বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালেও পরিস্থিতির উন্নতি
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কমছে করোনা সংক্রমণ। মৃত্যুর সংখ্যাও কমছে, বাড়ছে সুস্থতার হার। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে একযোগে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। শীতের শুরুতে অর্থাৎ গত ডিসেম্বরে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতির যে ধরনের অবনতির আশঙ্কা করেছিলেন, সেভাবে সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপ হয়নি। পরিস্থিতির ধারাবাহিক উন্নতি হচ্ছে। শীত মৌসুমও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
বর্তমানে দেশে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি নেমেছে, ভারতেও তা দুই শতাংশের কাছকাছি। পাকিস্তানে গত জুনে শনাক্তের হার যেখানে ছিল ১৬ থেকে ১৭ শতাংশের কাছাকাছি, সেখানে বর্তমানে শনাক্তের হার ছয় শতাংশের কাকাছি। আর নেপালে গত এক সপ্তাহে করোনার প্রকোপ ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই নিম্নমুখী হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃত্যুর সংখ্যা কমছে, সংক্রমণ শনাক্তের হার নিচে নামছে, এর বিপরীতে সুস্থতার হার বাড়ছে। এটা ভালো খবর। কিন্তু সারাবিশে^ করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলেও এই অঞ্চলে করোনার বিপরীতমুখী চিত্র কেন- তা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। গবেষণার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নিতে হবে। অন্যথায় করোনার প্রকোপ পুনরায় বেড়ে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদকার আন্দোলন সর্ম্পকিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ডা. রশিদ-ই-মাহবুব সংবাদকে বলেন, ‘ভারত, বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশগুলোতে এই মুহূর্তে করোনা সংক্রমণ আন্ডার কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণে রয়েছে)। তবে সংক্রমণ কমছে কেন- সেটি নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন। সবার মধ্যে ইমিউনিটি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) হয়েছে কীনা, এন্টিবডি টেস্ট করা প্রয়োজন। তা না হলে স্থায়ীভাবে বলা যাবে না যে, করোনা সংক্রমণ কমে গেছে।’
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের জন্য যে পরিমাণ টেস্ট করা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে না- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষাও সেই অনুযায়ী হচ্ছে না। এ কারণে আমরা জানি না- এটি কেন কমছে। এর কারণ খুঁজে বের করতে গবেষণা প্রয়োজন।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে এবং এই অবস্থা ৪/৫ সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকলে ধরে নেয়া যাবে করোনা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা না থাকলে অর্থাৎ সবাই উদাসীনভাবে চলাফেরা করলে পরিস্থিতি যেকোন মুহূর্তে খারাপ হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রফেসর ড. বেনজির আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোতে সংক্রমণ কমছে। একই সময়ে ইউরোপ ও আমেরিকায় ভীষণভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। সুতরাং এটি প্রকৃত চিত্র কিনা এবং আমাদের এখানে এটি কেন কম- সেটি ভাবনার বিষয়। এটা অন্য এলাকার সঙ্গে মিলছে না। এখানে এই অঞ্চলে বিশেষ কোন বৈশিষ্ঠ আছে, যা গবেষণার বিষয়।’
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, এর আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ১৮১টি ল্যাবে ১২ হাজার ৯২০টি নমুনা পরীক্ষায় এক হাজার ৭১ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এই সময়ে করোনায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।
৯ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৮১টি ল্যাবরেটরিতে ১২ হাজার ৯০৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৯২ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ওই ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার হার ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ, শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক শূন্য ৩৯ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
৮ জানুয়ারি দেশে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ৭ জানুয়ারি শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ৬ জানুয়ারি ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, ৫ জানুয়ারি ৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ ও ৪ জানুয়ারি তা ছিল ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ।
ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে নিচে নামছে সংক্রমণ
ভারতে গত ১০/১২ দিন ধরে দৈনিক ২০ হাজারের কম মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে, যেখানে গত সেপ্টেম্বরে দৈনিক প্রায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখের কাছাকাছি মানুষের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। দেশটিতে গত এক সপ্তাহে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও তিনশ’র নিচে নেমেছে। ভারতে গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত করোনা রোগীদের মধ্যে সুস্থতার হার ছিল ৯৬ দশমিক ৪১ শতাংশ।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গতকালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ১৮ হাজার ৬৪৫ জনের সংক্রমণ শনাক্ত এবং করোনায় ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমণ শনাক্তের হার ২ দশমিক ২১ শতাংশ এবং মোট সুস্থতার হার ৯৬ দশমিক ৪২ শতাংশ।
ভারতে ৯ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ১৮ হাজার ২২২ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয় এবং মৃত্যু হয়েছিল ২২৮ জনের। ওইদিন দেশটি নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। আর ৮ জানুয়ারি শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং মৃত্যু হয়েছিল ২২৯ জনের।
ভারতে গতকাল পর্যন্ত মোট এক কোটি চার লাখ ৫০ হাজার ২৮৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে করোনায় মোট এক লাখ ৫০ হাজার ৯৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারত বিশে^ করোনা সংক্রমণের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
পাকিস্তানে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) এখন নিচের দিকে নামছে। দেশটিতে গত জুন ও জুলাইয়ে করোনা সংক্রমণ চূড়ায় ছিল, শনাক্তের হার ১৬-১৭ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। জুলাইয়ে সংক্রমণ কমতে থাকে, যা আগস্ট থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সহনীয় মাত্রায় নিচের দিকে ছিল। কিন্তু অক্টোবরের শেষের দিকে পুনরায় করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে পাকিস্তানে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দ্বিতীয় ঢেউ চলে দেশটিতে। গত কিছুদিন ধরে সংক্রমণ নিচের দিকে নামছে।
পাকিস্তানের স্বাস্থ্য বিভাগের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে দুই হাজার ৮৯৯ জনের করোনা শনাক্ত এবং করোনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দেশটিতে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
পাকিস্তানে মোট পাঁচ লাখ দুই হাজার ৪১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, দেশটিতে করোনায় ১০ হাজার ৬৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে সুস্থতার হার ৯১ শতাংশ।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নেপালে প্রথমদিকে করোনা সংক্রমণ বেশ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত অক্টোবরে তা বাড়তে থাকে, পিক অর্থাৎ চূড়ায় উঠে। ওই সময় দৈনিক তিন হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দেশটিতে সংক্রমণ কিছুটা কমতে থাকে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে নেপালে দৈনিক চার থেকে পাঁচশ’ মানুষের সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও ৫/৬ জনে নেমেছে।
সর্বশেষ গতকাল ৯ জানুয়ারি নেপালে ৩৬২ জনের করোনা শনাক্ত এবং তিনজনের মৃত্যু হয়। গত ৮ জানুয়ারি নেপালে ৫৫৪ জনের করোনা শনাক্ত এবং ৬ জনের মৃত্যু হয়।
নেপালে গতকাল পর্যন্ত দুই লাখ ৬৪ হাজার ৫২১ জনের সংক্রমণ শনাক্ত এবং করোনায় দেশটিতে এক হাজার ৯১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে শনাক্ত করোনা রোগীদের মধ্যে সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।
সোমবার, ১১ জানুয়ারী ২০২১ , ২৭ পৌষ ১৪২৭, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালেও পরিস্থিতির উন্নতি
রাকিব উদ্দিন
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কমছে করোনা সংক্রমণ। মৃত্যুর সংখ্যাও কমছে, বাড়ছে সুস্থতার হার। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে একযোগে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। শীতের শুরুতে অর্থাৎ গত ডিসেম্বরে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতির যে ধরনের অবনতির আশঙ্কা করেছিলেন, সেভাবে সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপ হয়নি। পরিস্থিতির ধারাবাহিক উন্নতি হচ্ছে। শীত মৌসুমও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
বর্তমানে দেশে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি নেমেছে, ভারতেও তা দুই শতাংশের কাছকাছি। পাকিস্তানে গত জুনে শনাক্তের হার যেখানে ছিল ১৬ থেকে ১৭ শতাংশের কাছাকাছি, সেখানে বর্তমানে শনাক্তের হার ছয় শতাংশের কাকাছি। আর নেপালে গত এক সপ্তাহে করোনার প্রকোপ ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই নিম্নমুখী হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃত্যুর সংখ্যা কমছে, সংক্রমণ শনাক্তের হার নিচে নামছে, এর বিপরীতে সুস্থতার হার বাড়ছে। এটা ভালো খবর। কিন্তু সারাবিশে^ করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলেও এই অঞ্চলে করোনার বিপরীতমুখী চিত্র কেন- তা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। গবেষণার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নিতে হবে। অন্যথায় করোনার প্রকোপ পুনরায় বেড়ে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদকার আন্দোলন সর্ম্পকিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ডা. রশিদ-ই-মাহবুব সংবাদকে বলেন, ‘ভারত, বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশগুলোতে এই মুহূর্তে করোনা সংক্রমণ আন্ডার কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণে রয়েছে)। তবে সংক্রমণ কমছে কেন- সেটি নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন। সবার মধ্যে ইমিউনিটি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) হয়েছে কীনা, এন্টিবডি টেস্ট করা প্রয়োজন। তা না হলে স্থায়ীভাবে বলা যাবে না যে, করোনা সংক্রমণ কমে গেছে।’
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের জন্য যে পরিমাণ টেস্ট করা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে না- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষাও সেই অনুযায়ী হচ্ছে না। এ কারণে আমরা জানি না- এটি কেন কমছে। এর কারণ খুঁজে বের করতে গবেষণা প্রয়োজন।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে এবং এই অবস্থা ৪/৫ সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকলে ধরে নেয়া যাবে করোনা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা না থাকলে অর্থাৎ সবাই উদাসীনভাবে চলাফেরা করলে পরিস্থিতি যেকোন মুহূর্তে খারাপ হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রফেসর ড. বেনজির আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোতে সংক্রমণ কমছে। একই সময়ে ইউরোপ ও আমেরিকায় ভীষণভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। সুতরাং এটি প্রকৃত চিত্র কিনা এবং আমাদের এখানে এটি কেন কম- সেটি ভাবনার বিষয়। এটা অন্য এলাকার সঙ্গে মিলছে না। এখানে এই অঞ্চলে বিশেষ কোন বৈশিষ্ঠ আছে, যা গবেষণার বিষয়।’
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, এর আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ১৮১টি ল্যাবে ১২ হাজার ৯২০টি নমুনা পরীক্ষায় এক হাজার ৭১ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এই সময়ে করোনায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।
৯ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৮১টি ল্যাবরেটরিতে ১২ হাজার ৯০৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৯২ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ওই ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার হার ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ, শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক শূন্য ৩৯ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
৮ জানুয়ারি দেশে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ৭ জানুয়ারি শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ৬ জানুয়ারি ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, ৫ জানুয়ারি ৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ ও ৪ জানুয়ারি তা ছিল ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ।
ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে নিচে নামছে সংক্রমণ
ভারতে গত ১০/১২ দিন ধরে দৈনিক ২০ হাজারের কম মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে, যেখানে গত সেপ্টেম্বরে দৈনিক প্রায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখের কাছাকাছি মানুষের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। দেশটিতে গত এক সপ্তাহে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও তিনশ’র নিচে নেমেছে। ভারতে গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত করোনা রোগীদের মধ্যে সুস্থতার হার ছিল ৯৬ দশমিক ৪১ শতাংশ।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গতকালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ১৮ হাজার ৬৪৫ জনের সংক্রমণ শনাক্ত এবং করোনায় ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমণ শনাক্তের হার ২ দশমিক ২১ শতাংশ এবং মোট সুস্থতার হার ৯৬ দশমিক ৪২ শতাংশ।
ভারতে ৯ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ১৮ হাজার ২২২ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয় এবং মৃত্যু হয়েছিল ২২৮ জনের। ওইদিন দেশটি নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। আর ৮ জানুয়ারি শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং মৃত্যু হয়েছিল ২২৯ জনের।
ভারতে গতকাল পর্যন্ত মোট এক কোটি চার লাখ ৫০ হাজার ২৮৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে করোনায় মোট এক লাখ ৫০ হাজার ৯৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারত বিশে^ করোনা সংক্রমণের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
পাকিস্তানে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) এখন নিচের দিকে নামছে। দেশটিতে গত জুন ও জুলাইয়ে করোনা সংক্রমণ চূড়ায় ছিল, শনাক্তের হার ১৬-১৭ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। জুলাইয়ে সংক্রমণ কমতে থাকে, যা আগস্ট থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সহনীয় মাত্রায় নিচের দিকে ছিল। কিন্তু অক্টোবরের শেষের দিকে পুনরায় করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে পাকিস্তানে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দ্বিতীয় ঢেউ চলে দেশটিতে। গত কিছুদিন ধরে সংক্রমণ নিচের দিকে নামছে।
পাকিস্তানের স্বাস্থ্য বিভাগের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে দুই হাজার ৮৯৯ জনের করোনা শনাক্ত এবং করোনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দেশটিতে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
পাকিস্তানে মোট পাঁচ লাখ দুই হাজার ৪১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, দেশটিতে করোনায় ১০ হাজার ৬৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে সুস্থতার হার ৯১ শতাংশ।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নেপালে প্রথমদিকে করোনা সংক্রমণ বেশ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত অক্টোবরে তা বাড়তে থাকে, পিক অর্থাৎ চূড়ায় উঠে। ওই সময় দৈনিক তিন হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দেশটিতে সংক্রমণ কিছুটা কমতে থাকে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে নেপালে দৈনিক চার থেকে পাঁচশ’ মানুষের সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও ৫/৬ জনে নেমেছে।
সর্বশেষ গতকাল ৯ জানুয়ারি নেপালে ৩৬২ জনের করোনা শনাক্ত এবং তিনজনের মৃত্যু হয়। গত ৮ জানুয়ারি নেপালে ৫৫৪ জনের করোনা শনাক্ত এবং ৬ জনের মৃত্যু হয়।
নেপালে গতকাল পর্যন্ত দুই লাখ ৬৪ হাজার ৫২১ জনের সংক্রমণ শনাক্ত এবং করোনায় দেশটিতে এক হাজার ৯১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে শনাক্ত করোনা রোগীদের মধ্যে সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।