নদী রক্ষায় চাই সচেতনতা

সুদূর অতীতকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্য লেনদেন ইত্যাদির জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে জলপথ। স্থলপথ-রেলপথ-আকাশপথ এসব কিছুর চেয়ে জলপথই সব লেনদেন পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এসেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য সাগর-হ্রদ-নদ-নদী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এবং বহু দেশের বহু নদ-নদীকে ঘিরে ঐতিহাসিক অনেক ঘটনাও রয়েছে যা সেসব নদী ও দেশকে বিশ্বের নিকট বহুল আলোচিত করে তুলেছে।

বিশ্বজুড়ে যত দেশে যত বিশ্বখ্যাত নদ-নদীই থাকুক না কেন নদীমাতৃক দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে একমাত্র বাংলাদেশই পরিচিতি লাভ করেছে। ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই ছোট দেশটির বুকে শাখা-প্রশাখাসহ বয়ে চলছে সাত শতাধিক নদ-নদী। বিপুল পরিমাণ জলরাশি নিয়ে ২৪,১৪০ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে অসংখ্য নদ-নদী। নদীমাতৃক এই দেশ তার জলরাশির সুন্দর লীলা-খেলায় সকলের মন জয় করে নিয়েছে। বহু লেখক-কবি-সাহিত্যিক তাদের লেখনিতে বাংলার নদ-নদীর চির তারুণ্যকে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। তাদের লেখনীর মিষ্টি ভাষার বর্ণনায় স্থান করে নিয়েছে বাংলার বুকে বয়ে চলা সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই জলরাশি।

অতীতে বাংলাদেশের নদ-নদী যতটা মনোঃমুগ্ধকর ছিল বর্তমানে যেন ধীরে ধীরে তা মানুষের নজর আড়ালে চলে যাচ্ছে। এক সময় সবার আকর্ষণ কেড়ে নেয়া নদ-নদীগুলো বর্তমানে সাধারণ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। আর এর পেছনে বিদ্যমান অসংখ্য কারণ। বর্তমান সময়ে নদ-নদীগুলোর ওপর চলছে অযাচিত অত্যাচার। মানুষের অমানবিক-পৈষাচিক আচরণের শিকার হতে রেহাই পাচ্ছে না নদ-নদীগুলোও। অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে নদী দূষণ, নদী ভরাট ইত্যাদি। নদ-নদীর কিনারে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও নদীর পানিতে নানা বর্জ্য ফেলার ফলে ধীরে ধীরে নদীর পানিগুলো মানুষের ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে যাচ্ছে। নদী তীরবর্তী বসবাসকারী লোকজন যাদের পানির প্রয়োজন মেটানোর জন্য সরাসরি নদীর পানি ব্যবহার করতে হয় তাদের স্বাস্থ্য সেসব দূষিত পানির দ্বারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

দেশের উন্নয়নের তাগিদে শুধু একপাক্ষিক প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয় বরং সরকারের পাশাপাশি জনগণের মাঝেও সচেতনতা একান্ত কাম্য। ইচ্ছা মতো অবাধে নদ-নদীর পানিতে দূষিত পদার্থ ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাছাড়া নদ-নদীর পাশে নির্মিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বর্জ্য ফেলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করতে হবে। নদী খননের উদ্যোগ নিতে হবে এবং নদী ভরাট ও দূষণ রোধে সর্বদা আইনের কঠোর প্রয়োগ চালিয়ে যেতে হবে। সবার মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে একটি নদীমাতৃক দেশ এই সুখ্যাতি প্রাপ্তির ধারা অব্যাহত রাখার আশা করা যায়।

আতিয়া ফাইরুজ ঐশী,

শিক্ষার্থী,

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট,

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২১ , ৩০ পৌষ ১৪২৭, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

নদী রক্ষায় চাই সচেতনতা

সুদূর অতীতকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্য লেনদেন ইত্যাদির জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে জলপথ। স্থলপথ-রেলপথ-আকাশপথ এসব কিছুর চেয়ে জলপথই সব লেনদেন পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এসেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য সাগর-হ্রদ-নদ-নদী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এবং বহু দেশের বহু নদ-নদীকে ঘিরে ঐতিহাসিক অনেক ঘটনাও রয়েছে যা সেসব নদী ও দেশকে বিশ্বের নিকট বহুল আলোচিত করে তুলেছে।

বিশ্বজুড়ে যত দেশে যত বিশ্বখ্যাত নদ-নদীই থাকুক না কেন নদীমাতৃক দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে একমাত্র বাংলাদেশই পরিচিতি লাভ করেছে। ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই ছোট দেশটির বুকে শাখা-প্রশাখাসহ বয়ে চলছে সাত শতাধিক নদ-নদী। বিপুল পরিমাণ জলরাশি নিয়ে ২৪,১৪০ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে অসংখ্য নদ-নদী। নদীমাতৃক এই দেশ তার জলরাশির সুন্দর লীলা-খেলায় সকলের মন জয় করে নিয়েছে। বহু লেখক-কবি-সাহিত্যিক তাদের লেখনিতে বাংলার নদ-নদীর চির তারুণ্যকে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। তাদের লেখনীর মিষ্টি ভাষার বর্ণনায় স্থান করে নিয়েছে বাংলার বুকে বয়ে চলা সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই জলরাশি।

অতীতে বাংলাদেশের নদ-নদী যতটা মনোঃমুগ্ধকর ছিল বর্তমানে যেন ধীরে ধীরে তা মানুষের নজর আড়ালে চলে যাচ্ছে। এক সময় সবার আকর্ষণ কেড়ে নেয়া নদ-নদীগুলো বর্তমানে সাধারণ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। আর এর পেছনে বিদ্যমান অসংখ্য কারণ। বর্তমান সময়ে নদ-নদীগুলোর ওপর চলছে অযাচিত অত্যাচার। মানুষের অমানবিক-পৈষাচিক আচরণের শিকার হতে রেহাই পাচ্ছে না নদ-নদীগুলোও। অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে নদী দূষণ, নদী ভরাট ইত্যাদি। নদ-নদীর কিনারে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও নদীর পানিতে নানা বর্জ্য ফেলার ফলে ধীরে ধীরে নদীর পানিগুলো মানুষের ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে যাচ্ছে। নদী তীরবর্তী বসবাসকারী লোকজন যাদের পানির প্রয়োজন মেটানোর জন্য সরাসরি নদীর পানি ব্যবহার করতে হয় তাদের স্বাস্থ্য সেসব দূষিত পানির দ্বারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

দেশের উন্নয়নের তাগিদে শুধু একপাক্ষিক প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয় বরং সরকারের পাশাপাশি জনগণের মাঝেও সচেতনতা একান্ত কাম্য। ইচ্ছা মতো অবাধে নদ-নদীর পানিতে দূষিত পদার্থ ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাছাড়া নদ-নদীর পাশে নির্মিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বর্জ্য ফেলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করতে হবে। নদী খননের উদ্যোগ নিতে হবে এবং নদী ভরাট ও দূষণ রোধে সর্বদা আইনের কঠোর প্রয়োগ চালিয়ে যেতে হবে। সবার মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে একটি নদীমাতৃক দেশ এই সুখ্যাতি প্রাপ্তির ধারা অব্যাহত রাখার আশা করা যায়।

আতিয়া ফাইরুজ ঐশী,

শিক্ষার্থী,

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট,

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।