সুন্দরবনে কটকা অভয়ারণ্য

নদীতে বিষ ঢেলে মাছ শিকার

সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য এলাকায় নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বিভিন্ন নদী ও খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। জঙ্গলে রাতের আধারে ও লুকিয়ে শিকার করা হচ্ছে মাছ। আর এই সুযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ওসি ফরেস্টার আবুল কালামের বিরুদ্ধে। এর আগেও জেলেদের মারধরাসহ ঘুষ গ্রহণ ও নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কালামের ব্যাপারে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তিনি এখন অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এছাড়া বিপন্ন হচ্ছে জীববৈচিত্র।

সাধারণ মৎস্যজীবী ও জেলেদের অভিযোগ, মাছ শিকারের জন্য বরগুনার পাথরঘাটা ও বাগেরহাটের শরণখোলায় রয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র। চক্রটি কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা কালামকে ম্যানেজ করে রাতের আধাঁরে অভয়ারণ্যের খাল ও নদী থেকে অবৈধভাবে অবাধে মাছ ধরেন। তবে, মাছ ধরা চক্রের মুল হোতা পাথরঘাটার পদ্মস্লুইস এলাকার হালিম খা, পিরোজপুরের ভা-ারিয়ার ইকরির জাকির তালুকদার, শরণখোলার কদমতলার এমাদুল শরীফ, বকুলতলার চান্দু ও লিটন মাতুব্বরসহ আরও কয়েকজন। এদের নিয়ন্ত্রণে থাকা শতাধিক জেলে নৌকা অভয়ারণ্যে এলাকার কাদেরের খাল, বেতমোর, বন্দে আলীর খাল, হুমরার খাল, কস্তুরা, ডিমেরচর, পক্ষিদিয়ার চর, দুধমূখী, ঝাপা, কচিখালী ও কটকা নদীসহ আশপাশের নদী ও খালে দিবা-রাত্রি জাল পেতে ও কীটনাশক (বিষ) প্রয়োগে বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ টাকার মাছ লুটে নিচ্ছেন।

এদের মধ্যে জাকির তালুকদার ও এমাদুল শরীফ বেতমোর, দুধমূখী নদী ও কটকা অফিসের সামনে, চান্দু কটকা জেটির সামনে ও টাওয়ারের খাল, হালিম খা কটকা অফিসের পাশে কাদেরের খাল, জামতলা সি-বিচ ও দুধমূখীর বালির খাল এবং লিটন মাতুব্বর সিডাকটকা, কচিখালী সাপের খাল, অফিস খালসহ আশপাশের খালে মাছ ধরেন। এসব খালে সাধারণ জেলে ও বড়শির জেলেদের মাছ ধরতে দেয়া হয় না। এছাড়া লিটন মাতুব্বর সুন্দরবনে জেলেদের মাঝে কীটনাশক সরবারহ করে মাছ ধরতে উৎসাহিত করে থাকেন। যার ফলে তাকে ইতিপূর্বে কয়েক মাস সুন্দরবনে মাছ ধরার জন্য পাশ দেয়া বন্ধ করেছিল বন-বিভাগ কিন্তু একটি মহলের মদদে আবার মাছ ধরার সুযোগ দেয়া হয়েছে। মাছ ধরার জন্য জেলেরা সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশেষ করে, কটকা, কচিখালী, চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ি ও সুপতি ফরেস্ট স্টেশন অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোন হিসেবে চুক্তি করে। প্রতি গোনে ৯ দিনে জেলে গ্রুপ প্রতি ৩০/৪০ হাজার টাকা করে কটকার বনরক্ষীদের অগ্রিম দিতে হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে অভিযোগ করেন।

প্রতি মাসে ২টি গোনে জেলেরা অভয়ারণ্যে কটকা (ওসির) নেতৃত্বে ৬/৭ লাখ টাকা আদায় করা হয়। তবে, এসব জেলেরা দিনের বেলায় সুন্দরবনের ছোট ছোট খালে নৌকাসহ নিজেদের লুকিয়ে রাখে এবং রাতের আঁধার নামলেই তারা নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে খুব ভোরে আড়তে নিয়ে যায়। এসব মাছ প্রতিদিন ভোরে পাথরঘাটার পদ্মস্লুইস বাজার ও বনসংলগ্ন শরণখোলা বাজারের মৎস্য আড়তে বিক্রি করে এবং পিকাপের মাধ্যমে খুলনা ঢাকায় পাঠানো হয়। জেলেরা আরও জানায়, চিংড়ির জালে প্রতি গোনে একেকটি নৌকায় ৪০/৫০ মণ ছোট মাছ মারা পড়ে যা তারা নদী সাগরে ফেলে দেয় এতে ধ্বংস হচ্ছে সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ। কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরার কারণে গত দুই গোনে চিংড়ি মাছ আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না বলে সাধারণ জেলেরা জানায়।

সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র সুরক্ষায় শরণখোলা রেঞ্জের সুপতি, কচিখালী, ও কটকাসহ এলাকাকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করে সরকার। প্রায় ২১ বছর ধরে ওই অভয়ারণ্যে এলাকার সব ধরনের বনজ সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা। কারণ ওই এলাকারগুলোর নদী ও খাল মৎস্য প্রজননের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে, জানতে চাইলে কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা ফরেস্টার মো. আবুল কালাম অভিযোগের বিষয়গুলো মিথ্যা বলে দাবি করেন।

এছাড়া সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, কটকা অভয়ারণ্যে মাছ ধরার খবর সঠিক নয়। তবে কিছু অসাধু লোক অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে অনেক সময় মিথ্যা অপবাদ ছড়ায়।

সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, কটকা অভয়ারণ্যে মাছ ধরার খবর তার জানা নেই। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা হবে।

বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১ , ২৯ পৌষ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

সুন্দরবনে কটকা অভয়ারণ্য

নদীতে বিষ ঢেলে মাছ শিকার

প্রতিনিধি, বাগেরহাট (শরণখোলা)

image

শরণখোলা : সুন্দরবনে নিষিদ্ধ কটকা অভয়ারণ্যে গোপনে নৌকা নিয়ে মাছ শিকার চলছে -সংবাদ

সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য এলাকায় নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বিভিন্ন নদী ও খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। জঙ্গলে রাতের আধারে ও লুকিয়ে শিকার করা হচ্ছে মাছ। আর এই সুযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ওসি ফরেস্টার আবুল কালামের বিরুদ্ধে। এর আগেও জেলেদের মারধরাসহ ঘুষ গ্রহণ ও নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কালামের ব্যাপারে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তিনি এখন অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এছাড়া বিপন্ন হচ্ছে জীববৈচিত্র।

সাধারণ মৎস্যজীবী ও জেলেদের অভিযোগ, মাছ শিকারের জন্য বরগুনার পাথরঘাটা ও বাগেরহাটের শরণখোলায় রয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র। চক্রটি কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা কালামকে ম্যানেজ করে রাতের আধাঁরে অভয়ারণ্যের খাল ও নদী থেকে অবৈধভাবে অবাধে মাছ ধরেন। তবে, মাছ ধরা চক্রের মুল হোতা পাথরঘাটার পদ্মস্লুইস এলাকার হালিম খা, পিরোজপুরের ভা-ারিয়ার ইকরির জাকির তালুকদার, শরণখোলার কদমতলার এমাদুল শরীফ, বকুলতলার চান্দু ও লিটন মাতুব্বরসহ আরও কয়েকজন। এদের নিয়ন্ত্রণে থাকা শতাধিক জেলে নৌকা অভয়ারণ্যে এলাকার কাদেরের খাল, বেতমোর, বন্দে আলীর খাল, হুমরার খাল, কস্তুরা, ডিমেরচর, পক্ষিদিয়ার চর, দুধমূখী, ঝাপা, কচিখালী ও কটকা নদীসহ আশপাশের নদী ও খালে দিবা-রাত্রি জাল পেতে ও কীটনাশক (বিষ) প্রয়োগে বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ টাকার মাছ লুটে নিচ্ছেন।

এদের মধ্যে জাকির তালুকদার ও এমাদুল শরীফ বেতমোর, দুধমূখী নদী ও কটকা অফিসের সামনে, চান্দু কটকা জেটির সামনে ও টাওয়ারের খাল, হালিম খা কটকা অফিসের পাশে কাদেরের খাল, জামতলা সি-বিচ ও দুধমূখীর বালির খাল এবং লিটন মাতুব্বর সিডাকটকা, কচিখালী সাপের খাল, অফিস খালসহ আশপাশের খালে মাছ ধরেন। এসব খালে সাধারণ জেলে ও বড়শির জেলেদের মাছ ধরতে দেয়া হয় না। এছাড়া লিটন মাতুব্বর সুন্দরবনে জেলেদের মাঝে কীটনাশক সরবারহ করে মাছ ধরতে উৎসাহিত করে থাকেন। যার ফলে তাকে ইতিপূর্বে কয়েক মাস সুন্দরবনে মাছ ধরার জন্য পাশ দেয়া বন্ধ করেছিল বন-বিভাগ কিন্তু একটি মহলের মদদে আবার মাছ ধরার সুযোগ দেয়া হয়েছে। মাছ ধরার জন্য জেলেরা সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশেষ করে, কটকা, কচিখালী, চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ি ও সুপতি ফরেস্ট স্টেশন অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোন হিসেবে চুক্তি করে। প্রতি গোনে ৯ দিনে জেলে গ্রুপ প্রতি ৩০/৪০ হাজার টাকা করে কটকার বনরক্ষীদের অগ্রিম দিতে হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে অভিযোগ করেন।

প্রতি মাসে ২টি গোনে জেলেরা অভয়ারণ্যে কটকা (ওসির) নেতৃত্বে ৬/৭ লাখ টাকা আদায় করা হয়। তবে, এসব জেলেরা দিনের বেলায় সুন্দরবনের ছোট ছোট খালে নৌকাসহ নিজেদের লুকিয়ে রাখে এবং রাতের আঁধার নামলেই তারা নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে খুব ভোরে আড়তে নিয়ে যায়। এসব মাছ প্রতিদিন ভোরে পাথরঘাটার পদ্মস্লুইস বাজার ও বনসংলগ্ন শরণখোলা বাজারের মৎস্য আড়তে বিক্রি করে এবং পিকাপের মাধ্যমে খুলনা ঢাকায় পাঠানো হয়। জেলেরা আরও জানায়, চিংড়ির জালে প্রতি গোনে একেকটি নৌকায় ৪০/৫০ মণ ছোট মাছ মারা পড়ে যা তারা নদী সাগরে ফেলে দেয় এতে ধ্বংস হচ্ছে সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ। কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরার কারণে গত দুই গোনে চিংড়ি মাছ আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না বলে সাধারণ জেলেরা জানায়।

সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র সুরক্ষায় শরণখোলা রেঞ্জের সুপতি, কচিখালী, ও কটকাসহ এলাকাকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করে সরকার। প্রায় ২১ বছর ধরে ওই অভয়ারণ্যে এলাকার সব ধরনের বনজ সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা। কারণ ওই এলাকারগুলোর নদী ও খাল মৎস্য প্রজননের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে, জানতে চাইলে কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা ফরেস্টার মো. আবুল কালাম অভিযোগের বিষয়গুলো মিথ্যা বলে দাবি করেন।

এছাড়া সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, কটকা অভয়ারণ্যে মাছ ধরার খবর সঠিক নয়। তবে কিছু অসাধু লোক অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে অনেক সময় মিথ্যা অপবাদ ছড়ায়।

সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, কটকা অভয়ারণ্যে মাছ ধরার খবর তার জানা নেই। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা হবে।