চার মাসে দ্বিগুণ ভোজ্যতেলের দাম

করোনা মহামারীর মধ্যে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছে হু হু করে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত চার মাসে এই নিত্যপণ্যটির দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। এ সময় বাংলাদেশের বাজরে গড়ে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে ৫৬.২৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বর মাসে প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা, এখন এই তেল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা। একই অবস্থা পাম তেলের ক্ষেত্রেও। সেপ্টেম্বরে যেখানে প্রতি কেজি সুপার পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা দরে। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা দরে। এতে বেকায়দায় পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।

এদিকে দেশে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তেল ব্যবসায়ীরা। তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লিটারপ্রতি দাম ১৫ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করাসহ ভোজ্য তেলে তিন স্তরের ভ্যাটের পরিবর্তে এক স্তরের ভ্যাট নির্ধারণের জন্য চিঠি দিয়েছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে। চলতি মাসের শেষে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক হবে বলে জানা গেছে।

গত শনিবার রাজধানীর সূত্রাপুর, রায়সাহেব বাজার, শ্যামবাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল ১২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকায়। এক কেজি লুজ পাম অয়েল ৯৮ টাকা এবং সুপার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। গত সেপ্টেম্বর মাসেও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই তেল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। অর্থাৎ গত চার মাসে প্রতি কেজি সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৫ টাকা। অন্যদিকে, খোলা পাম তেলের অবস্থাও একই রকম। গত সেপ্টেম্বরে খোলা সুপার পাম তেলে বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। সেই হিসাবে গত চার মাসে সুপার পামের দাম বেড়েছে ৪৫ টাকা। আর গত চার মাসে সব ধরনের তেলের দাম বেড়েছে ৫৬ দশিমক ২৫ শতাংশ।

বর্তমানে পাইকারিতে মৌলভীবাজারে প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৪০০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ১১৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল চার হাজার ২০০ টাকা মণ বা প্রতি কেজি ১১২ টাকা। সয়াবিনের মতো পাম তেলের দামও বেড়েছে। পাইকারিতে পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৯০০ টাকা মণ, প্রতি কেজি ১০৪ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৮০০ টাকা মণ, প্রতি কেজি ১০১ টাকা।

আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও বাজার বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহের আমদানিমূল্যের সঙ্গে সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্স, পরিশোধন ও বিপণন খরচ যোগ করলে বর্তমানে প্রতি লিটার সয়াবিন বোতলজাতকরণ পর্যন্ত খরচ পড়ে ১৩২ টাকা। বাজারে এখন যে দামে ভোজ্যতেল (সয়াবিন ও পাম) বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহের আমদানিমূল্য ধরে বিক্রি করলে খুচরা মূল্য আরও বেশি হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক বাজারের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোয় ভোজ্য তেলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা পরিশোধনকারীদের। এজন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ঊর্ধ্বমুখী ধারা বিবেচনা করে সম্প্রতি প্রতি লিটার ভোজ্য তেলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণসহ তিন স্তরের ভ্যাট থেকে এক স্তরে নামিয়ে আনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু ওই চিঠির পর আন্তর্জাতিক বাজারে আরও কয়েক দফা বেড়েছে পণ্যটির দাম।

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারেও দাম বেড়েছে। তবে এর সঙ্গে শুধু আন্তর্জাতিক বাজার নয়, আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় একটু সমস্যা রয়েছে। যেমন মিলগেট থেকে খোলা তেল খুচরা বাজারে আসতে অনেকগুলো হাত বদল হয়। এতে দামে কিছুটা বাড়ে। এ বিষয়ে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসব। তেলটা সম্পূর্ণ আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। আমরা ভ্যাটের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বলেছি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। আমাদের রাজস্বও লাগবে, আবার ভোক্তাদের কম দামেও পণ্য দিতে হবে। আশা করছি তেলের দাম কমে যাবে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশেও (ক্যাব) বলছে, ভোজ্যতেলের মতো একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে তিন স্তরে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট যৌক্তিক নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে করকাঠামো পুনর্বিবেচনা করা দরকার। তাহলে দামের রাশ কিছুটা টানা সম্ভব হতো। এতে ভোক্তারাও একটু স্বস্তি পেতো।

সোমবার, ১১ জানুয়ারী ২০২১ , ২৭ পৌষ ১৪২৭, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

চার মাসে দ্বিগুণ ভোজ্যতেলের দাম

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

করোনা মহামারীর মধ্যে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছে হু হু করে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত চার মাসে এই নিত্যপণ্যটির দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। এ সময় বাংলাদেশের বাজরে গড়ে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে ৫৬.২৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বর মাসে প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা, এখন এই তেল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা। একই অবস্থা পাম তেলের ক্ষেত্রেও। সেপ্টেম্বরে যেখানে প্রতি কেজি সুপার পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা দরে। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা দরে। এতে বেকায়দায় পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।

এদিকে দেশে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তেল ব্যবসায়ীরা। তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লিটারপ্রতি দাম ১৫ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করাসহ ভোজ্য তেলে তিন স্তরের ভ্যাটের পরিবর্তে এক স্তরের ভ্যাট নির্ধারণের জন্য চিঠি দিয়েছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে। চলতি মাসের শেষে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক হবে বলে জানা গেছে।

গত শনিবার রাজধানীর সূত্রাপুর, রায়সাহেব বাজার, শ্যামবাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল ১২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকায়। এক কেজি লুজ পাম অয়েল ৯৮ টাকা এবং সুপার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। গত সেপ্টেম্বর মাসেও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই তেল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। অর্থাৎ গত চার মাসে প্রতি কেজি সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৫ টাকা। অন্যদিকে, খোলা পাম তেলের অবস্থাও একই রকম। গত সেপ্টেম্বরে খোলা সুপার পাম তেলে বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। সেই হিসাবে গত চার মাসে সুপার পামের দাম বেড়েছে ৪৫ টাকা। আর গত চার মাসে সব ধরনের তেলের দাম বেড়েছে ৫৬ দশিমক ২৫ শতাংশ।

বর্তমানে পাইকারিতে মৌলভীবাজারে প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৪০০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ১১৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল চার হাজার ২০০ টাকা মণ বা প্রতি কেজি ১১২ টাকা। সয়াবিনের মতো পাম তেলের দামও বেড়েছে। পাইকারিতে পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৯০০ টাকা মণ, প্রতি কেজি ১০৪ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৮০০ টাকা মণ, প্রতি কেজি ১০১ টাকা।

আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও বাজার বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহের আমদানিমূল্যের সঙ্গে সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্স, পরিশোধন ও বিপণন খরচ যোগ করলে বর্তমানে প্রতি লিটার সয়াবিন বোতলজাতকরণ পর্যন্ত খরচ পড়ে ১৩২ টাকা। বাজারে এখন যে দামে ভোজ্যতেল (সয়াবিন ও পাম) বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহের আমদানিমূল্য ধরে বিক্রি করলে খুচরা মূল্য আরও বেশি হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক বাজারের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোয় ভোজ্য তেলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা পরিশোধনকারীদের। এজন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ঊর্ধ্বমুখী ধারা বিবেচনা করে সম্প্রতি প্রতি লিটার ভোজ্য তেলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণসহ তিন স্তরের ভ্যাট থেকে এক স্তরে নামিয়ে আনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু ওই চিঠির পর আন্তর্জাতিক বাজারে আরও কয়েক দফা বেড়েছে পণ্যটির দাম।

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারেও দাম বেড়েছে। তবে এর সঙ্গে শুধু আন্তর্জাতিক বাজার নয়, আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় একটু সমস্যা রয়েছে। যেমন মিলগেট থেকে খোলা তেল খুচরা বাজারে আসতে অনেকগুলো হাত বদল হয়। এতে দামে কিছুটা বাড়ে। এ বিষয়ে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসব। তেলটা সম্পূর্ণ আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। আমরা ভ্যাটের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বলেছি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। আমাদের রাজস্বও লাগবে, আবার ভোক্তাদের কম দামেও পণ্য দিতে হবে। আশা করছি তেলের দাম কমে যাবে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশেও (ক্যাব) বলছে, ভোজ্যতেলের মতো একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে তিন স্তরে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট যৌক্তিক নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে করকাঠামো পুনর্বিবেচনা করা দরকার। তাহলে দামের রাশ কিছুটা টানা সম্ভব হতো। এতে ভোক্তারাও একটু স্বস্তি পেতো।