কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের পূর্বদিকের অরক্ষিত পয়েন্ট দিয়ে ভেতর ঢুকে পড়েছে শাবকসহ বন্যহাতির দুইটি পাল। ২৩টি ক্ষুধার্ত বন্যহাতি দুই দলে ভাগ হয়ে গেল একসপ্তাহ আগে পার্কের অভ্যন্তরে ঢুকে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নকল্পে সৃজিত ১০০ হেক্টর বাগান তথা চারণভূমিতে অবস্থান করছে।
এদিকে পার্কের পূর্বসীমান্তের একটি বাগান দিয়ে প্রথমে বন্যহাতি ঢুকে পড়ার খবরে পার্ক কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে হাতির বেস্টনীতে রেড অ্যালার্ট জারি করেছেন। বর্তমানে সেখানে পার্কের কর্মীদের সতর্ক পাহারায় রেখে আগত পর্যটক-দর্শনার্থীরা যাতে ঢুকে পড়া বন্যহাতির অবস্থানের কাছে যেতে না পারে সেজন্য বাঁধা দেয়া হচ্ছে। এই অবস্থার কারণে বর্তমানে পার্ক ভ্রমণে আসা পর্যটক-দর্শনার্থীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। পাশাাপাশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের অধিবাসীদের মাঝে। সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, গেল ডিসেম্বর মাসে দুই দফায় ক্ষুধার্ত বন্যহাতির দলটি গহীন জঙ্গল থেকে সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে পার্কে ঢুকে পড়ে। ওইসময় হাতিগুলো দুই দলে ভাগ হয়ে পার্কের অভ্যন্তরে তা-ব চালায়। এসব হাতি পার্কের বন্যপ্রাণী আবাসস্থল উন্নয়নে সুফল প্রকল্পের আওতায় ১০০ হেক্টর এলাকায় সৃজিত পশুখাদ্য বাগানের ব্যাপক ক্ষতি করে। নষ্ট করে দেয় উড়ি আমের ৮ হাজার ৫শ চারা। ওইসময় হাতিগুলো সেখানে প্রায় পাঁচদিন অবস্থান করেন।
এরপর সর্বশেষ একসপ্তাহ আগে পার্কের পূর্বদিকে ছড়াখাল সমেত বাগান দিয়ে সাফারি পার্কে ঢুকে পড়ে দুইটি বন্যহাতির পাল। তৎমধ্যে একটি দলে ১০টি ও অপরটি দলে ১৩টি হাতি রয়েছে। বর্তমানে পার্কের ওই বাগানটিই এখন বন্যহাতির খাবারের এবং চারণভূমির উপযুক্ত স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে। গহীন জঙ্গল থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে পার্কের ওই বাগানে এসে রাতভর খাবার খেয়ে ভোরের আলো ফুটলেই ফের চলে যাচ্ছে। এভাবে গত একসপ্তাহ ধরে হাতিগুলো পার্কের ভেতর আসা-যাওয়া করছে।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ২৩টি বন্যহাতির পাল দুইভাবে বিভক্ত হয়ে গত একসপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলেই পার্কের অভ্যন্তরের পশুখাদ্যের বাগানে ঢুকে পড়ছে। আবার ভোরের আলো ফোটার আগেই গহীন জঙ্গলের নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে।
‘এভাবে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করায় পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকর্তাবস্থায় রাখা হয়েছে। যেসব এলাকায় বন্যহাতি অবস্থান করছে সেখানে কিছুদূর পর পর পার্কের কর্মচারীরা অবস্থান নিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে হাতির বেস্টনীতে রেড অ্যালার্ট জারি করেছি। যাতে পার্কে আগত পর্যটক-দর্শনার্থীরা ভুল করে ওইদিকে যেতে না পারে।’
তিনি বলেন, গত ডিসেম্বর মাসের শেষদিকেও দুইদফায় বন্য হাতিগুলো পার্কের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। ওই সময় তারা পশুখাদ্যের বাগানে তা-বও চালায় এবং বেশ কয়েকদিন অবস্থান করে।
জানা গেছে, পার্কের সীমান্তবর্তী এলাকায় জেব্রার বেষ্টনীর কাছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০০ হেক্টর এলাকায় সৃজন করা হয় পশুখাদ্যের উপযোগী বাগান তথা চারণভূমি। সেখানে রোপণ করা হয় প্রায় ১০ হাজার উড়ি আমের চারা। এছাড়াও নেপিয়ার ঘাস, প্যারা ঘাস, শাপলা, বাঁশঝাড়, পিটালি পাতা, বৃদ্ধরী পাতা, মেলোনী পাতাসহ পশুখাদ্যের উপযোগী বিভিন্ন প্রজাতির লতাগুল্মের বাগান। বর্তমানে সেই চারণভূমিই নিরাপদ খাদ্য ভা-ারে পরিণত হওয়ায় বন্যহাতির দলটি প্রতিদিন সন্ধ্যার পর পার্কের অভ্যন্তরে ঢুকছে আর ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে গহীন জঙ্গলে চলে যাচ্ছে।
সাফারি পার্কের পাশের এলাকার বাসিন্দা ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো.শওকত আলী বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর শাবকসহ ২৩টি বন্যহাতি দুই দলে ভাগ হয়ে আশপাশের বসতবাড়ির কাছের পার্কের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে। তবে ভোরের আলো ফোটার পর পরই ফের গহীন জঙ্গলে চলে যাচ্ছে হাতিগুলো। এরপরও বন্যহাতি আসার কারণে প্রতিরাতেই আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয় অধিবাসীরা।
বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১ , ২৯ পৌষ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া (কক্সবাজার)
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের পূর্বদিকের অরক্ষিত পয়েন্ট দিয়ে ভেতর ঢুকে পড়েছে শাবকসহ বন্যহাতির দুইটি পাল। ২৩টি ক্ষুধার্ত বন্যহাতি দুই দলে ভাগ হয়ে গেল একসপ্তাহ আগে পার্কের অভ্যন্তরে ঢুকে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নকল্পে সৃজিত ১০০ হেক্টর বাগান তথা চারণভূমিতে অবস্থান করছে।
এদিকে পার্কের পূর্বসীমান্তের একটি বাগান দিয়ে প্রথমে বন্যহাতি ঢুকে পড়ার খবরে পার্ক কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে হাতির বেস্টনীতে রেড অ্যালার্ট জারি করেছেন। বর্তমানে সেখানে পার্কের কর্মীদের সতর্ক পাহারায় রেখে আগত পর্যটক-দর্শনার্থীরা যাতে ঢুকে পড়া বন্যহাতির অবস্থানের কাছে যেতে না পারে সেজন্য বাঁধা দেয়া হচ্ছে। এই অবস্থার কারণে বর্তমানে পার্ক ভ্রমণে আসা পর্যটক-দর্শনার্থীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। পাশাাপাশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের অধিবাসীদের মাঝে। সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, গেল ডিসেম্বর মাসে দুই দফায় ক্ষুধার্ত বন্যহাতির দলটি গহীন জঙ্গল থেকে সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে পার্কে ঢুকে পড়ে। ওইসময় হাতিগুলো দুই দলে ভাগ হয়ে পার্কের অভ্যন্তরে তা-ব চালায়। এসব হাতি পার্কের বন্যপ্রাণী আবাসস্থল উন্নয়নে সুফল প্রকল্পের আওতায় ১০০ হেক্টর এলাকায় সৃজিত পশুখাদ্য বাগানের ব্যাপক ক্ষতি করে। নষ্ট করে দেয় উড়ি আমের ৮ হাজার ৫শ চারা। ওইসময় হাতিগুলো সেখানে প্রায় পাঁচদিন অবস্থান করেন।
এরপর সর্বশেষ একসপ্তাহ আগে পার্কের পূর্বদিকে ছড়াখাল সমেত বাগান দিয়ে সাফারি পার্কে ঢুকে পড়ে দুইটি বন্যহাতির পাল। তৎমধ্যে একটি দলে ১০টি ও অপরটি দলে ১৩টি হাতি রয়েছে। বর্তমানে পার্কের ওই বাগানটিই এখন বন্যহাতির খাবারের এবং চারণভূমির উপযুক্ত স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে। গহীন জঙ্গল থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে পার্কের ওই বাগানে এসে রাতভর খাবার খেয়ে ভোরের আলো ফুটলেই ফের চলে যাচ্ছে। এভাবে গত একসপ্তাহ ধরে হাতিগুলো পার্কের ভেতর আসা-যাওয়া করছে।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ২৩টি বন্যহাতির পাল দুইভাবে বিভক্ত হয়ে গত একসপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলেই পার্কের অভ্যন্তরের পশুখাদ্যের বাগানে ঢুকে পড়ছে। আবার ভোরের আলো ফোটার আগেই গহীন জঙ্গলের নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে।
‘এভাবে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করায় পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকর্তাবস্থায় রাখা হয়েছে। যেসব এলাকায় বন্যহাতি অবস্থান করছে সেখানে কিছুদূর পর পর পার্কের কর্মচারীরা অবস্থান নিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে হাতির বেস্টনীতে রেড অ্যালার্ট জারি করেছি। যাতে পার্কে আগত পর্যটক-দর্শনার্থীরা ভুল করে ওইদিকে যেতে না পারে।’
তিনি বলেন, গত ডিসেম্বর মাসের শেষদিকেও দুইদফায় বন্য হাতিগুলো পার্কের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। ওই সময় তারা পশুখাদ্যের বাগানে তা-বও চালায় এবং বেশ কয়েকদিন অবস্থান করে।
জানা গেছে, পার্কের সীমান্তবর্তী এলাকায় জেব্রার বেষ্টনীর কাছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০০ হেক্টর এলাকায় সৃজন করা হয় পশুখাদ্যের উপযোগী বাগান তথা চারণভূমি। সেখানে রোপণ করা হয় প্রায় ১০ হাজার উড়ি আমের চারা। এছাড়াও নেপিয়ার ঘাস, প্যারা ঘাস, শাপলা, বাঁশঝাড়, পিটালি পাতা, বৃদ্ধরী পাতা, মেলোনী পাতাসহ পশুখাদ্যের উপযোগী বিভিন্ন প্রজাতির লতাগুল্মের বাগান। বর্তমানে সেই চারণভূমিই নিরাপদ খাদ্য ভা-ারে পরিণত হওয়ায় বন্যহাতির দলটি প্রতিদিন সন্ধ্যার পর পার্কের অভ্যন্তরে ঢুকছে আর ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে গহীন জঙ্গলে চলে যাচ্ছে।
সাফারি পার্কের পাশের এলাকার বাসিন্দা ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো.শওকত আলী বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর শাবকসহ ২৩টি বন্যহাতি দুই দলে ভাগ হয়ে আশপাশের বসতবাড়ির কাছের পার্কের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে। তবে ভোরের আলো ফোটার পর পরই ফের গহীন জঙ্গলে চলে যাচ্ছে হাতিগুলো। এরপরও বন্যহাতি আসার কারণে প্রতিরাতেই আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয় অধিবাসীরা।