নবান্নের একাল-সেকাল

গ্রাম বাংলায় নবান্নের আনন্দে ভরপুর ছিল। যখন ধান কাটার সময় হতো মা’র সঙ্গে আলাপ করতেন আব্বা। বলতেন, ক্ষেতের ধান পেকেছে ধান কেটে বাড়িতে আনতে হবে। তুমি মানুষ নিয়ে তৈরি হও, ধান নিতে হবে।

মা তখন পাশের বাড়ির চাচি, খালা বা বড় বোনদের বলতেন আগামী পড়শু আমাদের বাড়ি এসে ধান নিতে হবে এবং কাজ করে দিতে হবে। তখন সবাই হাসি মুখে আসতো এবং সারাদিন এমনকি দুপুর রাত পর্যন্ত কাজ করে যেত। আমার মা এবং আমরা কোনদিন তাদের কাজের লোক বলতাম না। তারা আমাদের পরিবারের সদস্যদের মত হয়ে খাওয়া দাওয়া করতো এবং বিভিন্ন রকমের নবান্নের পিঠা-পুলি তৈরি করে দিতো এবং কাজ-কর্ম করতো।

হেমন্তকালে গ্রামের মাঠ দিয়ে যখন স্কুলে আসা-যাওয়া করেছি তখন খুব আনন্দ লাগতো। ঝাঁকে-ঝাঁকে টিয়া পাখি ধান ক্ষেতে আসত এবং পাকা ধানের ছড়া নিয়ে উড়ে যেত। গ্রামের কৃষকেরা ধান ক্ষেত থেকে ধান কেটে যখন বাড়ি আনতো তখন সেই দৃশ্য খুবই সুন্দর লাগতো।

বার্ষিক পরীক্ষার ফল পাওয়ার পর নতুন ক্লাসে উঠে এবং নতুন বই পেয়ে খুব ভালো লাগতো। নতুন বই থেকে একটি নতুন গন্ধ বের হতো যা খুবই ভালো লাগতো। জানুয়ারি মাসে নতুন বই নিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করতে খুবই ভালো লাগতো।

গ্রাম বাংলায় শহরাঞ্চলের সংস্কৃতি ঢুকে নবান্নের উৎসবকে ম্লান করে দিয়েছে। নবান্নসহ গ্রামীণ বিভিন্ন সংস্কৃতি যেন হারিয়ে না যায় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন

বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১ , ২৯ পৌষ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

নবান্নের একাল-সেকাল

image

গ্রাম বাংলায় নবান্নের আনন্দে ভরপুর ছিল। যখন ধান কাটার সময় হতো মা’র সঙ্গে আলাপ করতেন আব্বা। বলতেন, ক্ষেতের ধান পেকেছে ধান কেটে বাড়িতে আনতে হবে। তুমি মানুষ নিয়ে তৈরি হও, ধান নিতে হবে।

মা তখন পাশের বাড়ির চাচি, খালা বা বড় বোনদের বলতেন আগামী পড়শু আমাদের বাড়ি এসে ধান নিতে হবে এবং কাজ করে দিতে হবে। তখন সবাই হাসি মুখে আসতো এবং সারাদিন এমনকি দুপুর রাত পর্যন্ত কাজ করে যেত। আমার মা এবং আমরা কোনদিন তাদের কাজের লোক বলতাম না। তারা আমাদের পরিবারের সদস্যদের মত হয়ে খাওয়া দাওয়া করতো এবং বিভিন্ন রকমের নবান্নের পিঠা-পুলি তৈরি করে দিতো এবং কাজ-কর্ম করতো।

হেমন্তকালে গ্রামের মাঠ দিয়ে যখন স্কুলে আসা-যাওয়া করেছি তখন খুব আনন্দ লাগতো। ঝাঁকে-ঝাঁকে টিয়া পাখি ধান ক্ষেতে আসত এবং পাকা ধানের ছড়া নিয়ে উড়ে যেত। গ্রামের কৃষকেরা ধান ক্ষেত থেকে ধান কেটে যখন বাড়ি আনতো তখন সেই দৃশ্য খুবই সুন্দর লাগতো।

বার্ষিক পরীক্ষার ফল পাওয়ার পর নতুন ক্লাসে উঠে এবং নতুন বই পেয়ে খুব ভালো লাগতো। নতুন বই থেকে একটি নতুন গন্ধ বের হতো যা খুবই ভালো লাগতো। জানুয়ারি মাসে নতুন বই নিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করতে খুবই ভালো লাগতো।

গ্রাম বাংলায় শহরাঞ্চলের সংস্কৃতি ঢুকে নবান্নের উৎসবকে ম্লান করে দিয়েছে। নবান্নসহ গ্রামীণ বিভিন্ন সংস্কৃতি যেন হারিয়ে না যায় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন