কৃৃষিবান্ধব সরকারের দেয়া প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচি পীরগাছায় ১৫ ভাগও বাস্তবায়ন নেই। পীরগাছার কৃষিকর্তাদের প্রায় প্রতিদিনই মাঠ পরিদর্শনসহ কৃষকদের পরামর্শের কথা বলে বেড়ালেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১২টি ফসলের প্রণোদনা ও পুনর্বাসন সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। প্রণোদনা ও পুনর্বাসন এরজন্য দেয়া ফসলগুলো যথাসময়ে বপন বা রোপণ করা হচ্ছে না। সঠিক পরামর্শের অভাবে যথাসময়ে ফসল বপন বা রোপণ না করায় পীরগাছার কৃষি ও কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষিবিদরা। যার প্রভাব পীরগাছাসহ সারাদেশে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষঙ্গগণ। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে প্রণোদনা সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ২ শত ১০ জন ও পুনর্বাসন সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৫ শত জন। ৭নং পীরগাছা সদর ইউনিয়নে প্রণোদনা সুবিধাভোগী ভুট্টায় ১০৩, ধানে ৬৭, চীনাবাদামে ২, পিয়াজে ৩, মরিচে ৭৮ মোট ২৫৩ জন। একই ইউনিয়নে পুনর্বাসন সুবিধাভোগী খেশারি ডালে ৪৭, মসুর ডালে ৪৭, গমে ৭৮, বাদামে ৩২, সরিষায় ৭৮, টমেটোয় ৭৮, সূর্যমুখীতে ৩২ মোট ৩৯২ জন। সদর ইউনিয়নে সুবিধাভোগী ৬৪৫ জন কৃষকের মধ্যে অধিকাংশ কৃষকের জমি নেই বা কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। অথচ অনেকের জমি আছে, সরাসরি তারা কৃষি ফসল উৎপাদন করেন, এ রকম অনেক কৃষক এই সুবিধার আওতায় নেই।
এ রকম একজন আদর্শ কৃষক ইউনিয়নের পিয়ার পাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদ তার কৃষি জমি ৩ একর ৭৪ শতাংশ। তিনি চলতি মৌসুমে ভুট্টা করেছেন ২ একর ৮৬ শতাংশ ও আলু করেছেন ১ একর ৪৩ শতাংশ জমিতে। এ রকম একজন কৃষককে উপজেলা কৃষি অফিস প্রণোদনা ও পুনর্বাসনসহ যেকোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছেন। কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাকে কৃষি বিষয়ক পরামর্শ পর্যন্ত দিচ্ছেন না।
একইভাবে পীরগাছা সরদার পাড়া গ্রামের পুনর্বাসন সুবিধাভোগী কৃষক সফল গাভী খামারি আবুল হোসেন বলেন, আমাকে খেশারি ডাল দিয়েছে কৃষি অফিস যাহা বপন করার জায়গা আমার নেই। এ জন্য আমি এই খেশারি ডাল আগামী রমজানের ইফতারিতে খাব। ৪৭ জন খেশারি ডাল সুবিধা ভোগীদের মধ্যে মাত্র ১ জন গুড্ডি বাবলু খেশারি বপন করলেও যথাসময়ে বপন না করে গত ২৮শে ডিসেম্বর/২০ বপন করেছেন।
বাদাম, টমেটো, চিনা বাদাম, মরিচ ও মসুর ডাল উৎপাদন ৭নং পীরগাছা ইউনিয়নে নেই বললেই চলে।এই প্রণোদনা ও পুনর্বাসনকে কেন্দ্র করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অভিনাশকে যে কোন একটি ফসল দেখানোর জন্য সংবাদ প্রতিনিধি অনুরোধ করলে তিনি দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কর্মসূচী বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, খেশারী, মসুর, টমেটো আমার জানা মতে বাস্তবায়ন হয়নি। বাদাম ৩২ জনের মধ্যে মাত্র ২ জন করেছেন। তালিকাগুলো চেয়ারম্যান ও মেম্বার করায় একটু সমস্যা হয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীগণ কৃষি অফিসে কৃষি সংশ্লিষ্ট কোন তথ্য উপাত্ত চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার শামিমুর রহমান খুব সুন্দর গল্পগুজব করে সময় ক্ষেপণ করেন। কিন্তু কোন তথ্য দেন না। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের তাদের ভালো কাজগুলোকে নিয়ে সংবাদ পরিবেশন এবং অনিয়মগুলো না দেখার জন্য অনুরোধ করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তালিকা করায় অনিয়ম হয়েছে। স্থানীয় কৃষিবিদ দেবী চৌধুরানী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আফজাল হোসেন বলেন, ফসলের জীবনকাল সঠিক না হলে যথাযথ ফসল উৎপাদন হবে না। ফসল উৎপাদনের হার কমে আসবে। প্রভাব পড়বে কৃষির ওপর, কৃষকের ওপর ও আমাদের দেশের ওপর। দেশ খাদ্য ঘাটতিতে ভুগবে।
সোমবার, ১১ জানুয়ারী ২০২১ , ২৭ পৌষ ১৪২৭, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
প্রতিনিধি, পীরগাছা (রংপুর)
কৃৃষিবান্ধব সরকারের দেয়া প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচি পীরগাছায় ১৫ ভাগও বাস্তবায়ন নেই। পীরগাছার কৃষিকর্তাদের প্রায় প্রতিদিনই মাঠ পরিদর্শনসহ কৃষকদের পরামর্শের কথা বলে বেড়ালেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১২টি ফসলের প্রণোদনা ও পুনর্বাসন সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। প্রণোদনা ও পুনর্বাসন এরজন্য দেয়া ফসলগুলো যথাসময়ে বপন বা রোপণ করা হচ্ছে না। সঠিক পরামর্শের অভাবে যথাসময়ে ফসল বপন বা রোপণ না করায় পীরগাছার কৃষি ও কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষিবিদরা। যার প্রভাব পীরগাছাসহ সারাদেশে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষঙ্গগণ। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে প্রণোদনা সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ২ শত ১০ জন ও পুনর্বাসন সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৫ শত জন। ৭নং পীরগাছা সদর ইউনিয়নে প্রণোদনা সুবিধাভোগী ভুট্টায় ১০৩, ধানে ৬৭, চীনাবাদামে ২, পিয়াজে ৩, মরিচে ৭৮ মোট ২৫৩ জন। একই ইউনিয়নে পুনর্বাসন সুবিধাভোগী খেশারি ডালে ৪৭, মসুর ডালে ৪৭, গমে ৭৮, বাদামে ৩২, সরিষায় ৭৮, টমেটোয় ৭৮, সূর্যমুখীতে ৩২ মোট ৩৯২ জন। সদর ইউনিয়নে সুবিধাভোগী ৬৪৫ জন কৃষকের মধ্যে অধিকাংশ কৃষকের জমি নেই বা কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। অথচ অনেকের জমি আছে, সরাসরি তারা কৃষি ফসল উৎপাদন করেন, এ রকম অনেক কৃষক এই সুবিধার আওতায় নেই।
এ রকম একজন আদর্শ কৃষক ইউনিয়নের পিয়ার পাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদ তার কৃষি জমি ৩ একর ৭৪ শতাংশ। তিনি চলতি মৌসুমে ভুট্টা করেছেন ২ একর ৮৬ শতাংশ ও আলু করেছেন ১ একর ৪৩ শতাংশ জমিতে। এ রকম একজন কৃষককে উপজেলা কৃষি অফিস প্রণোদনা ও পুনর্বাসনসহ যেকোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছেন। কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাকে কৃষি বিষয়ক পরামর্শ পর্যন্ত দিচ্ছেন না।
একইভাবে পীরগাছা সরদার পাড়া গ্রামের পুনর্বাসন সুবিধাভোগী কৃষক সফল গাভী খামারি আবুল হোসেন বলেন, আমাকে খেশারি ডাল দিয়েছে কৃষি অফিস যাহা বপন করার জায়গা আমার নেই। এ জন্য আমি এই খেশারি ডাল আগামী রমজানের ইফতারিতে খাব। ৪৭ জন খেশারি ডাল সুবিধা ভোগীদের মধ্যে মাত্র ১ জন গুড্ডি বাবলু খেশারি বপন করলেও যথাসময়ে বপন না করে গত ২৮শে ডিসেম্বর/২০ বপন করেছেন।
বাদাম, টমেটো, চিনা বাদাম, মরিচ ও মসুর ডাল উৎপাদন ৭নং পীরগাছা ইউনিয়নে নেই বললেই চলে।এই প্রণোদনা ও পুনর্বাসনকে কেন্দ্র করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অভিনাশকে যে কোন একটি ফসল দেখানোর জন্য সংবাদ প্রতিনিধি অনুরোধ করলে তিনি দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কর্মসূচী বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, খেশারী, মসুর, টমেটো আমার জানা মতে বাস্তবায়ন হয়নি। বাদাম ৩২ জনের মধ্যে মাত্র ২ জন করেছেন। তালিকাগুলো চেয়ারম্যান ও মেম্বার করায় একটু সমস্যা হয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীগণ কৃষি অফিসে কৃষি সংশ্লিষ্ট কোন তথ্য উপাত্ত চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার শামিমুর রহমান খুব সুন্দর গল্পগুজব করে সময় ক্ষেপণ করেন। কিন্তু কোন তথ্য দেন না। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের তাদের ভালো কাজগুলোকে নিয়ে সংবাদ পরিবেশন এবং অনিয়মগুলো না দেখার জন্য অনুরোধ করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তালিকা করায় অনিয়ম হয়েছে। স্থানীয় কৃষিবিদ দেবী চৌধুরানী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আফজাল হোসেন বলেন, ফসলের জীবনকাল সঠিক না হলে যথাযথ ফসল উৎপাদন হবে না। ফসল উৎপাদনের হার কমে আসবে। প্রভাব পড়বে কৃষির ওপর, কৃষকের ওপর ও আমাদের দেশের ওপর। দেশ খাদ্য ঘাটতিতে ভুগবে।