চারুকলার বিরল চিত্র

গত ৩০ নভেম্বর থেকে রাজধানীর জাতীয় চিত্রশালায়

চলছে ‘২২তম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী-২০২০’

বিশেষ কিউরেটোরিয়াল প্রকল্প। এ প্রদর্শনী ঘুরে

এসে লিখেছেন নিথর মাহবুব

ছুটির দিন বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশালার গেটের কাছে যেতেই অনেক লোকের ভিড় চোখে পড়ল। লাইনে দাঁড়ানো লোক গেট অতিক্রম করে চলে এসেছে রাস্তা পর্যন্ত। ভাবলাম নৃত্যশালায় কোন অনুষ্ঠানের এ লাইন। ভেতরের দিকে তাকাতেই স্পষ্ট হলো এ লাইন নবীন চারুকলা প্রদর্শনীতে যাওয়ার লাইন। বাংলাদেশে চারুকলা প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এটি একটি বিরল চিত্র। এমন দৃশ্য সাধারণত চোখে পড়ে একুশে ফেব্রুয়ারির বইমেলায় ছুটির দিনগুলোতে। নৃত্যশালার গেটে কর্মরত মুজাহিদ জানালেন এ প্যানডেমিক সিচুয়েশানেও প্রতিদিন শত শত লোক আসছে প্রদর্শনী দেখতে। স্থানীয়রা জানান, চারুকলার কোন প্রদর্শনীকে ঘিরে এখানে এত লোকসমাগম তারা আগে কখনই দেখেননি। এ প্রদর্শনী কেন্দ্র করে এক মিলনমেলা তৈরি হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশালা প্রাঙ্গণে। অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন একসঙ্গে প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে। এসেছে অনেক স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীও।

এ প্রদর্শনীকে ঘিরে ভিতরে-বাহিরের সাজসজ্জাও সহজে যে কাউকে মুগ্ধ করবে। শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশালা দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল মাথার উপরে দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম। রঙ-বেরঙের ঝুলন্ত ছাতার সমারোহে তৈরি ফলস সিলিং চলে গেছে চারুকলা ভবনের প্রবেশদ্বার পর্যন্ত। এক ছাতার নিচে আনা বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। ঝুলন্ত ছাতাগুলো যেন তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলাদেশের ১৪টি ইনস্টিটিউটকে একই ছাতার নিচে এনে বাংলাদেশের চারুশিল্পের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক, উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়েছে। আয়োজনে প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ তথা আর্ট কলেজকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছে এ বছর শিল্পকলা একাডেমি; যা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ মনে করছেন দর্শনার্থীরা। চমৎকার এ উদ্যোগ একইসঙ্গে নবীন চারুশিল্পীদের জন্য একটি বৃহৎ প্লাটফর্ম এবং নতুন কিউরেটর সৃষ্টির অনন্য প্রয়াস বলা চলে।

স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এ প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন সুজন আহমেদ সময়। তিনি বলেন, ‘বাইকে করে যাওয়ার পথে চোখে পড়ে নৃত্যশালার দিকে লোকসমাগম এবং সাজসজ্জা। পরে জানলাম এখানে এক্সিবিশন হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন ছুটির দিনগুলোতে কোথাও কোন অনুষ্ঠানও হয় না আর যাওয়াও হয় না। তাই এখানে এক্সিবিশন হচ্ছে দেখে অনেক দিন পরে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে আসলাম। খুবই ভালো লাগছে।

২১ থেকে ৩৫ বছরের ৫১৯ জন শিল্পীর ১৩৫০টি জমাকৃত শিল্পকর্ম থেকে নির্বাচকম-লী বাছাইকৃত ৩৩৭ জন শিল্পীর ৩৬৮টি শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রদর্শনী। চিত্রকলা, ছাপচিত্র, ভাস্কর্য, প্রাচ্যকলা, কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, গ্রাফিকস ডিজাইন, আলোকচিত্র, স্থাপনাশিল্প, পারফরমেন্স আর্ট, নিউ মিডিয়া আর্টসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

সব মাধ্যমের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ‘নবীন শিল্পী চারুকলা পুরস্কার-২০২০’ এবং ফটোগ্রাফিসহ চারুশিল্পের ১১টি শাখায় এ বছর প্রত্যেকটিতে একটি করে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। মোট পুরস্কারের সংখ্যা ১২টি। শ্রেষ্ঠ পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী পেয়েছেন এক লাখ টাকার চেক, সনদপত্র, মেডেল ও ক্রেস্ট এবং প্রত্যেক মাধ্যমের শ্রেষ্ঠ পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদের পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক, সনদপত্র ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে।

৩০ নভেম্বর প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরই মধ্যে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী সাংবাদিকদের ডেকে এ প্রদর্শনীর সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্ব এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভাবলাম শিল্পীরা সমসাময়িক বিষয়কে মাথায় রেখে তাদের অনেক শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেন। সেই ভাবনা থেকেই এ প্যান্ডামিক সিচুয়েশনের মধ্যেও সাহস করে এ প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেই। এর সাফল্য আমাদের বিস্মিত করেছে। শিল্পকলার ইতিহাসে স্মরণকালের সেরা প্রদর্শনী বলা যায় একে। প্রদর্শনীর মেয়াদ এক মাস ছিল। দর্শকদের উপস্থিতি বিবেচনা করে পরে আমরা সময়সীমা বাড়িয়ে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত করেছি।’

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১ মাঘ ১৪২৭, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

চারুকলার বিরল চিত্র

image

গত ৩০ নভেম্বর থেকে রাজধানীর জাতীয় চিত্রশালায়

চলছে ‘২২তম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী-২০২০’

বিশেষ কিউরেটোরিয়াল প্রকল্প। এ প্রদর্শনী ঘুরে

এসে লিখেছেন নিথর মাহবুব

ছুটির দিন বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশালার গেটের কাছে যেতেই অনেক লোকের ভিড় চোখে পড়ল। লাইনে দাঁড়ানো লোক গেট অতিক্রম করে চলে এসেছে রাস্তা পর্যন্ত। ভাবলাম নৃত্যশালায় কোন অনুষ্ঠানের এ লাইন। ভেতরের দিকে তাকাতেই স্পষ্ট হলো এ লাইন নবীন চারুকলা প্রদর্শনীতে যাওয়ার লাইন। বাংলাদেশে চারুকলা প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এটি একটি বিরল চিত্র। এমন দৃশ্য সাধারণত চোখে পড়ে একুশে ফেব্রুয়ারির বইমেলায় ছুটির দিনগুলোতে। নৃত্যশালার গেটে কর্মরত মুজাহিদ জানালেন এ প্যানডেমিক সিচুয়েশানেও প্রতিদিন শত শত লোক আসছে প্রদর্শনী দেখতে। স্থানীয়রা জানান, চারুকলার কোন প্রদর্শনীকে ঘিরে এখানে এত লোকসমাগম তারা আগে কখনই দেখেননি। এ প্রদর্শনী কেন্দ্র করে এক মিলনমেলা তৈরি হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশালা প্রাঙ্গণে। অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন একসঙ্গে প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে। এসেছে অনেক স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীও।

এ প্রদর্শনীকে ঘিরে ভিতরে-বাহিরের সাজসজ্জাও সহজে যে কাউকে মুগ্ধ করবে। শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশালা দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল মাথার উপরে দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম। রঙ-বেরঙের ঝুলন্ত ছাতার সমারোহে তৈরি ফলস সিলিং চলে গেছে চারুকলা ভবনের প্রবেশদ্বার পর্যন্ত। এক ছাতার নিচে আনা বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। ঝুলন্ত ছাতাগুলো যেন তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলাদেশের ১৪টি ইনস্টিটিউটকে একই ছাতার নিচে এনে বাংলাদেশের চারুশিল্পের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক, উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়েছে। আয়োজনে প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ তথা আর্ট কলেজকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছে এ বছর শিল্পকলা একাডেমি; যা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ মনে করছেন দর্শনার্থীরা। চমৎকার এ উদ্যোগ একইসঙ্গে নবীন চারুশিল্পীদের জন্য একটি বৃহৎ প্লাটফর্ম এবং নতুন কিউরেটর সৃষ্টির অনন্য প্রয়াস বলা চলে।

স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এ প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন সুজন আহমেদ সময়। তিনি বলেন, ‘বাইকে করে যাওয়ার পথে চোখে পড়ে নৃত্যশালার দিকে লোকসমাগম এবং সাজসজ্জা। পরে জানলাম এখানে এক্সিবিশন হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন ছুটির দিনগুলোতে কোথাও কোন অনুষ্ঠানও হয় না আর যাওয়াও হয় না। তাই এখানে এক্সিবিশন হচ্ছে দেখে অনেক দিন পরে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে আসলাম। খুবই ভালো লাগছে।

২১ থেকে ৩৫ বছরের ৫১৯ জন শিল্পীর ১৩৫০টি জমাকৃত শিল্পকর্ম থেকে নির্বাচকম-লী বাছাইকৃত ৩৩৭ জন শিল্পীর ৩৬৮টি শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রদর্শনী। চিত্রকলা, ছাপচিত্র, ভাস্কর্য, প্রাচ্যকলা, কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, গ্রাফিকস ডিজাইন, আলোকচিত্র, স্থাপনাশিল্প, পারফরমেন্স আর্ট, নিউ মিডিয়া আর্টসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

সব মাধ্যমের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ‘নবীন শিল্পী চারুকলা পুরস্কার-২০২০’ এবং ফটোগ্রাফিসহ চারুশিল্পের ১১টি শাখায় এ বছর প্রত্যেকটিতে একটি করে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। মোট পুরস্কারের সংখ্যা ১২টি। শ্রেষ্ঠ পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী পেয়েছেন এক লাখ টাকার চেক, সনদপত্র, মেডেল ও ক্রেস্ট এবং প্রত্যেক মাধ্যমের শ্রেষ্ঠ পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদের পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক, সনদপত্র ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে।

৩০ নভেম্বর প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরই মধ্যে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী সাংবাদিকদের ডেকে এ প্রদর্শনীর সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্ব এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভাবলাম শিল্পীরা সমসাময়িক বিষয়কে মাথায় রেখে তাদের অনেক শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেন। সেই ভাবনা থেকেই এ প্যান্ডামিক সিচুয়েশনের মধ্যেও সাহস করে এ প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেই। এর সাফল্য আমাদের বিস্মিত করেছে। শিল্পকলার ইতিহাসে স্মরণকালের সেরা প্রদর্শনী বলা যায় একে। প্রদর্শনীর মেয়াদ এক মাস ছিল। দর্শকদের উপস্থিতি বিবেচনা করে পরে আমরা সময়সীমা বাড়িয়ে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত করেছি।’