেই যেখানে পাখিরা এসে বাসা বাঁধেনি। এমনকি, রাস্তার ডিভাইডারের ছোট গাছগুলোতেও বাসা বেঁধে শত শত শামুক খোল পাখি।

রাজশাহীর ‘সেভ দ্য নেচার অ্যান্ড লাইফ’ এর প্রতিষ্ঠাতা মিজানুর রহমান বলেন, গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরেই এই পাখিগুলো প্রথমে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় প্রজনন করে আসছে। কিন্তু, বছর খানেক আগে কারা-প্রাচীর নির্মাণের জন্য কয়েকটি বড় বড় গাছ কেটে ফেলে কর্তৃপক্ষ। যে কারণে এ বছর অনেক পাখি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এলাকায় ছোট-বড় গাছে আশ্রয় নিয়েছে। গত তিন বছর ধরেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় পাখিরা প্রজনন করছে। তবে এ বছর এখানে পাখির সংখ্যা বেশি বলে জানান তিনি। শুধু রাজশাহীর গাছগুলোতেই পাখির বসবাস করেনা, শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাজশাহীর পদ্মা নদীর ৩৯ কিলোমিটার এলাকায় ৪১ প্রজাতির মোট ২৭০৯টি জলচর পাখি পাওয়া গেছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ পাওয়া গেছে ৫৭৭টি প্রিয়ং হাঁস। বিরল প্রজাতির পাখির মধ্যে আছে কালো মানিকজোড় ও একটি ফুলুরি হাঁস। পদ্মানদীর বিশাল চরে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এ বছরের জলচর পাখিশুমারি। প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংঘ আইইউসিএন বাংলাদেশের ওয়াইল্ড বার্ড মনিটরিং প্রোগ্রাম ও সুইডেনের লিনিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে সোমবার থেকে পাখিশুমারি শুরু হয়েছে। আইইউসিএন বাংলাদেশ প্রতি বছর পাখিশুমারি করে। পাখিশুমারিতে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ বার্ডক্লাব, রাজশাহী বার্ডক্লাব ও বন অধিদফতরের সদস্যরা।

রাজশাহীর পদ্মা নদীর প্রায় ৩৯ কিলোমিটার অংশে পাখিশুমারি করা হয়েছে। রাজশাহীতে পদ্মা নদীর চর খানপুর থেকে শুরু করে মাঝারদিয়াড় চর পর্যন্ত শুমারির কাজ চালানো হয়। আগামী এক সপ্তাহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাখিশুমারি চলবে। বছর শেষে ওয়েটল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সংস্থা থেকে পাখিশুমারির ফল প্রকাশ করা হবে। আইইউসিএন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম কর্মকর্তা সরোয়ার আলম দিপু জানান, এ বছর পদ্মা নদীতে পরিযায়ী পাখির প্রজাতি বাড়লেও পাখির সংখ্যা কম। গত বছরের শুমারিতে পদ্মা নদীর ওই এলাকায় ৩৭ প্রজাতির মোট ৪০২৫টি পাখি গণনা করা হয়েছিল।