একদল গবেষকের ছয় বছরের প্রচেষ্টা

২শ’ বছর পর ফিরে আসছে ঐতিহ্যবাহী মসলিন

মসলিন শব্দটির সঙ্গে বাঙালির আবেগ জড়িয়ে রয়েছে অধ্যাপক মনজুর হোসেন

ঢাকাই মসলিন বাংলার হারানো গৌরব ও ঐতিহ্য। মসলিন আবার ফিরে আসবে এমন আশা কেউ করেনি। কারণ গত পৌনে দুইশ’ বছরে জাদুঘর ছাড়া এর অস্তিত্ব কোথাও পাওয়া যায়নি। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে একদল গবেষক ছয় বছর প্রচেষ্টা চালিয়ে ঢাকাই মসলিনকে ফিরিয়ে এনেছেন।

ঢাকাই মসলিন এশিয়া ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন ব্যবসা কেন্দ্র-লন্ডন, প্যারিস ও আমস্টারডামে একচেটিয়া অধিকার বিস্তারে সমর্থ হয়। এমনকি আরব বণিকদের মারফত উত্তর আফ্রিকাতেও তা প্রভাব বিস্তার করে। ১৮৫১ সালে লন্ডনের বিশাল প্রদর্শনীতে ঢাকাই মসলিন বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছিল।

জেমস টেলরের লেখায় জানা যায়, ১৭৮৭ সালে ঢাকা থেকে যে পরিমাণ মসলিন ইংল্যান্ডে রপ্তানি করা হয়েছিল, তার মূল্য ছিল ৩০ লাখ টাকা। এরপর ১৮১৭ সালে এই রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকার মসলিনের মতো এতো সূক্ষ্ম ও মিহি সুতি বস্ত্র পৃথিবীর কোথাও তৈরি হতো না। ঐতিহাসিক ঢাকাই মসলিনের শেষ প্রদর্শনী হয়েছিল ১৮৫১ সালে লন্ডনে। পলাশীর যুদ্ধের পর শিল্প বিপ্লবের ফলে এবং ইংরেজদের চক্রান্তে মসলিন শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। মসলিন যাতে বুনতে না পারে, এ জন্য ইংরেজরা কারিগরদের আঙুল কেটে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটায়।

এদিকে প্রায় দুইশ’ বছর পর বাংলার হারিয়ে যাওয়া সেই গৌরব ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনজুর হোসেনের নেতৃত্বে একদল গবেষক। দীর্ঘ ছয় বছরের চেষ্টায় আবারও মসলিন বুনতে সক্ষম হয়েছেন তারা।

মসলিন ‘ঢাকাই মসলিন’ নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত এক ধরনের মিহি সুতিবস্ত্র। কারিগররা ফুটি কার্পাস নামক তুলা থেকে তৈরি অতি চিকন সুতা দিয়ে তৈরি করত মসলিন। জানা যায়, ২০১৪ সালের অক্টোবরে ‘বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়’ পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসলিনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার কথা বলেন। বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় মসলিন সুতা তৈরি হতো, তা জেনে সে প্রযুক্তি উদ্ধারের নির্দেশনা দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে ১৪ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।

মসলিনের ফিরে আসার গল্প জানতে চাইলে অধ্যাপক মনজুর হোসেন বলেন, ‘মসলিন শব্দটির সঙ্গে বাঙালিদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। এই ব্যতিক্রমধর্মী কাপড়টি দীর্ঘদিন হলো হারিয়ে গেছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসলিন ফিরিয়ে আনার ইচ্ছে পোষণ করেছেন। সেই সূত্র ধরে আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি হারানো সেই মসলিন।

তিনি বলেন, আমাদের হাতে মসলিন কাপড়, ফুটি কার্পাস কোনটাই ছিল না। বই থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মসলিন কাপড় বোনার জন্য ‘ফুটি কার্পাস’ এর কথা উল্লেখ ছিল। এই গাছ পূর্ব ভারত তথা বাংলাদেশে চাষ হতো বলে বই থেকে জানতে পারি। ফুটি কার্পাস বন্য অবস্থায় বাংলাদেশে কোথাও টিকে থাকতে পারে। মসলিন কাপড়ের নমুনা পেলে তার সুতার ডিএনএ সিকোয়েন্স ফুটি কার্পাস গাছের ডিএনএর সঙ্গে মিলিয়ে দেখলেই হয়তো কোন তথ্য পাওয়া যাবে। এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে তুলার জাত খুঁজতে শুরু করি। রংপুর, খাগড়াছড়ি, বাগাইছড়ি, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৮ প্রজাতির তুলার সন্ধান পাই। পরে সেগুলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের নিজস্ব মাঠে ও আইবিএসসির মাঠে লাগানো হয়। সেখান থেকে গাজীপুরের কাপাশিয়া থেকে পাওয়া তুলা উৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত হয়। এরপর শুরু হয় আমাদের গবেষণা।

গবেষক ড. মনজুর বলেন, আমরা তো কোন সময় মসলিন দেখিনি। মসলিন হারিয়ে গেছে প্রায় ২০০ বছর আগে। তার মানে মসলিন তৈরি হতো পাঁচশ’ বছর আগে। আমরা মসলিন খুঁজতে শুরু করলাম। বিভিন্ন স্যাম্পল পেলাম কিন্তু সেগুলোর কোনটি মসলিন ছিল না। কোথাও মসলিন না পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামে যান চার সদস্যের একটি দল। সেখানে মসলিনের কাপড়ের নমুনা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পেয়ে যান গবেষকরা। তুলার জাতগুলোর মধ্যে গাজীপুরের কাপাশিয়া থেকে সংগ্রহ করা তুলার আঁশ বেশি শক্ত, সাদা ধবধবে। আমরা দেখেই বুঝতে পারি এটা মসলিনের সেই সুতার কাছাকাছি যেতে পারে। অন্য জাতের তুলা থেকে সেটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারপর লন্ডন থেকে সংগৃহীত মসলিন কাপড়ের ডিএনএ আর সেই তুলার ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হলো। কাপাসিয়ায় যে জাতটা পেলাম সেটাই ফুটি কার্পাস। এভাবেই দেড় থেকে দুইশ বছর অবহেলায় পড়ে ছিল। তার আঁশ শক্ত তা থেকে ৫৬ পাউন্ড সুতা হচ্ছে। ঢাকাই মসলিন তৈরিতে আমরা আশার আলো দেখতে পাই।

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনজুর বলেন, তুলা থেকে ৫০০ কাউন্টের সুতা তৈরি করা সহজ কথা নয়। একটি শাড়িতে ১৪০ থেকে ১৫০ গ্রাম সুতার প্রয়োজন পড়ে। এই প্রকল্পের প্রশিক্ষিত সুতা কাটুনিরা পাঁচ দিনে এক গ্রাম সুতা কাটতে পারে। অর্থাৎ এই গতিতে একজন যদি মসলিনের সুতা কাটতে থাকেন, তাহলে একটি শাড়ি জন্য সুতা তৈরি করতে প্রায় দুই বছর লাগার কথা। এই সুতা আধুনিক যন্ত্রে নয়, চরকায় কাটতে হবে। পরে তাঁতি খুঁজে তাদের কয়েক ধাপে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বহু কষ্টে তারা বুনন পদ্ধতি রপ্ত করেছেন। নারায়ণগঞ্জে দু’জন তাঁতি অবশেষে ১৭১০ সালে বোনা শাড়ির নকশা দেখে হুবহু একটি শাড়ি বুনে ফেলে। লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামে প্রায় সাড়ে তিনশ’ ঢাকাই মসলিন শাড়ি সংরক্ষিত আছে। প্রথম অবস্থায় শাড়িটি তৈরি করতে খরচ পড়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে ছয়টি শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। একটি শাড়ি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক মনজুর হোসেন।

প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে অধ্যাপক মনজুর হোসেন বলেন, প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। বরাদ্দে ৩০ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৭০ শতাংশ টাকা সরকারের খাতে ফেরত দেয়া হয়েছে। আমাদের যথেষ্ট লোকবল, সুতা, তাঁত আছে আশা করছি আরও শাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এছাড়া বাণিজ্যকভাবে শাড়ি তৈরি করার সরকারিভাবে বিশেষ পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।

image
আরও খবর
আ’লীগ সরকার আছে বলেই দেশ স্বনির্ভর ও উন্নত : প্রধানমন্ত্রী
দেওয়ানি আদালতে বিচারকদের আর্থিক এখতিয়ার বাড়ল
প্রধানমন্ত্রী নারী উন্নয়নে প্রচুর কাজ করছেন মেয়র আইভী
চট্টগ্রামে করোনা টিকা বিতরণে ১৪ সদস্যের কমিটি
অগ্নিকাণ্ডে রোগীর মৃত্যু ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ ইউনাইটেডকে
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান মারা গেছেন
গৃহবধূ ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে মামলা
জাতীয় রাজনীতির কথা বলিনি বলেছি ফেনীর অপরাজনীতি লুটপাটের কথা কাদের মির্জা
অরক্ষিত ড্রেনে পড়ে কবি আবদুল বাসিতের মৃত্যু
নির্বাচন কমিশন ঘৃণিত প্রতিষ্ঠান মির্জা ফখরুল
গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চারজনের মৃত্যু
স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১ , ২৮ পৌষ ১৪২৭, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

একদল গবেষকের ছয় বছরের প্রচেষ্টা

২শ’ বছর পর ফিরে আসছে ঐতিহ্যবাহী মসলিন

মসলিন শব্দটির সঙ্গে বাঙালির আবেগ জড়িয়ে রয়েছে অধ্যাপক মনজুর হোসেন

সুব্রতদাস, রাজশাহী

image

ঢাকাই মসলিন বাংলার হারানো গৌরব ও ঐতিহ্য। মসলিন আবার ফিরে আসবে এমন আশা কেউ করেনি। কারণ গত পৌনে দুইশ’ বছরে জাদুঘর ছাড়া এর অস্তিত্ব কোথাও পাওয়া যায়নি। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে একদল গবেষক ছয় বছর প্রচেষ্টা চালিয়ে ঢাকাই মসলিনকে ফিরিয়ে এনেছেন।

ঢাকাই মসলিন এশিয়া ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন ব্যবসা কেন্দ্র-লন্ডন, প্যারিস ও আমস্টারডামে একচেটিয়া অধিকার বিস্তারে সমর্থ হয়। এমনকি আরব বণিকদের মারফত উত্তর আফ্রিকাতেও তা প্রভাব বিস্তার করে। ১৮৫১ সালে লন্ডনের বিশাল প্রদর্শনীতে ঢাকাই মসলিন বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছিল।

জেমস টেলরের লেখায় জানা যায়, ১৭৮৭ সালে ঢাকা থেকে যে পরিমাণ মসলিন ইংল্যান্ডে রপ্তানি করা হয়েছিল, তার মূল্য ছিল ৩০ লাখ টাকা। এরপর ১৮১৭ সালে এই রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকার মসলিনের মতো এতো সূক্ষ্ম ও মিহি সুতি বস্ত্র পৃথিবীর কোথাও তৈরি হতো না। ঐতিহাসিক ঢাকাই মসলিনের শেষ প্রদর্শনী হয়েছিল ১৮৫১ সালে লন্ডনে। পলাশীর যুদ্ধের পর শিল্প বিপ্লবের ফলে এবং ইংরেজদের চক্রান্তে মসলিন শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। মসলিন যাতে বুনতে না পারে, এ জন্য ইংরেজরা কারিগরদের আঙুল কেটে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটায়।

এদিকে প্রায় দুইশ’ বছর পর বাংলার হারিয়ে যাওয়া সেই গৌরব ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনজুর হোসেনের নেতৃত্বে একদল গবেষক। দীর্ঘ ছয় বছরের চেষ্টায় আবারও মসলিন বুনতে সক্ষম হয়েছেন তারা।

মসলিন ‘ঢাকাই মসলিন’ নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত এক ধরনের মিহি সুতিবস্ত্র। কারিগররা ফুটি কার্পাস নামক তুলা থেকে তৈরি অতি চিকন সুতা দিয়ে তৈরি করত মসলিন। জানা যায়, ২০১৪ সালের অক্টোবরে ‘বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়’ পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসলিনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার কথা বলেন। বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় মসলিন সুতা তৈরি হতো, তা জেনে সে প্রযুক্তি উদ্ধারের নির্দেশনা দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে ১৪ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।

মসলিনের ফিরে আসার গল্প জানতে চাইলে অধ্যাপক মনজুর হোসেন বলেন, ‘মসলিন শব্দটির সঙ্গে বাঙালিদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। এই ব্যতিক্রমধর্মী কাপড়টি দীর্ঘদিন হলো হারিয়ে গেছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসলিন ফিরিয়ে আনার ইচ্ছে পোষণ করেছেন। সেই সূত্র ধরে আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি হারানো সেই মসলিন।

তিনি বলেন, আমাদের হাতে মসলিন কাপড়, ফুটি কার্পাস কোনটাই ছিল না। বই থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মসলিন কাপড় বোনার জন্য ‘ফুটি কার্পাস’ এর কথা উল্লেখ ছিল। এই গাছ পূর্ব ভারত তথা বাংলাদেশে চাষ হতো বলে বই থেকে জানতে পারি। ফুটি কার্পাস বন্য অবস্থায় বাংলাদেশে কোথাও টিকে থাকতে পারে। মসলিন কাপড়ের নমুনা পেলে তার সুতার ডিএনএ সিকোয়েন্স ফুটি কার্পাস গাছের ডিএনএর সঙ্গে মিলিয়ে দেখলেই হয়তো কোন তথ্য পাওয়া যাবে। এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে তুলার জাত খুঁজতে শুরু করি। রংপুর, খাগড়াছড়ি, বাগাইছড়ি, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৮ প্রজাতির তুলার সন্ধান পাই। পরে সেগুলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের নিজস্ব মাঠে ও আইবিএসসির মাঠে লাগানো হয়। সেখান থেকে গাজীপুরের কাপাশিয়া থেকে পাওয়া তুলা উৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত হয়। এরপর শুরু হয় আমাদের গবেষণা।

গবেষক ড. মনজুর বলেন, আমরা তো কোন সময় মসলিন দেখিনি। মসলিন হারিয়ে গেছে প্রায় ২০০ বছর আগে। তার মানে মসলিন তৈরি হতো পাঁচশ’ বছর আগে। আমরা মসলিন খুঁজতে শুরু করলাম। বিভিন্ন স্যাম্পল পেলাম কিন্তু সেগুলোর কোনটি মসলিন ছিল না। কোথাও মসলিন না পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামে যান চার সদস্যের একটি দল। সেখানে মসলিনের কাপড়ের নমুনা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পেয়ে যান গবেষকরা। তুলার জাতগুলোর মধ্যে গাজীপুরের কাপাশিয়া থেকে সংগ্রহ করা তুলার আঁশ বেশি শক্ত, সাদা ধবধবে। আমরা দেখেই বুঝতে পারি এটা মসলিনের সেই সুতার কাছাকাছি যেতে পারে। অন্য জাতের তুলা থেকে সেটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারপর লন্ডন থেকে সংগৃহীত মসলিন কাপড়ের ডিএনএ আর সেই তুলার ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হলো। কাপাসিয়ায় যে জাতটা পেলাম সেটাই ফুটি কার্পাস। এভাবেই দেড় থেকে দুইশ বছর অবহেলায় পড়ে ছিল। তার আঁশ শক্ত তা থেকে ৫৬ পাউন্ড সুতা হচ্ছে। ঢাকাই মসলিন তৈরিতে আমরা আশার আলো দেখতে পাই।

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনজুর বলেন, তুলা থেকে ৫০০ কাউন্টের সুতা তৈরি করা সহজ কথা নয়। একটি শাড়িতে ১৪০ থেকে ১৫০ গ্রাম সুতার প্রয়োজন পড়ে। এই প্রকল্পের প্রশিক্ষিত সুতা কাটুনিরা পাঁচ দিনে এক গ্রাম সুতা কাটতে পারে। অর্থাৎ এই গতিতে একজন যদি মসলিনের সুতা কাটতে থাকেন, তাহলে একটি শাড়ি জন্য সুতা তৈরি করতে প্রায় দুই বছর লাগার কথা। এই সুতা আধুনিক যন্ত্রে নয়, চরকায় কাটতে হবে। পরে তাঁতি খুঁজে তাদের কয়েক ধাপে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বহু কষ্টে তারা বুনন পদ্ধতি রপ্ত করেছেন। নারায়ণগঞ্জে দু’জন তাঁতি অবশেষে ১৭১০ সালে বোনা শাড়ির নকশা দেখে হুবহু একটি শাড়ি বুনে ফেলে। লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামে প্রায় সাড়ে তিনশ’ ঢাকাই মসলিন শাড়ি সংরক্ষিত আছে। প্রথম অবস্থায় শাড়িটি তৈরি করতে খরচ পড়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে ছয়টি শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। একটি শাড়ি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক মনজুর হোসেন।

প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে অধ্যাপক মনজুর হোসেন বলেন, প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। বরাদ্দে ৩০ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৭০ শতাংশ টাকা সরকারের খাতে ফেরত দেয়া হয়েছে। আমাদের যথেষ্ট লোকবল, সুতা, তাঁত আছে আশা করছি আরও শাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এছাড়া বাণিজ্যকভাবে শাড়ি তৈরি করার সরকারিভাবে বিশেষ পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।