২৫ জানুয়ারির মধ্যে আসছে টিকা

নিবন্ধন শুরু ২৬ জানুয়ারি থেকে

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র করোনার টিকা ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে যেকোনদিন দেশে আসবে। ২৬ জানুয়ারি থেকে টিকার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হবে। টিকা দেশে আসার পর দু’দিন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওয়্যার হাউজে রাখা হবে। এরপর সেখান থেকে তা বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিপ্ততরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

তিনি গতকাল বিকেল সোয়া চারটায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে টিকা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা ও অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

প্রথম লটের টিকা ২৭ তারিখের (জানুয়ারি) মধ্যে জেলা পর্যায়ে পৌঁছাবে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির শুরুতে টিকা পাবে দেশের মানুষ। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার নতুন তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়ার দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে। সে কারণে প্রথম চালানে পাওয়া টিকা প্রথম মাসেই একসঙ্গে ৫০ লাখ মানুষকে দেয়া হবে।’

প্রথম ডোজ নেয়ার ২ মাসের

মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এর আগে আমাদের জানানো হয়েছিল, প্রথম ডোজ দেয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। সে হিসাবে প্রথমে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু গতকাল নতুন নিয়ম জানার পর আমরা পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছি। প্রথম যে ৫০ লাখ টিকা আসবে তা দিয়ে দেয়া হবে। দুই মাসের মধ্যে আরও টিকা চলে আসবে।’

সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চুক্তি হয়েছে উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, ‘বেক্সিমকো আমাদের জানিয়েছে, সেরাম ইনস্টিটিউট আমাদের ভ্যাকসিন দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যেই আমরা ভ্যাকসিন পেয়ে যাব।’ গত ৫ নভেম্বর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ পেতে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এই উদ্যোগের আওতায় প্রথম ধাপের ছয় মাসের প্রতি মাসে বাংলাদেশকে ৫০ লাখ করে ভ্যাকসিন দেয়ার কথা।

এই টিকা প্রত্যেককে দুই ডোজ করে দিতে হয়। সে কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রথমে পরিকল্পনা করেছিল, প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকার অর্ধেক ২৫ লাখ মানুষকে দিয়ে তাদের জন্য বাকি টিকা সংরক্ষণ করা হবে। এই পরিকল্পনায় পরিবর্তন এসেছে।

টিকা সংরক্ষণে ধারণক্ষমতা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৬৪ জেলার ইপিআই স্টোর (ডব্লিওআইসি/আইএলআর), ৪৮৩টি উপজেলার ইপিআই স্টোরে (আইএলআর) টিকা সংরক্ষণ করা হবে। একেকটি ডব্লিওআইসি কোল্ড স্টোরে এক লাখ থেকে চার লাখ ২৫ হাজার ডোজ টিকা রাখা যায়। আইএলআর স্টোরে রাখা যাবে সাত হাজার ১০০ ডোজ টিকা। প্রতিটি কোল্ড বক্সে ৯০০ ডোজ টিকা পরিবহন করে নেয়া যাবে।

এছাড়া কোভিড-১৯ টিকা সংরক্ষণের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারণ করা হবে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, তা যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য দেশের সব জেলা ও সিটি করপোরেশনের ইপিআই সেন্টারে ইতোমধ্যে চিঠি দেয়ার মাধ্যমে যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছারা ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে জাতীয় পর্যায়ে কোল্ড চেইন ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে বিএডিসি ও অন্যান্য জায়গা থেকে কোন রুম ভাড়া নেয়া হবে।

প্রথমে টিকা চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকদের

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর ডা. শামসুল হক বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে টিকা পৌঁছবে ২৭ জানুয়ারি। টিকা পাওয়ার পর কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকদের টিকা দেয়া হবে। এক সপ্তাহ পর, মাঠ পর্যায়ে টিকা দেয়া শুরু হবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।’

প্রথম চুক্তির আওতায় কেনা টিকার প্রথম চালান দেশে আসছে, নাকি ভারত সরকারের উপহারের টিকা প্রথম আসছে সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

গত সপ্তাহে সংবাদ প্রকাশিত হয়, সেরাম ইনস্টিটিউটকে আগামী কয়েক মাসের জন্য করোনা ভ্যাকসিনের রপ্তানি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার। যদিও বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা অস্বীকার করে ভারত সরকার। পাশাপাশি বলা হয়, ভারত সরকার প্রথমে কিছু টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেবে।

ভ্যাকসিনেশন সেন্টার

উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজেপি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে। টিকা দেয়ার জন্য সাত হাজার ৩৪৪টি দল তৈরি করা হয়েছে। একটি দলের মধ্যে ছয়জন সদস্য থাকবে। এরমধ্যে দু’জন টিকাদানকারী (নার্স, স্যাকমো, পরিবার কল্যাণ সহকারী) ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন।

মন্ত্রিসভায় টিকার আলোচনা

চুক্তির আওতায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত টিকা জানুয়ারির মধ্যে দেশে আসছে বলে গতকাল জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসকে উদ্ধৃত করে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

এর আগের দিন সেরামের টিকা বাংলাদেশে আমদানির দায়িত্ব বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নামজুল হাসান পাপন সাংবাদিকদের জানান, ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে টিকার প্রথম চালান দেশে আসতে পারে। টিকার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ আসতে পারে। এরপর প্রতি মাসেই ৫০ লাখ করে টিকা আসবে।

টিকার বিষয়ে সমন্বয়ের দায়িত্বে মুখ্য সচিব

মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় কোন কোন বিষয় এসেছে- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘করোনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। করোনার ভ্যাকসিন তো আসতেছে, মুখ্য সচিব এটা কো-অর্ডিনেট করছেন। তিনি গতকাল একটা মিটিং করেছেন। ওনারা হয়তো আজকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।

সেরামের ভ্যাকসিন কবে নাগাদ দেশে আসবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এ মাসের মধ্যে চলে আসছে আজকের মিটিংয়ে বলা হয়েছে। উনি (মুখ্য সচিব) বলেছেন, আশা করি এই মাসের শেষ দিকেই চলে আসবে।’

টিকা গ্রহীতাদের নিবন্ধন অ্যাপের মাধ্যমে

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর ব্যবহার করে অ্যাপের মাধ্যমে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। এ অ্যাপ তৈরিতে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, যার মাধ্যমে দেশের সব প্রান্তের মানুষ টিকার জন্য আবেদন করতে পারবে। খুব শীঘ্রই এ অ্যাপ তৈরির কাজ শেষ হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়, অ্যাপ ছাড়াও জেলা-উপজেলার ভ্যাকসিন সেন্টারে এ নিবন্ধন করা যাবে। ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অগ্রাধিকার তালিকার বাইরের সাধারণ মানুষকে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজন হবে জাতীয় পরিচয়পত্র। তাছাড়া নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্ভব নয়। কারণ জাতীয় পরিচয়পত্র ভ্যাকসিন গ্রহণকারীর বয়স যাচাই করা হবে। পাশাপাশি ভাকসিন নেয়ার পর সনদ দেয়া হবে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য আলাদা টিম গঠন করা হচ্ছে। এছাড়া কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস), সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এ অ্যাপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত। অ্যাপ তৈরির কাজে নির্বাচন কমিশন এবং মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি টেলিটকের সহায়তা নেয়া হচ্ছে। টিকা দেয়া শুরু হওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে অ্যাপের বিষয়টি সবাইকে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

তারা জানান, নতুন অ্যাপে এনআইডি নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে হবে। এনআইডি বহনকারী ব্যক্তি কোথায় টিকা নিতে চান, সেই (স্থায়ী নাকি বর্তমান ঠিকানার এলাকা) স্থান নির্বাচন করতে হবে। মোবাইল ফোন নম্বর দিতে হবে। নিবন্ধনের পর টিকা গ্রহীতাকে আগেই জানিয়ে দেয়া হবে কোন কেন্দ্রে টিকা নিতে হবে।

যাদের স্মার্টফোন নেই তারা কীভাবে টিকার নিবন্ধন করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ‘জাতীয় কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ কোর কমিটির আহ্বায়ক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্যসেবা কেন্দ্র আছে। সেই কেন্দ্র থেকে নিবন্ধনে সহায়তা করা হবে। এ ব্যাপারে এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে।’

মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১ , ২৮ পৌষ ১৪২৭, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

২৫ জানুয়ারির মধ্যে আসছে টিকা

নিবন্ধন শুরু ২৬ জানুয়ারি থেকে

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র করোনার টিকা ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে যেকোনদিন দেশে আসবে। ২৬ জানুয়ারি থেকে টিকার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হবে। টিকা দেশে আসার পর দু’দিন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওয়্যার হাউজে রাখা হবে। এরপর সেখান থেকে তা বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিপ্ততরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

তিনি গতকাল বিকেল সোয়া চারটায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে টিকা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা ও অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

প্রথম লটের টিকা ২৭ তারিখের (জানুয়ারি) মধ্যে জেলা পর্যায়ে পৌঁছাবে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির শুরুতে টিকা পাবে দেশের মানুষ। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার নতুন তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়ার দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে। সে কারণে প্রথম চালানে পাওয়া টিকা প্রথম মাসেই একসঙ্গে ৫০ লাখ মানুষকে দেয়া হবে।’

প্রথম ডোজ নেয়ার ২ মাসের

মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এর আগে আমাদের জানানো হয়েছিল, প্রথম ডোজ দেয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। সে হিসাবে প্রথমে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু গতকাল নতুন নিয়ম জানার পর আমরা পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছি। প্রথম যে ৫০ লাখ টিকা আসবে তা দিয়ে দেয়া হবে। দুই মাসের মধ্যে আরও টিকা চলে আসবে।’

সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চুক্তি হয়েছে উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, ‘বেক্সিমকো আমাদের জানিয়েছে, সেরাম ইনস্টিটিউট আমাদের ভ্যাকসিন দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যেই আমরা ভ্যাকসিন পেয়ে যাব।’ গত ৫ নভেম্বর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ পেতে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এই উদ্যোগের আওতায় প্রথম ধাপের ছয় মাসের প্রতি মাসে বাংলাদেশকে ৫০ লাখ করে ভ্যাকসিন দেয়ার কথা।

এই টিকা প্রত্যেককে দুই ডোজ করে দিতে হয়। সে কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রথমে পরিকল্পনা করেছিল, প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকার অর্ধেক ২৫ লাখ মানুষকে দিয়ে তাদের জন্য বাকি টিকা সংরক্ষণ করা হবে। এই পরিকল্পনায় পরিবর্তন এসেছে।

টিকা সংরক্ষণে ধারণক্ষমতা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৬৪ জেলার ইপিআই স্টোর (ডব্লিওআইসি/আইএলআর), ৪৮৩টি উপজেলার ইপিআই স্টোরে (আইএলআর) টিকা সংরক্ষণ করা হবে। একেকটি ডব্লিওআইসি কোল্ড স্টোরে এক লাখ থেকে চার লাখ ২৫ হাজার ডোজ টিকা রাখা যায়। আইএলআর স্টোরে রাখা যাবে সাত হাজার ১০০ ডোজ টিকা। প্রতিটি কোল্ড বক্সে ৯০০ ডোজ টিকা পরিবহন করে নেয়া যাবে।

এছাড়া কোভিড-১৯ টিকা সংরক্ষণের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারণ করা হবে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, তা যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য দেশের সব জেলা ও সিটি করপোরেশনের ইপিআই সেন্টারে ইতোমধ্যে চিঠি দেয়ার মাধ্যমে যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছারা ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে জাতীয় পর্যায়ে কোল্ড চেইন ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে বিএডিসি ও অন্যান্য জায়গা থেকে কোন রুম ভাড়া নেয়া হবে।

প্রথমে টিকা চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকদের

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর ডা. শামসুল হক বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে টিকা পৌঁছবে ২৭ জানুয়ারি। টিকা পাওয়ার পর কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকদের টিকা দেয়া হবে। এক সপ্তাহ পর, মাঠ পর্যায়ে টিকা দেয়া শুরু হবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।’

প্রথম চুক্তির আওতায় কেনা টিকার প্রথম চালান দেশে আসছে, নাকি ভারত সরকারের উপহারের টিকা প্রথম আসছে সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

গত সপ্তাহে সংবাদ প্রকাশিত হয়, সেরাম ইনস্টিটিউটকে আগামী কয়েক মাসের জন্য করোনা ভ্যাকসিনের রপ্তানি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার। যদিও বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা অস্বীকার করে ভারত সরকার। পাশাপাশি বলা হয়, ভারত সরকার প্রথমে কিছু টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেবে।

ভ্যাকসিনেশন সেন্টার

উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজেপি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে। টিকা দেয়ার জন্য সাত হাজার ৩৪৪টি দল তৈরি করা হয়েছে। একটি দলের মধ্যে ছয়জন সদস্য থাকবে। এরমধ্যে দু’জন টিকাদানকারী (নার্স, স্যাকমো, পরিবার কল্যাণ সহকারী) ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন।

মন্ত্রিসভায় টিকার আলোচনা

চুক্তির আওতায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত টিকা জানুয়ারির মধ্যে দেশে আসছে বলে গতকাল জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসকে উদ্ধৃত করে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

এর আগের দিন সেরামের টিকা বাংলাদেশে আমদানির দায়িত্ব বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নামজুল হাসান পাপন সাংবাদিকদের জানান, ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে টিকার প্রথম চালান দেশে আসতে পারে। টিকার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ আসতে পারে। এরপর প্রতি মাসেই ৫০ লাখ করে টিকা আসবে।

টিকার বিষয়ে সমন্বয়ের দায়িত্বে মুখ্য সচিব

মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় কোন কোন বিষয় এসেছে- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘করোনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। করোনার ভ্যাকসিন তো আসতেছে, মুখ্য সচিব এটা কো-অর্ডিনেট করছেন। তিনি গতকাল একটা মিটিং করেছেন। ওনারা হয়তো আজকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।

সেরামের ভ্যাকসিন কবে নাগাদ দেশে আসবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এ মাসের মধ্যে চলে আসছে আজকের মিটিংয়ে বলা হয়েছে। উনি (মুখ্য সচিব) বলেছেন, আশা করি এই মাসের শেষ দিকেই চলে আসবে।’

টিকা গ্রহীতাদের নিবন্ধন অ্যাপের মাধ্যমে

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর ব্যবহার করে অ্যাপের মাধ্যমে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। এ অ্যাপ তৈরিতে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, যার মাধ্যমে দেশের সব প্রান্তের মানুষ টিকার জন্য আবেদন করতে পারবে। খুব শীঘ্রই এ অ্যাপ তৈরির কাজ শেষ হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়, অ্যাপ ছাড়াও জেলা-উপজেলার ভ্যাকসিন সেন্টারে এ নিবন্ধন করা যাবে। ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অগ্রাধিকার তালিকার বাইরের সাধারণ মানুষকে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজন হবে জাতীয় পরিচয়পত্র। তাছাড়া নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্ভব নয়। কারণ জাতীয় পরিচয়পত্র ভ্যাকসিন গ্রহণকারীর বয়স যাচাই করা হবে। পাশাপাশি ভাকসিন নেয়ার পর সনদ দেয়া হবে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য আলাদা টিম গঠন করা হচ্ছে। এছাড়া কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস), সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এ অ্যাপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত। অ্যাপ তৈরির কাজে নির্বাচন কমিশন এবং মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি টেলিটকের সহায়তা নেয়া হচ্ছে। টিকা দেয়া শুরু হওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে অ্যাপের বিষয়টি সবাইকে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

তারা জানান, নতুন অ্যাপে এনআইডি নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে হবে। এনআইডি বহনকারী ব্যক্তি কোথায় টিকা নিতে চান, সেই (স্থায়ী নাকি বর্তমান ঠিকানার এলাকা) স্থান নির্বাচন করতে হবে। মোবাইল ফোন নম্বর দিতে হবে। নিবন্ধনের পর টিকা গ্রহীতাকে আগেই জানিয়ে দেয়া হবে কোন কেন্দ্রে টিকা নিতে হবে।

যাদের স্মার্টফোন নেই তারা কীভাবে টিকার নিবন্ধন করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ‘জাতীয় কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ কোর কমিটির আহ্বায়ক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্যসেবা কেন্দ্র আছে। সেই কেন্দ্র থেকে নিবন্ধনে সহায়তা করা হবে। এ ব্যাপারে এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে।’